ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে উপজীব্য করে গতকাল সন্ধ্যা ৭ টায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলানায়তনে উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হলো নাটক ‘দেয়াল জানে সব’। এটি প্রযোজনা করেছে নাট্যদল স্পন্দন থিয়েটার সার্কেল। সংস্কৃতি বিষয়ক মণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এর মঞ্চায়ন হয়েছে
এই আয়োজনে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির।

নাটকটির কাহিনির কেন্দ্রে রয়েছে এক নীরব চরিত্র- ‘দেয়াল’। সে দেখছে সব, জানে সব। তার চোখের সামনে রিকশাচালক রহিমুদ্দিনের মৃত্যু, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রুদ্র প্রাণচাঞ্চল্য ম্লান হয়ে যাওয়া, গার্মেন্টসকর্মী আসমার স্বপ্নভঙ্গ, শিশু রাফির নির্মম বিদায় আর হাসপাতালের করুণ চিত্র- সবই ফুটে উঠেছে প্রতীকী কফিনের মাধ্যমে। 

স্পন্দন থিয়েটার সার্কেল-এর নতুন প্রযোজনা ‘দেয়াল জানে সব’ সমকালীন বাস্তবতার গর্ভে জন্ম নেয়া একটি নাটক। নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় রয়েছেন শাকিল আহমেদ সনেট। নাটকটি সম্পর্কে নির্দেশক বলেন ‘এই নাটকটি আমার কাছে কেবল পাঁচটি মৃত্যু, পাঁচটি কফিনের গল্প নয়; এটি একটি ক্ষয়ে যাওয়া সমাজের, ভাঙা স্বপ্নের, জর্জরিত বিশ্বাসের, তবু না হারা আশার প্রতিচ্ছবি। এ নাটকে আমি চেয়েছি এক অদৃশ্য কালরেখা টেনে দিতে, যেখানে বাস্তবতা ও বিমূর্ততা একাকার হয়ে যায়। যেখানে দর্শক দেখবে মৃত্যুর মুখ, আবার শুনবে জীবনের গান। যেখানে কফিনের নৈঃশব্দ্য ছাপিয়ে উঠবে জন্মের স্পন্দন। এই প্রয়াস উৎসর্গ তাদের জন্য, যারা হারিয়ে গিয়েও ফিরে আসে প্রতিটি বিপ্লবের ভোরে।’

মঞ্চসজ্জা, আবহসঙ্গীত, আলো ও ছায়ার খেলায় দর্শক এক অন্তর্গত বাস্তবতার ভেতর প্রবেশ করেন-যেখানে সময় নেই, স্থান নেই, শুধু কালের দেয়ালে লেখা বিস্মৃত মানুষের আর্তনাদ। নাটকটিতে ব্যবহৃত হয়েছে বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক সংলাপ, জীবনঘনিষ্ঠ দৃশ্য নির্মাণ, আধুনিক আলোক পরিকল্পনা ও বিমূর্ত কোরিওগ্রাফি। নাটকের আবহসঙ্গীতে ব্যবহার করা হয়েছে হারমোনিয়াম, বাঁশি ও হুইসেলের বিমূর্ত শব্দ যা কফিনের স্তব্ধতা আর দেয়ালের নীরবতা মিলিয়ে এক অন্তর্জাগতিক শূন্যতার অনুভূতি সৃষ্টি করে।

]নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন জিতাদিত্য বড়ুয়া, জয়ন্ত ত্রিপুরা, আকাশ মিয়া, নুসরাত জাহান, কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মণ, নারিন আফরোজ লিনসা প্রমুখ। সেট ও প্রপস পরিকল্পনায় ছিলেন উৎপল নীল, সুর ও সংগীতে অর্পা খন্দকার চাঁদনী, পোশাক পরিকল্পনায় শাকিল আহমেদ সনেট ও উৎপল নীল, কোরিওগ্রাফিতে কৃষ্ণ ও জয়ন্ত এবং আলোক পরিকল্পনায় অম্লান বিশ্বাস। আজ ২০ জুন সন্ধ্যা ৭ টায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলানায়তনে একই নাটকের দ্বিতীয় প্রদর্শনী হবে। নাট্য প্রদর্শনী সকলের জন্য উন্মুক্ত।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল পকল এক ড ম ন টকট

এছাড়াও পড়ুন:

বরিশালে হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের উচ্ছেদপ্রক্রিয়ায় স্থিতাবস্থা

বরিশাল সিটি করপোরেশনের হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের উচ্ছেদপ্রক্রিয়ায় তিন মাসের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার রুলসহ আদেশ দেন।

‘উচ্ছেদ–আতঙ্কে হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা’ শিরোনামে ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটিসহ এ নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উৎপল বিশ্বাস, সৌমিত্র সরদার, বিপ্লব কুমার পোদ্দার ও হিন্দোল নন্দী সোমবার রিটটি করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বিভাস চন্দ্র বিশ্বাস, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী অনুপ কুমার সাহা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জামিলা মমতাজ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।

অন্যতম রিট আবেদনকারী উৎপল বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘বরিশাল সিটি করপোরেশনের হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের কলোনি থেকে উচ্ছেদ করা থেকে বিরত থাকতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চার আইনজীবী রিটটি করেন। ১৭০ বছর ধরে তাঁরা ওখানে আছে। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দিয়ে উচ্ছেদপ্রক্রিয়ায় তিন মাসের জন্য স্থিতাবস্থার আদেশ দিয়েছেন। ফলে যে যেভাবে আছে, সেভাবে থাকবে, অর্থাৎ আপাতত তাদের উচ্ছেদ করা যাবে না। হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের উচ্ছেদের প্রক্রিয়া কেন অবৈধ ঘোষণা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।’

 প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্ছেদ-আতঙ্কে আছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের হরিজন সম্প্রদায়ের (সুইপার) একটি কলোনির বাসিন্দারা। নগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাঠপট্টি এলাকার ওই কলোনিতে ৩৯টি সংখ্যালঘু হরিজন পরিবার বসবাস করে। সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে, আগামী দুর্গাপূজার পর তাদের এই কলোনি ছেড়ে দিতে হবে। এতে উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন এই কলোনির বাসিন্দারা।

এই উচ্ছেদপ্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে নগর ভবনে গিয়ে কলোনির বাসিন্দারা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বাসিন্দাদের দাবি শতাধিক বছর ধরে তাঁরা নগরের কাঠপট্টি এলাকার এই কলোনিতে বসবাস করে নগরের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের দায়িত্ব পালন করছেন। এত বছরেও তাঁদের উচ্ছেদের চেষ্টা হয়নি। কিন্তু হঠাৎ তাঁদের নতুন জায়গায় যেতে বলা হয়েছে, যা তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বরিশালে হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের উচ্ছেদপ্রক্রিয়ায় স্থিতাবস্থা
  • সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদের অর্থপাচার: ২ সহযোগীর আদালতে জবানবন্দি