একই শহরের পাশাপাশি দুটি ক্লাব। দুটি মাঠের দূরত্বও ৯ কিলোমিটারের কম। আজ যখন এস্পানিওলের আরসিডিই স্টেডিয়ামে নামবে বার্সেলোনা, তখন কি তাদের গার্ড অব অনার দেওয়া হবে? গতকাল ক্যামেরার সামনে আসা এস্পানিওল কোচ মানলো গঞ্জালেজকে এমন প্রশ্ন করে বেশ বিব্রতকর অবস্থার মধ্যেই ফেল দিয়েছিলেন সাংবাদিকরা।
কিন্তু গার্ড অব অনার দেওয়ার প্রশ্নটাইবা আসছে কেন? উপস্থিত কাতালান সাংবাদিকরাই ব্যাপারটি খুলে বলেন তাঁর সামনে। আগের রাতে যদি রিয়াল মাদ্রিদ মায়োর্কার সঙ্গে ম্যাচটি ড্র করতো, তাহলে লা লিগা চ্যাম্পিয়ন হয়েই আজ মাঠে নামতে পারতো বার্সা।
সেই হিসাবে প্রতিপক্ষের গার্ড অব অনার দেওয়ার রীতি রয়েছে। ‘আমি আমার দলকে নিয়ে ভাবছি, বাকি সব আমার চিন্তার বিষয় নয়।’ আসলে স্পেনের এই ‘ডার্বি বার্সেলোনি’ নিয়ে এস্পানিওলের একটা আদি অনুযোগ রয়েছে। কাতালানরা বার্সেলোনাকে যতটা তাদের নিজেদের দল মনে করেন, এস্পানিওলকে ততটা নয়। অনেকটা একই মায়ের পেটের দুই সন্তানের জন্য ভালোবাসার পক্ষপাতিত্ব! তবে রিয়াল জিতলেও আজই শিরোপা উদযাপনের জন্য প্রস্তুত বার্সা সমর্থকরা।
৭ পয়েন্টে এগিয়ে থাকা ইয়ামালরা আজ জিতলেই লা লিগা চ্যাম্পিয়ন, হাতে থাকা বাকি দুটি ম্যাচ তখন হবে কেবলই নিয়ম রক্ষার। কেননা, এই মুহূর্তে দ্বিতীয়তে থাকা মাদ্রিদের সঙ্গে ৭ পয়েন্টে এগিয়ে তারা। স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিকগুলোর খবর, বার্সা সমর্থকরা বাসভর্তি হয়ে আজ নিজেদের মাঠ এস্তাদিও অলিম্পিকের সামনে আসবেন। ম্যাচের পর লেভানডস্কিরা নিজেদের মাঠের দিকেই রওনা হবেন। এক মৌসুম পর ফের লা লিগার শিরোপা ফিরে পাওয়ার উৎসবে মাততে চান সমর্থকরা। আসলে সেদিন এল ক্ল্যাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-৩ গোলে হারানোর পরই লা লিগা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় বার্সার। আজ এস্পানিওলের বিপক্ষে জিতলে তাই ঘরোয়া ফুটবলের ট্রেবল জয়ের আনন্দ করবে রাফিনিয়ারা।
যদিও ডার্বিতে প্রতিপক্ষকে সহজে ছেড়ে দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন এস্পানিওল কোচ। তাঁর প্রেরণা রিয়াল মাদ্রিদকেও তারা তাদের উঠোনে হারানো। ‘রিয়াল মাদ্রিদকে যেভাবে আমরা আটকে দিয়েছিলাম, সেভাবে অন্য যে কোনো দলকেই হারিয়ে দিতে পারি। বার্সা অবশ্যই বড় দল, তারা শিরোপার কাছাকাছিও বটে। তবে আমরাও প্রস্তুত।’
শিরোপা উৎসবের এই মঞ্চে বার্সা কোচ হ্যান্সি ফ্লিক তাঁর শুরুর একাদশে বড় একটি পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন। গোলরক্ষক সেনজিকে বসিয়ে খেলাতে পারে টারস্টেগানকে। গেল নভেম্বরে এই কাতালান ডার্বিতে বার্সা তাদের নিজেদের মাঠে এস্পানিওলকে ৩-১ গোলে হারিয়েছিল। তাছাড়া গেল তিনটি ম্যাচে কোনো জয় না পাওয়ায় এস্পানিওল তেমন ছন্দেও নেই।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রবীন্দ্রসরোবরে সুরে–ছন্দে জমজমাট নবান্ন উৎসব
অগ্রহায়ণের প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব হলো রাজধানীতে। নাচ, গান, আবৃত্তি, আলোচনায় রোববার ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে উদ্যাপন করা হলো ঋতুভিত্তিক এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব।
হেমন্তের বেলা শেষে ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদ আয়োজিত নবান্ন উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর ছিল ফারহানা করিমের নেতৃত্বে সমবেত নৃত্য।
নবান্নকথনে অংশ নেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এহসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আবহমানকাল থেকে আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে অগ্রহায়ণে কৃষকের ঘরে নতুন ফসল ওঠে। নতুন ধান তাঁদের জীবনে নিয়ে আসে সচ্ছলতা। নিয়ে আসে আনন্দ। তবে নবান্ন কেবল ফসলের আনন্দই নয়, আমাদের লোকসংস্কৃতির একটি শক্তিশালী উপাদান। নাগরিক পরিবেশে ঋতুভিত্তিক এই উৎসবকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বসন্ত, বর্ষা, শরৎসহ ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো আয়োজন করা হবে।’
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ ও মঞ্চের চারপাশের স্থান বর্ণাঢ্যভাবে সাজিয়ে তোলা হয়। এর সঙ্গে ছিল ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির স্টল।
আলোচনার পরে শুরু হয় গানের পালা। সাগর বাউল শুরু করেছিলেন ভবা পাগলার গান ‘বারে বারে আসা হবে না’ গেয়ে। এরপর তিনি পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘লোকে বলে লালন ফকির কোন জাতের ছেলে’ এবং রাধারমণ দত্তের গান ‘অবলারে কান্দাইয়া’। ঢোল, একতারার বাজনা, বাঁশির সুর আর লোকসাধকদের এসব মরমি গানে গানে সাগর বাউল শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন।
অনুষ্ঠানে নজরুলসংগীত পরিবেশনের কথা ছিল শিল্পী ফেরদৌস আরার। তবে তিনি অসুস্থতার জন্য সংগীত পরিবেশন করতে পারেননি। এই চমৎকার অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ ও শ্রোতাদের শুভেচ্ছা জানান।
লোকশিল্পী আলেয়া বেগম পরিবেশন করেন ‘মালা কার লাগিয়া গাঁথি’সহ বেশ কয়েকটি গান। গানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল আবৃত্তি ও কবিদের কবিতা পাঠ। এই পর্বে অংশ নেন কবি রাসেল রায়হান, রিক্তা রিনি, সানাউল্লাহ সাগর, জব্বার আল নাইম, ইসমত শিল্পীসহ অনেকে।
সংগীতশিল্পীদের মধ্যে কোহিনূর আক্তার পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘তিন পাগলের হইল মেলা’। ডলি মণ্ডল পরিবেশন করেন ‘সব লোক কয় লালন কী জাত সংসারে’। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদের সদস্যসচিব দীপান্ত রায়হান।
শীতের মৃদু পরশ লেগেছে রাজধানীর হাওয়ায়। হালকা কুয়াশাও জমছে আকাশে। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে সুরে-ছন্দে বেশ খানিকটা রাত অবধি জমজমাট হয়ে উঠেছিল এই নাগরিক নবান্ন উৎসব।