সখীপুরে ভুয়া পশুচিকিৎসককে চার মাসের কারাদণ্ড
Published: 7th, May 2025 GMT
পঞ্চম শ্রেণির পর আর পড়াশোনার সুযোগ হয়নি ওয়াজ উদ্দিনের। ৩৫ বছর আগে ঢাকার একটি গরুর খামারে শ্রমিকের কাজ করতেন। বছর পাঁচেক পর গ্রামে ফিরে বাজারে একটি চেম্বার খুলে শুরু করেন পশুচিকিৎসা। সম্প্রতি একটি গরুর বাছুরের অস্ত্রোপচার করে ভুয়া চিকিৎসক হিসেবে আলোচনায় আসেন।
আজ বুধবার বিকেলে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার রতনপুর কাশেম বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ওই ভুয়া চিকিৎসককে চার মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুস সামা। পাশাপাশি তাঁকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। দণ্ড পাওয়া ওয়াজ উদ্দিন (৬০) উপজেলার রতনপুর গ্রামের বাসিন্দা।
ভ্রাম্যমাণ আদালত ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওয়াজ উদ্দিন পশুচিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ৩০ বছর ধরে যাদবপুর ইউনিয়নে গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগির চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। গত সোমবার রতনপুর গ্রামের খামারি আলাল উদ্দিনের একটি গাভির বাছুর হয়। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বাছুরের সমস্যা দেখা দিলে ওয়াজ উদ্দিনের চেম্বারে নিয়ে যান আলাল। ওয়াজ উদ্দিন বাছুরটির পেট কেটে অস্ত্রোপচার করে নাড়িভুঁড়ি বের করে আবার লাঠি দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে সেলাই করে দেন। এর মধ্যে বাছুরের পেটে পচন ধরে। আজ দুপুরে বাছুরের মালিক আলাল উদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে ওয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে দণ্ড দেওয়া হয়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পশুচিকিৎসায় ওয়াজ উদ্দিনের কোনো সনদ নেই। অস্ত্রোপচারের সময় তিনি নাড়িভুঁড়ি ভেতরে ঢোকাতে লাঠি ব্যবহার করেছেন। এতে সেখানে পচন ধরে। অপচিকিৎসার কারণে বাছুরটি এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুস সামা প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন ২০১৯–এর ৩৭ ধারায় ভুয়া চিকিৎসককে ৪ মাসের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নারী চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম
কুষ্টিয়ায় নারী চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় একজোট হয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলার চিকিৎসকরা। আজ মঙ্গলবার জরুরি সভা শেষে তারা এ সিদ্ধান্ত জানান।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক নাসিমুল বারী বাপ্পী। মারধরের শিকার নারী চিকিৎসক শারমিন সুলতানা সোমবার রাতেই বাড়ি ফিরেছেন। রাত সাড়ে ১১টার পর তাঁর স্বামীর জিম্মায় তাঁকে থানা থেকে হস্তান্তর করে পুলিশ। রাতেই তাঁকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, নারী চিকিৎসক হেনস্তার প্রতিবাদে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেমিনার কক্ষে জরুরি সভা হয়েছে। এতে দুই হাসপাতালসহ জেলায় কর্মরত অন্তত ৮০ জন চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সোমবার দুপুরে লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে একদল নারী-পুরুষ পূর্বপরিকল্পিত ও সংঘবদ্ধভাবে চিকিৎসক শারমিন সুলতানা এবং তাঁর স্বামী মোহাম্মদ মাসুদ রানাকে মারধর করে। এ সময় তাদের শ্লীলতাহানি, লাঞ্ছিত ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে তারা।
এতে শারমিন সুলতানা আহত হন। তাঁর কাছে থাকা স্বর্ণালংকার ও টাকা লুট করে। গুম ও খুনের উদ্দেশ্যে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিরোধে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এ ঘটনায় জেলার সর্বস্তরের চিকিৎসক ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত এবং এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান চিকিৎসকরা। অন্যথায় বৃহত্তর ও কঠোর কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেন। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন বলেন, নারী চিকিৎসককে যারা মারধর করেছে, তারা নিশ্চিত করতে পারেনি যে, তিনি তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। কোনো প্রমাণও দেখাতে পারেননি। চিকিৎসক দম্পতি মামলা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভুয়া ঘটনায় মারধরের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নারী চিকিৎসকের স্বামী কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় নারী নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করব।’
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহরের অর্জুনদাস আগরওয়ালা সড়কে লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ একাধিক ক্লিনিকে রোগী দেখেন চিকিৎসক শারমিন সুলতানা। সোমবার দুপুরে লাইফ ডায়াগনস্টিকের চেম্বারে যাওয়ার পর সেখানে অবস্থান করা একদল নারী তাঁর ওপর হামলা করে। ১৫ থেকে ২০ জন তাঁকে টেনেহিঁচড়ে সড়কের ওপর নিয়ে যায়।
সেখানে চুলের মুঠি ধরে চিকিৎসকের ওপর হামলা করে। কয়েকজন তাঁর পোশাক ছিঁড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। প্রতারণার নানা অভিযোগ তুলে কয়েকজন মারধরও করে। খবর পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করতে এসে স্বামীও মারধরের শিকার হন। পুলিশ গিয়ে এ দম্পতিকে উদ্ধার করে। তাদের সঙ্গে মারধর করা নারীরাও থানায় যান।