‘তোমার প্রকাশ হোক কুহেলিকা করি উদঘাটন, সূর্যের মতন। রিক্ততার বক্ষ ভেদি আপনারে করো উন্মোচন। উদয়দিগন্তে ওই শুভ্র শঙ্খ বাজে। মোর চিত্তমাঝে, চির-নূতনেরে দিল ডাক/পঁচিশে বৈশাখ।’ 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবে চির-নতুনের মধ্যে নিজের আবির্ভাবক্ষণকে অনুভব করেছেন। রবি’র কিরণে উজ্জ্বল এই পঁচিশে বৈশাখ। আজ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী। 

উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে আজ থেকে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে এবছর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ’। 

১২৬৮ বঙ্গাব্দের পঁচিশে বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে বাঙালির এই প্রিয় কবির জন্ম। নিজ কর্মের মাধ্যমে নতুন একটি কালের সূচনা করে গেছেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি উপহার দিয়ে গেছেন ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসঙ্কলন। তাঁর সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর সাহিত্য।  সাহিত্যের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের গান বাংলা সংগীত ভাণ্ডারকে দারুণভাবে সমৃদ্ধ করেছে। এর আবেদন কোন দিনও ফুরোবার নয়। যত দিন যাচ্ছে ততই রবীন্দ্রসঙ্গীতের বাণী ও সুরের ইন্দ্রজালে নিজেকে জড়িয়ে নিচ্ছে বাঙালি। তাদের আবেগ-অনুভূতি কবিগুরুর গানের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২৫, ২৬, ২৭ বৈশাখ (০৮, ০৯, ১০ মে) কুষ্টিয়ার শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে আয়োজন করা হয়েছে সকলের জন্য উন্মুক্ত অনুষ্ঠানের। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় এবং কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আজ সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধান অতিথি হিসেবে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এতে সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি সচিব মো.

মফিদুর রহমান। 

স্বাগত বক্তৃতা করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফরহাদ সিদ্দিক এবং স্মারক বক্তৃতা করবেন অধ্যাপক মনসুর মুসা। বিশেষ অতিথি থাকবেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, কুষ্টিয়ার ভাইস চ্যান্সেলর ড. নকীব মোহাম্মাদ নসরুল্লাহ। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান। 

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সমবেত নৃত্য ‘আকাশ ভরা সূর্যতারা’ পরিবেশন করবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীবৃন্দ। ‘আনন্দ ধারা বহিছে ভূবনে’ ও ‘ভালোবেসে সখী’ গান দুটি পরিবেশন করবেন সুমা রানী রায়। এরপর একক সংগীত ‘আমি কোথায় পাবো তারে’ পরিবেশন করবেন বুলবুল ইসলাম, ‘ঘরেতে ভ্রমর এলো গুণগুনিয়ে’ পরিবেশন করবেন সুমা রানী রায় এবং ‘তুমি কেমন করে গান’ পরিবেশন করবেন বুলবুল ইসলাম। দ্বৈত সংগীত ‘বিশ্ব সাথে যোগে যেথায়’ পরিবেশন করবেন সুমা রানী রায় ও বুলবুল ইসলাম।

সবশেষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা পরিবেশন করবেন সমবেত নৃত্য ‘ঐ মহা মানব আসে’।

আগামীকাল ৯ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের আয়োজনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে ‘আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন। 

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করবেন।

এছাড়াও একাডেমির আয়োজনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আগামীকাল ৯ মে ৭টি বিভাগে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

ঢাকা/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল দ শ শ ল পকল এক ড ম র স অন ষ ঠ ন রব ন দ র ব শ বকব উপলক ষ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

মৌলভীবাজারে সম্প্রীতির উৎসব মণিপুরি মহারাসলীলা

বর্ণাঢ্য আয়োজন আর বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মণিপুরি সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা।

বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে মণিপুরি অধ্যূষিত জনপদ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে এ উৎসব উদযাপিত হচ্ছে। কমলগঞ্জের মাধবপুর শিব বাজারের জোড়ামণ্ডপ এলাকায় রাখাল নৃত্য ও রাতে রাসনৃত্য এ উৎসবের অন্যতম মূল আকর্ষণ। 

পাশাপাশি আদমপুরে মৈতৈই মণিপুরি সম্প্রদায় মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সে এ উৎসব উদযাপন করছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) ভোরে শেষ হবে শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা। উৎসব উপলক্ষে উভয়স্থানে মেলা বসেছে। রাস উৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্তসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত হবে কমলগঞ্জের মণিপুরি জনপদ। 

এ উপলক্ষে উভয় জায়গায় বসবে বিরাট মেলা। রাসলীলা উপলক্ষে এরইমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এলাকায় সাজ সাজ রব বিরাজ করবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

বৃহত্তর সিলেটের আদিবাসী মণিপুরি সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী মণিপুরি মহারাসলীলা উপজেলার মাধবপুর শিববাজার জোড়া মণ্ডপে মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের আয়োজনে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সম্প্রদায়ের ১৮৩তম এবং আদমপুর মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মৈতৈ মণিপুরি সম্প্রদায়ের ৪০তম মহারাস উৎসব হবে এবার।

কমলগঞ্জের মণিপুরি অধ্যুষিত গ্রাম ও পাড়াগুলোতে বইছে উৎসবের হাওয়া। আগামী বুধবার দুপুরে উভয় স্থানে গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য এবং রাতে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা, গুণীজন সংবর্ধনা ও রাসনৃত্য।

উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মণ্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। এছাড়া মণিপুরি রাস উৎসব উপলক্ষে বুধবার বিকাল ৫টা ও সন্ধ্যা ৬টায় মণিপুরি ললিতকলা একাডেমি মিলনায়তনে মণিপুরি থিয়েটারের আয়োজনে ‘নুংশিপি’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

অপরদিকে উৎসবস্থল আদমপুরেও থাকবে যথারীতি রাখাল নৃত্য ও রাসলীলা। তবে মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া ও মণিপুরি মৈতৈ এরা আলাদা স্থানে আয়োজন করলেও উৎসবের অন্তঃস্রোত, রসের কথা, আনন্দ-প্রার্থনা সবই একই। উৎসবের ভেতরের কথা হচ্ছে বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও সত্যসুন্দর মানবপ্রেম।

আলাপকালে মণিপুরি ললিতকলা একাডেমির উপ-পরিচালক (অ: দা:) প্রভাস চন্দ্র সিংহ জানান, মণিপুরের রাজা ভাগ্যচন্দ্র মণিপুরে প্রথম এই রাসমেলা প্রবর্তন করেছিলেন।

মণিপুরের বাইরে ১৮৪২ সালে কমলগঞ্জের মাধবপুরে প্রথম মহারাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রাস উৎসবে সকালে ‘গোষ্ঠলীলা’ বা ‘রাখালনৃত্য’ হয়। গোধূলি পর্যন্ত চলে এই রাখালনৃত্য। রাত ১২টা থেকে শুরু হয় রাস উৎসবের মূল পর্ব শ্রীশ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা অনুসরণ।

মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের পোশাকে নেচে-গেয়ে কৃষ্ণবন্দনায় ভোর পর্যন্ত চলে রাসলীলা। রাসনৃত্যে শ্রীকৃষ্ণ, রাধা ও প্রায় ৫০ জন গোপী থাকেন। গোপীর সংখ্যা অনেক সময় কমবেশি হয়।

একটি রজনীকে কেন্দ্র করে মণিপুরিদের সংস্কৃতির এক বিশাল মিলন মেলায় পরিণত হয়। রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরের মণিপুরি পাড়া সমুহে চলে প্রস্তুতি ও উৎসবের আমেজ। রং ছড়িয়ে মন্ডপগুলোকে সাজানো হচ্ছে নতুন সাজে। 

রাসের দিন দুপুরে উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মন্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। রাস উৎসবে মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্মের হাজার হাজার লোক মেতে উঠবে আনন্দ-উৎসবে। উৎসব উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারত থেকেও মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজন ছুটে আসেন।

মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, রাস উপলক্ষে আমাদের পাড়ায় পাড়ায় প্রস্তুতি চলছে। প্রতি বছরের মতো ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ভাবধারায় মাধবপুর জোড়ামণ্ডপে ১৮৩তম শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। 

রাসলীলা মণিপুরিদের আয়োজন হলেও জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের আগমনে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির পাশাপাশি অপরাপর সকল জাতিগোষ্ঠীর মাঝে সম্প্রীতির বাঁধনে বেধে চলেছে এই উৎসব রাসলীলা, গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রেমপ্রীতির ঐতিহ্য দর্শন।

কমলগঞ্জ থানার ওসি আবু জাফর মো. মাহফুজুল কবির জানান, নির্বিঘ্নে মণিপুরি মহারাসলীলা উপলক্ষে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তার জন্য দুই জায়গাতেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে পুলিশ ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। উৎসব নির্বিঘ্নে করার লক্ষ্যে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের টহলও থাকবে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সূত্রধর জানান, ঐতিহ্যবাসী মণিপুরি রাসোৎসব উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে আইনশৃংখলা বিষয়ক সভা করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

ঢাকা/আজিজ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পুনর্মিলনী ২৫–২৬ ডিসেম্বর
  • গণতন্ত্রকে আবার ধ্বংস করার চক্রান্ত চলছে: মির্জা ফখরুল
  • বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু ৭ নভেম্বরের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে
  • ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর আজ
  • ৭ নভেম্বর জাতীয় জীবনে অবিস্মরণীয় দিন: ফখরুল
  • স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘হুমায়ুন আহমেদ সপ্তাহ’
  • মহান বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ফতুল্লায় বিএনপির প্রস্তুতিমুলক সভা
  • মৌলভীবাজারে সম্প্রীতির উৎসব মণিপুরি মহারাসলীলা
  • পুণ্যস্নান মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় শেষ হলো রাস উৎসব, মেলা চলবে ৫ দিন
  • সাহস করে সত্য প্রকাশ করে যাবে প্রথম আলো