‘গুরুতর গোয়েন্দা তথ্য’ পেয়ে ভারত-পাকিস্তানকে থামিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
Published: 11th, May 2025 GMT
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা সিএনএনকে জানিয়েছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাতের সময় যুক্তরাষ্ট্র গুরুতর গোয়েন্দা তথ্য পায়, যার ফলে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সসহ শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা বিষয়টিতে সক্রিয় হস্তক্ষেপ শুরু করেন।
পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তান কয়েকদিন ধরে উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে সম্পূর্ণ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল, কিন্তু এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে, দুই দেশ একটি ‘তাৎক্ষণিক ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে’ সম্মত হয়েছে।
দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার শনিবার রাতে সিএনএন লিখেছে, গোয়েন্দা তথ্যের প্রকৃতি স্পর্শকাতর হওয়ায় তা প্রকাশ করা হয়নি, তবে জানা গেছে ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও এবং হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ সুসি ওয়াইলসসহ একটি শীর্ষ মার্কিন প্রশাসনিক দল বিষয়টির ওপর নিবিড় নজর রাখছিলেন।
আরো পড়ুন:
কুখ্যাত আলকাট্রাজ কারাগার পুনরায় চালুর নির্দেশ ট্রাম্পের
বিদেশি সিনেমার ওপর শতভাগ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের
শুক্রবার (৯ মে) সকালে তারা গুরুত্বপূর্ণ একটি গোয়েন্দা তথ্য পান, যা তাদের যুক্তরাষ্ট্রের গভীরতর সম্পৃক্ততার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে বাধ্য করে।
এরপর, ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা জানান এবং দুপুরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলেন। কর্মকর্তাদের মতে, ভ্যান্স মোদিকে জানান যে, হোয়াইট হাউস মনে করছে সপ্তাহান্তে সংঘাত মারাত্মকভাবে বাড়তে পারে।
সিএনএন লিখেছে, ভ্যান্স মোদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে ও উত্তেজনা প্রশমনের বিভিন্ন পথ বিবেচনার পরামর্শ দেন।
গোপন কূটনৈতিক উদ্যোগ সম্পর্কে এই বিবরণ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার আগে প্রকাশিত হয়নি, যা এটিকে আরো তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, তাদের বিশ্বাস ছিল যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তখন আর কোনো কার্যকর যোগাযোগ ছিল না এবং তাই তাদের আবার আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে হস্তক্ষেপ জরুরি ছিল।
মোদিকে একটি সম্ভাব্য বিকল্প পথের প্রস্তাব দেন ভ্যান্স , যা মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, পাকিস্তান গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিল। তবে এর নির্দিষ্ট বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি।
নেপথ্যের কাহিনি
প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ফোনালাপের পর যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা, মারকো রুবিওসহ রাতভর কাজ করেছেন এবং ভারতের ও পাকিস্তানের সমকক্ষদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করেছেন।
রুবিও অবশ্য মঙ্গলবার থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টায় যুক্ত ছিলেন। এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, “তখন এটা স্পষ্ট ছিল যে, দুই দেশের মধ্যে কোনো কথাবার্তাই হচ্ছিল না।”
সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন আরো লিখেছে, “সপ্তাহের শুরুতে লক্ষ্য ছিল ভারত ও পাকিস্তানকে সরাসরি আলোচনায় উৎসাহিত করা। সেই কথোপকথনের মাধ্যমেই মার্কিন কর্মকর্তারা উভয় পক্ষের জন্য সম্ভাব্য সমাধানের পথ সম্পর্কে ধারণা পান, যা যোগাযোগের ফাঁক পূরণে সহায়তা করে এবং শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়।”
মার্কিন কর্মকর্তারা স্পষ্ট করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন সরাসরি যুদ্ধবিরতির চুক্তি রচনা করেনি, বরং তাদের ভূমিকা ছিল যোগাযোগে সহায়তা করার।
সিএনএন বলছে, সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে টার্নিং পয়েন্ট ছিল ভ্যান্সের মোদির সঙ্গে ফোনালাপ। ট্রাম্প প্রশাসনের বিশ্বাস ছিল, ভ্যান্সের মোদির সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, যা গত মাসে ভারত সফরে আরো গভীর হয়, তা এই পর্বে বড় পার্থক্য তৈরি করতে পারে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এই ফোনালাপের মাত্র এক দিন আগে ভ্যান্স এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এ ধরনের সংঘাত ‘আমাদের বিষয় না’।
ফক্স নিউজকে ভ্যান্স বলেন, “আমরা কেবল এই দেশগুলোকে একটু শান্ত হতে উৎসাহিত করতে পারি, কিন্তু এমন যুদ্ধে জড়াতে পারি না যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরের এবং যার সঙ্গে আমেরিকার তেমন সম্পর্কও নেই।”
“আমেরিকা ভারতকে অস্ত্র নামাতে বলার অধিকার রাখে না। পাকিস্তানকেও বলার অধিকার নেই। তাই আমরা কূটনৈতিক পথে কাজ করে যাব,” যোগ করেন তিনি।
শনিবারের এক দিনের তীব্র লড়াইয়ের পর যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি আসে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির তদারকি কীভাবে করা হবে, তার সুনির্দিষ্ট বিবরণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
যদিও ট্রাম্প ও পাকিস্তান এই সমঝোতাকে মার্কিন মধ্যস্থতার ফল বলে দাবি করেছে, ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- এটি সরাসরি একটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা।
শনিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেন, পাকিস্তান ও ভারত ‘পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে’ সম্মত হয়েছে।
ট্রুথ সোশ্যাল-এ দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প উভয় দেশকে ‘বুদ্ধিমত্তা ও সাধারণ বিবেচনার’ জন্য প্রশংসা করেন, কারণ তারা সংঘাতের চেয়ে কূটনীতিকে বেছে নিয়েছেন।
পরবর্তী সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও একটি পৃথক বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন, যেখানে তিনি বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান কেবল যুদ্ধ বন্ধ করতেই নয়, বরং একটি নিরপেক্ষ স্থানে বিস্তৃত বিষয়ে আলোচনা শুরু করতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে।”
রুবিও জানান, তিনি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ রাখছিলেন।
এই আলোচনায় যারা ছিলেন: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস.
এটি উল্লেখযোগ্য যে, যেখানে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকে প্রশংসা করেছে, ভারত মার্কিন ভূমিকাকে গুরুত্বহীন হিসেবে তুলে ধরেছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এক্স-এ পোস্টে লিখেছেন, “আঞ্চলিক শান্তি প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব ও সক্রিয় ভূমিকার জন্য আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাই।” এই পোস্টটি ট্রাম্পের ঘোষণা আসার তিন ঘণ্টা পর প্রকাশিত হয়।
অন্যদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি তার ঘোষণায় মার্কিন ভূমিকাকে একেবারেই উল্লেখ করেননি। ভারতের একটি সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, এই সমঝোতা ‘সম্পূর্ণভাবে সরাসরি’ দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই হয়েছে।
ঢাকা/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ম র ক ন কর মকর ত র পরর ষ ট র স এনএন সমঝ ত
এছাড়াও পড়ুন:
রণতরিসহ ডজনখানেক যুদ্ধজাহাজ ও ১৫ হাজার সেনা মোতায়েন, ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হামলা কি আসন্ন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলায় হামলা চালানোর বিষয়ে তিনি অনেকটাই মনস্থির করে ফেলেছেন। সম্প্রতি উচ্চপর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তারা তাঁকে কয়েক দফায় এ বিষয়ে ব্রিফ করেন। এরপর তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি আরও জোরদার করা হয়েছে।
চারটি সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন বলেছে, মার্কিন কর্মকর্তারা চলতি সপ্তাহে ভেনেজুয়েলায় সামরিক অভিযান পরিচালনার বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে ট্রাম্পকে ব্রিফ করেন। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বিস্তৃত অভিযান শুরু করলে কী কী লাভ-ক্ষতি হতে পারে, তা পর্যালোচনা করছেন তাঁরা।
এদিকে, ‘অপারেশন সাউদার্ন স্পিয়ার’ নামে পেন্টাগন ঘোষিত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ক্যারিবীয় অঞ্চলে ১২টির বেশি যুদ্ধজাহাজ এবং ১৫ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী।
গত শুক্রবার ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে অবৈধ অভিবাসীর ঢল ও মাদক পাচার বন্ধ করতে তিনি তাঁর লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছেন। এয়ারফোর্স ওয়ান উড়োজাহাজে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি অনেকটা মনস্থির করে ফেলেছি। সেটা কেমন হবে, আমি আপনাদের ঠিক বলতে পারছি না, তবে আমি একরকম সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি।’
ট্রাম্পকে কর্মকর্তারা কী বলেছেন
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইনসহ মার্কিন কর্মকর্তাদের ছোট একটি দল ট্রাম্পকে ব্রিফ করে। এরপর বৃহস্পতিবার ‘সিচুয়েশন রুমে’ বড় পরিসরে জাতীয় নিরাপত্তা দলের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক হয়। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওসহ অন্য শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুটি বৈঠকেই ট্রাম্প ও তাঁর কর্মকর্তারা সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করেন। ট্রাম্পকে ভেনেজুয়েলা নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে বিভিন্ন বিকল্প পথ দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সামরিক বা সরকারি স্থাপনায় বিমান হামলা, মাদক পাচারের রুটগুলোয় হামলা অথবা মাদুরোকে উৎখাতে আরও সরাসরি প্রচেষ্টা চালানোর বিষয়ে বলা হয়েছে। এর আগে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ভেনেজুয়েলার ভেতরে কোকেন উৎপাদনকেন্দ্র এবং মাদক পাচারের রুটগুলো লক্ষ্য করে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে ট্রাম্প ভাবছেন।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড চলতি সপ্তাহের শুরুতে লাতিন ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে পৌঁছেছে। এই রণতরি যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সবচেয়ে মারাত্মক যুদ্ধ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত। সামরিক বাহিনীর প্রায় ১৫ হাজার সদস্য এবং ১ ডজনের বেশি যুদ্ধজাহাজ সেখানে মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।শেষ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে সরেও আসতে পারেন ট্রাম্প। গত মাসে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি সিআইএকে (কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা) দেশটিতে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিয়েছেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে আইনপ্রণেতাদের বলেছেন, ভেনেজুয়েলার ভেতরে স্থল অভিযান চালানোর পক্ষে কোনো আইনি ভিত্তি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নেই। যদিও প্রয়োজন হলে তাঁরা এমন আইন তৈরি করে নিতে পারেন। সমপ৶তি ট্রাম্প সিবিএসের ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি ভেনেজুয়েলার ভেতরে হামলার কথা ভাবছেন না। যদিও এর আগে তিনি এ ধরনের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
ট্রাম্পের বৈঠকের বিষয়ে অবগত সূত্র বলছে, ব্যর্থ হতে পারে বা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপের ব্যাপারে আদেশ দেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পকে সতর্ক বলে মনে হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প