ব্যাংকের মালিকানা হস্তান্তরের ক্ষমতা পেল সরকার
Published: 12th, May 2025 GMT
সাময়িক সময়ের জন্য কোনো দুর্বল ব্যাংক সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মালিকানায় নেওয়া যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি মালিকানার কোনো কোম্পানিতে কোনো ব্যাংকের শেয়ার হস্তান্তরের আদেশ দিতে পারবে। এ ধরনের ব্যাংকের শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে। এমন বিধান করে ‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারি করেছে সরকার।
নতুন এ আইনের মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংক অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ, তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি কিংবা নতুন শেয়ার ইস্যুসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কোনো ব্যাংক বন্ধ বা অবসায়নের উদ্যোগও নিতে পারবে তারা।
ইসলামী ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রেও রেজুলেশনের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকের ব্যর্থতার জন্য দায়ী ব্যক্তিকে দেওয়ানি বা ফৌজদারি আইনের মুখোমুখি করা যাবে।
দুর্বল ব্যাংকের জন্য বিভিন্ন নিষ্পত্তির বিধান রেখে গত ১৭ এপ্রিল ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করে উপদেষ্টা পরিষদ। গত শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এ অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। ব্যাংক কোম্পানি আইনে দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সীমাবদ্ধতা থাকায় নতুন এ আইন করার কথা বলেছে সরকার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের আইন আছে।
দুর্বল ব্যাংক নিষ্পত্তির জন্য যে ব্যয় হবে, তা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে আলাদা তহবিল গঠিত হবে। এ তহবিলে সরকারের পাশাপাশি আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, আইডিবির মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থায়ন বা ঋণ নিতে পারবে।
ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশের অধীনে দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সব ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগ ও অন্যান্য দায়িত্ব পালনের কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। পুরো কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আলাদা একটি বিভাগ খুলতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুপারভিশন বিভাগগুলো নিয়মিতভাবে ব্যাংক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার হালনাগাদ তথ্য এ বিভাগে দেবে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা পেশ করবে ওই বিভাগ। খারাপ অবস্থায় পড়া ব্যাংকের জন্য প্রণীত আশু সংশোধনমূলক ব্যবস্থা (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় পরিকল্পনা হাতে নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের অবসায়ন সম্ভাব্যতা, আর্থিক ও পরিচালন প্রক্রিয়ার নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখাসহ বিভিন্ন বিষয় দেখতে হবে। এ ধরনের ব্যাংকের ব্যবসা বা আর্থিক অবস্থার উন্নতি হলে তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিকল্পনা পরিবর্তন করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক নীতিমালা জারি করে। নীতিমালার আওতায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক তথ্যের আলোকে প্রধান কয়েকটি সূচকের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলো চার ভাগে ভাগ করা হবে। যেসব ব্যাংক ক্যাটেগরি-৪ এ থাকবে, দ্রুততম সময়ে তা নতুন অধ্যাদেশের আওতায় নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে। ক্যাটেগরি-৩ এ থাকা ব্যাংকগুলোর ওপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, রেজল্যুশনের অন্যতম উদ্দেশ্য হবে আর্থিক ব্যবস্থায় জনগণের আস্থা ফেরানো, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং ব্যাংকের লেনদেন চলমান রাখা। অকার্যকর ব্যাংক যেন সুশৃঙ্খলভাবে চলতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো ব্যাংক রেজল্যুশন বা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিলে ব্যাংকের কাছে সমস্যার সমাধান চেয়ে সর্বোচ্চ দুই মাস সময় দিয়ে সম্ভাব্য পদক্ষেপের প্রস্তাব নিতে হবে। ব্যাংকের পদক্ষেপ সন্তোষজনক না হলে প্রতিবন্ধকতা দূর করার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের কার্যক্রম সীমিত করা, আন্তঃগ্রুপ সহায়তা চুক্তি, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সেবা চুক্তিসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে পারবে।
জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির সাবেক সভাপতি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, কোনো আইনই খারাপ নয়। তবে সমস্যা হয় প্রয়োগে। আইন যারা প্রয়োগ করবেন, তারা যেন যথাযথভাবে প্রয়োগ করেন, সেই প্রত্যাশা থাকবে। তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অনেক ব্যাংক ভালো করেছে। ব্যাংকগুলোতে সুশাসন ছিল বলেই তা সম্ভব হয়েছে। ফলে নতুন আইনের যাতে ঢালাও প্রয়োগ না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
কোন ধরনের ব্যাংক আওতায় পড়বে
বাংলাদেশ ব্যাংক যদি মনে করে, কোনো ব্যাংক অকার্যকর হয়েছে বা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাহলে এ অধ্যাদেশ অনুযায়ী নিষ্পত্তি করতে পারবে। ব্যাংকটি যদি এমন অবস্থায় পড়ে যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশিত মূলধন বা তারল্য সংরক্ষণের শর্ত পালনে ব্যর্থ হয়েছে, তাহলেও নিষ্পত্তির আওতায় আনা যাবে। এ ছাড়া কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হয়েছে বা হওয়ার পথে কিংবা আমানতকারী বা অন্য পাওনাদারের দায়বদ্ধতা পূরণে অক্ষম হলেও এ অধ্যাদেশের আওতায় আনা যাবে। আবার ২ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ারধারী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যাংকটির সম্পদ বা তহবিল নিজেদের বা অন্যের স্বার্থে প্রতারণামূলক ব্যবহার করলে বাংলাদেশ ব্যাংক এ অধ্যাদেশের আওতায় সমাধান করতে পারবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা
দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনার পুরো কর্তৃত্ব থাকবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। প্রয়োজন মনে হলে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া যাবে। বিদ্যমান শেয়ারধারী বা নতুন শেয়ার ধারকদের মাধ্যমে মূলধন বাড়াতে পারবে। ব্যাংকের শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে। একটি ব্যাংক সরাসরি তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর না করে এক বা একাধিক ব্রিজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে পরবর্তী সময়ে তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে। ব্রিজ ব্যাংকে অর্থায়নে অবদান রাখার জন্য ব্যাংক পুনর্গঠন, রেজল্যুশন তহবিল অথবা আমানত সুরক্ষা তহবিলের ব্যবহার করতে পারবে। ব্যাংকটির মূলধন বা যোগ্য দায় কমানো বা রূপান্তর করতে পারবে। ব্রিজ ব্যাংকে অর্থায়নের জন্য সরকারের কাছেও অনুরোধ করতে পারবে।
ব্রিজ ব্যাংক বলতে কোনো দুর্বল ব্যাংক তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে গঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়া ব্যাংককে বোঝায়। একটি ব্রিজ ব্যাংকের সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। আর একটি তপশিলি ব্যাংক তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তরের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছর সময় নিতে পারবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক দুই কর্মদিবসের জন্য এ ধরনের ব্যাংকের সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত, সীমিত বা বন্ধ করতে পারবে। পরবর্তী সময়ে তিন মাসের জন্য আংশিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত, সীমিত বা বন্ধ করতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে পুরো আর্থিক ব্যবস্থার ওপর সম্ভাব্য প্রভাব যাচাই করতে হবে। আমানতকারীদের জন্য দৈনিক একটি উপযুক্ত পরিমাণ অর্থ উত্তোলনের বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পদের গুণগত মানের প্রকৃত অবস্থা যাচাই করবে। যাচাইয়ের সময় বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক, এমডি বা অন্য কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অপসারণ বা স্থলাভিষিক্ত করতে পারবে। কোন উপায়ে সম্পদের তথ্য যাচাই করতে হবে, তার একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে এ অধ্যাদেশে।
অধ্যাদেশ জারির আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক গত জানুয়ারিতে ছয়টি দুর্বল ব্যাংকের সম্পদ মূল্যায়নে আন্তর্জাতিক অডিট ফার্ম নিয়োগ করে কাজ শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে এসআইবিএল, গ্লোবাল ইসলামী ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের সম্পদের গুণগত মান যাচাইয়ের নিয়োগ পেয়েছে আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াং। কেপিএমজিকে দেওয়া হয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও এক্সিম ব্যাংকের দায়িত্ব। ব্যাংকগুলোর পরিচালকসহ সব ধরনের ঋণ ও বন্ধকি সম্পত্তির গুণগত মান যাচাই ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পরিপালন, ঋণবহির্ভূত ঝুঁকি, বন্ধকি সম্পত্তির বাজারদর, ব্যাংকের ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির বাছাই প্রক্রিয়া, একক গ্রাহকের ঋণসীমার নির্দেশনা পরিপালন, পরিচালনায় যুক্তদের ঋণ, সাবসিডিয়ারির অনুকূলে দেওয়া ঋণসহ বিভিন্ন তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। এর আগে এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। আগের এমডিদের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
আলাদা তহবিল
এ অধ্যাদেশের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংক পুনর্গঠন বা রেজল্যুশন তহবিল নামে আলাদা একটি তহবিল গঠন করতে হবে। এ তহবিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়-সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। তহবিলের অর্থ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাবে। এতে অর্থ জমা হবে প্রধানত দুটি উৎস থেকে– সরকারের ঋণ বা অনুদান এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা উন্নয়ন অংশীদারদের অনুদান বা ঋণ। এ ছাড়া তহবিল বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফা, তপশিলি ব্যাংক থেকে নির্ধারিত হারে ধার্য করা চাঁদা বা অন্য উৎস থেকে পাওয়া অর্থও এ তহবিলে যোগ হবে।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ র বল ব য সহ ব ভ ন ন ধরন র ব য য চ ই কর র ক ষমত এ ধরন র য় গ কর আর থ ক র জন য তহব ল র করত সরক র ত করত ইসল ম অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
বডিক্যাম কী, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় কতটা কাজে দেবে
আগামী ফেব্রুয়ারিতে হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশের জন্য কমপক্ষে ৪০ হাজার বডিওয়্যার ক্যামেরা (বডিক্যাম) সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। পুলিশ সদস্যদের শরীরে এই ক্যামেরা থাকবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল সোমবার কেরানীগঞ্জে সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিটি নির্বাচনী কেন্দ্রে ভোট কীভাবে হচ্ছে, সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে কি না—সেটি দেখার জন্য থাকবে বডিক্যাম। পুলিশের কাছে এখন ১০ হাজারের মতো বডিক্যাম আছে। এমনকি কারারক্ষীদের কাছেও আছে। বিজিবির (বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড) কাছে আছে। আরও ৪০ হাজার বডিক্যাম সংগ্রহের চিন্তা আছে। দেখে নেওয়া যাক এই বডিক্যাম কী, কীভাবে কাজ করে, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় কতটা কার্যকর হবে।
বডিক্যাম কীবডিক্যামকে ‘বডি ক্যামেরা’ বা ‘বডি-ওর্ন ক্যামেরা’ নামেও ডাকা হয়। অন্যান্য ক্যামেরার মতো এতে লেন্স, স্টোরেজ (ইন্টারনাল মেমোরি বা মাইক্রোএসডি), ব্যাটারি ও রেকর্ডিং কন্ট্রোল থাকে। তবে এই ক্যামেরার বিশেষত্ব, এটি একজন মানুষের শরীরে সংযুক্ত থাকে। আকারে ছোট। এই ক্যামেরা রাখার উদ্দেশ্য হলো—সামনের দৃশ্যের ভিডিও করা।
প্রতিটি নির্বাচনী কেন্দ্রে ভোট কীভাবে হচ্ছে, সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে কি না—সেটি দেখার জন্য থাকবে বডিক্যাম। পুলিশের কাছে এখন ১০ হাজারের মতো বডিক্যাম আছে। আরও ৪০ হাজার বডিক্যাম সংগ্রহের চিন্তা আছে।-মেজর জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।বডিক্যাম আলাদাভাবে চালানোর প্রয়োজন হয় না। সচল থাকলে তা লেন্সের আওতায় আসা সব দৃশ্য ভিডিও করে রাখে। ব্যবহারকারীর গতিবিধি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরার গতিবিধিও বদলে যায়। অনেক ক্ষেত্রে বডিক্যাম অডিও রেকর্ড করে রাখে।
বাংলাদেশে কী বডিক্যাম নতুন, কেন ব্যবহার
বডিক্যাম ব্যবহার বাংলাদেশ পুলিশের জন্য নতুন নয়। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ প্রথমবারের মতো বডিক্যাম ব্যবহার শুরু করে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি তখন চালু করা হয়।
চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল মহানগর এবং মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকেও বডিক্যাম দেওয়া হয়। বগুড়া ও কক্সবাজারের ট্রাফিক পুলিশেও পরীক্ষামূলকভাবে এ ক্যামেরার ব্যবহার চালু রয়েছে।
দেশে ভোট কেন্দ্র আছে ৪৫ হাজার। ৪০ হাজার বডিক্যাম কেনা হলে, প্রতি কেন্দ্রে একজন পুলিশ সদস্যকে এ ক্যামেরা দেওয়া সম্ভব হবে। কাজেই এই ক্যামেরার মাধ্যমে খুব বেশি প্রভাব তৈরি করা যাবে বলে মনে হয় না।-আব্দুল আলীম, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য।কেউ ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করছে, এমন ঘটনার ভিডিও করে ট্রাফিক পুলিশ বিভিন্ন যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। আইন লঙ্ঘনের সময়কার ভিডিও থাকায় আইন লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি অভিযোগ অস্বীকার করতে পারেন না। আবার অনেক সময় আইন লঙ্ঘন করার পরও অনেক মানুষ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। বডিক্যাম ব্যবহার করলে আইন লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি পুলিশের ওপর চড়াও হতে পারেন না।
পুলিশ কর্মকর্তারা যাতে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়তে না পারেন, সেটা ঠেকানোও ছিল বডিক্যাম দেওয়ার উদ্দেশ্য। যদিও অভিযোগ আছে, ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা অনেক সময় এ ক্যামেরা বন্ধ রাখেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বডিক্যামের ব্যবহার বাস্তবে তেমন একটা নেই।
দেশে দেশে ব্যবহারবিশ্বের অনেক দেশে অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে বডিক্যাম ব্যবহার করা হয়। যেমন, যুক্তরাজ্যের পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে এ ক্যামেরা ব্যবহার করছে। যুক্তরাজ্য মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়েবসাইটে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, উচ্চগতির যানবাহন থামানো ও তল্লাশি, কোনো সম্পত্তি কিংবা ব্যক্তিকে তল্লাশি ও গ্রেপ্তার, তদন্ত কাজসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের সময় এ ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়।
বডিক্যাম ব্যবহার বাংলাদেশ পুলিশের জন্য নতুন নয়। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ প্রথমবারের মতো বডিক্যাম ব্যবহার শুরু করে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি তখন চালু করা হয়। এরপর চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও বরিশাল মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকেও বডিক্যাম দেওয়া হয়। বগুড়া জেলা পুলিশ ও কক্সবাজার জেলা পুলিশেও পরীক্ষামূলকভাবে এ ক্যামেরার ব্যবহার চালু রয়েছে।ইউরোপ, এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বডিক্যাম ব্যবহার করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পুলিশও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এ ক্যামেরা ব্যবহার করছে।
ভারতের দিল্লি পুলিশও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এ ক্যামেরা ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে। গত ১১ মে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ বাহিনীর আধুনিকায়ন, স্বচ্ছতা বাড়ানো এবং নাগরিকদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলতে বডিক্যাম ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শুরুতে দিল্লি পুলিশ ১ হাজার ৫০০ বডিক্যাম সংগ্রহ করবে। ধাপে ধাপে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দিল্লিতে এর আগে ২০১৬, ২০১৯ ও ২০২২ সালে বডিক্যাম ব্যবহারের পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে তা সফল হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের একজন পুলিশ সদস্য বডিক্যাম দেখাচ্ছেন