দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় কোনো ধরনের সহায়তা ঢুকতে দেয়নি ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের উপত্যকাটিতে খাদ্য সংকট ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যেও সেখানে বর্বর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার দেশটি। বুধবার ভোর থেকে জনাকীর্ণ স্থান, আশ্রয়কেন্দ্র ও রেস্তোরাঁয় বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে চালানো হামলায় অন্তত ৫৭ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। 

আলজাজিরার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা শহরের আল-ওয়েহদা স্ট্রিটে থাই ও পালমিরা রেস্তোরাঁর কাছে একটি এলাকা লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। একই সময়ে ১০০ মিটার দূরে দুটি স্থানে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এর মধ্যে একটি রেস্তোরাঁয় এবং একটি বাইরে আঘাত হানে। এতে কমপক্ষে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। গাজা শহরের তুফাহ পাড়ায় আল-কারামা স্কুল লক্ষ্য করে একটি হামলায় ১৩ জন নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। 

এ ছাড়া জাবালিয়ায় একটি বাড়িতে হামলায় আরও তিনজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। দক্ষিণে খান ইউনিস শহরে একজন বাবা, তাঁর সন্তান এবং চাচাতো ভাইবোনসহ আটজন নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজা উপত্যকার দেইর এল-বালাহতে একটি তাঁবু আশ্রয়কেন্দ্রে হামলায় এক শিশুসহ আরও তিনজন নিহত হয়েছেন। উপত্যকার পূর্বে বানি সুহেলা গ্রামে একটি বাড়িতে হামলায় এক দম্পতির মৃত্যু হয়েছে। 

মধ্য গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্রে একটি স্কুলে চলতি সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েলি হামলার পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা আহতদের মধ্যে আরও চারজন মারা গেছেন। ফিলিস্তিনি নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা মঙ্গলবার রাতে জানিয়েছে, সেখানে ৩০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছে। 

গাজা সিটি থেকে আলজাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, আবাসিক ভবন ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। এতে ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় নেওয়ার নিরাপদ কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। খান ইউনিসের পূর্ব অংশে ফসল কাটার সময় হামলা করে এক কৃষককে হত্যা করা হয়েছে। তিন মাস আগে তিনি এই ফসল রোপণ করে পরিবারের খাদ্যের অভাব পূরণের চেষ্টা করছিলেন। 

তিনি বলেন, একটা বিষয় পরিষ্কার যে, ইসরায়েল গাজায় শুধু ত্রাণ প্রবেশই বন্ধ করেনি, তারা ফসল উৎপাদনেও বাধা দিচ্ছে। 

গত ২ মার্চ থেকে প্রয়োজনীয় সরবরাহের ওপর ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। পুরো উপত্যকাটি জ্বালানি ও খাবারশূন্য হয়ে পড়ছে। ত্রাণ বিতরণকারী সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজায় খাদ্য সরবরাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধের কাছাকাছি। 

গাজায় জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ছয় সন্তানের এক মা সংস্থাটিকে জানিয়েছেন, তাদের কাছে সব ধরনের খাবার ফুরিয়ে গেছে, শুধু রুটি আছে। সংস্থাটি বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছে, ইসরায়েল রাষ্ট্রকে অবরোধ তুলে নিতে হবে। এই মানবিক বিপর্যয়কে নতুন অদৃশ্য স্তরে পৌঁছানো থেকে বিরত রাখতে একটি সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। 

চলমান বর্বর হামলা ও অবরোধের কারণে গাজার স্বাস্থ্য খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেশির ভাগ হাসপাতালে হামলা করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে। বুধবার সকালে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতা করা মিসর ও কাতার যৌথ বিবৃতিতে দিয়েছে। সেখানে তারা বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ ও অভূতপূর্ব মানবিক সংকটের অবসান ঘটাতে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। 

যদিও ইসরায়েল ঘোষণা করেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত না হলে গাজায় আরও তীব্র আক্রমণ শুরু হবে। অন্যদিকে হামাস বলেছে, এমন অবরোধের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা অর্থহীন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিলটন হোটেল, সেরা তালিকায় আছে মেটলাইফ

আধুনিক মানুষের দিনের বড় একটা সময় যায় কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।

সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের অর্থবহতা আছে—মানুষ সাধারণত এমন কর্মস্থলই চায়। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। সেই তালিকায় সবার ওপরে আছে হিলটন হোটেল। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই জরিপ ও তালিকা করা হয়েছে।

এবারের তালিকায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো বিভিন্ন দেশের, মূলত ইউরোপের। কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে—২৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮টি এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোও তালিকায় আছে।

সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীবনবিমা কোম্পানি মেটলাইফ। ২০২৫ সালে দশম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ধরে রাখল কোম্পানিটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে।

৯০ লাখের বেশি উত্তরের ওপর ভিত্তি করে ফরচুনের সেরা ২৫টি কর্মক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে মেটলাইফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিশেল খালাফ বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় স্থান পাওয়া কর্মীদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রমাণ।’

কারা আছে তালিকায়

দেখে নেওয়া যাক এবারের তালিকায় কোন কোন দেশের কোম্পানি আছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কুরিয়ার ও যাতায়াত খাতের কোম্পানি ডিএইচএল। তৃতীয় স্থানে আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সিসকো। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। চতুর্থ স্থানে আছে পেশাদার সেবা দেওয়া আইরিশ কোম্পানি অ্যাক্সেনচিউর, পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিশ্বখ্যাত হোটেল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল। ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি অ্যাব ভিয়ে, সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানি টিপি। অষ্টম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি স্ট্রাইকার, নবম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সেলস ফোর্স।

দশম স্থানে আছে মার্কিন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, ১১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সার্ভিস নাউ। ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি স্পেকসেভার্স। ১৩তম স্থানে আছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি সিমেন্স হেলদিনেস; ১৪তম স্থানে আছে আইরিশ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এক্সপেরিয়েন। ১৫তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ১৬তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কেডেন্স। ১৭তম স্থানে আছে জার্মানির বিমা ও আর্থিক কোম্পানি আলিয়াঞ্জ এবং ১৮তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কোম্পানি ডাও।

১৯ থেকে ২১তম স্থানে আছে তিনটি মার্কিন কোম্পানি। ১৯তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি ভিয়াট্রিস, ২০তম স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডোবি, ২১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক।

২২ ও ২৩তম স্থানেও আছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি—উৎপাদন খাতের এসসি জনসন ও খুচরা বিক্রয় খাতের ট্রেক বাইসাইকেল। ২৪তম স্থানে আছে লিচেনস্টাইনের নির্মাণ কোম্পানি হিলতি ও ২৫তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের বিমা ও আর্থিক খাতের কোম্পানি অ্যাডমিরাল গ্রুপ।

কীভাবে এই মূল্যায়ন

৩০ বছর ধরে এই জরিপ পরিচালনা করছে ফরচুন ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছ থেকে তারা জানতে চায়, কর্মস্থলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কিছু মানদণ্ড তৈরি করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে বোঝা যায়, কোনো কর্মস্থল প্রকৃত অর্থেই ‘দারুণ’ কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা সে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান কি না, প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও তার সামগ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য কতটা মিলবে—এসব বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায় জরিপে।

ফরচুন ম্যাগাজিন নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ও কোম্পানির প্রতি কর্মীদের আনুগত্য কতটা—এসব আস্থাসূচকের মাধ্যমে এসব বিষয় পরিমাপ করা হয়।

এ জরিপে কর্মীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। ৬০টি বিষয়ের ওপর ৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে উত্তর দিতে হয়, সঙ্গে থাকে ২টি উন্মুক্ত প্রশ্ন।

কর্মীদের কাছ থেকে যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়, সেগুলো হলো নেতৃত্বের কাছে কি সহজে যাওয়া যায়, নেতৃত্ব সততা ও স্বচ্চতার সঙ্গে কথা বলেন ও কাজ করেন কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কতটা। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানান কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না। এ ছাড়া কর্মীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে কি না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়।

জরিপে কর্মীদের কাছে আরও যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো:

বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়সংগত;

কর্মীরা নিজেদের কাজ, কর্মদল ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ব বোধ করেন;

কাজ অর্থবহ এবং তা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে;

সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে;

কর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিন্নতা কতটা, তা–ও জরিপে পরিমাপ করা হয়। কর্মীদের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানও মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে প্রতিটি ধাপে কঠোর মানদণ্ড মেনে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছে ফরচুন ম্যাগাজিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ