দেশপ্রেমিকের সংজ্ঞা কী? বিশ্বের সমষ্টিগত মানুষই অনিবার্যরূপে দেশপ্রেমিক। নিজ দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসাই দেশপ্রেমিকের প্রাথমিক শর্ত। রাজনীতিবিদদেরও দেশপ্রেমিক বলা হয়। আমলাতন্ত্রও দেশপ্রেমিক হিসেবে গণ্য। নাগরিক সমাজ, বিত্তবান ব্যবসায়ী, সুবিধাভোগী মধ্যবিত্ত শ্রেণিরাও দেশপ্রেমিকের তক্‌মা পেয়ে থাকেন। তবে প্রকৃত দেশপ্রেমিক হচ্ছে কৃষক, শ্রমিক তথা মেহনতি মানুষ।  

কৃষক তার অক্লান্ত পরিশ্রমে খাদ্য উৎপাদন করে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। অথচ উৎপাদিত খাদ্য-পণ্যের ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রীত মূল্যের অর্ধেক অর্থও তারা পায় না। মধ্যস্বত্বভোগী চক্র দাদন এবং নানা উপায়ে বাজারদরের বহু কম মূল্যে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য খরিদ করে হাত-বদলে ভোক্তার কাছে যখন ওই খাদ্য-পণ্য পৌঁছায় তখন দর বৃদ্ধির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ কৃষক তার রক্ত-ঘাম-শ্রমে উৎপাদিত খাদ্য-পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাবার ফলে কৃষকের দৈন্যদশার অবসান হয় না। অথচ এই কৃষক খাদ্য উৎপাদন না করলে আমাদের খাদ্য-নিরাপত্তা যে ঝুঁকিতে পড়বে– তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।

আমাদের দেশের জনসংখ্যার তুলনায় শিল্প, কল-কারখানা অপ্রতুল। যেগুলো ছিল, বিশেষ করে পাট শিল্প অর্থাৎ পাটকল বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। আদমজীর মতো বৃহৎ পাটকল বিশ্বব্যাংকের নির্দেশে বন্ধ করে সরকার অমার্জনীয় অপরাধ করেছিল। বিশ্বব্যাংক আমাদের পাটকল বন্ধের নির্দেশনা দেয়, অপরদিকে প্রতিবেশী ভারতকে পাটকল প্রতিষ্ঠার জন্য তাগিদ দেয়।  
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর অনেক শিল্প-কারখানা মব ভায়োলেন্সের শিকারে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, অবাধ লুণ্ঠনের শিকার হয়েছে। এতে অনেক শ্রমিক জীবিকা হারিয়ে পথে বসেছে। আমাদের পুঁজিওয়ালারা প্রচুর অর্থ বিনিয়োগে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। কিন্তু উৎপাদনের মূল চালিকা শক্তি শ্রমিকের নিরাপত্তা ও জীবিকার নিশ্চয়তায় সামান্যই ব্যয় করে। শ্রমিকরা কেবল মজুরি পেয়েই সন্তুষ্ট থাকে। যে কোনো ছুতায় সেই সামান্য মজুরির পথও বন্ধ হয়ে যায়। এই যে আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থা, সেটাও টিকিয়ে এবং বাঁচিয়ে রাখছে শ্রমিকরা। এই শ্রমিকদের দেশপ্রেমিক না বলার উপায় কোথায়! অথচ কৃষক ও শ্রমিকদের দেশপ্রেমিক হিসেবে স্বীকৃতি নেই। একই রাষ্ট্র ও সমাজে তারা বসবাস করে প্রায় মানবেতরভাবে। সকল প্রকার শোষণের কবলে তারাই সর্বাধিক আক্রান্ত হয়ে এসেছে। অপরদিকে যাদের দেশপ্রেমিক হিসেবে গণ্য করা হয়, তাদেরই দেশদ্রোহের অনেক নজির রয়েছে। তাদের অনেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনে যেমন পারঙ্গম, তেমনি দেশের স্বার্থকে স্বীয় স্বার্থে বিকিয়ে দিতেও কসুর করে না।
সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের মালিক রাষ্ট্রের জনগণ। বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত। নির্বাচিত, অনির্বাচিত শাসকরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে রাষ্ট্রের মালিক বনে যায়। আখেরাত পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে বলেই মনে করে। ইতিহাসের শিক্ষা কিন্তু তা বলে না। রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনরা দেশ ও দেশের মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে তোয়াক্কা করে না। জবাবদিহির ধার ধারে না। যেন রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাজা তারা। মর্জিমাফিক দেশ পরিচালনা করে রাজবেশে। অথচ প্রতিটি সরকারই রাষ্ট্রের ম্যানেজার হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য জনরায়ে সরকার গঠনের সুযোগ পেয়ে থাকে। 

তত্ত্বাবধায়ক, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষেত্রে নির্বাহী ক্ষমতার পরিসর আরও সংকীর্ণ। তাদের কাজই হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করা। জনপ্রতিনিধিশূন্য সরকারের পরিসর ওই নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অসাংবিধানিক কোনো সরকার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্তের এখতিয়ার রাখে না। 
মূল বিষয়টি হচ্ছে ক্ষমতা। ক্ষমতা যে মানুষকে মনুষ্যত্ব এবং জাগতিক জ্ঞানকে উৎপাটিত করে দেয়– তার প্রমাণ বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের ক্ষেত্রেই প্রমাণ পাওয়া যায়। দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হিসেবে তাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে নিরঙ্কুশ ক্ষমতায়। ক্ষমতাসীনরা একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাধীনে অগণতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক হতে বিলম্ব করেন না। বাংলাদেশের ক্ষমতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এর ভূরি ভূরি প্রমাণ পাওয়া যাবে। 
বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিকতার পথে ফিরিয়ে আনতে এ যাবৎ অনেক রক্তপাত ঘটেছে। মানুষের ত্যাগ-আত্মত্যাগের অজস্র নজির সৃষ্টি হলেও আত্মদানকারীদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গের অজস্র নজির আমরা দেখে আসছি। অথচ সরকার তথা শাসক বদল ঘটলেও ব্যবস্থার বদল ঘটে না। তাই আমাদের সমষ্টিগত আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষায় পরিণত হয়েছে। কোনো সংস্কারে দেশবাসীর ভাগ্য বদল হবে না, ব্যবস্থার আমূল বদল ব্যতিরেকে। ব্যবস্থার বদল না হবার ফলে আমাদের অতীত ও বর্তমানজুড়ে কেবলই কানামাছি; কেবলই অন্ধকার। 

মযহারুল ইসলাম বাবলা: 
নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ষ ট রপত ব যবস থ আম দ র প টকল ক ষমত উৎপ দ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিয়ে নিয়ে যা বললেন পূজা চেরি

শারদীয় দুর্গাপূজা—হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। ঢাকের তালে, উলুধ্বনির সুরে, আলোকসজ্জার ঝলকে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল প্রতিটি পূজামণ্ডপ। এই আনন্দে শোবিজ অঙ্গনের তারকারাও যুক্ত হন। 

গতকাল বিজয়া দশমীর পবিত্র তিথিতে দেবীকে বিদায় জানানোর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার সমাপ্তি ঘটে। পূজামণ্ডপগুলোতে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেছিলেন ভক্তরা। একে অপরের মুখে সিঁদুর মেখে উল্লাসে মাতেন সনাতনীরা। দুর্গোৎসবের আনন্দ ছুঁয়ে গেছে অভিনেত্রী পূজা চেরিকেও। গতকাল সিঁদুর খেলায় অংশ নেন তিনি।  

আরো পড়ুন:

‘সবাই ধরে নেয় আমি ঋষি কাপুরের অবৈধ মেয়ে’

সংসার ভাঙার কারণে স্বামীকে ১১ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে অভিনেত্রীর?

পূজামণ্ডপে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পূজা চেরি। এ সময় জানতে চাওয়া হয়, বিজয়া দশমীর দিনে দেবী দুর্গার কাছে কী চাইলেন? জবাবে এই অভিনেত্রী বলেন, “আমার যে গর্ভধারিণী মা মারা গেছেন সে যেন ভালো থাকেন। যেখানেই থাকেন যেন ভালো থাকেন এটাই চেয়েছি এবং দুর্গা মাকে বলেছি ‘তুমি যেন ভালো থেকো’। কারণ আমরা সবাই চেয়ে বেড়াই কিন্তু মাকে একটু জিজ্ঞেস করি না যে, ‘মা তুমি কেমন আছো?”  

ব্যক্তিগত জীবনে পূজা চেরি এখনো একা। ফলে তার বিয়ে নিয়ে ভক্ত-অনুরাগীদের আগ্রহের শেষ নেই। বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এই অভিনেত্রী বলেন, “এখানে একজন সিঁদুর আমার গালে লাগিয়ে দিচ্ছিল, তখন তারা বলল, ‘প্রার্থনা করি আগামীবার যেন দাদাসহ মণ্ডপে আসতে পারো’।” এ কথা বলে একটু হাসি মুখে পূজা বলেন, “দেখ যাক কী হয়! চিন্তার বিষয় চিন্তা করে দেখি।” 

পূজা চেরি শোবিজ অঙ্গনে যাত্রা শুরু করেছিলেন শিশুশিল্পী হিসেবে। ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে নায়িকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অল্প সময়ের মধ্যেই অভিনয় গুণে দর্শকদের মনে জায়গা করে নেন তিনি। 

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ