ইসরায়েলি হামলা ও অব্যাহত অবরোধের কারণে গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ধসে পড়েছে। বুধবার জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, আহত মানুষের সংখ্যা বাড়ায় দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের মা ও শিশু ওয়ার্ড খালি করে সেটিকে জরুরি অপারেশন থিয়েটারে রূপান্তর করতে হয়েছে। এখানে আসা আহতদের অনেকেই স্থানীয় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খাদ্য সহায়তা আনতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলার শিকার হন।

ওসিএইচএ জানিয়েছে, জীবন বাঁচাতে অনেক ক্ষেত্রেই আহতদের হাত-পায়ের মতো অঙ্গ কেটে ফেলতে হয়েছে চিকিৎসকদের। প্রচণ্ড সংকটের মধ্যে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধের ঘাটতি এই সংকটকে আরও তীব্র করে তুলছে। সংস্থাটি জানায়, প্রতিদিনই গাজা উপত্যকার বহু রোগী রক্ত সংস্থানের জন্য হাহাকার করছেন। কিন্তু রক্তের মজুত এতই কম, চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না।

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, জরুরি সেবাদানকারীদের খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে গাজায়। এই সংকট এতই তীব্র, ক্ষুধায় অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন অনেকেই। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত ইসরায়েলি আগ্রাসনে মোট ৫৫ হাজার ৭০৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৩০ হাজার ১০১ জন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৬৯ জন নিহত ও ২২১ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে তারা।

বৃহস্পতিবার সকালে ত্রাণ কেন্দ্রে অপেক্ষমাণ ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলায় আরও অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৭২ জন। এ ছাড়া গাজা শহরের কাছে ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে আরও তিনজন নিহত হয়েছেন। 

এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আবারও সতর্ক করে বলেছে, হাসপাতালগুলোর কাছে মজুত থাকা জ্বালানিতে সর্বোচ্চ তিন দিন চলবে। আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে হাসপাতালের জ্বালানি মজুতের স্থানে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েলি বাহিনী। তারা বলছে, ওই এলাকাগুলো ‘রেড জোন’ বা সামরিক অভিযান চলমান এলাকা। এতে জ্বালানির অভাবে হাসপাতালগুলো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। কারণ, বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় হাসপাতালগুলোর সব গুরুত্বপূর্ণ বিভাগই জেনারেটরের ওপর নির্ভরশীল।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আগ্রাসন শুরুর আগে গাজায় ৩৮টি হাসপাতাল থাকলেও এখন মাত্র ১৬টি হাসপাতাল আংশিকভাবে চালু রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি সরকারি ও ১১টি বেসরকারি। এর বাইরে জরুরি সেবা দিতে সক্ষম আটটি ফিল্ড হাসপাতাল এখনও চলছে।

এদিকে, ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে নজিরবিহীনভাবে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। মুসলিম বিশ্বের অন্যতম পবিত্র এই স্থানটি করোনা মহামারির সময়ও পুরোপুরি বন্ধ ছিল না। ইসলামিক ওয়াক্ফ কাউন্সিলের সদস্য ড.

মুস্তাফা আবু সুয়াই জানান, এই প্রথম তিনি পুরো মসজিদে একা নামাজ পড়েছেন। ‘এমনকি পবিত্র এই স্থাপনার নিরাপত্তায় কোনো প্রহরীও ছিল না’ বলে জানিয়েছেন তিনি। এই নিষেধাজ্ঞা ইসরায়েলে মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকারের স্বাধীনতা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

কথিত গণতন্ত্র থাকলেও আমরা বাকস্বাধীনতা হারিয়েছিলাম: তথ‌্য স‌চিব

প‌তিত ‌শেখ হা‌সিনা সরকার আম‌লে কথিত গণতন্ত্র থাকলেও বাকস্বাধীনতা ছিল না ব‌লে মন্তব‌্য ক‌রে‌ছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা।

তি‌নি ব‌লেন, “ওই সময় দেশে কথিত গণতন্ত্র থাকলেও আমরা বাকস্বাধীনতা হারিয়েছিলাম। তরুণ সমাজ তাদের ন্যায্য কথা বলতে পারেনি।”

রবিবার (৩ আগস্ট) জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের অডিটরিয়ামে তথ্যচিত্র প্রদর্শন, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে সচিব বলেন, “মেধাভিত্তিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্র-জনতা ত্যাগ স্বীকার করেছে। আহতদের চিকিৎসা এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসন নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।”

মাহবুবা ফারজানা ব‌লেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সাহস ও শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সততা, দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।”

গণঅভ্যুত্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপেশাদার ভূমিকার কথা তুলে ধরে সচিব বলেন, “তারা নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। দেশের জন্য আমাদের সন্তানদের আর যেন বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে না হয়, সে বিষয়ে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।”

“গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, প্রশাসনের জবাবদিহিতা এবং ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কাজ করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে সততা, নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারলে দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা জঞ্জাল দূর করা সম্ভব,” ব‌লেও ম‌নে ক‌রেন তি‌নি।

জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহম্মদ হিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফায়জুল হক, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক এ এস এম জাহীদ এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদা বেগম বক্তৃতা দেন।

এর আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।অনুষ্ঠান শেষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করে দোয়া করা হয়।

গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির এ অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাউনিয়ায় মিলাদ মাহফিলে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত ২, আহত ১o
  • জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদের পরিবার ও আহতদের ২৫ লাখ টাকা অনুদান বিদ্যুৎ বিভাগের
  • কথিত গণতন্ত্র থাকলেও আমরা বাকস্বাধীনতা হারিয়েছিলাম: তথ‌্য স‌চিব
  • শিশুর মানসিক বিকাশে ওমেগা-থ্রির গুরুত্ব 
  • জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ