রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত শিশু হাসপাতালে গিয়ে গত রোববার দেখা গেল, ভবনের নিচতলায় একটি অংশে একটি আলাদা কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। সাজানো-গোছানো কক্ষটির ভেতরটা খালি।

খালি কেন, জানতে চাইলে হাসপাতালটির কর্মকর্তারা বলেন, সেখানে শিশুদের জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ‘হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ)’ স্থাপন করার কথা। সরকারি একটি প্রকল্পের আওতায় কক্ষটি করা হলেও যন্ত্রপাতি আসেনি। ফলে এইচডিইউ চালু করা যায়নি।

শিশু হাসপাতালের পরিচালক মো.

মাহবুবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এইচডিইউর জন্য যন্ত্রপাতি কিনে চালু করতে অন্তত চার কোটি টাকা প্রয়োজন। এত টাকা শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নেই। এটি চালু থাকলে রোগীদের অনেক উপকারে আসত। এখন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।

এ প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে, এটি প্রতিষ্ঠিত। এর সঙ্গে যাঁরা জড়িত, অবশ্যই তাঁদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তবে তার আগে মানুষ যাতে সেবা পায়, সে জন্য প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে হবে। অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

যে প্রকল্পের আওতায় শিশু হাসপাতালে এইচডিইউ করার কথা ছিল, সেটি নেওয়া হয়েছিল করোনাকালে, মহামারি প্রতিরোধে। নাম ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’। ব্যয় ৬ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও চীনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ঋণ দিয়েছে ৫ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। বাকি ৪৭২ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার।

অবশ্য জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিশ্বব্যাংক গত ডিসেম্বরে প্রকল্পটি থেকে সরে যায়। বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পরপরই সরকার প্রকল্পটি মাঝপথে সমাপ্ত ঘোষণা করে। এতে শিশু হাসপাতালের মতো বিভিন্ন হাসপাতালে স্বাস্থ্য অবকাঠামো অসমাপ্ত অবস্থায় রয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই শুধু স্থাপনা হয়েছে, সরঞ্জাম আসেনি। ফলে বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) শেখ সায়েদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, যে পর্যন্ত কাজ হয়েছে, বাকিটা অসমাপ্ত রেখে প্রকল্প শেষ করতে হচ্ছে। বাকি টাকা ফেরত যাচ্ছে। এমন সিদ্ধান্তের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সরকারের সিদ্ধান্ত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ৪ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। রয়ে গেছে ১ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। আগামী মাসে (জুন) প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর আগেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্প থেকে কেন সরে গেল, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ে। ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক পরিচালক গেইল মার্টিন ৮ মে এক বিবৃতিতে প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বব্যাংক তাদের অর্থায়নে পরিচালিত যেকোনো প্রকল্পে জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে থাকে। বিশ্বব্যাংক যখনই দুর্নীতি ও জালিয়াতির বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণ পায়, সঙ্গে সঙ্গে সেসব তথ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়।

এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের নিজস্ব অনুসন্ধানের ফলাফল সরকারকে দেওয়া হয়েছে, যা পরে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হয়েছে বলে জানান গেইল মার্টিন। তিনি বলেন, প্রকল্পের বাকি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে এখন সরকার নিজস্ব অর্থায়ন ব্যবহার করবে। যদিও সরকার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই সমাপ্ত ঘোষণা করেছে।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। রোগটি যখন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিল, তখন ঋণসহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসে বিশ্বব্যাংক। জরুরিভাবে করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতিমূলক প্রকল্পের আওতায় সুরক্ষাসামগ্রী কেনার ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি চিকিৎসা সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়, যার সুবিধা শুধু করোনাকাল নয়, পরেও পাওয়ার কথা।

কিন্তু দেখা যায়, তিন বছরের প্রকল্প পাঁচ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি। ছয়বার প্রকল্প পরিচালক বদলেছে। অনিময় ও দুর্নীতির অভিযোগ বিস্তর।

কী কী দুর্নীতি-অনিয়ম

বিশ্বব্যাংকের ঋণসহায়তায় নেওয়া এ প্রকল্পের কেনাকাটায় অন্তত অনিয়মের বিষয়টি সামনে আসে সরকারের বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষায়। ২০২৩ সালে নিরীক্ষাটি হয়। পরে তার ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনটি আগামী মাসে প্রকাশ করার কথা রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতির প্রকল্পে সরকারের ক্রয়নীতি (পিপিআর) লঙ্ঘন করে বেশি দামে সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। কাজ দেওয়া হয়েছে অনভিজ্ঞ ও অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে। মান যাচাই না করে নিম্নমানের সরঞ্জাম নেওয়া হয়েছে। এ কাজে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘গাফিলতি’ ছিল।

করোনা মহামারি ঠেকাতে তখন সবচেয়ে জরুরি ছিল ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) ও মাস্ক। এ দুটি সুরক্ষাসামগ্রীর অভাবে প্রথমদিকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের। সামগ্রী দুটি কিনতে অনিয়ম হয়েছে। আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, পিপিই, মাস্ক ও শরীরের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র ইনফ্রারেড থার্মোমিটার কেনায় প্রায় ৩৪ কোটি টাকার হিসাবে গরমিল পাওয়া গেছে।

আইএমইডির প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গরমিল মানে হচ্ছে প্রায় ৩৪ কোটি টাকার সুরক্ষাসামগ্রী আদৌ পেয়েছে কি না, পেলে সেটা কোথায় বিতরণ করা হয়েছে—এ দুটি তথ্য দিতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, পিপিই, মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস কিনতে অযোগ্য ও অনভিজ্ঞ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন কর্মকর্তারা। এতে সরকারের বাড়তি খরচ হয় প্রায় ৫৯ কোটি টাকা।

বিদেশি ঋণে কোনো প্রকল্প নেওয়া হলে সেটির নিরীক্ষা (অডিট) করে থাকে সরকারের বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প অডিট অধিদপ্তর। তারা কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রকল্পে ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত পাঁচ বছরে ৪৬৫ কোটি টাকার ৭৬টি নিরীক্ষা আপত্তি তুলে ধরে। এর মানে হচ্ছে এ পরিমাণ টাকা খরচে সরকারি নিয়ম মানা হয়নি, খরচে গরমিল রয়েছে। অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, ৮০ কোটি টাকার ৮টি নিরীক্ষা আপত্তি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বাকি ৩৮৫ কোটি টাকার ৬৮টি নিরীক্ষা আপত্তি অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক শেখ সায়েদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইএমইডি তাদের প্রতিবেদনে এ প্রকল্পের কিছু দুর্বলতা দেখিয়েছে। তবে প্রতিবেদনটি এখনো হাতে পাইনি। বেশকিছু অডিট আপত্তি এসেছে। কিছু নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকিগুলো নিষ্পত্তি করতে না পারলে আইন অনুযায়ী যা হওয়ার, হবে।’

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় জরুরি ভিত্তিতে ৩০ কোটি টাকার অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসাসামগ্রী কেনা হয়, যা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। মানুষের কাজে আসেনি।

স্থাপনা হয়েছে, সরঞ্জাম কেনা হয়নি

শিশু হাসপাতালে করোনা প্রস্তুতি প্রকল্পের আওতায় ওয়ান–স্টপ কেয়ার ইমার্জেন্সি ইউনিট (ওএসইসি) স্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমে হাসপাতালটিতে শিশু রোগীদের জরুরি সব সেবা এক জায়গা থেকে দেওয়ার কথা। এর একটি অংশ হলো এইচডিইউ। আরও রয়েছে এক্স–রে ও আলট্রাসাউন্ডের জন্য আলাদা দুটি কক্ষ। তবে যন্ত্রপাতি না থাকায় এ দুটি কক্ষ চালু হয়নি।

হাসপাতালটিতে ২১ শয্যার একটি ‘ইমার্জেন্সি ও রেফারেল কক্ষ’ স্থাপন করা হয়েছে এ প্রকল্পের আওতায়। সেখানেও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়নি। পরে শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের টাকায় রোগীদের জন্য জরুরি সেবা দিতে ইমার্জেন্সি ও রেফারেল কক্ষটি চালু করে। অন্যগুলো চালুর জন্য তাদের কাছে টাকা নেই।

প্রকল্পের আওতায় দেশের ৫০ জেলার সদর হাসপাতালের প্রতিটিতে ২০ শয্যা করে মোট এক হাজার ‘আইসোলেশন ইউনিট’ (রোগীকে আলাদা রাখার জায়গা) স্থাপন করার কথা। আইএমইডির প্রতিবেদন বলছে, এখন পর্যন্ত ৪৭টি জেলা সদর হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিটের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। তবে একটিরও যন্ত্রপাতি কেনা হয়নি। অবকাঠামোগুলো খালি পড়ে আছে।

এ ছাড়া ৫০টি জেলা সদর হাসপাতালের প্রতিটিতে ১০ শয্যার ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটও (আইসিইউ) স্থাপনের কথা। সে অনুযায়ী ৪৮টি জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৩ জেলার হাসপাতালে আইসিইউয়ে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি ৩৫ জেলার হাসপাতালের আইসিইউর যন্ত্রপাতি কেনার দরপত্র আহ্বান করা যায়নি। ফলে সেসব আইসিইউ কাজে আসছে না।

১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক কেয়ার ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। তবে এখনো যন্ত্রপাতি ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। একটি হাসপাতালের পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, এ প্রকল্পে দুর্নীতি হওয়ায় বিশ্বব্যাংক সরে গেছে বলে তাঁরা শুনেছেন, যার খেসারত দিচ্ছে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

আরও ১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মাতুয়াইল মা ও শিশুস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে অবসট্রেটিক ইনটেনসিভ কেয়ার (অবস-আইসিইউ) স্থাপনের কথা। হাসপাতালগুলোয় স্থাপনার কাজ হয়েছে। সরঞ্জাম কেনা হয়নি। ২০টি হাসপাতালে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট নির্মাণের কথা। পূর্ত কাজ হয়েছে ১৬টির, ৪টির চলছে। যন্ত্রপাতি কেনার প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে।

এমন আরও কিছু স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থার পূর্ত কাজ করা হয়েছে। যন্ত্রপাতি কেনা বা সরবরাহ করা হয়নি। ফলে আগে যে অর্থ ব্যয় হয়েছে, তা গচ্চা যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতি প্রকল্পের আওতায় কিছু কাজ সমাপ্ত হয়েছে। যেমন ৬ কোটি ৮০ লাখ করোনা টিকা কেনা হয়েছে, ১১ কোটি সিরিঞ্জ কেনা হয়েছে, রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার কিছু সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে, ৩০টি সরকারি হাসপাতালে তরল অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং পিপিই, করোনা পরীক্ষার কিট ও মাস্ক কেনা হয়েছে বিপুল পরিমাণে। কেনাকাটায়ই দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল।

কিছু ক্ষেত্রে প্রকল্পের আওতা তৈরি করা স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা এখন কাজে আসছে না অথবা অকেজো। আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নির্মিত আইসিইউ অচল। যশোরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন করা হলেও চালু হয়নি।

‘অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে হবে’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে কী করণীয়, তা নিয়ে মন্ত্রণালয়ে একাধিক সভা হয়েছে। নতুন একটি প্রকল্প নিয়ে বাকি কাজ শেষ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ ১০ মে প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পের কাজ এভাবে অসমাপ্ত রেখে শেষ করে দেওয়া ঠিক হয়নি। অবকাঠামো নির্মাণ করে তা চালু না হলে নষ্ট হয়ে যাবে। সরকারের উচিত হবে নিজেদের টাকায় প্রকল্পের কাজ চলমান রাখা। তিনি বলেন, এ প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে, এটি প্রতিষ্ঠিত। এর সঙ্গে যাঁরা জড়িত, অবশ্যই তাঁদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তবে তার আগে মানুষ যাতে সেবা পায়, সে জন্য প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবশ ষ ট ক জ শ ষ করত প রকল প র আওত য় প রকল প র ক জ এ প রকল প র প রথম আল ক র প রকল প কর মকর ত প রস ত ত অবস থ য় ব যবস থ সরঞ জ ম অসম প ত অবক ঠ ম সরক র র পর চ ল র জন য আপত ত র অবশ ইউন ট অবশ য

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাস্থ্যের প্রকল্পে ‘দুর্নীতি’র কারণে সরে গেছে বিশ্বব্যাংক, কাজ অসমাপ্ত

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত শিশু হাসপাতালে গিয়ে গত রোববার দেখা গেল, ভবনের নিচতলায় একটি অংশে একটি আলাদা কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। সাজানো-গোছানো কক্ষটির ভেতরটা খালি।

খালি কেন, জানতে চাইলে হাসপাতালটির কর্মকর্তারা বলেন, সেখানে শিশুদের জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ‘হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ)’ স্থাপন করার কথা। সরকারি একটি প্রকল্পের আওতায় কক্ষটি করা হলেও যন্ত্রপাতি আসেনি। ফলে এইচডিইউ চালু করা যায়নি।

শিশু হাসপাতালের পরিচালক মো. মাহবুবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এইচডিইউর জন্য যন্ত্রপাতি কিনে চালু করতে অন্তত চার কোটি টাকা প্রয়োজন। এত টাকা শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নেই। এটি চালু থাকলে রোগীদের অনেক উপকারে আসত। এখন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।

এ প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে, এটি প্রতিষ্ঠিত। এর সঙ্গে যাঁরা জড়িত, অবশ্যই তাঁদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তবে তার আগে মানুষ যাতে সেবা পায়, সে জন্য প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে হবে। অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

যে প্রকল্পের আওতায় শিশু হাসপাতালে এইচডিইউ করার কথা ছিল, সেটি নেওয়া হয়েছিল করোনাকালে, মহামারি প্রতিরোধে। নাম ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’। ব্যয় ৬ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও চীনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ঋণ দিয়েছে ৫ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। বাকি ৪৭২ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার।

অবশ্য জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিশ্বব্যাংক গত ডিসেম্বরে প্রকল্পটি থেকে সরে যায়। বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পরপরই সরকার প্রকল্পটি মাঝপথে সমাপ্ত ঘোষণা করে। এতে শিশু হাসপাতালের মতো বিভিন্ন হাসপাতালে স্বাস্থ্য অবকাঠামো অসমাপ্ত অবস্থায় রয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই শুধু স্থাপনা হয়েছে, সরঞ্জাম আসেনি। ফলে বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) শেখ সায়েদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, যে পর্যন্ত কাজ হয়েছে, বাকিটা অসমাপ্ত রেখে প্রকল্প শেষ করতে হচ্ছে। বাকি টাকা ফেরত যাচ্ছে। এমন সিদ্ধান্তের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সরকারের সিদ্ধান্ত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ৪ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। রয়ে গেছে ১ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। আগামী মাসে (জুন) প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর আগেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্প থেকে কেন সরে গেল, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ে। ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক পরিচালক গেইল মার্টিন ৮ মে এক বিবৃতিতে প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বব্যাংক তাদের অর্থায়নে পরিচালিত যেকোনো প্রকল্পে জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে থাকে। বিশ্বব্যাংক যখনই দুর্নীতি ও জালিয়াতির বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণ পায়, সঙ্গে সঙ্গে সেসব তথ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়।

এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের নিজস্ব অনুসন্ধানের ফলাফল সরকারকে দেওয়া হয়েছে, যা পরে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হয়েছে বলে জানান গেইল মার্টিন। তিনি বলেন, প্রকল্পের বাকি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে এখন সরকার নিজস্ব অর্থায়ন ব্যবহার করবে। যদিও সরকার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই সমাপ্ত ঘোষণা করেছে।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। রোগটি যখন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিল, তখন ঋণসহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসে বিশ্বব্যাংক। জরুরিভাবে করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতিমূলক প্রকল্পের আওতায় সুরক্ষাসামগ্রী কেনার ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি চিকিৎসা সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়, যার সুবিধা শুধু করোনাকাল নয়, পরেও পাওয়ার কথা।

কিন্তু দেখা যায়, তিন বছরের প্রকল্প পাঁচ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি। ছয়বার প্রকল্প পরিচালক বদলেছে। অনিময় ও দুর্নীতির অভিযোগ বিস্তর।

কী কী দুর্নীতি-অনিয়ম

বিশ্বব্যাংকের ঋণসহায়তায় নেওয়া এ প্রকল্পের কেনাকাটায় অন্তত অনিয়মের বিষয়টি সামনে আসে সরকারের বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষায়। ২০২৩ সালে নিরীক্ষাটি হয়। পরে তার ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনটি আগামী মাসে প্রকাশ করার কথা রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতির প্রকল্পে সরকারের ক্রয়নীতি (পিপিআর) লঙ্ঘন করে বেশি দামে সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। কাজ দেওয়া হয়েছে অনভিজ্ঞ ও অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে। মান যাচাই না করে নিম্নমানের সরঞ্জাম নেওয়া হয়েছে। এ কাজে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘গাফিলতি’ ছিল।

করোনা মহামারি ঠেকাতে তখন সবচেয়ে জরুরি ছিল ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) ও মাস্ক। এ দুটি সুরক্ষাসামগ্রীর অভাবে প্রথমদিকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের। সামগ্রী দুটি কিনতে অনিয়ম হয়েছে। আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, পিপিই, মাস্ক ও শরীরের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র ইনফ্রারেড থার্মোমিটার কেনায় প্রায় ৩৪ কোটি টাকার হিসাবে গরমিল পাওয়া গেছে।

আইএমইডির প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গরমিল মানে হচ্ছে প্রায় ৩৪ কোটি টাকার সুরক্ষাসামগ্রী আদৌ পেয়েছে কি না, পেলে সেটা কোথায় বিতরণ করা হয়েছে—এ দুটি তথ্য দিতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, পিপিই, মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস কিনতে অযোগ্য ও অনভিজ্ঞ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন কর্মকর্তারা। এতে সরকারের বাড়তি খরচ হয় প্রায় ৫৯ কোটি টাকা।

বিদেশি ঋণে কোনো প্রকল্প নেওয়া হলে সেটির নিরীক্ষা (অডিট) করে থাকে সরকারের বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প অডিট অধিদপ্তর। তারা কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রকল্পে ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত পাঁচ বছরে ৪৬৫ কোটি টাকার ৭৬টি নিরীক্ষা আপত্তি তুলে ধরে। এর মানে হচ্ছে এ পরিমাণ টাকা খরচে সরকারি নিয়ম মানা হয়নি, খরচে গরমিল রয়েছে। অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, ৮০ কোটি টাকার ৮টি নিরীক্ষা আপত্তি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বাকি ৩৮৫ কোটি টাকার ৬৮টি নিরীক্ষা আপত্তি অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক শেখ সায়েদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইএমইডি তাদের প্রতিবেদনে এ প্রকল্পের কিছু দুর্বলতা দেখিয়েছে। তবে প্রতিবেদনটি এখনো হাতে পাইনি। বেশকিছু অডিট আপত্তি এসেছে। কিছু নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকিগুলো নিষ্পত্তি করতে না পারলে আইন অনুযায়ী যা হওয়ার, হবে।’

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় জরুরি ভিত্তিতে ৩০ কোটি টাকার অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসাসামগ্রী কেনা হয়, যা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। মানুষের কাজে আসেনি।

স্থাপনা হয়েছে, সরঞ্জাম কেনা হয়নি

শিশু হাসপাতালে করোনা প্রস্তুতি প্রকল্পের আওতায় ওয়ান–স্টপ কেয়ার ইমার্জেন্সি ইউনিট (ওএসইসি) স্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমে হাসপাতালটিতে শিশু রোগীদের জরুরি সব সেবা এক জায়গা থেকে দেওয়ার কথা। এর একটি অংশ হলো এইচডিইউ। আরও রয়েছে এক্স–রে ও আলট্রাসাউন্ডের জন্য আলাদা দুটি কক্ষ। তবে যন্ত্রপাতি না থাকায় এ দুটি কক্ষ চালু হয়নি।

হাসপাতালটিতে ২১ শয্যার একটি ‘ইমার্জেন্সি ও রেফারেল কক্ষ’ স্থাপন করা হয়েছে এ প্রকল্পের আওতায়। সেখানেও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়নি। পরে শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের টাকায় রোগীদের জন্য জরুরি সেবা দিতে ইমার্জেন্সি ও রেফারেল কক্ষটি চালু করে। অন্যগুলো চালুর জন্য তাদের কাছে টাকা নেই।

প্রকল্পের আওতায় দেশের ৫০ জেলার সদর হাসপাতালের প্রতিটিতে ২০ শয্যা করে মোট এক হাজার ‘আইসোলেশন ইউনিট’ (রোগীকে আলাদা রাখার জায়গা) স্থাপন করার কথা। আইএমইডির প্রতিবেদন বলছে, এখন পর্যন্ত ৪৭টি জেলা সদর হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিটের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। তবে একটিরও যন্ত্রপাতি কেনা হয়নি। অবকাঠামোগুলো খালি পড়ে আছে।

এ ছাড়া ৫০টি জেলা সদর হাসপাতালের প্রতিটিতে ১০ শয্যার ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটও (আইসিইউ) স্থাপনের কথা। সে অনুযায়ী ৪৮টি জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৩ জেলার হাসপাতালে আইসিইউয়ে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি ৩৫ জেলার হাসপাতালের আইসিইউর যন্ত্রপাতি কেনার দরপত্র আহ্বান করা যায়নি। ফলে সেসব আইসিইউ কাজে আসছে না।

১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক কেয়ার ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। তবে এখনো যন্ত্রপাতি ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। একটি হাসপাতালের পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, এ প্রকল্পে দুর্নীতি হওয়ায় বিশ্বব্যাংক সরে গেছে বলে তাঁরা শুনেছেন, যার খেসারত দিচ্ছে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

আরও ১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মাতুয়াইল মা ও শিশুস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে অবসট্রেটিক ইনটেনসিভ কেয়ার (অবস-আইসিইউ) স্থাপনের কথা। হাসপাতালগুলোয় স্থাপনার কাজ হয়েছে। সরঞ্জাম কেনা হয়নি। ২০টি হাসপাতালে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট নির্মাণের কথা। পূর্ত কাজ হয়েছে ১৬টির, ৪টির চলছে। যন্ত্রপাতি কেনার প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে।

এমন আরও কিছু স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থার পূর্ত কাজ করা হয়েছে। যন্ত্রপাতি কেনা বা সরবরাহ করা হয়নি। ফলে আগে যে অর্থ ব্যয় হয়েছে, তা গচ্চা যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতি প্রকল্পের আওতায় কিছু কাজ সমাপ্ত হয়েছে। যেমন ৬ কোটি ৮০ লাখ করোনা টিকা কেনা হয়েছে, ১১ কোটি সিরিঞ্জ কেনা হয়েছে, রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার কিছু সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে, ৩০টি সরকারি হাসপাতালে তরল অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং পিপিই, করোনা পরীক্ষার কিট ও মাস্ক কেনা হয়েছে বিপুল পরিমাণে। কেনাকাটায়ই দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল।

কিছু ক্ষেত্রে প্রকল্পের আওতা তৈরি করা স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা এখন কাজে আসছে না অথবা অকেজো। আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নির্মিত আইসিইউ অচল। যশোরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন করা হলেও চালু হয়নি।

‘অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে হবে’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে কী করণীয়, তা নিয়ে মন্ত্রণালয়ে একাধিক সভা হয়েছে। নতুন একটি প্রকল্প নিয়ে বাকি কাজ শেষ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ ১০ মে প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পের কাজ এভাবে অসমাপ্ত রেখে শেষ করে দেওয়া ঠিক হয়নি। অবকাঠামো নির্মাণ করে তা চালু না হলে নষ্ট হয়ে যাবে। সরকারের উচিত হবে নিজেদের টাকায় প্রকল্পের কাজ চলমান রাখা। তিনি বলেন, এ প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে, এটি প্রতিষ্ঠিত। এর সঙ্গে যাঁরা জড়িত, অবশ্যই তাঁদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তবে তার আগে মানুষ যাতে সেবা পায়, সে জন্য প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ