নারায়ণগঞ্জে শেখ হাসিনা, সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
Published: 8th, May 2025 GMT
২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে জালিয়াতিপূর্ণ, ষড়যন্ত্রমূলক ও ভোটারবিহীন উল্লেখ করে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদালতে মামলার আরজি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হায়দার আলীর আদালতে মামলার আরজি করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা আবদুল বারী ভূঁইয়া।
আদালতে মামলার বাদীপক্ষের শুনানিতে অংশ নেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সরকার হুমায়ূন কবীরসহ অনেকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী আবদুল বারী ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। আদালত এই মর্মে কোনো ক্রিমিনাল মামলা হয়েছে কি না জানতে সংশ্লিষ্ট থানা–পুলিশকে তলব করেছেন। সেই সঙ্গে আগামী ৩ জুন আদেশের দিন ধার্য করেছেন।
আইনজীবী সরকার হুমায়ূন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, আদালত বাদীর আরজি আমলে নিয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা অন্য আসামিরা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা এবং তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আশিক উল হক। মামলায় বাদীসহ সাক্ষী করা হয়েছে নয়জনকে।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো ধ্বংস করার জন্য কাজী রকিবউদ্দীন ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়ে ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ষড়যন্ত্রমূলক ভোটারবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করেন এবং তাঁর অধীনদের কাজ করতে বাধ্য করেন। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নিয়োগ পেয়ে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ষড়যন্ত্রমূলক জালিয়াতিপূর্ণ বিনা ভোটের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করেন এবং তাঁর অধীনদের সেই কাজ করতে বাধ্য করেন। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পেয়ে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ভোটারবিহীন ডামি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করেন এবং তাঁর অধীনদের সেই কাজ করতে বাধ্য করেন।
মামলার আরজিতে আরও বলা হয়, সব অনিয়ম ও কারচুপিকে ছাড়িয়ে গেছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিবাদীরা তাঁদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন না করে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট করার লক্ষ্যে গণতন্ত্র হত্যা করে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে রাষ্ট্রযন্ত্র বিনষ্টের কারিগর হিসেবে কাজ করে বিশ্বাস ভঙ্গ, জাল-জালিয়াতিপূর্ণ, রাষ্ট্রদ্রোহ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা ধ্বংসের মাধ্যমে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। এ অবস্থায় দণ্ডবিধি ১২৪এ/৪৬৪/৪৬৬/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪২০/৩৪ ধারায় অপরাধ আমলে নিয়ে বিবাদীদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর আবেদন জানানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ আইনজ ব ক জ কর অন ষ ঠ কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হকের জামিনের আবেদন, শুনানি মঙ্গলবার
রংপুরে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হকের জামিনের আবেদন করা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার জামিন শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ (হাজীরহাট আমলি আদালত)–এর বিচারক সোয়েবুর রহমানের আদালতে তাঁর জামিনের আবেদন করেন মাহমুদুল হকের আইনজীবীরা।
আরও পড়ুন‘স্ট্রোক করে মৃত্যুর’ ১০ মাস পর হত্যা মামলা, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কারাগারে২০ জুন ২০২৫আইনজীবী শামীম আল মামুন আদালতকে বলেন, মাহমুদুল হক নির্দোষ। যে হত্যা মামলায় মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই ঘটনা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। মাহমুদুল হক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। আবু সাঈদ হত্যার পর তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে।
আইনজীবীদের বক্তব্য উপস্থাপনের পর আগামী মঙ্গলবার জামিন শুনানির আদেশ দেন আদালত। পরে আদালত চত্বরে আইনজীবী শামীম আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, মাহমুদুল হকের জামিন শুনানির আবেদন করা হয়েছিল। আদালত তাঁদের বক্তব্য শুনেছেন। ২৪ জুন শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
আরও পড়ুনজুলাই অভ্যুত্থানে প্রতিবাদী শিক্ষক কেন কারাগারে, প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের১৬ ঘণ্টা আগেএ সময় আদালতে উপস্থিত মাহমুদুল হকের স্ত্রী মাসুদা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, আজ তাঁকে সসম্মানে বাড়িতে নিয়ে যাব। কিন্তু হলো না। আমরা আদালতের কাছে ন্যায্যবিচার চাই। বিচার না পেলে আমরা কোথায় যাব, কার কাছে যাব?’
এদিকে মাহমুদুল হকের জামিন শুনানির খবর শুনে সকাল ১০টা থেকে আদালত চত্বরে জড়ো হন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা চলবে না’, ‘মাহমুদুল হকের নিঃশর্ত মুক্তি চাই’, ‘জুলাই নিয়ে বাণিজ্য বন্ধ করো’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়। জামিন শুনানির তারিখ দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা আদালত চত্বর ত্যাগ করেন।
আরও পড়ুনরোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গ্রেপ্তারের ঘটনায় সেই ওসির বদলি২ ঘণ্টা আগেগত বৃহস্পতিবার বিকেলে মাহমুদুল হককে রংপুর নগরের ধাপ ইঞ্জিনিয়ারপাড়া এলাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে হাজীরহাট থানা পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে থাকা মাহমুদুল হক রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। গত আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে ৩ জুন হাজীরহাট থানায় ৫৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন নগরের রাধাকৃষ্ণপুর মৌলভীপাড়ার বাসিন্দা আমেনা বেগম। মামলার ৫৪ নম্বর আসামি মাহমুদুল হক।
আরও পড়ুন‘বাচ্চা প্রশ্ন করছে—আমার বাবার কী অপরাধ, আমি কী বলব তাকে’২০ জুন ২০২৫