আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা স্পষ্ট করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা যত প্রশ্ন উত্থাপন করছি, যত ধরনের আলোচনা করছি, এই আলোচনার সঙ্গে আসলে নির্বাচন পেছানো-আগানো, এগুলোর সম্পর্ক নেই। নির্বাচনের সাপেক্ষে আমরা যাতে সংস্কারের দাবিগুলো না দেখি।’

সংবিধান সংশোধন প্রস্তাব নিয়ে আজ রোববার সকালে রাজধানীর মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নাহিদ ইসলাম। এই অনুষ্ঠানের আয়োজক বিভিন্ন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ে গঠিত জোট নাগরিক কোয়ালিশন।

অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর এখন বিচারের রোডম্যাপ (পথনকশা) যদি সুস্পষ্ট করা হয়, তাহলে জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করবে। একই সঙ্গে সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হলে নির্বাচনের জন্য আর কারও কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত সময়ে সমঝোতার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের পথে এগিয়ে যেতে পারবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজেরা আলোচনা করে, সমঝোতা করে এগোতে পারে, সেটি বাংলাদেশের জন্য একটা বড় উদাহরণ তৈরি করবে। তিনি বলেন, ‘সিভিল সোসাইটি ছাড়া যদি আমরা সমঝোতায় আসতে পারি, এটা বাংলাদেশের জন্য বড় উদাহরণ হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে আস্থার সংকট, সেটাও দূর হবে। চব্বিশে সৃষ্টি হওয়া ঐক্যের জায়গাটা ধরে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারব।’

জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ গঠনের পক্ষে এনসিপি সুপারিশ করেছে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘সেটা অবশ্যই ভোটের অনুপাতে হতে হবে, আসনের অনুপাতে নয়। আমরা মূল সংবিধান সংস্কারের জন্য বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি উচ্চকক্ষকে। সে ক্ষেত্রে সংবিধানে যেকোনো সংশোধনীর জন্য উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি আর মৌলিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে গণভোটে যাওয়ার প্রস্তাব আমরা করেছি।’

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের জন্য গণপরিষদ প্রয়োজন। গণপরিষদের বিষয়টি শুরু থেকে বলে আসছেন তাঁরা। অন্তর্বর্তীকালীনের জন্য মধ্যম পন্থা হিসেবে তাঁরা বলেছেন, নির্বাচিত সংসদ একই সঙ্গে আইনসভা ও গণপরিষদ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

বিভিন্ন সময়ে হওয়া সংবিধানের সংশোধনীগুলো টেকসই হয়নি উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, এটা (সংশোধনীগুলো) বারবার আদালতে গেছে, পরবর্তী সময়ে আদালত তা বাতিল করে দিয়েছেন। সত্যিকারের মৌলিক পরিবর্তন চাইলে গণপরিষদের মাধ্যমেই যেতে হবে।

এক ব্যক্তির ইচ্ছার পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে, এমন মন্তব্য করে এনসিপির এই নেতা বলেন, গণ–অভ্যুত্থানে এত মানুষ রক্ত দিয়েছেন, কিন্তু সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তনের জন্য সবাই সম্মত হতে পারছে না, এটি দুঃখজনক।

নাহিদ বলেন, ‘সংবিধানকে যদি আপনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ একটা চুক্তি আকারে ধরেন, তাহলে সে চুক্তির সঙ্গে জনগণের একটা আস্থার জায়গা থাকতে হয়। একটা নতুন সংবিধান তৈরি করার মাধ্যমে সে আস্থার জায়গাটা স্থাপন করা যাবে।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আলোকচিত্রী ও নাগরিক কোয়ালিশনের সহ-আহ্বায়ক শহিদুল আলম। অনুষ্ঠানে সংবিধান সংস্কার নিয়ে নাগরিক জোটের ৭ প্রস্তাব তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান। এসব প্রস্তাব কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা তুলে ধরেন অর্থনীতিবিদ ও লেখক জিয়া হাসান।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার ও ইফতেখারুজ্জামান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, এনডিএমের সভাপতি ববি হাজ্জাজ, জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র জন য অন ষ ঠ ন প রস ত ব এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ, শনিবার থেকে তিন ধাপে কর্মবিরতি

সিলেটে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সিলেট জেলা পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ সময় দাবি পূরণ না হলে সব পাথর কোয়ারিতে কর্মবিরতি, পণ্য পরিবহন ও গণপরিবহনে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

কর্মসূচিতে তিনটি ধাপে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে ২৮ জুন (শনিবার) সিলেটের সব পাথর কোয়ারি থেকে লোড-আনলোড পয়েন্টে মালিক-শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টা কর্মবিরতি। দাবি পূরণ না হলে ৩০ জুন থেকে সিলেটের সব পণ্য পরিবহনের মালিক-শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি ও ২ জুলাই থেকে সিলেটে জেলার সব ধরনের পণ্য পরিবহন ও গণপরিবহনে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরিতি।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকা থেকে পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিকেরা বিক্ষোভ মিছিল করে নগরের চৌহাট্টা এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হন। পরে সেখানে বিভিন্ন ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। পরে বেলা দেড়টায় চৌহাট্টা এলাকা থেকে বন্দরবাজার মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল হয়।

কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল জলিল। সিলেটের বিমানবন্দর থানা পাথর ব্যবসায়ী ও স্টোন ক্রাশার মালিক সমিতির সহসভাপতি শাব্বির আহমদের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামী সিলেট মহানগরের আমির ফখরুল ইসলাম, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, জাতীয় নাগরিক পার্টি সিলেট জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দীন সাহান, যুগ্ম সমন্বয়কারী হিসেবে মেজর (অব.) মোস্তফা আনওয়ারুল আজিজ সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দিলু মিয়া, কার্যকরী সভাপতি আবদুস সালাম, সদস্য আলী আহমদ।

আরও পড়ুন‘পাথরের সাম্রাজ্যে’ অভিযান, ৮৭ পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন১৮ জুন ২০২৫

আরও বক্তব্য দেন জাফলং বল্লাঘাট স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামীম পারভেজ, বিছনাকান্দি পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিন, সিলেট সদর পাথর বালু ও স্টোন ক্রাশার মালিক সমবায় সমিতির সদস্য মন্তাজ আলী ও নাজিম উদ্দিন, সালুটিকর পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি দিলু মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি শওকত আলী, সিলেট জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজির আহমদ, জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ খান প্রমুখ।

মানববন্ধন কর্মসূচির একপর্যায়ে সিলেটের জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কের এক পাশ বন্ধ রাখা হয়। এ সময় বক্তারা বলেন, পরিবেশের দোহায় দিয়ে পাথর উত্তোলনের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কারণ, তাঁদের নিকটাত্মীয়রা পাথর আমদানির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। ভিন্ন দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের গরিব মানুষকে মারার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

আরও পড়ুনকোয়ারি থেকে পাথর তুললে কী ক্ষতি হয়২০ জুন ২০২৫

বক্তারা আরও বলেন, দেশের বেশির ভাগ পাথর কোয়ারি লিজ দেওয়া হলেও সিলেটের কোনো পাথর কোয়ারি লিজ দেওয়া হচ্ছে না। কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই, কোনো বিশেষজ্ঞদের মতামত ছাড়াই সিলেটের পাথর কোয়ারি বন্ধ রাখা হয়েছে। এ জন্য সিলেটের পাথর–সংশ্লিষ্ট লাখ লাখ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন। এখন স্টোন ক্রাশারগুলোর বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে গরিব অসহায় মানুষের পেটে আবার লাথি মারা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিলেটে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ, শনিবার থেকে তিন ধাপে কর্মবিরতি