ভালো দাম পাওয়ার আশায় আগাম আলু লাগিয়েছিলেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রসাদপাড়া গ্রামের চাষি অনীক খান। গত শুক্রবার এক রাতের ভারী বৃষ্টিতে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। সেই বন্যার পানিতে অনীকের খেতের সব আলুবীজ পচে গেছে। অনীক বলেন, বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো সর্বনাশ হয়ে গেছে। শুধু আলু নয়, উঠতি ফসল আমন ধান ও অন্যান্য সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, অসময়ের বৃষ্টিতে মোট ৩০৮ দশমিক ৬৮ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য ১০ কোটি ২৭ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪ হাজার ২০০ চাষি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পান বরজের। মোট ৪ দশমিক ৮৩০ হেক্টর জমির পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য ২ কোটি ৮০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। ক্ষতির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে আগাম সরিষা। ১৬৬ দশমিক ৩০০ হেক্টর জমির সরিষায় ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকার। পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। ধানের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাবে শুক্রবার রাতভর রাজশাহীতে ভারী বর্ষণ হয়। বৃষ্টি হয় পরদিন শনিবারও। এতে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ীতে শুক্রবার রাতে ১৬২ মিলিমিটার এবং শনিবার ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর তানোরে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

গোদাগাড়ীর প্রসাদপাড়া গ্রামের চাষি আশিক আল মাহমুদ বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে পটল ছিল। সেই জমির ওপর দিয়ে বন্যা হয়ে গেল। যদিও পানি ছিল দুই দিন। কিন্তু পটলের গাছ মরে যাচ্ছে।’ আরেক কৃষক মো.

রানা বলেন, ধানি জমির ওপর দিয়ে দুই দিন ধরে স্রোত গেছে। তার ওপর পলিও পড়েছে। এ জন্য ধানের বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে যাবে।

জেলার পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামে গিয়ে কথা হয় কৃষক রাব্বানী মণ্ডলের সঙ্গে। নিজের মুলাখেত দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখেন ভাই, এই যে জমি। এখন শুধু পানি আর পানি।’ একসময় যে জমি মুলাগাছে ভরে উঠেছিল, সেই জমি এখন বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে।

কৃষক রাব্বানী মণ্ডল বলেন, ‘আষাঢ় মাসেও এমন বৃষ্টি হয় না, যে বৃষ্টি হইছে। এখনো পানি নামেনি। আরও পাঁচ বিঘা জমি এখনো পানিবন্দী। জমির চারদিকে পুকুর, তাই পানি নামতে পারছে না। কৃষি অফিসের স্যারেরা মাঠে আইছিলেন, খবর নিছেন।’

পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুর রাজ্জাক এক বিঘা জমিতে বি-৮৭ জাতের ধান চাষ করেছিলেন। ধান কাটার আগেই নভেম্বরে অসময়ের বৃষ্টিতে জমিতে পানি উঠেছে। বাতাসে ধানগাছ হেলে পড়েছে। মাঠে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা কাদামাটি মাড়িয়ে হেলে পড়া ধান কাটছেন। ওই কৃষকের ছেলে সোহানুর রহমান বলেন, ‘এই বৃষ্টিতে অর্ধেক ধান নষ্ট হয়ে যাবে। শ্রমিক খরচও বেশি হবে। মনে হচ্ছে খরচের টাকাও উঠবে না। তিন দিন পরে বৃষ্টি হলে এই সর্বনাশ হতো না।’

জেলার দুর্গাপুর উপজেলার সিংগা গ্রামের কৃষক জাহিদ জানান, সিংগা বিলে তাঁর আধা পাকা দুই বিঘা জমির ধান শুক্রবার রাতের বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। এক সপ্তাহ হলেই ধান কাটা শুরু হতো। হঠাৎ বৃষ্টিতে সব ধান তলিয়ে গেছে। এখন পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ধানের বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে যাবে।

নভেম্বরের বৃষ্টি ফসলের কতটা ক্ষতি করেছে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিম্নচাপের কারণে নভেম্বরের শুরুতেই অপ্রত্যাশিতভাবে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। মাত্র দুই দিনের বৃষ্টিতে জেলার ২ হাজার ১৫০ বিঘা জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা।’ তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতির তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা বাস্তবায়ন করা হবে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে এক রাতের বৃষ্টিতে বিপর্যয়, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি০২ নভেম্বর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক রব র র ত

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে এক রাতের বৃষ্টিতে ১০ কোটি টাকার বেশি ফসল নষ্ট

ভালো দাম পাওয়ার আশায় আগাম আলু লাগিয়েছিলেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রসাদপাড়া গ্রামের চাষি অনীক খান। গত শুক্রবার এক রাতের ভারী বৃষ্টিতে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। সেই বন্যার পানিতে অনীকের খেতের সব আলুবীজ পচে গেছে। অনীক বলেন, বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো সর্বনাশ হয়ে গেছে। শুধু আলু নয়, উঠতি ফসল আমন ধান ও অন্যান্য সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, অসময়ের বৃষ্টিতে মোট ৩০৮ দশমিক ৬৮ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য ১০ কোটি ২৭ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪ হাজার ২০০ চাষি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পান বরজের। মোট ৪ দশমিক ৮৩০ হেক্টর জমির পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য ২ কোটি ৮০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। ক্ষতির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে আগাম সরিষা। ১৬৬ দশমিক ৩০০ হেক্টর জমির সরিষায় ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকার। পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। ধানের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাবে শুক্রবার রাতভর রাজশাহীতে ভারী বর্ষণ হয়। বৃষ্টি হয় পরদিন শনিবারও। এতে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ীতে শুক্রবার রাতে ১৬২ মিলিমিটার এবং শনিবার ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর তানোরে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

গোদাগাড়ীর প্রসাদপাড়া গ্রামের চাষি আশিক আল মাহমুদ বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে পটল ছিল। সেই জমির ওপর দিয়ে বন্যা হয়ে গেল। যদিও পানি ছিল দুই দিন। কিন্তু পটলের গাছ মরে যাচ্ছে।’ আরেক কৃষক মো. রানা বলেন, ধানি জমির ওপর দিয়ে দুই দিন ধরে স্রোত গেছে। তার ওপর পলিও পড়েছে। এ জন্য ধানের বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে যাবে।

জেলার পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামে গিয়ে কথা হয় কৃষক রাব্বানী মণ্ডলের সঙ্গে। নিজের মুলাখেত দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখেন ভাই, এই যে জমি। এখন শুধু পানি আর পানি।’ একসময় যে জমি মুলাগাছে ভরে উঠেছিল, সেই জমি এখন বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে।

কৃষক রাব্বানী মণ্ডল বলেন, ‘আষাঢ় মাসেও এমন বৃষ্টি হয় না, যে বৃষ্টি হইছে। এখনো পানি নামেনি। আরও পাঁচ বিঘা জমি এখনো পানিবন্দী। জমির চারদিকে পুকুর, তাই পানি নামতে পারছে না। কৃষি অফিসের স্যারেরা মাঠে আইছিলেন, খবর নিছেন।’

পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুর রাজ্জাক এক বিঘা জমিতে বি-৮৭ জাতের ধান চাষ করেছিলেন। ধান কাটার আগেই নভেম্বরে অসময়ের বৃষ্টিতে জমিতে পানি উঠেছে। বাতাসে ধানগাছ হেলে পড়েছে। মাঠে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা কাদামাটি মাড়িয়ে হেলে পড়া ধান কাটছেন। ওই কৃষকের ছেলে সোহানুর রহমান বলেন, ‘এই বৃষ্টিতে অর্ধেক ধান নষ্ট হয়ে যাবে। শ্রমিক খরচও বেশি হবে। মনে হচ্ছে খরচের টাকাও উঠবে না। তিন দিন পরে বৃষ্টি হলে এই সর্বনাশ হতো না।’

জেলার দুর্গাপুর উপজেলার সিংগা গ্রামের কৃষক জাহিদ জানান, সিংগা বিলে তাঁর আধা পাকা দুই বিঘা জমির ধান শুক্রবার রাতের বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। এক সপ্তাহ হলেই ধান কাটা শুরু হতো। হঠাৎ বৃষ্টিতে সব ধান তলিয়ে গেছে। এখন পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ধানের বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে যাবে।

নভেম্বরের বৃষ্টি ফসলের কতটা ক্ষতি করেছে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিম্নচাপের কারণে নভেম্বরের শুরুতেই অপ্রত্যাশিতভাবে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। মাত্র দুই দিনের বৃষ্টিতে জেলার ২ হাজার ১৫০ বিঘা জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা।’ তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতির তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা বাস্তবায়ন করা হবে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে এক রাতের বৃষ্টিতে বিপর্যয়, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি০২ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ