ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা সিএনএনকে জানিয়েছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাতের সময় যুক্তরাষ্ট্র গুরুতর গোয়েন্দা তথ্য পায়, যার ফলে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সসহ শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা বিষয়টিতে সক্রিয় হস্তক্ষেপ শুরু করেন।

পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তান কয়েকদিন ধরে উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে সম্পূর্ণ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল, কিন্তু এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে, দুই দেশ একটি ‘তাৎক্ষণিক ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে’ সম্মত হয়েছে।

দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার শনিবার রাতে সিএনএন লিখেছে, গোয়েন্দা তথ্যের প্রকৃতি স্পর্শকাতর হওয়ায় তা প্রকাশ করা হয়নি, তবে জানা গেছে ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও এবং হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ সুসি ওয়াইলসসহ একটি শীর্ষ মার্কিন প্রশাসনিক দল বিষয়টির ওপর নিবিড় নজর রাখছিলেন।

আরো পড়ুন:

কুখ্যাত আলকাট্রাজ কারাগার পুনরায় চালুর নির্দেশ ট্রাম্পের

বিদেশি সিনেমার ওপর শতভাগ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের

শুক্রবার (৯ মে) সকালে তারা গুরুত্বপূর্ণ একটি গোয়েন্দা তথ্য পান, যা তাদের যুক্তরাষ্ট্রের গভীরতর সম্পৃক্ততার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে বাধ্য করে।

এরপর, ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা জানান এবং দুপুরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলেন। কর্মকর্তাদের মতে, ভ্যান্স মোদিকে জানান যে, হোয়াইট হাউস মনে করছে সপ্তাহান্তে সংঘাত মারাত্মকভাবে বাড়তে পারে।

সিএনএন লিখেছে, ভ্যান্স মোদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে ও উত্তেজনা প্রশমনের বিভিন্ন পথ বিবেচনার পরামর্শ দেন।

গোপন কূটনৈতিক উদ্যোগ সম্পর্কে এই বিবরণ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার আগে প্রকাশিত হয়নি, যা এটিকে আরো তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, তাদের বিশ্বাস ছিল যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তখন আর কোনো কার্যকর যোগাযোগ ছিল না এবং তাই তাদের আবার আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে হস্তক্ষেপ জরুরি ছিল।

মোদিকে একটি সম্ভাব্য বিকল্প পথের প্রস্তাব দেন ভ্যান্স , যা মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, পাকিস্তান গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিল। তবে এর নির্দিষ্ট বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি।

নেপথ্যের কাহিনি

প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ফোনালাপের পর যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা, মারকো রুবিওসহ রাতভর কাজ করেছেন এবং ভারতের ও পাকিস্তানের সমকক্ষদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করেছেন।

রুবিও অবশ্য মঙ্গলবার থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টায় যুক্ত ছিলেন। এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, “তখন এটা স্পষ্ট ছিল যে, দুই দেশের মধ্যে কোনো কথাবার্তাই হচ্ছিল না।”

সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন আরো লিখেছে, “সপ্তাহের শুরুতে লক্ষ্য ছিল ভারত ও পাকিস্তানকে সরাসরি আলোচনায় উৎসাহিত করা। সেই কথোপকথনের মাধ্যমেই মার্কিন কর্মকর্তারা উভয় পক্ষের জন্য সম্ভাব্য সমাধানের পথ সম্পর্কে ধারণা পান, যা যোগাযোগের ফাঁক পূরণে সহায়তা করে এবং শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়।”

মার্কিন কর্মকর্তারা স্পষ্ট করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন সরাসরি যুদ্ধবিরতির চুক্তি রচনা করেনি, বরং তাদের ভূমিকা ছিল যোগাযোগে সহায়তা করার।

সিএনএন বলছে, সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে টার্নিং পয়েন্ট ছিল ভ্যান্সের মোদির সঙ্গে ফোনালাপ। ট্রাম্প প্রশাসনের বিশ্বাস ছিল, ভ্যান্সের মোদির সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, যা গত মাসে ভারত সফরে আরো গভীর হয়, তা এই পর্বে বড় পার্থক্য তৈরি করতে পারে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এই ফোনালাপের মাত্র এক দিন আগে ভ্যান্স এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এ ধরনের সংঘাত ‘আমাদের বিষয় না’।

ফক্স নিউজকে ভ্যান্স বলেন, “আমরা কেবল এই দেশগুলোকে একটু শান্ত হতে উৎসাহিত করতে পারি, কিন্তু এমন যুদ্ধে জড়াতে পারি না যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরের এবং যার সঙ্গে আমেরিকার তেমন সম্পর্কও নেই।”

“আমেরিকা ভারতকে অস্ত্র নামাতে বলার অধিকার রাখে না। পাকিস্তানকেও বলার অধিকার নেই। তাই আমরা কূটনৈতিক পথে কাজ করে যাব,” যোগ করেন তিনি।

শনিবারের এক দিনের তীব্র লড়াইয়ের পর যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি আসে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির তদারকি কীভাবে করা হবে, তার সুনির্দিষ্ট বিবরণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

যদিও ট্রাম্প ও পাকিস্তান এই সমঝোতাকে মার্কিন মধ্যস্থতার ফল বলে দাবি করেছে, ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- এটি সরাসরি একটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা।

শনিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেন, পাকিস্তান ও ভারত ‘পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে’ সম্মত হয়েছে।

ট্রুথ সোশ্যাল-এ দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প উভয় দেশকে ‘বুদ্ধিমত্তা ও সাধারণ বিবেচনার’ জন্য প্রশংসা করেন, কারণ তারা সংঘাতের চেয়ে কূটনীতিকে বেছে নিয়েছেন।

পরবর্তী সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও একটি পৃথক বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন, যেখানে তিনি বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান কেবল যুদ্ধ বন্ধ করতেই নয়, বরং একটি নিরপেক্ষ স্থানে বিস্তৃত বিষয়ে আলোচনা শুরু করতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে।”

রুবিও জানান, তিনি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ রাখছিলেন।

এই আলোচনায় যারা ছিলেন: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস.

জয়শঙ্কর, উভয় দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা- আজিত দোভাল (ভারত) ও আসিম মালিক (পাকিস্তান)।

এটি উল্লেখযোগ্য যে, যেখানে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকে প্রশংসা করেছে, ভারত মার্কিন ভূমিকাকে গুরুত্বহীন হিসেবে তুলে ধরেছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এক্স-এ পোস্টে লিখেছেন, “আঞ্চলিক শান্তি প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব ও সক্রিয় ভূমিকার জন্য আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাই।” এই পোস্টটি ট্রাম্পের ঘোষণা আসার তিন ঘণ্টা পর প্রকাশিত হয়।

অন্যদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি তার ঘোষণায় মার্কিন ভূমিকাকে একেবারেই উল্লেখ করেননি। ভারতের একটি সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, এই সমঝোতা ‘সম্পূর্ণভাবে সরাসরি’ দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই হয়েছে।

ঢাকা/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ম র ক ন কর মকর ত র পরর ষ ট র স এনএন সমঝ ত

এছাড়াও পড়ুন:

নারীর ভোটাধিকার বাতিল চেয়ে যাজকদের মন্তব্যে হেগসেথের সমর্থন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট

নারীর ভোটাধিকার নিয়ে যাজকদের করা নেতিবাচক মন্তব্যের ভিডিও সমর্থন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। এতে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি।

ভিডিওতে একটি খ্রিষ্টান জাতীয়তাবাদী গির্জার একাধিক যাজক মত দেন, নারীদের আর ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।

গত বৃহস্পতিবার রাতে এক্সে পুনঃপ্রকাশ করা হেগসেথের পোস্টে দেখা গেছে, তিনি খ্রিষ্টান জাতীয়তাবাদী এক যাজকের সঙ্গে গভীর ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক রাখেন, যাঁর ধর্ম ও নারীর ভূমিকা বিষয়ে চরমপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি আছে।

হেগসেথ তাঁর পোস্টে সিএনএনের প্রায় সাত মিনিটের এক প্রতিবেদন নিয়ে মন্তব্য করেন। কমিউনিয়ন অব রিফর্মড ইভানজেলিক্যাল চার্চেসের (সিআরইসি) সহপ্রতিষ্ঠাতা ডগ উইলসনের কর্মকাণ্ড নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে সিএনএন। প্রতিবেদনে উইলসনস চার্চের একজন যাজক মার্কিন সংবিধান থেকে নারীর ভোটাধিকার বাতিলের পক্ষে মত দেন। অন্য আরেকজন যাজক বলেন, তাঁর প্রত্যাশিত ‘আদর্শ সমাজে’ মানুষ পরিবারভিত্তিক ভোট দেবে। ভিডিওতে একজন নারী সদস্যকেও বলতে শোনা যায়, তিনি তাঁর স্বামীর প্রতি অনুগত।

ভিডিওটি পোস্ট করে হেগসেথ লিখেছেন, জীবনের সব ক্ষেত্রে খ্রিষ্টধর্মের বিধান প্রভাব বিস্তার করবে। হেগসেথের পোস্টে ১২ হাজারের বেশি লাইক ও ২ হাজারের বেশি শেয়ার হয়। কিছু ব্যবহারকারী ভিডিওতে থাকা যাজকদের মতের সঙ্গে একমত হলেও অনেকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর খ্রিষ্টান জাতীয়তাবাদী ধারণা প্রচারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তবে প্রগ্রেসিভ ইভানজেলিকাল সংগঠন ‘ভোট কমন গুড’-এর নির্বাহী পরিচালক ও যাজক ডগ পাগিট বলেন, ভিডিওতে প্রচারিত মতামত শুধু ‘খ্রিষ্টানদের এক ক্ষুদ্র প্রান্তিক অংশের’ ধারণা এবং হেগসেথের এগুলো প্রচার করাকে তিনি ‘খুবই বিরক্তিকর’ বলে উল্লেখ করেন।

পেন্টাগনের প্রধান মুখপাত্র শন পারনেল গত শুক্রবার অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, হেগসেথ এমন ‘একটি চার্চের গর্বিত সদস্য’, যা সিআরইসির সঙ্গে যুক্ত। তিনি উইলসনের অনেক লেখা ও শিক্ষাকে অত্যন্ত মূল্যায়ন করেন।

গত মে মাসে হেগসেথ তাঁর ব্যক্তিগত যাজক ব্রুকস পোটেইগারকে পেন্টাগনে আমন্ত্রণ জানান। সেখানে তিনি সরকারি কর্মঘণ্টায় একাধিক খ্রিষ্টান প্রার্থনাসভার প্রথমটি পরিচালনা করেন। প্রতিরক্ষা দপ্তরের কর্মী ও সামরিক সদস্যরা বলেন, তাঁরা এ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র সরকারি ই–মেইলে পেয়েছিলেন।

সিএনএনের প্রতিবেদনে উইলসন বলেন, ‘আমি এ দেশকে একটি খ্রিষ্টান দেশ হিসেবে দেখতে চাই এবং চাই বিশ্বও খ্রিষ্টান বিশ্ব হোক।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারীর ভোটাধিকার বাতিল চেয়ে যাজকদের মন্তব্যে হেগসেথের সমর্থন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট