ভারত মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তানের যে সামরিক অভিযান চালিয়েছে, তার নাম দিয়েছে “সিঁদুর’।

মার্কিন সংবাদ সিএনএন লিখেছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের জন্য ভারত যে নামটি বেছে নিয়েছে তা ধর্মীয় প্রতীকবাদে পরিপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

‘অপারেশন সিঁদুর’ হলো লাল সিঁদুর বা পাউডার, যা অনেক হিন্দু নারী বিয়ের পর তাদের কপালে পরেন।

আরো পড়ুন:

পাকিস্তানে হামলার সমর্থনে ভারতের বিরোধী নেতারা

পাকিস্তানের যেসব স্থানে হামলা চালিয়েছে ভারত

ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এপ্রিলে বেসামরিক নাগরিকদের উপর গণহত্যার ফলে বেশ কয়েকজন নারী বিধবা হয়েছিলেন।

হামলার পরের দিনগুলোতে, স্বামীর প্রাণহীন দেহের পাশে নিথর বসে থাকা এক নারীর একটি ছবি ভাইরাল হয়ে যায়, যা হামলার শিকারদের বেদনা এবং হৃদয়বিদারকের প্রতীক হয়ে ওঠে।

ভারতের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উভয়ই সামরিক অভিযান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’ একটি ছবি পোস্ট করেছেন, যেখানে লাল সিঁদুর দেখানো হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস.

জয়শঙ্কর এক্স পোস্টে লিখেছেন, “সন্ত্রাসবাদের প্রতি বিশ্বকে শূন্য সহনশীলতা দেখাতে হবে।”

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং তার পোস্টে লিখেছেন, “ভারতের জয়।”

ঢাকা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিবেশী দেশগুলোয় বড় প্রভাবের শঙ্কা

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি, অর্থনীতি ও কূটনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এই অঞ্চলের শক্তিশালী দেশ দুটির মধ্যে বৈরিতা অব্যাহত থাকলে অন্য দেশগুলোতে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। এতে আঞ্চলিক সংহতি আরও বিনষ্ট হবে। বিশেষ করে সার্ক আরও বেশি অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে। আটলান্টিক কাউন্সিলের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে বাংলাদেশে। দিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক এখন তলানিতে। পারস্পরিক সহযোগিতা ভেঙে পড়তে পারে। বিশেষ করে ভারতপন্থি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কে নতুন মেরূকরণ ঘটেছে। ভারতবিরোধী অবস্থানের কারণে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার আরও চাপে পড়তে পারে। ঢাকাকে একটি অনিশ্চিত অবস্থানে ফেলে দিতে পারে দিল্লি। পাশাপাশি সার্কভুক্ত শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান এবং মালদ্বীপের মতো দেশগুলোর ভূরাজনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ সংকট বাড়বে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাশ্মীর সংঘাতের তীব্রতা শ্রীলঙ্কার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তাগত অবস্থান নিয়ে দেশটিতে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। ছেদ ঘটাতে পারে অভ্যন্তরীণ গতিশীলতায়। 

এদিকে নেপাল ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করবে ভারত ও চীনের মধ্যে। নেপালের এই নিরপেক্ষতাকে আরও সন্দেহের চোখে দেখতে পারে ভারত। ইতোমধ্যে বৃহত্তর সার্বভৌমত্ব নিয়ে ভারতের সঙ্গে নেপালের উত্তেজনা আছে। বিষয়টি দুই দেশের কূটনীতিতে চাপ সৃষ্টি করেছে। 

তাছাড়া ঘনিষ্ঠ কৌশলগত সম্পর্কের কারণে ভারতের সঙ্গে ভুটানের নীরবে জোট বাঁধার সম্ভাবনা বেশি। তবে ভারতের যে কোনো বিতর্কিত সামরিক পদক্ষেপ দেশটির উত্তর সীমান্তে চীনা তৎপরতাকে উৎসাহিত করতে পারে। কাশ্মীরে অস্থিরতা মালদ্বীপের ইসলামপন্থি জনগণের মধ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। 

দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘাত বাড়লে তা যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। চীনের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থানকে আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষায় কাজে লাগাতে চায় যুক্তরাস্ট্র। কোয়াড জোটে যা প্রভাব ফেলে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে ইন্দো-প্যাসিফিকে ভারতের কৌশলগত মনোযোগ আরও বাড়বে।  

বিশ্লেষকরা মনে করেন, কাশ্মীরের উগ্রপন্থি গোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারে পাকিস্তানের উচিত নিজেদের স্বচ্ছতা প্রমাণ করা। একইভাবে ভারতেরও উচিত বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক বলয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করা, যাতে কাশ্মীরে শান্তি রক্ষায় একটি কার্যকর পথ খোলা থাকে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করতে পারে, যাতে সিন্ধুর পানি চুক্তি পুনর্বহাল করা সম্ভব হয় এবং দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি নেওয়া পদক্ষেপগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব কমানো যায়। 

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতে বেসামরিক লোকজন সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ বছরের পর বছর ধরে দুই দেশের চাপ সহ্য করে আসছে। একদিকে দিল্লির নীতির কারণে চাপ, অন্যদিকে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অপতৎপরতায় তাদের জীবন চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান সবসময় পারস্পরিক দোষারোপের খেলায় মত্ত থাকে। ভারত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন কাশ্মীরের জনগণ।

গত ২২ এপ্রিল ভারত শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হন। নিহতদের অধিকাংশই ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে যাওয়া পর্যটক। এ ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে সেখানে মঙ্গলবার গভীর রাতে বিমান হামলা চালায় ভারত। এতে দেশটিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ