ভারত–পাকিস্তান চলমান পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে ভারতীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি। তিনি বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের গণমাধ্যম বিশ্বাসযোগ্য সংবাদকক্ষ না হয়ে কার্টুন নেটওয়ার্কে পরিণত হয়েছে।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন আফ্রিদি। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়কের মন্তব্যটি এসেছে এমন সময়ে, যখন একই দিনে ভারত ও পাকিস্তানের টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আইপিএল ও পিএসএল বন্ধ হয়ে গেছে।

গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারী হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত ৬ মে দেশটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এক দিন পর পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে ড্রোন হামলার ঘটনাও ঘটে। এর মধ্যে রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সে ড্রোনের আঘাতে একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ দিনই রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামে পিএসএলে পেশোয়ার–করাচি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল।

স্টেডিয়াম এলাকায় ড্রোন হামলার পর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ম্যাচ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়। আজ সকালে জানানো হয়, এবারের আসরে পিএসএলের আর কোনো ম্যাচে পাকিস্তানে হবে না। বাকি আট ম্যাচ সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হবে। যদিও রাতে আরেক সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে পিএসএল স্থগিতের খবরই দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যেই গতকাল রাতে ধর্মশালায় আইপিএলের পাঞ্জাব কিংস–দিল্লি ক্যাপিটালস ম্যাচ নিরাপত্তার কারণে মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই সময়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তে হামলা করেছে বলে জানায় ভারত।
আজ বিকেলে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই জানায়, আইপিএলের চলমান আসর এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। বিদেশি খেলোয়াড়দের যত দ্রুত সম্ভব নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোরও উদ্যোগ নিয়েছে ভারতের বোর্ড।

দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খেলা বন্ধের পর (পিএসএল আনুষ্ঠানিক স্থগিতের আগে) আফ্রিদি এক্স পোস্টে বিষয়টি তুলে ধরে লিখেছেন, ‘খেলাধুলা সীমান্ত, ধর্ম আর রাজনীতির ঊর্ধ্বে। আজ তা আঘাতের মুখে—পিএসএল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে দুবাইয়ে, আইপিএল স্থগিত আর রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের বাইরে ভারতীয় ড্রোন হামলা। একসময় ক্রিকেট আমাদের একত্র করেছিল। আজ তা সংঘাতের আঘাতে রক্তাক্ত।’

দুই দেশের যুদ্ধাবস্থার মধ্যে ভারতীয় গণমাধ্যম সাংবাদিকতা থেকে দূরে সরে গেছে বলে অভিযোগ পাকিস্তানের হয়ে পাঁচ শর বেশি ম্যাচ খেলা আফ্রিদি, ‘ভারতীয় গণমাধ্যম সত্যনিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতার মতো সাংবাদিকতার মূল্যবোধ রক্ষার বদলে পরিণত হয়েছে একটি ব্যঙ্গচিত্রে, বিশ্বাসযোগ্য বার্তাকক্ষের বদলে কার্টুন নেটওয়ার্কে।’

পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে আবার মাঠে খেলা ফিরুক, এই প্রত্যাশা জানিয়ে আফ্রিদি লিখেছেন, ‘স্টাম্পগুলো আবার দাঁড়াক। শুধু খেলার জন্য নয়, শান্তির জন্য।’

বর্তমানে ভারতে শহীদ আফ্রিদির এক্স ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ রয়েছে। গত সপ্তাহে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছিল, পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারেরসামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট ভারতে ব্লক করে রাখা হয়েছে, এরমধ্যে বাবর আজম, শাহিন আফ্রিদি, মোহাম্মদ রিজওয়ানদের পাশাপাশি শহীদ আফ্রিদিও আছেন। ভারত থেকে তাঁদের অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করলে ‘এই অ্যাকাউন্ট বর্তমানে ভারতে প্রবেশযোগ্য নয়। এটি একটি আইনি অনুরোধ মেনে কনটেন্টটি সীমিত করার কারণে হয়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প এসএল

এছাড়াও পড়ুন:

কুয়েত, বাহরাইন, আমিরাতের আকাশপথ আবার সচল

কাতার ও ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল কুয়েত, বাহরাইন ও আমিরাতের আকাশপথ। পরে এই তিন দেশ তাদের আকাশপথ আবার সচল করেছে। কুয়েত ও বাহরাইনের আকাশপথ আবারো খুলে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশ দুটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।

কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর আকাশপথ বন্ধ ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরগুলোর কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার কথা জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্তৃপক্ষও।

ইরাক ও কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর কথা নিশ্চিত করেছে ইরান। এক বিবৃতিতে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, ‘ইয়া আবা আব্দুল্লাহ আল হুসেইন’ সাংকেতিক নাম ধারণ করে বিপ্লবী গার্ড বাহিনী কাতারের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। ‘বাশারাত ফাতেহ’ অপারেশনে কাতারের উদেইদ ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তু’ করে ‘বিধ্বংসী ও শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করা হয়েছে।

বিবৃতির বরাত দিয়ে ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, কাতারের আল উদেইদে অবস্থিত আমেরিকান ঘাঁটিতে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। গত সপ্তাহে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন বিমান হামলার প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে। এর আগে, কাতার নিশ্চিত করেছে ইরান থেকে মোট ১৯টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র একটি ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে।

হামলার পর ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) বলেছে, হোয়াইট হাউস ও তাদের মিত্রদের প্রতি ইরানের বার্তা ‘সুস্পষ্ট’। ইরানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার উপর কোনো আক্রমণকে ‘খামোখা ছেড়ে দেওয়া হবে না’।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই অভিযান সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের নির্দেশে এবং খাতাম আল আম্বিয়া কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে। 

এই বিবৃতির কিছু আগে কাতারের রাজধানী দোহা এবং এর উপকণ্ঠ লুসাইলে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। আকাশে প্রজেক্টাইল দেখা গেছে।

সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই সফল অভিযানে ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলায় যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ বোমা ব্যবহার করেছিল তার সমান ছিল। শক্তিশালী ইরানি বাহিনীর হামলায় যে ঘাঁটিটি লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল তা কাতারের নগর স্থাপনা এবং আবাসিক এলাকা থেকে অনেক দূরে ছিল।

যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, তারা ১৪টি বোমা দিয়ে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। এর কয়েক মিনিট আগে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সি জানায়, কাতার ও ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ‘বিশারাত ফাতেহ’ এবং ‘ইয়া আবা আব্দুল্লাহ’ কোড নামে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে।

তাসনিম জানায়, ‘বিশারাত ফাতেহ’ ও ‘ইয়া আবা আবদুল্লাহ’ নামে এসব হামলা চালানো হয়েছে। এসব হামলায় একাধিক ওয়ারহেড বা ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম খাইবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। 

আইআরজিসির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থাটি জানাচ্ছে, এই প্রথমবার এই ক্ষেপণাস্ত্র কোনো হামলায় ব্যবহার করা হলো। সেই সঙ্গে হামলায় আধুনিক ড্রোনও ব্যবহার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ