পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের দায়িত্ব আইএইএ নিক: দাবি রাজনাথের
Published: 15th, May 2025 GMT
পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রসম্ভার তদারকির দায়িত্ব আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে গিয়ে আজ বৃহস্পতিবার তিনি এ মন্তব্য করেন।
পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়ে হামলা চালানোর পর রাজনাথ এই প্রথম শ্রীনগরে গেলেন। সেখানে বাদামিবাগ ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে তিনি অভিযোগ তুলে বলেন, ‘পাকিস্তান কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন, তার প্রমাণ গোটা বিশ্ব পেয়েছে। তাদের মতো এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন ও শঠ দেশের হাতে পরমাণু অস্ত্রসম্ভার আদৌ নিরাপদ কি না, সেই প্রশ্ন আমি খোলাখুলি করতে চাই।’
আইএইএ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পারমাণবিক কাজকর্মের ওপর নজর রাখে। সংঘাতের সময় ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের বিভিন্ন ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায়। সেই আক্রমণে পাকিস্তানের পরমাণু ভান্ডার কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়েছিল। পারমাণবিক বিকিরণের শঙ্কাও কোনো কোনো মহল থেকে করা হচ্ছিল। যদিও আইএইএ তা অসত্য বলে জানিয়েছে।
শ্রীনগরে ভারতীয় বাহিনীর সাহসের প্রশংসা করেন রাজনাথ। তিনি বলেন, ‘আপনারা যে বীরত্ব দেখিয়েছেন, তাতে সারা দেশ গর্বিত। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের মনোভাব কতটা কঠোর, পাকিস্তান তা বুঝতে পেরেছে। তাই তারা পারমাণবিক অস্ত্র দেখিয়ে “ব্ল্যাকমেল” করার খেলা খেলছে। ভারত কিন্তু কোনো ব্ল্যাকমেল আমলে নেবে না।’ দিন কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই এক মন্তব্য করেছিলেন।
আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি কতটা বাস্তব২ ঘণ্টা আগেপাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি গিয়েছিলেন পাঞ্জাবের আদমপুরের বায়ুসেনা ঘাঁটিতে। আজ বৃহস্পতিবার রাজনাথ সিং গেলেন শ্রীনগরে। সংঘাত চলাকালে এই বাদামিবাগ ক্যান্টনমেন্টেই পাকিস্তানের ছোড়া গোলা পড়েছিল। প্রতিরক্ষামন্ত্রী তার অংশ দেখেন।
এ সময় পাকিস্তানের উদ্দেশে রাজনাথ বলেন, কাশ্মীর ভারতের মাথা। সেখানে পাকিস্তান আঘাত করতে চেয়েছিল। সেই আক্রমণ ভারতীয় বাহিনী প্রতিহত করেছে।
জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে আলোচনায় তৃতীয় কোনো পক্ষের হস্তক্ষেপের আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে রাজনাথ বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার একমাত্র আলোচ্য বিষয় হবে সন্ত্রাসবাদের নিরসন ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ফেরত নেওয়া। অন্য কিছু নয়।
আরও পড়ুনপাকিস্তান কি ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, কী জানা গেল২০ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ র নগর মন ত র র জন থ পরম ণ
এছাড়াও পড়ুন:
কয়েক মাসের মধ্যেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে পারে ইরান: আইএইএ প্রধান
ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই আবারও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে পারে। তাতেই পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জন সম্ভব বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি।
গতকাল শনিবার সিবিএস নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।
রাফায়েল গ্রোসি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালালেও সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়নি এসব স্থাপনা। তিনি বলেন, খোলাখুলি বললে, কেউ বলতে পারে না যে সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এখনও কিছু রয়েছে।
যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি– ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
গত ১৩ জুন ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ইসরায়েলের দাবি— ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রও হামলায় যোগ দেয় এবং ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে বোমা ফেলে। কিন্তু এই হামলায় প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।
সিবিএস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গ্রোসি বলেন, তেহরান কয়েক মাসের মধ্যেই সেন্ট্রিফিউজ ঘুরিয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারে। তাদের এখনো শিল্প ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা রয়েছে। সুতরাং, যদি তারা চায়, তবে আবারও এটি শুরু করতে পারবে।
এর আগে পেন্টাগনের একটি গোয়েন্দা মূল্যায়নেও বলা হয়, মার্কিন হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে মাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে দিতে পেরেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। একইসঙ্গে তিনি মিডিয়ার বিরুদ্ধে ইতিহাসের অন্যতম সফল সামরিক অভিযানে অবমূল্যায়নের অপচেষ্টা করার অভিযোগ তোলেন।
ট্রাম্প ইরানকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ আবারও শুরু হলে তিনি ইরানে আবারও বোমা হামলা করবেন। যদিও এই মুহূর্তে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে।
অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ‘গুরুতর’। তবে এ সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
আইএইএ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পক্ষ অবলম্বন করছে এমন অভিযোগ তোলে গত সপ্তাহে ইরানের পার্লামেন্ট সংস্থাটির সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের পদক্ষেপ নেয়।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থা গত মাসে জানায়, ইরান ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধবিষয়ক চুক্তি ভঙ্গ করেছে। তবে ইরান দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং বেসামরিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, ইরান ১৫ বছর পর্যন্ত ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশের বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না এবং ফোরদো স্থাপনায় কোনো সমৃদ্ধকরণ চলবে না। তবে ট্রাম্প ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেন এবং পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এরপর ইরান ওই আরোপিত সীমাবদ্ধতা লঙ্ঘন করতে থাকে। ২০২১ সালে ফোরদোতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ আবারও শুরু করে ইরান।
আইএইএর তথ্য অনুযায়ী, ইরান ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম এত পরিমাণে মজুত করেছে যা দিয়ে নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি সম্ভব।