পশুর চাহিদা বাড়লেও কমেছে পালন, আছে লোকসানের ভয়
Published: 13th, May 2025 GMT
আগের বছর ৯টি ষাঁড় বিক্রি করে খরচ বাদে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা লাভ করেছিলেন কুমারখালীর যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের খামারি হান্নান মোল্লা। এবারও ৯টি প্রস্তুত করেছেন। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ভালো ক্রেতা পাবেন কিনা বা ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগে আছেন তিনি।
আগে প্রতিবছর ঈদের জন্য ৫০-৭০টি ষাঁড় প্রস্তুত করতেন হাসিমপুর গ্রামের রমন ঘোষ খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শান্ত। দুই-তিন বছর লোকসান গুনে দুধ ও বাছুর উৎপাদনে মনোযোগী হয়েছেন। তিনি বলেন, এ বছর প্রায় ৯০০ কেজি ওজনের একটি ষাঁড় আছে। চার বছরে খরচ হয়েছে তিন লাখ টাকা। চার লাখ টাকা হলে বিক্রি করবেন। তাঁর ভাষ্য, এ বছর পশুর খরচ বেশি হলেও দাম কম।
কুমারখালীতে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ৩ হাজার ৫৯৭টি খামারে প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার ৪০০ পশু। উপজেলায় পশুর চাহিদা প্রায় ১৫ হাজার, যা গত বছরের তুলনায় ২ হাজার ৭৯৩টি বেশি। একই সংখ্যক খামারে ১ হাজার ১৬৬টি পশু কম পালন করেছেন খামারি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পাশাপাশি রয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। পরিচর্যার খরচ বেড়েছে। ফলে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা আসবে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন খামারি। তারা বলছেন, করোনার সময় থেকে তেমন লাভ করতে পারেননি। এবারও সীমিত লাভের আশায় পশু পালন করেছেন। মানুষের ব্যয় বাড়লেও বাড়েনি আয়। গরু আমদানি হবে কিনা– তা নিয়েও শঙ্কিত তারা।
প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে জানা যায়, পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়নের খামারে ষাঁড় ১২ হাজার ৯১৭, গাভি ১ হাজার ৩৬৭, ছাগল ৭ হাজার ৯৭৬ ও ভেড়া ১৪০টি পালন হয়েছে। এবার পশুর চাহিদা ১৫ হাজার হলেও গত বছর ছিল ১২ হাজার ২০৭টি। উপজেলার যদুবয়রা, শিলাইদহ, সদকী ও জগন্নাথপুর ইউনিয়ন ঘুরে জানা গেছে, অনেক খামারি ঈদুল আজহা সামনে রেখে পশু লালন-পালনে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ঈদে এসব বিক্রি করতে না পারলে তাদের লোকসান গুনতে হবে।
শিলাইদহের খোরশেদপুর গ্রামের জোয়ার্দার অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক রানা জোয়ার্দারের গত ঈদে ৪০টি পশু বিক্রি করে ভালো লাভ হয়েছিল। এবার ৪৩টি প্রস্তুত করেছেন। ১ লাখ ১০ হাজার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা দামের পশু আছে। তাঁর ভাষ্য, এ বছর গোখাদ্যের দাম গতবারের তুলনায় বেশি।
সদকী ইউনিয়নের হুদা গ্রামের কৃষক জামাল হোসেন বলেন, ৫৫ কেজি বস্তার ছালের (গমের ভুসি) দাম গতবার ছিল ২ হাজার ২০০-২ হাজার ৩০০ টাকা। এবার ২০০-৪০০ টাকা বেশি লাগছে। ৫০০ টাকার গুঁড়া হয়েছে ৮০০ টাকা। চার-পাঁচ টাকা আঁটি বিছালি কিনেছেন সাত-আট টাকায়। বড় খামারি ও ব্যবসায়ীরা মজুত করায় দাম বাড়ে।
পশু মোটাতাজা করার জন্য ছাল, ছোলা, খেসারি, খুদ, গুঁড়া, খৈল, অ্যাংকর ডাল, খড় খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। স্টেশন বাজারসংলগ্ন ছালপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান বলেন, ৩৯ কেজির বস্তা খুদ ১ হাজার ৫২০, অ্যাংকরের ভুসি ১ হাজার ১৭০, ৫৫ কেজির বস্তা ছাল ২ হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ১৫০-২৫০ টাকা।
প্রাকৃতিক উপায়ে এবং স্বাস্থ্যসম্মতভাবে এলাকায় পশু মোটাতাজা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো.
ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, পশু বিক্রির জন্য চারটি সাপ্তাহিক হাট রয়েছে। অনলাইনেও চলে বেচাকেনা। বাজার তদারকির ব্যবস্থা করা হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি রেকর্ড সংখ্যক বেড়েছে
বিশ্বে গত বছর অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী সংঘাত, দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন দেশের লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ফলে নতুন এ রেকর্ড হয়েছে। বাস্তুচ্যুতির ঘটনা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি) ও নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) প্রকাশিত যৌথ বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে ৮ কোটি ৩৪ লাখ মানুষের অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়ার তথ্য নিবন্ধিত হয়েছে, যা নজিরবিহীন। এ সংখ্যা জার্মানির মোট জনসংখ্যার সমান। গাজা ও সুদানের মতো অঞ্চলগুলোতে সংঘাতের পাশাপাশি বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ছয় বছর আগে বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা এর অর্ধেকের কম ছিল। অর্থাৎ, গত ছয় বছরে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
আইডিএমসির প্রধান আলেক্সান্দ্রা বিলাক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সংঘাত, দারিদ্র্য ও জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাবকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটে এবং এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন অসহায় মানুষ।’
আইডিএমসি এবং এনআরসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়া ৮ কোটি ৩৪ লাখ মানুষের মধ্যে ৯০ শতাংশ বা ৭ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ সংঘাত ও সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ২০১৮ সালের তুলনায় এ সংখ্যা ৮০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৪ সালে ১০টির মতো দেশের প্রতিটিতে ৩০ লাখের বেশি মানুষ সংঘাত ও সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এর মধ্যে গৃহযুদ্ধকবলিত সুদানের অবস্থা বেশি খারাপ। সেখানে ১ কোটি ১৬ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন, যা একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ রেকর্ড। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ যুদ্ধকবলিত গাজা উপত্যকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অর্থাৎ, গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় পুরোটাই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। হেলেন ও মিলটনের মতো বড় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা বিশ্বে মোট দুর্যোগসংশ্লিষ্ট বাস্তুচ্যুতির ঘটনার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। খবর এএফপির।