আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমান, কতটা শক্তিশালী
Published: 22nd, June 2025 GMT
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল মধ্যরাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে মার্কিন বিমানবাহিনী। ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ নামে এই অভিযানে তারা ব্যবহার ‘বি-২ বোমারু’ যুদ্ধবিমান। এরপর থেকেই আলোচনায় আধুনিক প্রযুক্তির মার্কিন বোমারু বিমানটি। আলজাজিরা অবলম্বনে এই লেখায় জানানো হয়েছে কতটা শক্তি বি-২ বোমারু; কোন বৈশিষ্ট্য তাকে ভিন্ন করেছে অন্যান্য বোমারু বিমান থেকে।
বি-২ বোমারু
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আধুনিক প্রযুক্তির যুদ্ধযান বি-২ বোমারু। এটি বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম। পাশাপাশি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ভূগর্ভস্ত শক্তিশালী বাঙ্কার ধ্বংসের সক্ষমতা রাখে।
ডিজাইন
আধুনিক প্রযুক্তির এই বোমারু বিমানের ডিজাইনে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রকৃতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিমানটির নকশা করা হয়েছে উড়ন্ত ডানার বাজপাখির আদলে। বিমানের বাইরের কাঠামো বিশেষ ধরনের প্রলেপ দিয়ে ঢাকা থাকে। সেই প্রলেপে শত্রুর রাডার থেকে ছোড়া তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়। এছাড়া স্টেলথ প্রযুক্তিতে এটি এতোটাই উন্নত যে, বিশাল এই বিমানটি শত্রুপক্ষের রাডারে শুধু একটি ছোট পাখির সমান সংকেত প্রদর্শন করে।
দাম
প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আর কার্যকারিতায়ও অনন্য বি-২ বোমারু বিমান। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই এ প্রযুক্তি রয়েছে। আর বিমানের সংখ্যা ২১টি। তবে ২০০৮ সালে ঘটা দুর্ঘটনায় একটি বিমান ধ্বংস হয়ে যায়। এই সিরিজের একেকটি বিমানের মূল্য প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৪ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা।
প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য
বি-২ বোমারু বিমানের দৈর্ঘ্য ৬৯ ফুট, উচ্চতা ১৭ ফুট এবং এর ডানার বিস্তার ১৭২ ফুট। ওজনের দিক থেকে এটি ৭১ হাজার ৭০০ কেজি, তবে বিভিন্ন ধরনের মিসাইল ও বোমা বহন করে এটি সর্বোচ্চ ১ লাখ ৭০ হাজার কেজি পর্যন্ত ওজনসহ উড়তে পারে।
বিমানের সক্ষমতা
বিশেষ এই বিমানটি বিভিন্ন ধরনের মিসাইল ও বোমা বহন করতে পারে। জিপিএস প্রযুক্তির সাহায্যে এটি স্থির লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত হামলার পাশাপাশি একাধিক লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানতে সক্ষম। একইসঙ্গে এটি সর্বোচ্চ ১৬টি পারমাণবিক বোমা বহন করতে পারে। তবে বি-২ বোমারুর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অস্ত্র হলো এর বাঙ্কার বাস্টার বা জিবিইউ-৫৭ বোমা। এর ওজন প্রায় ১৩ হাজার ৬০০ কেজি। বিশাল এই বোমাটি মাটির প্রায় ৬১ মিটার গভীরে থাকা লক্ষ্যবস্তুতেও নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম।
ইরানে হামলা
পেন্টাগন নিশ্চিত করেছে যে, ইরানে চালানো হামলায় বি-২ বোমারু বিমান ব্যবহার করা হয়েছে। টানা প্রায় ৩৭ ঘণ্টা উড়ে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত করেছে বিমানটি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের দাবি, এই হামলায় ছোড়া হয়েছে ছয়টি ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা। তবে ইরান দাবি করেছে, তারা আগেই পারমাণবিক স্থাপনাগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলেছিল।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র ব ম নট এই ব ম
এছাড়াও পড়ুন:
কর্মজীবনে এগিয়ে যাবেন এক ধাপ
শিক্ষাজীবন আমাদের মেধার ভিত্তি তৈরি করে, কিন্তু কর্মজীবনের মূলমন্ত্র হলো সঠিক দক্ষতা। আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে কেবল পুঁথিগত বিদ্যাই যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন এমন কিছু দক্ষতা যা একজন শিক্ষার্থীকে কর্মজীবনে টিকে থাকতে এবং সাফল্য অর্জন করতে সাহায্য করবে। ‘দক্ষতা উন্নয়ন: কর্মজীবনের প্রস্তুতি’ কেবল একটি স্লোগান নয়, এটি বর্তমান ও ভবিষ্যতের কর্মজীবনের জন্য একটি অপরিহার্য বিনিয়োগ।
কেন দক্ষতা উন্নয়ন জরুরি?
কর্মবাজার প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডেটা সায়েন্স এবং অটোমেশনের মতো প্রযুক্তিগুলো অনেক পুরোনো পেশাকে প্রতিস্থাপন করছে, আবার নতুন অনেক সুযোগ তৈরি করছে। এই পরিস্থিতিতে একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন শুধু ‘কী শিখতে হবে’ তা জানা নয়, বরং ‘কীভাবে শিখতে হবে’ এবং ‘কীভাবে সেই শেখা কাজে লাগাতে হবে’ তার সঠিক নির্দেশনা। যেসব শিক্ষার্থী তাদের একাডেমিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক দক্ষতাগুলো বৃদ্ধি করে, তারাই প্রতিযোগিতামূলক কর্মবাজারে এগিয়ে থাকে। নিয়োগকর্তারা এখন শুধু ভালো ফলাফলের চেয়ে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, যোগাযোগ ক্ষমতা এবং দলবদ্ধভাবে কাজ করার ক্ষমতার ওপর বেশি জোর দেন।
কী ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন?
কর্মজীবনের প্রস্তুতির জন্য দক্ষতাগুলোকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
কঠিন দক্ষতা (Hard Skills): এগুলো নির্দিষ্ট কাজ বা পেশার জন্য প্রয়োজনীয় এবং দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। যেমন: কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, ডেটা অ্যানালাইসিস, গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, বিদেশি ভাষা শেখা, অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবহার ইত্যাদি। এই দক্ষতাগুলো সরাসরি কোনো একটি কাজের সঙ্গে যুক্ত এবং প্রায়শই সার্টিফিকেট বা ডিগ্রির মাধ্যমে স্বীকৃত হয়। বর্তমান যুগে ডিজিটাল দক্ষতার গুরুত্ব অপরিসীম। মাইক্রোসফট অফিস সুইট, গুগল ওয়ার্কস্পেস বা ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন টুলের মতো সাধারণ ডিজিটাল সরঞ্জামগুলোর জ্ঞান প্রায় সব পেশার জন্যই অপরিহার্য।
নরম দক্ষতা (Soft Skills): এগুলো ব্যক্তিগত গুণাবলি এবং সামাজিক দক্ষতা যা একজন ব্যক্তিকে কর্মক্ষেত্রে সফল হতে সাহায্য করে। নরম দক্ষতা সাধারণত পরিমাপযোগ্য নয়, তবে কর্মজীবনে এর প্রভাব অপরিসীম। উদাহরণস্বরূপ:
যোগাযোগ দক্ষতা (Communication Skills): কার্যকরভাবে নিজের ভাবনা প্রকাশ করা, অন্যদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং মৌখিক ও লিখিত উভয় ক্ষেত্রেই স্পষ্টতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি চমৎকার উপস্থাপনা বা একটি তথ্যসমৃদ্ধ ইমেল আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে।
সমস্যা সমাধানের দক্ষতা (Problem-Solving Skills): কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসে। সৃজনশীলভাবে এবং দ্রুততার সঙ্গে সমস্যা চিহ্নিত করা ও সমাধান করার ক্ষমতার মাধ্যমে একজন কর্মীর দক্ষতা পরিমাপ করা যায়।
নেতৃত্ব গুণ (Leadership Qualities): শুধু ম্যানেজার হওয়ার জন্য নয়, যে কোনো পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা অর্থাৎ একটি দলকে অনুপ্রাণিত করা, সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা অত্যন্ত জরুরি।
দলবদ্ধ কাজ (Teamwork): আধুনিক কর্মক্ষেত্রে একা কাজ করার চেয়ে দলগতভাবে করার প্রবণতা বেশি। অন্যদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া, সহযোগিতা করা এবং যৌথ লক্ষ্য অর্জনে অবদান রাখা সফলতার চাবিকাঠি।
সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা (Critical Thinking): তথ্য বিশ্লেষণ করে যুক্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। গুজব বা ভুল তথ্যের ভিড়ে সঠিক তথ্য যাচাই করার জন্য এই দক্ষতা অপরিহার্য।
অভিযোজন ক্ষমতা (Adaptability): দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া এবং নতুন পরিস্থিতি বা প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার ক্ষমতা।
সময় ব্যবস্থাপনা (Time Management): কাজগুলো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সাজানো এবং সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন করার দক্ষতা।
কীভাবে দক্ষতা উন্নয়ন করা যায়?
দক্ষতা অর্জনের জন্য কেবল ক্লাসরুমের পড়াশোনা যথেষ্ট নয়। এর জন্য প্রয়োজন সক্রিয় উদ্যোগ এবং নিরন্তর প্রচেষ্টা:
অনলাইন কোর্স ও সার্টিফিকেশন: Coursera, edX, Udemy, Khan Academy-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিভিন্ন বিষয়ে অসংখ্য কোর্স পাওয়া যায়। এই কোর্সগুলো নির্দিষ্ট দক্ষতার ওপর গভীর জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে এবং অনেক সময় চাকরির বাজারে বাড়তি সুবিধা দেয়।
ওয়ার্কশপ ও সেমিনার: স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশ নিয়ে নতুন দক্ষতা শেখা এবং বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করা যেতে পারে।
ইন্টার্নশিপ ও স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ: একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি ইন্টার্নশিপ বা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের মাধ্যমে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। এটি কেবল ব্যবহারিক জ্ঞানই দেয় না, পেশাদার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতেও সাহায্য করে।
মেন্টরশিপ: অভিজ্ঞ পেশাদারদের কাছ থেকে পরামর্শ ও নির্দেশনা নেওয়া যেতে পারে। একজন মেন্টর সঠিক পথে চলার জন্য মূল্যবান দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।
প্রজেক্ট-ভিত্তিক কাজ: নিজের আগ্রহের ভিত্তিতে ছোট ছোট প্রজেক্টে কাজ করা। যেমন: একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা, ডেটা সেট অ্যানালাইসিস করা, বা একটি ছোট ব্যবসার পরিকল্পনা তৈরি করা। এটি ব্যবহারিক দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক।
পড়া ও গবেষণা: নিয়মিত নতুন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করা এবং গবেষণামূলক নিবন্ধ পড়া আপনার জ্ঞানকে আপ-টু-ডেট রাখতে সাহায্য করবে।
কর্মজীবনের প্রস্তুতি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আজকের সাফল্যের জন্য যেমন দক্ষতা জরুরি, তেমনি ভবিষ্যতের জন্য নতুন দক্ষতা অর্জনের পথে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, সবচেয়ে মূল্যবান হলো নিজের ওপর করা বিনিয়োগ। সঠিক দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী শুধু একটি ভালো চাকরিই পায় না বরং নিজের কর্মজীবনের লাগাম নিজেই ধরতে পারে এবং সাফল্যের চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছাতে পারে। v