এক যুগ আগে গুম হওয়া সাজেদুলকে ধরতে পরোয়ানা নিয়ে বাসায় পুলিশ
Published: 8th, May 2025 GMT
প্রায় এক যুগ আগে গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম ওরফে সুমনকে ধরতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে পুলিশ বাসায় গিয়ে হট্টগোল করেছে বলে অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। আজ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার পর তাঁদের তেজগাঁওয়ের শাহিনবাগের বাসায় যায় তেজগাঁও থানা-পুলিশ। এ সময় পুলিশ সদস্যরা পরিবার সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে নিয়ে গড়ে ওঠা সংগঠন ‘মায়ের ডাক’–এর অন্যতম সমন্বয়কারী সাজেদুলের বোন সানজিদা ইসলাম। এই সংগঠন গড়ে তোলার পেছনে সাজেদুলের পরিবার মূল ভূমিকা পালন করেছে। প্রায় এক যুগ ধরে এই সংগঠন গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফেরত পেতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে।
এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে সানজিদা ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালে তাঁর ভাই সাজেদুল গুম হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ভাইসহ গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরে পেতে এক যুগের বেশি সময় ধরে রাজপথে সোচ্চার থেকেছেন তাঁরা। এসব গুম নিয়ে জাতিসংঘ তদন্ত করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার গুম কমিশন গঠন করেছে। অথচ পুলিশ তাঁর ভাই সাজেদুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে বাসায় এসেছে। তিনি বলেন, ‘এমন ঘটনায় বিস্মিত না হয়ে কি উপায় আছে!’
সানজিদা ইসলাম বলেন, তাঁর ভাই সাজেদুলের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের আগের অনেক রাজনৈতিক মামলা আছে। এক যুগ আগে গুম হওয়া ব্যক্তির বিরুদ্ধে এসব মামলায় কীভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়, সেটি তাঁর জানা নেই। আর পুলিশ কিছু না জেনে বাসায় চলে এসেছে, সেটা হতে পারে না।
সাজেদুলের বোন বলেন, পুলিশের আচরণ ছিল রহস্যজনক। তাঁরা বাড়ির ভেতরে ঢুকে কাউকে খুঁজছিল। কী খুঁজছিলেন, সেটি তাঁরা বলছিলেন না। একপর্যায়ে তাঁরা (পুলিশ) বলেন, সুমনকে (সাজেদুল) খুঁজছেন। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। সুমন গুম হয়েছে, এটা আপনারা জানেন না—এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সদস্যরা তাঁদের কাজ তাঁদেরকে করতে দিতে বলেন। পরে পুলিশ উচ্চ স্বরে কথা বলে হট্টগোল করেছে। আশপাশ থেকে লোকজন বাসায় এলে পুলিশ সদস্যরা চলে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, থানার যে পুলিশ সদস্যরা সাজেদুলের বাসায় গিয়েছিলেন, তাঁরা সাজেদুলকে চিনতেন না। তিনি যে গুম হয়েছিলেন, সেটিও জানতেন না। শুধু সাজেদুল নন, আরও অন্যান্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করার জন্য পুলিশ সদস্যরা থানা থেকে বের হন। এটি একটি ভুল–বোঝাবুঝি।
ওসি বলেন, ‘যেহেতু থানা-পুলিশের সদস্যরা ভুল করেছেন, থানার ওসি হিসেবে পরিবারের কাছে সেটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’ সাজেদুলের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের অক্টোবরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল বলে জানান তিনি।
এদিকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে ‘নিখোঁজ’ সাজেদুলের বাসায় যাওয়া নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। রাতে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমকে এ কথা জানান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র পর য় ন এক য গ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনি ফুটবলের ‘পেলে’
ফিলিস্তিন জাতীয় দলের সাবেক ফরোয়ার্ড সুলেইমান আল–ওবেইদ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে মানবিক সাহায্য পেতে অপেক্ষমাণ ফিলিস্তিনি জনতার ওপর ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালালে প্রাণ হারান ৪১ বছর বয়সী এই ফুটবলার। ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএএফ) গতকাল তাদের ওয়েবসাইটে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সুলেইমানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুনবন্ধু সুয়ারেজ ও ‘দেহরক্ষী’ দি পলে কোয়ার্টার ফাইনালে মেসির মায়ামি৫ ঘণ্টা আগেপিএএফের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে মানবিক সাহায্যের জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় শহীদ হয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় ও বিচ সার্ভিসেস দলের তারকা সুলেইমান আল–ওবেইদ। ফিলিস্তিন ফুটবলে সুলেইমান “দ্য গ্যাজেল (হরিণ)”, “দ্য ব্লাক পার্ল (কালো মুক্তা)”, “হেনরি অব প্যালেস্টাইন” এবং “পেলে অব প্যালেস্টাইন ফুটবল” নামে পরিচিত ছিলেন। পাঁচ সন্তান রেখে মারা গেছেন ফিলিস্তিন ফুটবলের এই পেলে।’
গাজায় জন্ম নেওয়া সুলেইমান সার্ভিসেস বিচ ক্লাবের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। এরপর পশ্চিম তীরে গিয়ে সেখানকার ক্লাব আল আমারি ইয়ুথ সেন্টারে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত খেলেন। ২০১০–১১ মৌসুমে ফিলিস্তিনের প্রথম পেশাদার ফুটবল লিগ জেতেন সুলেইমান। আল আমারি ছেড়ে আল শাতিয়া ক্লাবে এক মৌসুম খেলেন সুলেইমান। এরপর গাজা স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে সাউদার্ন গভর্নরেটস প্রিমিয়ার লিগে ২০২৬–১৭ মৌসুমে ১৭ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। পরের মৌসুমে আল খাদামা ক্লাবের হয়েও লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।
আরও পড়ুনলা লিগায় সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া ১০ ফুটবলার৬ ঘণ্টা আগেপিএএফের বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, দুর্দান্ত গতি ও দক্ষতার জন্য ২০০৭ সালে ফিলিস্তিন জাতীয় দলে জায়গা করে নেন সুলেইমান। ২০১৩ সালে জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচটি খেলার আগে ২৪ ম্যাচে করেন ২ গোল। এর মধ্যে সুলেইমানের বিখ্যাত গোলটি ২০১০ সালে পশ্চিম এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন চ্যাম্পিয়নশিপে। ইয়েমেনের বিপক্ষে ‘সিজর্স কিকে’ চোখধাঁধানো গোলটি করেছিলেন।
সুলেইমানের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি এরিক ক্যান্টোনা নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে লিখেছেন, ”‘সাহায্য পাওয়ার আশায় রাফায় অবস্থান করার সময় ফিলিস্তিন জাতীয় দলের তারকা সুলেইমান আল–ওবেইদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। তাকে “ফিলিস্তিনের পেলে” ডাকা হতো। আমরা তাদের আর কত গণহত্যা করতে দেব? ফিলিস্তিন মুক্ত হোক।’”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘লম্বা ক্যারিয়ারে সুলেইমান আল–ওবেইদ ১০০–এর বেশি গোল করে ফিলিস্তিন ফুটবলের অন্যতম উজ্জ্বল তারকায় পরিণত হয়েছিলেন।’ তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে খেলাধুলা ও স্কাউটিং–সংশ্লিষ্ট পরিবারে শহীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬৬২, যেটা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের নির্মূলীকরণ যুদ্ধের মাধ্যমে শুরু হয়। ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন–সংশ্লিষ্ট মৃত মানুষের সংখ্যা ৩২১। এর মধ্যে রয়েছেন খেলোয়াড়, কোচ, প্রশাসক, সংগঠক, রেফারি ও ক্লাবের বোর্ড সদস্য।’
তবে গত ২৩ জুলাই পিএএফের এক্সে করা পোস্টের বরাত দিয়ে ফুটবলপ্যালেস্টাইন ওয়েবসাইট জানিয়েছে, গত ৬৬৯ দিনে ইসরায়েলের হামলায় ৪০০–এর বেশি ফুটবলার নিহত হয়েছেন। সেই পোস্টে তখন জানানো হয়েছিল, সর্বশেষ ৬৫৬ দিনে খেলাধুলা ও স্কাউটিং–সংশ্লিষ্ট ৮০০–এর বেশি নিহত হয়েছেন ইসরায়েলের হামলায়।
গত ২৯ জুলাই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফিলিস্তিন অলিম্পিক কমিটি জানিয়েছে, শুধু জুলাই মাসেই গাজা ও দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের হামলায় ৪০ জন ফিলিস্তিনি অ্যাথলেট নিহত হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘একেকটি দিন যায় আর ফিলিস্তিনের ক্রীড়াঙ্গনে বিয়োগান্ত ঘটনার নতুন অধ্যায় যোগ হয়।’
গাজায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক মারা গেছেন। আহত হয়েছেন দেড় লাখের বেশি; তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম প্রেসটিভি।