দেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে শান্তির বার্তা ছড়াতে আলিয়ার উদ্যোগ
Published: 14th, May 2025 GMT
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আবহে যখন প্রতিবেশীর নিন্দায় সমস্বরে গর্জন ছেড়েছেন বলিউড তারকারা, তখন আলিয়া ভাট মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘প্রতিটি বীরসন্তানের উর্দির নেপথ্যে একজন রাত জাগা মা রয়েছেন।’
সেসব লৌহমানবীদের কথা ভেবে অভিনেত্রী নিজেও দু’চোখের পাতা এক করতে পারছেন না। ভারতীয় গণমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালে জানা গেছে, উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে রত্নগর্ভাদের জন্য হাতে কলম তুলে নিয়েছেন আলিয়া।
দীর্ঘ ইনস্টাগ্রাম পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘গত কয়েক রাত ধরে একটা ভিন্ন অনুভূতি হচ্ছে। বাতাস এক ধরনের নীরবতা বিরাজ করছে। রুদ্ধশ্বাস পুরো দেশ এবং গত কয়েকদিন ধরে আমরা সেই নীরবতা অনুভব করে চলেছি। একটা চাপা উদ্বেগ কাজ করছে। প্রতিটি খবরের প্রতিটি কথা, এমনকি রাতে খাবারের টেবিলে পর্যন্ত নিস্তব্ধতা, উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।’
সেই পোস্টেই দেশের অতন্দ্র প্রহরী সেনা জওয়ানের বীরত্বকে কুর্নিশ জানিয়ে আলিয়ার সংযোজন, ‘কোথাও বিপদসঙ্কুল পাহাড়ের ঢালে, কোথাও নিকষ অন্ধকারে আমাদের সেনারা বিনিদ্র রজনী কাটাচ্ছে। সর্বদা সজাগ থাকছে। সিংহভাগ দেশবাসী যখন গৃহবন্দি, তখন আমাদের দেশের নারী-পুরুষরা (জওয়ান) অন্ধকারে দাঁড়িয়ে নিজেদের জীবন বাজি রেখে ঘুম বিসর্জন দিচ্ছেন, শুধু আমরা যেন শান্তিতে ঘুমোতে পারি, সেজন্য। এটা শুধু সাহসিকতার প্রতীক নয়, এটা ওঁদের আত্মত্যাগ। আর এ প্রতিটি সেনা জওয়ানের উর্দির নেপথ্যে একজন মা রয়েছেন, যিনি বিনিদ্র রজনী কাটাচ্ছেন। সেই মা যিনি জানেন যে, তাঁর বীর সন্তানেরা ঘুমপাড়ানি গান ছাড়িয়ে প্রতিটি মুহূর্তে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছে। এমন এক উত্তেজনার রাত, যে নীরবতা যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে।’
পোস্টে আলিয়া আরও জানিয়েছেন, রোববার তিনি যখন মাতৃদিবস পালন করছিলেন তখন দেশের সেসব বীর সন্তানদের মায়ের কথা ভেবে তাঁর মন কেঁদে উঠেছিল।
আলিয়া লিখেছেন, ‘মাতৃ দিবসে ফুল বিতরণ এবং আলিঙ্গন করার সময়ে মনে পড়ল সেসব রত্নগর্ভাদের কথা, যাদের মেরুদণ্ড ইস্পাতসম। সেই লৌহমানবীদের কথা, যারা এই বীর সেনাদের পরম যত্নে বড় করেছেন। যারা এ সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন তাদের জন্য গভীরভাবে শোকাহত। ওরা তো আর কোনোদিন বাড়ি ফিরবে না। ওদের নাম এখন দেশের আত্মার সঙ্গে খোদাই করা হয়ে গেছে। পুরো দেশ কৃতজ্ঞ তাদের পরিবারের প্রতি।’
পোস্টের এ লেখায় আলিয়া সমাপ্তি টেনেছেন সেই সমস্ত জওয়ানদের মা-বাবার জন্য প্রার্থনা জানিয়ে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সংবেদনশীল না হলে কেউ ভালো শিল্পী হতে পারে না: জুয়েল আইচ
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো ‘লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় একাদশতম পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। আলোচনার বিষয় ছিল ‘শিল্প, মুক্তিযুদ্ধ এবং মানবতার সংমিশ্রণে গঠিত এক অনন্য লিগ্যাসি’।
‘মানুষ তার আশার সমান সুন্দর, বিশ্বাসের সমান বড় এবং কাজের সমান সফল। কাজই মুক্তি। তবে আশাও বড় রাখতে হবে। আশা না থাকলে কাজ হবে না।’ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেন জুয়েল আইচ। পডকাস্ট শোর এ পর্ব প্রচারিত হয় গতকাল শনিবার প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে।
পডকাস্টের শুরুতেই সঞ্চালক জানতে চান, মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে প্রথম যেদিন জাদু দেখালেন, সেই অনুভূতি কেমন ছিল?
উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সব বাদ দিয়ে যুদ্ধে যোগ দিই। আমরাই খুব সম্ভবত প্রথম পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করি। আমি শৈশব থেকেই জাদু দেখাই। তবে মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে জাদু দেখানোর সেই অনুভূতিটি ছিল একেবারেই ম্যাজিক্যাল।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, শিল্পকে সাহস করে অস্ত্রতে পরিণত করার এই আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে এল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এটা আত্মবিশ্বাস নয়। আমি অসম্মান সহ্য করতে পারি না। আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখছিলাম, তারা (পাকিস্তান) আমাদের বিভিন্নভাবে অসম্মান করে আসছে। কখনো গানে, কখনো ছবি এঁকে কিংবা কবিতার ভাষায় আমরা সব সময় এর প্রতিবাদ করে এসেছি। এভাবে করেই শেষ পর্যন্ত আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেমে গেলাম।’
জুয়েল আইচকে কেউ বলেন ম্যাজিশিয়ান, আবার কেউ বলেন মিউজিশিয়ান। তবে জুয়েল আইচ একজন দার্শনিকও বটে। জাদুর মোহনীয়তা আর বাস্তবতার যে রূঢ় চিত্র—এই দুটো আপনার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘বাস্তবতাকে আমরা বলে থাকি “কঠিন” আর স্বপ্ন তো আমরা আকাশসমান ভাবতে পারি। একদম রংধনুর মতো সাত রং। এই দুটোকে যদি কেউ আয়ত্ত না করতে পারে, তবে তার জীবন কিন্তু সেখানেই শেষ। সে বেঁচে থাকবে কিন্তু মরার মতো।’ তিনি বলেন, ‘সে জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দরকার। যেমন আপনি কোনোভাবেই আমাকে দুঃখী বানাতে পারবেন না। আমি দুঃখ পাই না, তবে বারবার আমাকে খ্যাপাতে থাকলে আমি রুখে দাঁড়াই।’
জুয়েল আইচ কখনোই পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ছাড়া স্টেজে ওঠেন না। সঞ্চালক জানতে চান, এর পেছনে কারণ কী?
জুয়েল আইচ বলেন, প্রস্তুতি ছাড়া কোনো কাজ সুন্দরমতো হয় না। প্রস্তুতি ছাড়া যদি কেউ কিছু করে, তবে সেগুলো অনেক নিম্নমানের হবে। তিনি বলেন, ‘আমি একটি বাঁশি দিয়ে সব রাগ বাজাতে পারি। এটা কি এক দিনেই সম্ভব!’
আপনার পারফরম্যান্সের সময় আপনি মাঝেমধ্যে নিঃশব্দ হয়ে যান। যেখানে কোনো উদ্যম নেই। এই ‘সাইলেন্স’-এর কারণটা কী?
সঞ্চালক জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, শব্দের চেয়ে নিঃশব্দের ভাষা বেশি গভীর। একটি পেইন্টিং, যেখানে কোনো শব্দ থাকে না কিন্তু কত কিছু বলে দেয়! দেখবেন কেউ অনেক খেপে গেলে নীরব হয়ে যায়। আসলে শব্দে যা বলা যায়, নিঃশব্দে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব।
বর্তমানের এই ডিজিটাল যুগে সবকিছুই হাতের নাগালে, এমনকি জাদুও। জাদু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আসার পর এর আবেদন কিছুটা কমে যাচ্ছে কি না? জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, খালি চোখে দেখলে তা আসলেই কমে যাচ্ছে। কারণ, এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে জাদুগুলো দেখানো হচ্ছে, তা দেখে মানুষ বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘তারা ভাবছে, আমরা আগে যেসব জাদু দেখেছি, এগুলো তো তার থেকেও বিস্ময়কর। কিন্তু তারা হয়তো বুঝতে পারছে না, এখন সবকিছুর সঙ্গে মিশে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।’
সঞ্চালক এরপর প্রশ্ন করেন, আপনি একসময় ‘পালস স্টপিং’ ধরনের ইলিউশন বন্ধ করেছিলেন। এর পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এই পালস স্টপিংয়ের মাধ্যমে আমি পুরো দেশজুড়ে এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলাম। দলে দলে মানুষ এটি দেখতে আসত। কিন্তু এসব দেখে মানুষ অনেক বেশি আতঙ্কিত হতো, অনেক মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ত। একবার একজন অনেক বড় পালোয়ান এটি দেখতে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। সেদিন শো শেষ করেই আমি আমার টিমকে বলি, এই ম্যাজিক আর হবে না। কারণ, এই ম্যাজিক এত এত মানুষকে ডেকে আনছে বটে কিন্তু এটি মাত্রা অতিক্রম করে ফেলছে। যা মোটেও ঠিক নয়।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, তাহলে কি একজন শিল্পীকে সংবেদনশীলও হতে হয়?
‘অবশ্যই।’ জুয়েল আইচ বলেন, একজন শিল্পীকে অবশ্যই সংবেদনশীল হতে হবে। সংবেদনশীল না হলে তিনি ভালো শিল্পী হতে পারবেন না।
আপনি যেমন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের সামনে পারফর্ম করেছেন, তেমনি এমন শিশুদের জন্যও জাদু দেখিয়েছেন, যারা কখনো টিকিট কিনে শো দেখতে পারে না। আপনার চোখে আসল মর্যাদা কোথায়—বৃহৎ মঞ্চে, নাকি একটিমাত্র বিস্মিত মুখে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল আইচ বলেন, ‘আসলে মঞ্চ ব্যাপার নয়। আমি আমার জাদুতে বিস্মিত এবং মুগ্ধ হয়ে থাকা দেখতে ভালোবাসি। শুধু বিস্ময় নয়, বিস্ময়ের সঙ্গে মুগ্ধতা আমার ভালো লাগে।’
আরও পড়ুননীতি আর মূল্যবোধ শক্ত থাকলে কেউ থামাতে পারবে না: রুবাবা দৌলা১২ অক্টোবর ২০২৫পডকাস্টের শেষ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, আমরা আরেকজন জুয়েল আইচ কবে পাব?
মুচকি হেসে জুয়েল আইচ বলেন, ‘যখন সেই উদ্যম নিয়ে কেউ কাজ করবে, ঠিক তখন। সে হয়তো আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে। শুধু ম্যাজিকে নয়, সব দিক দিয়েই।’
আরও পড়ুনবাবা প্রথমে আমাকে অফিস সহকারীর কাজ দিয়েছিলেন: হাতিলের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান০৫ অক্টোবর ২০২৫