স্পর্শকাতর তথ্য পেয়ে মোদিকে ফোন দেন জেডি ভ্যান্স, তুলে ধরেন সমঝোতার রূপরেখা
Published: 11th, May 2025 GMT
টানা কয়েক দিন ধরে প্রাণঘাতী সংঘাতের পর অস্ত্রবিরতিতে পৌঁছে ভারত-পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান শনিবার একটি অস্ত্রবিরতিতে উপনীত হয়। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এ উত্তেজনার শুরু হয় ২২ এপ্রিল, ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার পর। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন।
এই হামলা ঘিরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনা পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। শুক্রবার সকালে তাঁদের কাছে একটি ‘উদ্বেগজনক’ গোয়েন্দা তথ্য আসে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা সিএনএনকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তাঁদের ভাষ্যমতে, ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা পর্যবেক্ষণ করা মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে জেডি ভ্যান্স ছাড়াও ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্তর্বর্তী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও এবং হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ সুসি ওয়াইলস। তবে উদ্বেগজনক ওই তথ্য স্পর্শকাতর হওয়ায় তা সিএনএনের কাছে পরিষ্কার করা হয়নি। ট্রাম্প প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, এ তথ্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আরও সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখার বিষয়ে একমত হন ভ্যান্স, রুবিও ও ওয়াইলস। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ভ্যান্স নিজেই মোদিকে ফোন করবেন।
গোয়েন্দা সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর নিজেদের পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জানান জেডি ভ্যান্স। তারপর স্থানীয় সময় দুপুরে মোদিকে ফোন করেন তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে স্পষ্ট করে ভ্যান্স বলেন, হোয়াইট হাউস বিশ্বাস করে যে নাটকীয়ভাবে উত্তেজনা বৃদ্ধির উচ্চ আশঙ্কা রয়েছে। ভারতকে সরাসরি পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য ফোনকলে মোদির প্রতি আহ্বান জানান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি উত্তেজনা হ্রাসে সম্ভাব্য বিকল্প বিবেচনা করার পরামর্শও দেন তিনি। ফোনকলে মোদির কাছে সমঝোতার এমন একটি রূপরেখা তুলে ধরা হয়, যা পাকিস্তান গ্রহণ করতে পারে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে সিএনএনকে বিস্তারিত জানাননি মার্কিন কর্মকর্তারা।
সিএনএনের প্রতিবেদন বলছে, ভ্যান্স-মোদির ফোনালাপের পরপরই শুক্রবার রাতভর রুবিওসহ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের অন্য কর্মকর্তারা ভারত ও পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ চালিয়ে যান। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি সমঝোতার খসড়া তৈরিতে সরাসরি যুক্ত ছিল না যুক্তরাষ্ট্র। দুই পক্ষকে আলোচনায় বসানোর ওপরই গুরুত্ব দিয়েছিল তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ ৪৮ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলেও এর কয়েক ঘণ্টা পরেই পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে। ভারতের অভিযোগ, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে পাকিস্তান। অন্যদিকে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ভারতীয় এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটি বলছে, তারা যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একইসঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধেও যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে পাকিস্তান।
পাকিস্তান রোববার ভোরে এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে তারা পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে অঙ্গীকারবদ্ধ। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ভারতের বিরুদ্ধেও যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে এবং জানায়, পাকিস্তানি বাহিনী দায়িত্বশীল ও সংযমীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যুদ্ধবিরতির সফল বাস্তবায়নে যেকোনো জটিলতা সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে যোগাযোগের মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। একইসঙ্গে সীমান্তে অবস্থানরত সৈন্যদেরও সংযম প্রদর্শন করা জরুরি।
এর আগে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফের উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে আন্তর্জাতিক সীমান্ত জুড়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে ভারত।
গভীর রাতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এর তীব্র নিন্দা জানান ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি দাবি করেন, যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান ফের গোলাগুলি শুরু করেছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তবে ভারতীয় সেনারাও এর সমুচিত জবাব দিচ্ছে এবং পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের মোকাবিলায় ভারতীয় সেনাবাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র পরর ষ ট র কর মকর ত
এছাড়াও পড়ুন:
নূর খান ঘাঁটিতে ভারতীয় হামলা মার্কিন হস্তক্ষেপের কারণ: এনওয়াইটি
পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে অবস্থিত নূর খান বিমানঘাঁটিতে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হওয়ার কারণে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করে বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস (এনওয়াইটি)। খবর এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের।
নূর খান হলো পাকিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি। এখান থেকে বিমানবাহিনীর অপারেশন ও ভিআইপি পরিবহনের উড়ান যাতায়াত করে।
গত ৮ মে ফক্স নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স প্রথমে বলেছিলেন যে, “এই সংঘাত (ভারত-পাকিস্তান) আমাদের কোনো বিষয় না।” তবে পাকিস্তানি ও ভারতীয় বিমান বাহিনী আকাশ যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার পর মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দ্রুত পরিবর্তিত হয়।
আরো পড়ুন:
পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেনি: আইএসপিআর প্রধান
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কার কেমন ক্ষতি হলো?
এর আগে, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা সিএনএনকে বলেছিলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের সময় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগজনক গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছিল, যার ফলে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা জোড়ালো করতে বাধ্য হন।
টানা কয়েকদিন ধরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ও সংঘাতের ফলে পারমাণবিক অস্ত্রধারী ভারত ও পাকিস্তান পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছিল, এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, উভয় দেশ ‘তাৎক্ষণিক ও পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে’ সম্মত হয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্যের প্রকৃতি স্পর্শকাতর হওয়ায় তা প্রকাশ না করে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও এবং হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ সুসি ওয়াইলসসহ একটি শীর্ষ মার্কিন প্রশাসনিক দল পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
তবে, সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনাটি ঘটে ৯ মে রাতে, যখন রাওয়ালপিন্ডিতে অবস্থিত নূর খান বিমান ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ ঘটে। ঘাঁটিটি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন এবং জ্বালানি সরবরাহ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। এছাড়া এটি পাকিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানস ডিভিশন থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, এই ডিভিশন পাকিস্তানের আনুমানিক ১৭০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড তত্ত্বাবধান করে।
পাকিস্তানের পারমাণবিক অবস্থানের সঙ্গে পরিচিত সাবেক একজন মার্কিন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, ইসলামাবাদের দীর্ঘদিনের ভয় হলো তার পারমাণবিক কমান্ড অবকাঠামোর ওপর একটি ভয়াবহ হামলা। নূর খান সামরিক ঘাঁটির ওপর ভারতীয় হামলাকে এমন একটি সম্ভাব্য প্রচেষ্টার সংকেত হিসেবে দেখা হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমসকে পাকিস্তানের একজন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর ফোনালাপ উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
পাকিস্তানের কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তান নূর খান সামরিক ঘাঁটির ওপর হামলাকে একটি লাল রেখা হিসেবে দেখেছে, বিশেষ করে দেশের পারমাণবিক অবকাঠামোর কাছাকাছি থাকার কারণে।
গোয়েন্দা সূত্রটি বলেছে, “উভয় পক্ষকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য মার্কিন হস্তক্ষেপ প্রয়োজন ছিল।” তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা উল্লেখ করে বলেন, “চূড়ান্ত পদক্ষেপটি প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে এসেছে।”
শনিবার (১০ মে), মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ভারত এবং পাকিস্তান তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ