আইএমএফের শর্ত মেনে গভীল রাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ করার পর ডলারের বিনিময় হারে নমনীয়তা আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৈদেশিক মুদ্রা বেচা-কেনায় ‘ক্রলিং পেগ’র করিডোর আড়াই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা হতে পারে। এতে করে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির প্রায় ১৩০ কোটি ডলার পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বুধবার গভর্নর ড.

আহসান এইচ মনসুর সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারেন বলে জানা গেছে।

দুবাইয়ে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে বিভিন্ন পক্ষের আলোচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন। আগামী ১৭ মে তার দেশে ফেরার কথা। এর মধ্যে আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাকা সংবাদ সম্মেলন গভর্নর ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিনিময়হার নির্ধারণে আরও নমনীয় করতে সম্মত হয়েছে। বিদ্যমান ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতিতে এ নমনীয়তা দেখানো হবে। এক্ষেত্রে ডলারের মধ্যবর্তী দর বর্তমানের ১১৯ টাকার সঙ্গে চার শতাংশ করিডোর দেওয়া হতে পারে। বর্তমানে যা আড়াই শতাংশ রয়েছে। এই করিডোর মানে হলো– ডলারের মধ্যবর্তী দরের সঙ্গে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উঠানামার সীমা। এর ফলে ডলারের দর সামান্য বাড়তে পারে।

আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির তিন কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন শর্তের কারণে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে। ঋণ ছাড়ের আগে আইএমএফের শর্তের অগ্রগতি যাচাইয়ে গত মাসে একটি মিশন ঢাকা সফর করে। কোনো ধরনের সমঝোতা ছাড়াই তারা ঢাকা ছাড়ে। মূলত, বিনিময় হার নিয়েই দুই পক্ষ সমঝোতায় আসতে পারেনি। যে কারণে আলোচনা গড়ায় ওয়াশিংটনে। গত মাসের শেষ দিকে আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকের ফাঁকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সাইডলাইনে আলাদা বৈঠক হয়। সেখানেও সমঝোতায় পৌঁছাতে না পেরে গত ৫ ও ৬ এপ্রিল দুই পক্ষ ভার্চুয়াল বৈঠক করে। এসব বৈঠকের ভিত্তিতে অবশেষে দুই পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছেছে। সে আলোকে শিগগিরই স্টাফ লেভেল চুক্তি হতে পারে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইএমএফ আইএমএফ র সমঝ ত

এছাড়াও পড়ুন:

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনায় রিজার্ভ আরও বাড়ল

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত বেড়ে এখন ৩০ দশমিক ২৫ বিলিয়ন, অর্থাৎ ৩ হাজার ২৫ কোটি মার্কিন ডলারে হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল রোববার এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনে রিজার্ভের পরিমাণ বাড়িয়েছে। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১১টি ব্যাংক থেকে ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনেছে। প্রতি ডলারের দর ছিল ১২১ দশমিক ৪৭ টাকা থেকে ১২১ দশমিক ৫০ টাকা।

গত ২৩ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে ১ কোটি ডলার কেনে। এর আগে ১৩ ও ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত নিলামে কেনা হয় মোট ৪৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। চলমান নিলামপ্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক ৫৮ কোটি ডলার কিনেছে।

কয়েক মাস ধরে প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) প্রবাহ বাড়ছে। এতে ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। ফলে ডলারের দাম কমার আশঙ্কা দেখা দেয়। তাই বাজারে ডলারের সম্ভাব্য দরপতন ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রগুলো জানায়, বাজারে ডলারের মান ধরে রাখতে এবং বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে তারা এই পদক্ষেপ নেয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।

বিপিএম-৬ হচ্ছে, আইএমএফের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস এবং ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়ালের ষষ্ঠ সংস্করণ। এটি মূলত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক ডেটা হিসাব করার একটি মানসম্মত পদ্ধতি।

মোট রিজার্ভ ৪ আগস্ট ছিল ৩০ বিলিয়ন ডলার। ওই দিন বিপিএম-৬ অনুযায়ী তা ছিল ২৪ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন ধরে ডলারের চাহিদা কমে আসছে। ফলে দাম কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে। দাম আরও কমলে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাতে নিরুৎসাহিত হতে পারেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ খুবই ভালো দেখা গেছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯ শতাংশ। এই মাসে প্রবাসীরা ২৪৭ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের একই মাসে ছিল ১৯১ কোটি ডলার।

ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রবাসী আয়ে উচ্চ হারের প্রবৃদ্ধি দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে মুদ্রাবাজারে ডলারের ওপর চাপ কমেছে। অবৈধ পথে অর্থ পাঠানোর বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ এবং বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোকে উৎসাহিত করতে নানা প্রণোদনা প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, গত কয়েক মাসে বিদেশি সব বকেয়া দেনা পরিশোধ হয়ে গেছে। লেনদেনের ভারসাম্যে উন্নতি হওয়ায় ডলারের ওপর চাপ কেটে গেছে। বাংলাদেশের প্রতি বিদেশি ব্যাংকগুলোর আস্থা ফিরে এসেছে, যা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে এনে দিয়েছে।

গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশ থেকে রেকর্ড প্রায় ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার পাঠান প্রবাসীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনায় রিজার্ভ আরও বাড়ল