এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে এক ক্রমিক দুইবার, নেই ২৬ নম্বর
Published: 13th, May 2025 GMT
প্রশ্ন ভিন্ন হলেও প্রশ্নপত্রে ১১ নম্বর ক্রমিক রয়েছে দুই বার। আবার শেষের দিকে নেই ২৬ নম্বরটি। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের এসএসসির বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষার বহুনির্বাচনীতে এই বিপত্তি ঘটে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
গতকাল চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের আওতায় পাঁচ জেলায় মোট ২১৯টি কেন্দ্রে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বহুনির্বাচনীতে প্রশ্ন পত্রের খ সেটে দেখা গেছে, প্রশ্নে ১১ নম্বর ক্রমিকটি দুই বার। একই প্রশ্নপত্রে নেই ২৬ নম্বর ক্রমিকটি। এতে পরীক্ষার উত্তরপত্রে বৃত্ত ভরাট নিয়ে বিপাকে পড়ে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভাষ্য, উত্তরপত্র যেহেতু স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল্যায়ন করা হবে, তাই সেখানে এই ভুলগুলোর কারণে মূল্যায়নে জটিলতা দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে ফলাফলে এর প্রভাব পড়বে। এ বিষয়ে বোর্ড কোনো সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা দুশ্চিন্তায় আছে।
তবে এ বিষয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক অভিভাবক আমাকে ফোন করেছেন। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। শিক্ষার্থীদের সুবিধা মাথায় রেখেই মূল্যায়ন করা হবে।’
শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এদিন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৫৫ জন। উপস্থিত ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৮ জন। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর ১ হাজার ২৭৭ জন। অনুপস্থিতির হার প্রায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ র
এছাড়াও পড়ুন:
এসএসসির ফলাফল যেন আত্মহত্যার কারণ না হয়
আগামী ১৩ জুলাই বা তার আগে যেকোনো দিন ২০২৫ সালের এসএসসি বা মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হবে। শিক্ষা উপদেষ্টা নির্দিষ্ট করেই বলেছেন, নিয়ম মেনেই পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। ১৩ মে শেষ হয়েছিল এসএসসি পরীক্ষা; তাই ১৩ জুলাই রোববার ফল প্রকাশের দিন হতে পারে বলে প্রচারণা আছে।
অবশ্য অন্তর্বর্তীকালে দিনক্ষণ ঠিক করার জন্য কোন মাস কাদের জন্য মঙ্গল, তা বিবেচনার একটা চর্চা বা চল দেখা যাচ্ছে। সেই চলের ধাক্কায় কেউ যদি ‘১৩’কে অশুভ বা আনলাকি সংখ্যা হিসেবে চিহ্নিত করে রাস্তায় বসে যান বা সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন, তাহলে তারিখ পেছালেও পেছাতে পারে।
এবারের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গত চার-পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম হওয়ায় সবাই আশা করেছিলেন, এবার আর ৬০ দিন লাগবে না। তারপরও সময় লাগছে। চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০।
২০২৪ সালের তুলনায় এবার প্রায় এক লাখ পরীক্ষার্থী কম ছিল। ২০২৪ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। গতবারও (২০২৪) তার আগের বছরের (২০২৩) চেয়ে প্রায় ৪৮ হাজার পরীক্ষার্থী কম ছিল। চলতি ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ফরম পূরণ করেও পরীক্ষা দিতে আসেনি এমন পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২৭ হাজার (২৬ হাজার ৯২৮ জন)।
ফরম পূরণ মানে সমুদয় টাকাপয়সা জমা দেওয়ার পরও ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি কি কেবলই পরীক্ষাভীতি? সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার কোনো তাগিদ এযাবৎ কেউ অনুধাবন করেননি। এবার ঢাকা বোর্ড বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে। তাদের গবেষণা বলছে, মূলত বাল্যবিবাহের কারণেই বেশির ভাগ শিক্ষার্থী শেষ পর্যন্ত আর পরীক্ষার হলে এসে পৌঁছাতে পারে না।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৪০ শতাংশেরই বিয়ে হয়ে গেছে। এখনই অবশ্য বলা যাচ্ছে না এদের মধ্যে মেয়ে কতজন আর ছেলে কতজন; অভিজ্ঞতা বলছে, বিয়ে হয়ে গেলে ছেলেদের পরীক্ষা দিতে বা ক্লাস করতে কোনো বাধা নেই; কিন্তু মেয়েদের আর স্কুলের চৌহদ্দির মধ্যে ঢুকতে পারা কঠিন।
■ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর আত্মহত্যার কারণে প্রাণ হারায় প্রায় ১৩ হাজার মানুষ। এর মধ্যে একটি বড় অংশই হচ্ছে তরুণ-তরুণী ও শিক্ষার্থীরা। ■ পরীক্ষায় ভালো না করা মানেই যে একজন শিক্ষার্থী ব্যর্থ, তা নয়। কিন্তু সমাজ, পরিবার এমনকি শিক্ষাব্যবস্থার দৃষ্টিতে পরীক্ষার ফলই হয়ে ওঠে যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি। ■ সফলতা মানে বড় চাকরি বা নামজাদা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা নয়; সফলতা হলো নিজেকে, নিজের কাজকে সম্মান করা, অন্যকে সম্মান করা এবং জীবনের প্রতি ভালোবাসা বজায় রাখা।এই অন্যায় আর বৈষম্য নিয়ে অন্য কোনো লেখায় আলোচনা করা যাবে। আপাতত শিরোনামে ফেরত যাই। অনুপস্থিত, বহিষ্কার, মৃত বাদ দিলে প্রায় ১৯ লাখ পরীক্ষার্থী এখন দম বন্ধ করে ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষায় আছে। কী হয়! কী হয়!! জিপিএ-৫, গোল্ডেন-৫ পাব তো! ফেসবুক খুললেই চোখে পড়ে এদের আহাজারি—‘আল্লাহ ইজ্জত রেখো’, ‘মানুষের কাছে যেন মুখ দেখাতে পারি’, ‘মা-বাবার ইজ্জত-সম্মান রক্ষা কোরো’—ইত্যাদি আরও কত কী! এক এসএসসির ফলাফলের সুতায় ঝুলছে মান-ইজ্জত-সম্মান-স্ট্যাটাস সবকিছু।
সবাই একসঙ্গে কায়মনোবাক্যে চাইলেও সবাই জিপিএ-৫ পাবে না। অনেকেই কিছুই পাবে না; আবার বসতে হবে পরীক্ষায়। যেমন বসতে হয়েছিল বিল গেটসকে। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল, বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন, স্টিভ জবস, আইনস্টাইন, ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এ পি জে আবদুল কালামের মতো বরেণ্য ব্যক্তিরাও একাধিক পরীক্ষায় খারাপ করেছেন। পরে আবার পরীক্ষায় ভালো করেছেন ও কর্মময় জীবনে সফলতাও পেয়েছেন—এগুলো আমরা কেউ বলি না।
অকৃতকার্যদের পাশে রাষ্ট্র-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-পরিবার কেউ দাঁড়ায় না। পরীক্ষায় যারা পাস করতে পারে না, তারা ‘সবশেষ’ মানসিকতায় হতাশ হয়ে পড়ে। ফেল করা ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে বেশি হতাশ হন তাদের বাবা-মা-ভাই-বোন, পরিবার-পরিজন। পরিবারের গালমন্দ এবং নানা কটূক্তির কারণে এই ফেল করা ছাত্রছাত্রীদের কেউ কেউ হতাশা, গ্লানি, ক্ষোভে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
গত বছর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার আট ঘণ্টার মধ্যে ৯ জন আত্মহত্যা করে। এই ৯ জনের ৬ জনই ছিল মেয়ে। আত্মহত্যা চেষ্টার ঘটনা ছিল আরও বেশি; সেই হিসাব কেউ রাখে না। এমন দুঃখজনক ঘটনা প্রতিবছরই ঘটে।
দায় কারপাবলিক পরীক্ষায় সাফল্য পেতে ব্যর্থ হয়ে শিক্ষার্থীদের এই আত্মহত্যার ট্র্যাজেডির দায় কার? শিক্ষার্থীরাই কি শুধু দায়ী? সমাজ, শিক্ষাব্যবস্থা কি এর দায় এড়াতে পারে? পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর সাফল্য পাওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে যত হইহুল্লোড় করা হচ্ছে; খারাপ ফলাফল করা ছাত্রছাত্রীরা কেন ফেল করল, তা নিয়ে কি কোনো গবেষণা হয়েছে?
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর আত্মহত্যার কারণে প্রাণ হারায় প্রায় ১৩ হাজার মানুষ। এর মধ্যে একটি বড় অংশই হচ্ছে তরুণ-তরুণী ও শিক্ষার্থীরা। আত্মহত্যার পেছনে নানা কারণ রয়েছে—মানসিক অবসাদ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, বুলিং, বৈষম্য ও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য একটি কারণ হলো পাবলিক পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়া।
দুই বিপরীত চিত্র: উল্লাস বনাম হতাশএসএসসি, এইচএসসি, দাখিল, আলিম কিংবা সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের সময় আমরা দেখতে পাই, এক পক্ষ আনন্দে মেতে ওঠে। পত্রিকার প্রথম পাতায় উঠে আসে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের হাসিমুখ। অথচ আরেক পাশে থাকে এক গ্লানিময়, এক অদৃশ্য বাস্তবতা, যেখানে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা চরম হতাশা ও লজ্জায় নিজেদের শেষ করে দেওয়ার পথ বেছে নেয়।
পরীক্ষায় ভালো না করা মানেই যে একজন শিক্ষার্থী ব্যর্থ, তা নয়। কিন্তু সমাজ, পরিবার এমনকি শিক্ষাব্যবস্থার দৃষ্টিতে পরীক্ষার ফলই হয়ে ওঠে যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি। ফলে অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীদের মন ভেঙে যায় এবং কেউ কেউ আত্মহননের মতো চরম সিদ্ধান্ত বেছে নেয়।
আমরা সব সময় সাফল্যের গল্প সামনে নিয়ে আসি, কিন্তু যেসব শিক্ষার্থী পিছিয়ে পড়ে, তারা কেন অকৃতকার্য হলো, সেই প্রশ্নটা খুব কমই করি। এর পেছনে কি মানসিক চাপ, পারিবারিক সহানুভূতির অভাব, নাকি আরও গভীর কোনো সামাজিক কাঠামোগত সমস্যা আছে, সে বিষয়ে আমাদের গবেষণা বা কার্যকর উদ্যোগ খুবই সীমিত।
অভিভাবকের প্রত্যাশা ও মানসিক বোঝাবাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় শিক্ষার্থীদের জীবনে অভিভাবকের প্রত্যাশা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সন্তান যেন ভালো রেজাল্ট করে, এটা প্রত্যেক মা-বাবার স্বপ্ন। কিন্তু সেই স্বপ্ন যদি পরিণত হয় অন্ধ প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেওয়ার চাপে, তাহলে শিক্ষার্থীর মনে জন্ম নেয় ভয়, ব্যর্থতার আতঙ্ক ও আত্মঘৃণা। ‘আমি যদি ফেল করি, মা-বাবাকে কী করে মুখ দেখাব?’—এই প্রশ্ন অনেক সময় তাদের মৃত্যুর পথে ঠেলে দেয়। শুধু সন্তানের ভালো ফলই নয়, পরিবারের উচিত তার মানসিক সুস্থতা এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির বিষয়েও সমান মনোযোগ দেওয়া।
আত্মহত্যার ঝুঁকিতে থাকা শিক্ষার্থীদের চেনার উপায় কীঅনেকে ধীরেসুস্থে চিন্তাভাবনা করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাদের ক্ষেত্রে ইঙ্গিত পাওয়া সহজ। কিন্তু হঠাৎ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আগাম আলামত আঁচ বা অনুমান করা সহজ না-ও হতে পারে। তবে কাছের মানুষ, ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের পক্ষে টের পাওয়া সহজ বলে মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন। সাধারণত যেসব আলামত দেখা যায় বলে গবেষকেরা মনে করেন, সেগুলো হলো:
১. আত্মহত্যা বা মৃত্যু নিয়ে কথা বলা বা লেখা, অনেক সময় কথাবার্তাতেও ইঙ্গিত মেলে। যেমন ‘আমার মরণই ভালো’ বা ‘আমি সব শেষ করতে যাচ্ছি’ অথবা ‘বেঁচে থাকার মানে কী’, ‘শিগগিরই তোমাকে আমার জন্য চিন্তা করতে হবে না’ অথবা ‘আমি মারা গেলে কে চিন্তা করবে’ ইত্যাদি;
২. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির প্রতি অবহেলা;
৩. নিজেকে বন্ধু ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা;
৪. নিজের প্রিয় বস্তু বা মূল্যবান জিনিস অন্যকে দিয়ে দেওয়া;
৫. স্কুল বা সামাজিক প্রতিষ্ঠান, খেলাধুলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া;
৬. কখনো মনমরা হয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখছে, আবার পরক্ষণে খুব উৎফুল্ল হয়ে সবার সঙ্গে মিশছে;
৭. ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ সংগ্রহের চেষ্টা।
তবে এসব আলামতের একটিও দেখা না গেলে মন খারাপের চাপে যেকোনো শিশু-কিশোর আত্মহত্যার ঝুঁকি নিতে পারে। তাই ঘনিষ্ঠদের উচিত হবে এ ধরনের মানুষের সঙ্গে আন্তরিক আচরণ করা। একা থাকতে না দেওয়া।
আত্মহত্যার পথ থেকে ফেরানোর উপায় কী হতে পারেএই পরিস্থিতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দ্রুত এই ‘অর্থহীন’ ফলাফলের দৌরাত্ম্য বন্ধ হওয়া আবশ্যক। যা করার আমাদেরই করতে হবে। শিশুদের বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের। দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদি আর তাৎক্ষণিক যেসব পদক্ষেপ নেওয়া যায়:
১. পরীক্ষা পদ্ধতি ও ফলাফল পদ্ধতির আশু পরিবর্তন;
২. পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগে থেকেই অভিভাবক ও মা-বাবাকে সতর্ক করে দেওয়ার জন্য প্রচারণা। পরিবারে পরীক্ষার্থী থাকলে তাকে সব সময় চাপমুক্ত রাখতে হবে। ফলাফল প্রকাশের পর বিপন্ন শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা এবং তাদের প্রতি যত্নবান ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা;
৩. ফেসবুক ও নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উদ্যাপনের মাত্রা উসকানিমূলক পর্যায়ে চলে যায়। এ ধরনের উদ্যাপন বন্ধ করা;
৪. যেহেতু আত্মহত্যার তালিকায় মেয়েদের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেশি, তাই মেয়েদের বিষয়টি আলাদাভাবে ভাবতে হবে;
৫. প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনাসহ একজন প্রশিক্ষিত মনঃসামাজিক সহায়ক থাকবেন;
৬. অভিভাবক-শিক্ষক সংঘ, ছাত্র-শিক্ষক ক্লাব ইত্যাদির সভায় বিষয়টিকে আলোচনার তালিকায় রাখা। এবং আত্মহত্যানিরোধক পদক্ষেপ গ্রহণ;
৭. এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা তৈরির জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী দল বা কার্যকর কোনো সংগঠিত স্বেচ্ছাসেবী দল থাকলে তাদের সহযোগিতা নেওয়া;
৮. সব ধরনের প্রচারমাধ্যমে বিষয়টিকে সারা বছর আলোচনায় রাখা।
সব ছাপিয়ে যে বিষয়গুলোর ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তা হলো (ক) সমাজের সব স্তরে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, (খ) শিক্ষার্থী-অভিভাবক-শিক্ষক সবারই মনঃসামাজিক পরিচর্যা এবং (গ) আত্মহত্যার চেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়াদের সুরক্ষা।
সফলতার সংজ্ঞা বদলাতে হবেআমাদের শিক্ষার্থীদের শেখাতে হবে, জীবন একটা দীর্ঘ যাত্রা, আর পরীক্ষার ফলাফল তার ছোট একটা ঘটনামাত্র। সফলতা মানে শুধুই জিপিএ-৫ নয়। একজন কৃষক, শিক্ষক অথবা শ্রমিকও সফল, যদি তিনি তাঁর কাজকে ভালোবাসেন, সততার সঙ্গে জীবনযাপন করেন।
সফলতা মানে বড় চাকরি বা নামজাদা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা নয়; সফলতা হলো নিজেকে, নিজের কাজকে সম্মান করা, অন্যকে সম্মান করা এবং জীবনের প্রতি ভালোবাসা বজায় রাখা। যদি একজন শিক্ষার্থী বুঝতে পারে যে সে অন্যের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে আছে বা তার জীবনে অর্থপূর্ণ কিছু করার সুযোগ এখনো আছে, তাহলে আত্মহত্যার পথ থেকে তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভালোবাসা। একজন শিক্ষার্থী যদি পরিবার, শিক্ষক এবং সমাজের ভালোবাসা ও সমর্থন অনুভব করে, তাহলে হতাশা যত গভীরই হোক না কেন, সে ফিরে আসবে।
পরীক্ষায় ফল খারাপ হওয়া মানেই জীবন ব্যর্থ নয়; বরং সেটাই নতুনভাবে শুরু করার একটি সুযোগ। আমাদের উচিত শিক্ষার্থীদের শেখানো যে তারা যেমন আছে, ঠিক তেমন করেই তারা মূল্যবান। প্রতিটি শিশু আলাদা, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সক্ষমতা ভিন্ন।
আসুন, আমরা সবাই মিলে এমন একটি সমাজ গড়ে তুলি, যেখানে ফলাফল নয়, জীবনের প্রতি ভালোবাসা থাকবে সবার আগে। শিক্ষার্থীদের পাশে থাকুন। কারণ, একটি জীবন, একটি ভবিষ্যৎ, তার চেয়েও মূল্যবান আর কিছু নয়।
● গওহার নঈম ওয়ারা লেখক ও গবেষক
* মতামত লেখকের নিজস্ব