দিল্লি-ইসলামাবাদকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান বিশ্বনেতাদের, ইসরায়েলের সমর্থন ভারতের দিকে
Published: 7th, May 2025 GMT
পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং ভারতে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। তবে ইসরায়েল ভারতকে সমর্থন জানিয়ে বলেছে, তারা ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে।
গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। জবাবে পাকিস্তানও ভারতে গোলাবর্ষণ করে। হামলায় এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে ২৬ জন এবং ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ১০ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুনরাতে ২৫ মিনিটের মধ্যেই পাকিস্তানের ৯ স্থাপনায় হামলা চালানো হয়: ভারতের ব্রিফিংয়ে তথ্য৪ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনমুজাফফরাবাদ ও পাঞ্জাবে ভারতের হামলায় মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত: বিবিসিকে প্রত্যক্ষদর্শী৫ ঘণ্টা আগেপারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে বিশ্বনেতারা কী বলেছেন, তা একনজরে দেখে নেওয়া যাক—
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘এটা হতাশার। মাত্রই এ খবর শুনেছি। আমার মনে হয়, অতীত ইতিহাসের ভিত্তিতে মানুষ বুঝতে পেরেছিল যে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। তারা (ভারত-পাকিস্তান) দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছে। তারা অনেক, অনেক দশক ধরে লড়াই করছে। আমি আশা করি, এটা খুব দ্রুত শেষ হবে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
এ হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বিশ্বসংস্থাটির মহাসচিবের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে তাঁর একজন মুখপাত্র বলেছেন, নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে ভারতের সামরিক অভিযান নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি উভয় দেশের প্রতি সর্বোচ্চ সামরিক সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।
মহাসচিব আরও বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাতের ভার বিশ্ব বহন করতে পারে না।
আরও পড়ুনপাকিস্তানের ৬ স্থানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আকাশ ও স্থলে জবাব ইসলামাবাদের৮ ঘণ্টা আগেইউরোপের দেশ ফ্রান্স ভারত ও পাকিস্তানকে সংযম প্রদর্শন করতে বলেছে। টিএফওয়ান টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল ব্যারট বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদের ভয়াবহতা থেকে ভারতের আত্মরক্ষার আকাঙ্ক্ষা আমরা বুঝতে পারছি। তবে আমরা স্পষ্টতই ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাই, যেন উত্তেজনা বৃদ্ধি না পায় এবং অতি অবশ্যই বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে হবে।’
সরকারি এক বিবৃতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উপপ্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ভারত এবং পাকিস্তানকে সংযম প্রদর্শন, উত্তেজনা কমানো এবং উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রুভেন আজার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইসরায়েল ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করে।’
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তাঁরা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক দ্বন্দ্ব নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান তিনি।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও উভয় পক্ষকে সংযম দেখাতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুনভারত–পাকিস্তান কি সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে, সর্বশেষ যা জানা গেল৩ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনমাসুদ আজহার আফগানিস্তানে নেই, পাকিস্তানের চিঠির জবাবে তালেবান১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রমন ত র র পরর ষ ট র ইসর য় ল বল ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর ব্যাহত হয় বিমান চলাচল
কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থিত আল–উদেইদ মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ গতকাল সোমবার সাময়িকভাবে আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। ফলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা উড়ান বাতিল ও বিমানের গন্তব্য পরিবর্তন করে। এ নিয়ে তাদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়।
এর আগে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে গতকাল ইরান দোহায় মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এতে কেউ হতাহত হয়েছেন, এমন খবর পাওয়া যায়নি। খবর রয়টার্স
বিষয়টি হলো, ক্রমবর্ধমান এই উত্তেজনার প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও পড়তে শুরু করেছে। ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল-ইরানের হামলা পাল্টা-হামলা শুরু হওয়ার পর থেকেই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পথ বন্ধ। গতকাল এয়ার ইন্ডিয়া জানায়, তারা ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার পূর্বাঞ্চলগামী সব উড়ান স্থগিত করেছে। এখন তাদের মধ্যপ্রাচ্য এড়িয়ে সংকীর্ণ বিকল্প পথে চলাচল করতে হচ্ছে।
শেষমেশ ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এখন বিভিন্ন দেশ আকাশসীমা খুলে দিচ্ছে। কিন্তু মাঝখানে এই ১২ দিনের যুদ্ধে বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোকে বেশ নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে, বিশেষ করে শেষ দুই দিনে।
বাহরাইন ও কুয়েত আকাশসীমা বন্ধ করার কিছুক্ষণ পর আবার খুলে দেয়। দুবাই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বল্প সময়ের বিরতির পর কার্যক্রম আবার চালু হয়েছে, যদিও উড়ান বাতিল ও বিলম্বের আশঙ্কা আছে। কাতারও সাময়িকভাবে আকাশসীমা বন্ধ রেখেছিল। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের কারণে বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত বিমান চলাচল কেন্দ্র দুবাই ও দোহার সঙ্গে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ পথগুলো ইতিমধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ইরান ও ইরাক থেকে শুরু করে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত যে আকাশপথ সাধারণত বিমানে পরিপূর্ণ থাকে, সেটি এখন প্রায় জনশূন্য, সাধারণ যাত্রীবাহী বিমানের দেখা নেই।
গতকাল এয়ার ইন্ডিয়া জানায়, তারা শুধু মধ্যপ্রাচ্যের উড়ান নয়, বরং ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলগামী সব উড়ান বন্ধ করে দিয়েছে। আকাশে উড়ন্ত বিমানগুলোকে নিজ নিজ উড্ডয়ন কেন্দ্রে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে; সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাওয়া আকাশপথ থেকেও তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে পড়েন ব্যবসায়ী মিরেত পাদোভানি। গতকাল রাতে কাতার এয়ারওয়েজের বিমানে তাঁর থাইল্যান্ড যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পরিস্থিতি দেখে তিনি যাত্রা বাতিল করেন। আজ মঙ্গলবার সকালে দুবাই ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন তিনি।
‘ভয়ংকর অভিজ্ঞতা’, বলেন পাদোভানি। তিনি বলেন, ‘সবকিছু এত দ্রুত ঘটে গেল, আমি প্রথম শ্রেণির লাউঞ্জে থাকা কয়েকজনের কাছ থেকেই শুনি যে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার আগেই তা জানতে পারি।’
বিমান পরিবহন বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান সিরিয়াম জানিয়েছে, গতকাল দোহাগামী প্রায় দুই ডজন উড়ান (বেশির ভাগই কাতার এয়ারওয়েজের) পথ পরিবর্তন করে। আকাশসীমা বন্ধ থাকার কারণে দুবাইগামী কয়েকটি বিমানও ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
গতকাল কুয়েত এয়ারওয়েজের সব উড়ান স্থগিত করা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইতিহাদ এয়ারওয়েজ গতকাল ও আজ পথ পরিবর্তন করে উড়ান পরিচালনা করেছে।
স্পেনের বিমান সংস্থা আইবেরিয়া আজ দোহায় উড়ান চালুর পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু সর্বশেষ পরিস্থিতির পর তারা সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের আকাশসীমা যুদ্ধের কারণে আগে থেকেই অধিকাংশ বিমান সংস্থার জন্য বন্ধ। ফলে ইউরোপ ও এশিয়ার উড়ানের জন্য মধ্যপ্রাচ্য গুরুত্বপূর্ণ করিডর হয়ে উঠেছে। গত ১০ দিনের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলার পর অনেক বিমানই এখন কাস্পিয়ান সাগর হয়ে উত্তর দিক দিয়ে বা মিসর-সৌদি আরব ঘুরে দক্ষিণ দিক দিয়ে যাতায়াত করছে।
বিমান চলাচল খাতের ঝুঁকি বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ওসপেরি ফ্লাইট সলিউশনস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে ইরান বা তার মিত্রদের ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কায় বিমান সংস্থাগুলো দোহা, দুবাইসহ পুরো অঞ্চলটি এড়িয়ে চলছে।
দিনের শুরুতে বিমান সংস্থাগুলো ভাবছিল, কত দিন উড়ান স্থগিত রাখতে হবে। প্রথম দীর্ঘমেয়াদি স্থগিতাদেশের ঘোষণা দেয় ফিনএয়ার, তারা ৩০ জুন পর্যন্ত দোহাগামী উড়ান বাতিল করেছে। শীর্ষস্থানীয় এশীয় বিমান সংস্থা সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস ঘোষণা দিয়েছে, তারা আজ পর্যন্ত দুবাই ফ্লাইট বাতিল রাখবে।
এয়ার ফ্রান্স কেএলএম, আইবেরিয়া, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও কাজাখস্তানের এয়ার আস্তানা গত রোববার ও গতকাল দোহা বা দুবাই—যেকোনো এক বা উভয় গন্তব্যে উড়ান বাতিল করে। এয়ার ফ্রান্স রিয়াদগামী উড়ানও বাতিল করে জানায়, বৈরুত (লেবানন) থেকে যাওয়া-আসার উড়ান আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্র হামলার আগেই আমেরিকান এয়ারলাইনস কাতার ফ্লাইট বন্ধ করে। ইউনাইটেড এয়ারলাইনস ও এয়ার কানাডা দুবাই ফ্লাইট স্থগিত রেখেছে, যা এখনো চালু হয়নি।
বাড়ছে সংঘাত, বাড়ছে বিপদ
সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের বিস্তৃতির কারণে বাণিজ্যিক বিমান চলাচলে বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। আকাশপথে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঝুঁকি থেকে শুরু করে দুর্ঘটনাবশত যাত্রীবাহী বিমান গুলি করে ফেলার আশঙ্কাও বাড়ছে।
এদিকে রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত অঞ্চলে জিপিএস বিভ্রাটও নতুন হুমকি হয়ে উঠছে। কোথাও কোথাও ভূভিত্তিক জিপিএস যন্ত্র ভুয়া অবস্থান দেখিয়ে বিমানকে ভুল পথে পাঠিয়ে দিচ্ছে, যাকে বলে জিপিএস স্পুফিং, এটি নতুন সংকট হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এসকেএআই জিপিএস বিভ্রাট পর্যবেক্ষণ করে। তারা জানিয়েছে, রোববার রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পারস্য উপসাগরে ১৫০টির বেশি বাণিজ্যিক বিমানে স্পুফিং শনাক্ত হয়েছে।
আকাশপথ খুলে দিচ্ছে দেশগুলো
যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর কুয়েত ও বাহরাইন আকাশসীমা খুলে দিয়েছে। দেশ দুটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আকাশসীমা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। খবর বিবিসির।
কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানি হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করেছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের বিমানবন্দরগুলোর কার্যক্রম পুরোপুরি চালু রয়েছে।
এর আগে কাতারের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায়, আকাশপথে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এসেছে। কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের আল–উদেইদ সামরিক ঘাঁটিতে ইরানি হামলার পর সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেশটির আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছিল।