ড্রেসিংরুমে ‘সেরকম’ ক্রিকেটারই দেখেন না নাজমুল
Published: 23rd, June 2025 GMT
কাল বাদে পরশু শুরু কলম্বো টেস্ট। যে মাঠে খেলা হবে, সেই সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে আজ অনুশীলনের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। কথা বলতে অবশ্য সবই ফ্ল্যাশব্যাক বিষয়াদি। নতুন কোনো প্রসঙ্গ নেই, ভবিষ্যৎমুখী নেই। পরশু থেকে শুরু কলম্বো টেস্টের কথা সামান্য উচ্চারিত হলো কেবল মেহেদী হাসান মিরাজের ফেরার প্রসঙ্গেই।
নাজমুলের কাছে প্রশ্ন গেছে মূলত দুটি বিষয়ে। দুটোই পুরোনো চর্চিত বিষয়। এক.
নাজমুল মার্জিত ভাষায় সে ধারণার তীব্র প্রতিবাদই করলেন আজ, ‘হয়তো ঝুঁকি নিতে পারতাম বা আরও আগে ডিক্লেয়ার করা উচিত ছিল, এ রকম অনেকে যার যার জায়গা থেকে বলতেই পারেন। তবে আমার মনে হয় না, না জেনে ব্যক্তিগতভাবে কোনো খেলোয়াড়কে আক্রমণ করা উচিত।’
গল টেস্টের পঞ্চম দিনের সেই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়ে অধিনায়ক বলেছেন, ‘ব্যক্তিগত মাইলফলকের জন্য আমাদের ড্রেসিংরুমে কেউ খেলে না। কন্ডিশন দেখে এবং ড্রেসিংরুমে থাকা কোচিং স্টাফ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে দলের জন্য যেটা ভালো মনে হয়েছে, সে সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে।’
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তাদের মাটিতে ড্র করাটাও যে বাংলাদেশের জন্য ভালো ফলাফল, মনে করিয়ে দিয়েছেন সেটাও, ‘শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমাদের ভালো স্মৃতি খুব বেশি নেই। তারপরও এ রকম একটা টেস্টে আমরা দাপট দেখিয়ে ড্র করতে পেরেছি, এটা ভালো। সব মিলিয়ে গত টেস্টটা আমরা ভালোভাবে শেষ করতে পেরেছি। আশা করি এই টেস্টেও সেটা পারব।’
এ সংক্রান্ত আরেক প্রশ্নে নাজমুল আলাদা করেই বলেছেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের কথা। গলে প্রথম ইনিংসে ১৬৩ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে বৃষ্টি আসার আগে ৪৯ করে আউট হয়ে যান মুশফিক। নাজমুল বলেছেন. ‘মুশফিক ভাই এত বছর ক্রিকেট খেলেছেন, আমার মনে হয় না ওই ১ রান নিয়ে অনেক বড় কিছু উনি অর্জন করে ফেলতেন। দলের জন্য তিনি কি করেছেন তা আমরা সবাই জানি।’
ইনিংস ঘোষণা করতে সময় নেওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে পরে আবার বলেছেন, ‘আমরা যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম বৃষ্টির কারণে সেটা কাজে লাগাতে পারিনি। উইকেট পঞ্চম দিনেও খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। এ কারণেই আমরা তখন ইনিংস ঘোষণা করতে পারিনি। আমাদের বোলিং আক্রমণও একটু অনভিজ্ঞ ছিল। তাসকিন, মিরাজ থাকলে ভিন্ন পরিস্থিতি হতে পারত।’
এ প্রসঙ্গে নাজমুলের শেষ কথা, ‘না জেনে এসব না বলাই ভালো। সবাই খুবই খুশি যে আমরা ভালোভাবে ম্যাচ শেষ করতে পেরেছি।’
দ্বিতীয় মূল প্রসঙ্গ, শ্রীলঙ্কা সিরিজের পরই তিনি টেস্টের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেবেন কিনা। শ্রীলঙ্কায় আসার আগে সংবাদ সম্মেলনের দিনও নাজমুল জানতেন টেস্টের মতো ওয়ানডেতেও তিনি অধিনায়ক। কিন্তু এরপর হঠাৎ করেই তাঁকে ডেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তিনি শুধু টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দেবেন। তাঁর ওয়ানডে নেতৃত্বের মেয়াদ আর বাড়ছে না। নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক করা হবে মেহেদী হাসান মিরাজকে।
সূত্র জানিয়েছে, বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান নাজমুল আবেদীন এই সিদ্ধান্ত জানানোর পর নাজমুল হোসেন তাঁকে বলেছিলেন, শ্রীলঙ্কা সিরিজের পর প্রয়োজনে টেস্ট দলের নেতৃত্ব থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হোক। কারণ তিনি সব সময় মনে করেন এক ড্রেসিংরুমে তিনজন অধিনায়ক থাকা ঠিক নয়।
তখন থেকেই আলোচনা, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজের পর নাজমুল হয়তো টেস্ট দলের নেতৃত্ব ছেড়ে দেবেন। কিন্তু আজ নাজমুলই জানিয়েছেন, এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত তিনি এখনো নেননি। এ নিয়ে বোর্ডের কারও সঙ্গে কথাও বলেননি। পরশু থেকে শুরু কলম্বো টেস্টেই আপাতত তাঁর সব মনোযোগ।
কিন্তু এ নিয়ে তো আলোচনা হচ্ছে! নাজমুল হেসে বললেন, ‘আলোচনা তো আগে থেকেই হচ্ছে, আলোচনা হতে থাক। এ নিয়ে কথা বলতে চাই না। একজন অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যান হিসেবে আমি এখন টেস্ট ম্যাচটাই ভালোভাবে শেষ করতে চাই। আলোচনা আলোচনার জায়গায় থাক।’
তবে জানা গেছে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পর বিষয়টি নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে কথা বলবেন নাজমুল।
তার আগে অধিনায়ক হিসেবে তিনি চান দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই টেস্টের আগে সবার মনোযোগ খেলাতেই থাকুক। অধিনায়কত্ব ছাড়া নিয়ে আলোচনায় কিছুটা বিরক্তিও প্রকাশ করলেন যেন, ‘এ রকম সময়ে এ ধরনের আলোচনা হওয়াই উচিত নয়। এসব আলোচনা ৭-৮ দিন আগে থেকে বা তারও আগে থেকে না হওয়া ভালো। এসব যত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় ততই ভালো। আশা করব পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে সবাই চেষ্টা করবে মাঠে কীভাবে অবদান রাখতে পারে।’
অসুস্থতার কারণে গল টেস্টে খেলেননি মিরাজ। তবে সুস্থ হয়ে তিনি অনুশীলনে ফিরেছেন আগেই। দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর খেলা একরকম নিশ্চিতই বলতে হয়। নাজমুলের সঙ্গে সাংবাদিকদের কথোপকথনে তাঁকে নিয়ে আলোচনার সূত্র ধরে এল কলম্বো টেস্ট প্রসঙ্গও, ‘মিরাজ দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ব্যাটিং-বোলিং দুইভাবেই সে অবদান রাখতে পারে। ও দলে আসায় ব্যাটিং, বোলিং আরও ভালো হবে আশা করি। আশা করব মিরাজ গত সিরিজে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে যেভাবে পারফরম করেছে, মিরাজ সেভাবেই খেলবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স র জ র পর প রসঙ গ বল ছ ন কলম ব এ রকম
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিক তুহিনের মোবাইল ফোন খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ
সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের ভিডিও ধারণ ও সত্য উন্মোচন করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। তাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় জড়িত আট জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এই হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ রয়েছে তার ব্যবহত মোবাইল ফোনে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুলিশ তার মোবাইল উদ্ধার করতে পারেনি।
ধারণা করা হচ্ছে সাংবাদিক তুহিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা গেলে ঘটনার রহস্য আরও বেশি স্পষ্ট ও স্বচ্ছ প্রমাণিত হবে। সচেতন মহল ও সাংবাদিক সমাজ বলছে, মোবাইল ফোন পাওয়া গেলে ঘটনার মোড় ঘুরে যেতে পারে। এসকল সন্ত্রাসী, তাদের মদদদাতা ও হত্যার আসল রহস্য বের হয়ে আসতো।
নিহত সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন।
তার সহকর্মী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সাংবাদিক তুহিন দু’টি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন। তিনি চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপানা নিয়ে ভিডিও ধারণ করতেন। স্পর্শকাতর ছাড়া মোটামুটি সব ভিডিও তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিতেন।
হত্যাকাণ্ড সংঘটিত এলাকা চান্দনা চৌরাস্তা এলাকাতেই অধিকাংশ সময় কাটাতেন তুহিন। যার কারণে এ এলাকার মোটামুটি সব অনিয়ম ও অপরাধীরা তার পরিচিত ছিল।
সিসিটিভি ফুটেজের চিত্র ও পুলিশের ভাষ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার বাদশা নামে এক ব্যক্তি ব্যাংক হতে ২৫ হাজার টাকা তুলে ফিরছিলেন। এসময় আসামি গোলাপী তাকে হানিট্রাপে ফেলার চেষ্টা করে। এটি যখন বাদশা বুঝতে পারে, তখন তার থেকে ছুটতে চায় এবং কিল-ঘুষি মারে। এসময় আগে থেকে ওৎপেতে থাকা অন্য আসামিরা এসে একটি মুদী দোকানে বাদশাকে কোপানো শুরু করে। বাদশা প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে থাকে।
ঘটনাটি সাংবাদিক তুহিন নিজের পেশাগত কারণেই ভিডিও করে। আসামিরা সাংবাদিক তুহিনকে ভিডিও ডিলেট করতে বলে কিন্তু তিনি রাজি হননি। এক পর্যায়ে ওই আসামিরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে প্রথমে চান্দনা চৌরাস্তায় শাপলা ম্যানশনের সন্ত্রাসীরা বাদশা নামে লোকটার উপরে হামলা করে। ওই ঘটনার ২০-৩০ মিনিট পর ঘটনাস্থলের ঠিক বিপরীত পাশে মসজিদ মার্কেটের সামনে চায়ের দোকানে সাংবাদিকের উপর হামলা করে। এই দীর্ঘ সময় সন্ত্রাসীদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শোডাউন দিতেও দেখা গেছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন খান বলেন, “নিহত সাংবাদিকের দু’টি মোবাইল ফোন ছিল কিন্তু এখনো তার খোঁজ আমরা পাইনি। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদেও পাওয়া যায়নি ফোন। আমরা তার নম্বর ট্রেকিং করে রেখেছি। ফোন বন্ধ থাকায় লোকেশনও সনাক্ত করা যাচ্ছে না। আমরা ফোনটি উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/রেজাউল/এস