গত ৩ যুগে ওসমানীনগরের কালাসারা হাওরের কৃষির চিত্র বদলে গেছে। অপরিকল্পিত আবাসনে নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি। এতে করে অর্ধলক্ষাধিক মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছে।
ওসমানীনগরের ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র গোয়ালাবাজারের পূর্বে কালাসারা হাওর। এক সময় ওই হাওরজুড়ে ফসলি জমি ছাড়া কিছুই চোখে পড়ত না। পরিবেশ বদলে পরিবর্তন হয়ে গেছে সেই দৃশ্য। গোটা এলাকা পরিণত হয়েছে আবাসিক এলাকায়। যেভাবে কৃষিজমি ভরাট করে বসতভিটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে, তাতে আগামী একযুগ পর হাওর এলাকায় কৃষিজমি খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে।
শুধু এই হাওর নয়, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে প্রায় একই অবস্থা বিরাজ করছে। কৃষিজমির অবাধ ব্যবহারের কারণে ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে আসছে কৃষির পরিধি, হ্রাস পাচ্ছে কৃষির উৎপাদন। ধানের উন্নত জাত আবিষ্কার না হলে অনেক আগেই খাদ্য ঘাটতি দেখা দিত। এভাবে কৃষিজমি কমতে থাকলে অদূরভবিষ্যতে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে। 
জানা যায়, প্রবাসীঅধ্যুষিত ওসমানীনগরে এক সময় কৃষির পরিধি ছিল ব্যাপক। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ কৃষিকে কেন্দ্র করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রবাসীরা রেমিট্যান্সের টাকা দিয়ে ফসল পাওয়ার উদ্দেশ্যে কৃষিজমিই বেশি ক্রয় করতেন।  পরে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে এবং নগরায়ণের দিকে ধাবিত হয়। প্রবাসীদেরও কৃষির প্রতি অনীহা আসে এবং বাসাবাড়ি তৈরিতে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। যার কারণে অপরিকল্পিত নগরায়ণের লক্ষ্যে শুরু হয় কৃষিজমির অবাধ ব্যবহার। কৃষিজমি ভরাট করে বাসাবাড়ি, মার্কেট ও বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান নির্মাণের কারণে ক্রমেই কমতে থাকে জমির পরিমাণ। কমে যাওয়া জমির অধিকাংশতে আমন ও বোরো চাষ করা হতো এক সময়।
গত প্রায় তিন যুগে ওসমানীনগরে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি কমে বদলে গেছে প্রাকৃতিক দৃশ্য। এখন জমির পরিবর্তে দালানকোঠা ও বসতবাড়িই চোখে পড়ে বেশি। বিগত সময়ের তুলনায় জমির দামও বেড়েছে অনেক গুণ। এমনকি প্রাচীন মানচিত্রের সবকিছুই বদলে গেছে এখানে। বিশেষ করে এলাকায় যোগাযোগের নতুন-পুরোনো সড়কের পাশে যেসব কৃষিজমি ছিল সেগুলো প্রায় সবই পরিণত হয়েছে বসতবাড়িতে। 
কৃষিজমির টপসয়েল কাটার কারণে জমির উর্বরা শক্তি কমে যাওয়ায় শুধু রাসায়নিক সারের ওপরে নির্ভশীল হয়ে ফসল ফলাতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন কমার পাশাপাশি পরিবেশের ক্ষতিসাধন হচ্ছে। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী কম টাকায় জমির টপসয়েল ক্রয় করে কেটে নিয়ে বিক্রি করছে।
কথা বলা জানা গেছে, নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়নাল আবেদীন এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি অভিযানে জরিমানাসহ মাটিকাটার এক্সক্যাভেটর জব্দ করেছেন।  গোয়ালাবাজারের কালাসারা হাওর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিশাল অংশজুড়ে আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে। সেখানে বসবাস করছে অনেকগুলো পরিবার। বাজারসংলগ্ন কৃষি জমিতে নির্মিত উপজেলা হাসপাতালকে কেন্দ্র করে সড়কের নিকটবর্তী জমিগুলো ভরাট করে ভিটা তৈরি করা হয়েছে। বাজারের নিকটবর্তী গ্রামতলা, তেরহাতি, ব্রাহ্মণগ্রাম, ইসলাশপুর এলাকায় একই অবস্থা। এ ছাড়া তাজপুর, দয়ামীর ও সাদিপুর ইউনিয়নেও এমন চিত্র চোখে পড়ে। কুরুয়া এলাকায় কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, গোডাউন, মিনারেল ওয়ারটার তৈরির কারখানা, পেট্রোলপাম্পসহ অন্যান্য স্থাপনা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী, ২১ হাজার ৭৮০ হেক্টর আয়তনের এই উপজেলায় নিট ফসলি জমির পরিমাণ ১৪ হাজার ৪ হেক্টর। এর মধ্যে মাত্র ৮২০ হেক্টর জমিতে বছরে তিনবার ফসল ফলানো সম্ভব হয়। ৯ হাজার ১৮৪ হেক্টর জমিতে বছরের দু’বার এবং ৪ হাজার হেক্টর জমিতে বছরে একবার ফসল ফলানো হয়। এ ছাড়া সাময়িক পতিত জমি ১ হাজার ১৬২ হেক্টর এবং স্থায়ী পতিত জমির পরিমাণ ১৪০ হেক্টর।
তথ্যানুযায়ী, প্রতি বছর জমির বড় একটি অংশ অনাবাদি পড়ে থাকে। যে জমিগুলো থেকে পানির রিজার্ভার এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় জমি অনাবাদি থাকার অন্যতম কারণ। উপজেলার ১২টি হাওর, ৬টি নদী ও ৬৯টি খাল। মানুষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে  নদী, খাল ও হাওরগুলো প্রায় মরে গেছে।  ফলে পানি নিষ্কাশন ও রিজার্ভার না থাকায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট দেখা দেয়। তিনটি ফসলি মৌসুমে এখানে অর্ধলক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়ে থাকে। মরে যাওয়া নদী-নালা ও খাল-বিলগুলো উদ্ধার করে খননের মাধ্যমে পানির রিজার্ভার ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে অনাবাদি জমিগুলোকে তিনটি ফসলের আওতায় আনা সম্ভব। সেটি হলে প্রতিবছর আরও অর্ধলক্ষাধিক মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। 
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উম্মে তামিমা বলেন,  ধানের উন্নত জাত আবিষ্কার না হলে অনেক আগেই খাদ্য ঘাটতি দেখা দিত। যেভাবে কৃষিজমি কমছে তাতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ওসম ন নগর এল ক য় পর ম ণ উপজ ল ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী, প্রতিবেশী গ্রেপ্তার

রংপুরের মিঠাপুকুরে ধর্ষণের শিকার হয়ে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় তার বাবা শনিবার মামলা করেছেন। এদিনই অভিযান চালিয়ে প্রতিবেশী একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ভুক্তভোগী ছাত্রী উপজেলার একটি গ্রামের দিনমজুরের মেয়ে। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মাসুদ রানা (৪২)। তিনি সম্পর্কে শিশুটির প্রতিবেশী চাচা।

মামলার এজাহারে জানা গেছে, শিশুটি স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন সে। সম্পর্কের চাচা মাসুদ রানা গত বছরের ৮ নভেম্বর চকলেট ও বিস্কুট খাওয়ানোর কথা বলে তাকে পাশের আমবাগানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এরপর বিভিন্ন স্থানে একই ঘটনা ঘটালে শিশুটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। সম্প্রতি মেয়ের শারীরিক পরিবর্তন বুঝতে পারেন মা। শনিবার চিকিৎসকের কাছে নিয়ে তার শারীরিক পরীক্ষা করালে চিকিৎসক জানান, মেয়েটি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। 

পরিবারের সদস্যরা শিশুটির কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানায়, প্রতিবেশী মাসুদ রানা দীর্ঘদিন ধরে তার সঙ্গে ‘খারাপ কাজ’ করে আসছে। বিষয়টি জানার পর তার বাবা মামলা করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাড়ি থেকে মাসুদকে গ্রেপ্তার করে।

শিশুটির বাবা বলেন, ‘মোর ছইলটা (মেয়েটা) একনা হাবাগোবা (অটিজম) টাইপের। মাসুদ রানা সুযোগ পাইয়া মোর ছইলটার সর্বনাশ করি দেছে। ইয়ার উপযুক্ত বিচার চাও।’ 

মা জানান, শিশুটির বয়স ১৩ বছর।

এ বিষয়ে ‎মিঠাপুকুর থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ