আজ মঙ্গলবার (২৪ জুন) প্রথম আলোয় ‘সংকুচিত হচ্ছে বিদেশে কর্মসংস্থান’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে একটি ব্যাখ্যা পাঠিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, বিদেশে কর্মী প্রেরণ, প্রবাসী আয় হ্রাস এবং নির্দিষ্ট শ্রমবাজারে অতিনির্ভরতা বিষয়ে যেসব তথ্য ও মতামত উপস্থাপিত হয়েছে, সেগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কিছু প্রাসঙ্গিক দিক এবং সরকারের চলমান উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরা জরুরি।

মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়, গত প্রায় ১৬ বছরে এ খাতে যে অনভিপ্রেত জঞ্জাল স্তূপীকৃত হয়েছে, সেগুলো বিতাড়িত করে একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক টেকসই অভিবাসন ব্যবস্থা চলমান রাখার জন্য সরকার নানামুখী সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

ব্যাখ্যায় বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবে ভিসাপ্রক্রিয়ায় জটিলতা, টিকাসংক্রান্ত বিধিনিষেধ এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ শ্রমনীতি পরিবর্তনের কারণে নিয়োগের হার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। সৌদি আরব ২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়; যার আওতায় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক নির্মাণশ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এখন সেই নির্মাণ প্রকল্পগুলো শেষের দিকে আসায় শ্রম চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ২০২৪ সালের জুন মাসে সৌদি আরব বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসাপ্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করে, যদিও অতীতেও সৌদি আরব এ ধরনের অস্থায়ী বিরতি দিয়েছে, তবে এবার তা এসেছে ভবিষ্যৎ কাঠামোতে চাহিদার প্রকৃতি পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে—যেখানে দেশটি ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আরও বেশি প্রযুক্তিনির্ভর, স্থানীয়করণভিত্তিক এবং নারী কর্মশক্তিকে অগ্রাধিকার দিতে চাচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার যেকোনো প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে কাজ করছে।

মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড.

আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে ইতিপূর্বে সৌদি সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি ফলপ্রসূ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। অধিকন্তু সৌদি আরবের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আলোচনার ধারাবাহিকতায় সৌদি আরবে অবৈধভাবে বসবাসকারী নারী কর্মীদের বৈধ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সৌদি আরবে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশিসংখ্যক দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী পাঠানোর বিষয়েও সৌদি সরকারের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। জর্ডানে কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়েও জর্ডান সরকারের সঙ্গে উপদেষ্টার আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া জর্ডানে কর্মরত যেসব নারী কর্মী নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মস্থল পরিবর্তনসহ নানা কারণে অবৈধ হয়েছেন, তাঁরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বীকারোক্তির মাধ্যমে বৈধ হতে পারবেন। এর ফলে তাঁরা জরিমানা ছাড়াই বৈধতা পাবেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও ওমানের শ্রমবাজার নিয়ে মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশিদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান। বর্তমানে কিছু প্রশাসনিক ও কৌশলগত কারণে এই দুটি দেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো সাময়িকভাবে স্থবির রয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকার দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে আবার এই দুটি বাজার চালুর লক্ষ্যে নিবিড়ভাবে কাজ করছে।

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ থাকা নিয়ে ব্যাখ্যায় বলা হয়, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ২০২৪ সালের জুন থেকে বন্ধ রয়েছে। তবে ইতিমধ্যে দুই দেশের মধ্যে যৌথ একাধিক ওয়ার্কিং গ্রুপের সভাসহ একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিগগিরই একটি স্বচ্ছ ও দালালমুক্ত পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবার চালু হবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে একটি যৌথ ও প্রযুক্তিনির্ভর শ্রম নিয়োগপ্রক্রিয়ার প্রস্তাবনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো সম্ভাবনাময় বাজারে চাহিদামতো কর্মী পাঠাতে না পারার কারণ হিসেবে ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া তুলনামূলকভাবে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন ও ভাষাভিত্তিক নিয়োগপ্রক্রিয়া অনুসরণ করে। এই দুটি বাজারে উল্লেখযোগ্য চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আমরা এখনো প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভাষা–দক্ষ ও টেকনিক্যাল জ্ঞানসম্পন্ন কর্মী প্রস্তুত করতে পারিনি। এ জন্য সরকার ইতিমধ্যে জাপানি ও কোরীয় ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি কারিগরি ও আইটি প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’

ইউরোপের সম্ভাবনাময় বাজারকে কাজে লাগানোর বিষয়ে অগ্রগতি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বলেছে, ইতালিসহ ইউরোপীয় দেশগুলোতে বৈধ অভিবাসন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ চলছে। ইতিমধ্যে পর্তুগাল, অস্ট্রিয়াসহ ইউরোপের ছয়টি দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইসহ যুগান্তকারী বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এসব দেশে চাকরির ধরন, ভাষা ও আইনি কাঠামোর কারণে নিয়োগপ্রক্রিয়া কিছুটা ধীরগতিসম্পন্ন। সরকার এই বাজারগুলোতে টেকসই প্রবেশ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ নিয়েছে। যারা ইতালি বা ইউরোপের অন্যান্য দেশে গমনে ইচ্ছুক, তাঁরা যেন নিরাপদে যেতে পারেন, ভালো পারিশ্রমিক পান; সেটাই লক্ষ্য সরকারের।

মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়, বর্তমানে সরকার হুন্ডির বিরুদ্ধে নজরদারি বাড়িয়েছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠালে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রেখেছে, ডিজিটাল রেমিট্যান্স প্ল্যাটফর্মকে সহজতর করেছে। কর্মী গমন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসী আয় আবার বাড়বে বলেই সরকার আশাবাদী। প্রত্যাগত কর্মীদের পুনর্বাসনে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে জামানতবিহীন সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকার অভিবাসনকে একটি মানবিক, নিরাপদ ও লাভজনক প্রক্রিয়ায় রূপ দিতে বদ্ধপরিকর। চ্যালেঞ্জ আছে, কিন্তু সরকারের সদিচ্ছা, প্রশাসনিক সক্ষমতা এবং কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি যথেষ্ট শক্তিশালী।

আরও পড়ুনসৌদি, আরব আমিরাত, ওমানে বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা কেন কমছে ৮ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব য খ য য় বল র শ রমব জ র প রক র য় সরক র র পর য য় কল য ণ প রব স লক ষ য ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি পাচ্ছেন না গাজীপুরের কাজ হারানো শ্রমিকেরা, কী করছেন তাঁরা

এক যুগের বেশি সময় বেক্সিমকোর পোশাক কারখানায় চাকরি করেছেন মনির শেখ। চাকরি চলে যাওয়ার পর অনেক কারখানায় ঘুরেও চাকরি পাননি। বাধ্য হয়ে এখন সবজি বিক্রি করছেন। শুধু মনির শেখ নন, কাজ হারানো শ্রমিকদের অনেকেই পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন।

চাকরি চলে যাওয়ার পর অনেক কারখানায় নতুন চাকরি পাওয়ার চেষ্টা করেছেন মনির শেখ; কিন্তু যখনই কোনো কারখানা কর্তৃপক্ষ জানতে পারে, তিনি আগে বেক্সিমকোতে কাজ করেছেন, তখনই না করে দেয়। চাকরি জোটেনি; কিন্তু কিছু একটি তো করে পেট চালাতে হবে। সে জন্য এখন সবজি বেচে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

গত সপ্তাহের রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর চক্রবর্তী বাজার এলাকায় মনির শেখের সঙ্গে কথা হয়। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অনেক শ্রমিক পেশা বদল করেছেন; অনেকে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

বাস্তবতা হলো ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কসহ গাজীপুরের ছোট-বড় মিলিয়ে ১০৬টি শিল্পকারখানা নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায়। শিল্প পুলিশের তথ্যানুসারে, চাকরি হারিয়েছেন ৭৩ হাজার শ্রমিক। অনেক শ্রমিক আগের চেয়ে কম বেতনে চাকরি পেলেও হাজার হাজার শ্রমিক এখনো বেকার। অনেকেই চাকরি না পেয়ে অটোরিকশা চালাচ্ছেন; সবজি বিক্রি, ফেরি করে পণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে নানা ধরনের পেশায় যুক্ত হচ্ছেন।

যশোরের কোতোয়ালি থানার নূরপুর গ্রামের বাসিন্দা জামাল হোসেন চক্রবর্তী এলাকায় মামুনের কলোনিতে ভাড়া থাকেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আট-নয় বছর বেক্সিমকোতে কাজ করছেন। চাকরি চলে যাওয়ার পর গ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন। কিছুদিন হালচাষ করেছেন; কিন্তু সেই কাজ ভালো লাগেনি। এরপর স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামের বাড়িতে রেখে দুই মাস আগে নতুন চাকরি খুজেতে আসেন; কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন চাকরি পাচ্ছেন না।

একই কলোনির ভাড়াটিয়া আনিসুর রহমান বলেন, ‘নতুন চাকরি না পাইয়া এখন ফেরি কইরা জিনিসপত্র বিক্রি করতাছি। সংসার তো চালাইতে অইবো—কী করমু কন।’

গত ফেব্রুয়ারি মাসে অর্থাভাবে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় রপ্তানিমুখী বেক্সিমকো গ্রুপের ১৩টি পোশাক কারখানা। বেকার হন এসব কারখানার ২৮ হাজার ৫১৩ শ্রমিক। কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও করেছেন শ্রমিকেরা।

গাজীপুর মহানগরের চক্রবর্তী এলাকায় বসবাস করে থেকে ১২ বছরের বেশি সময় বেক্সিমকোতে চাকরি করেছেন জামাল হোসেন। তিনি বলেন, কারখানায় যখন কাজ করেছেন, তখন স্ত্রী–সন্তান নিয়ে সুখেই ছিলেন। ছেলেকে কারখানা এলাকায় একটি স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। চাকরি চলে যাওয়ার পর অনেক কষ্ট হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে চেষ্টা করেও কাজ পাচ্ছেন না। এই মাসে (আগষ্ট) চাকরি না পেলে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাবেন বলে পরিকল্পনা করছেন।

কলকারখানা, পরিদর্শন অধিদপ্তর ও শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুধু বেক্সিমকো নয়, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে জুলাই পর্যন্ত গাজীপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০৬টি কলকারখানা বন্ধ করে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ছয় মাসেই বন্ধ হয়েছে ৪১টি। বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে বেক্সিমকোর ১৩টিসহ মাহমুদ জিনস, ডার্ড কম্পোজিট, পলিকন লিমিটেড, টেক্সটিল ফ্যাশন, ক্ল্যাসিক ফ্যাশন, লা-মুনি অ্যাপারেলসসহ বিজিএমইএভুক্ত বড় ২০টি প্রতিষ্ঠান।

গত সপ্তাহের রোববার সকালে বেক্সিমকো কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, আগের সেই চিরচেনা হইচই নেই। মানুষের আনাগোনা একেবারেই কমে গেছে। আগে যেখানে শ্রমিকদের ভিড়ে সড়কে হাঁটা কঠিন ছিল, সেখানে এখন নীরবতা নেমে এসেছে। শ্রমিকদের ওপর নির্ভর করে এলাকায় শত শত বাড়িঘর তৈরি করেছিলেন স্থানীয় লোকজন। এখন প্রায় সব বাড়িতেই ঝুলছে ‘বাসা খালি আছে’ নোটিশ। অধিকাংশ বাড়িঘরই এখন খালি পড়ে আছে।

স্থানীয় মুদি ব্যবসায়ী মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, আগে যেখানে সারা দিনে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বিক্রি হতো, এখন সেখানে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। সারা দিনই বসে বসে কাটাতে হয়। আরেক ব্যবসায়ী শংকর চন্দ্র পাল বলেন, মাসের বেতনের সময় হলে কয়েক ভরি গয়না বিক্রি হতো, এখন বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। টিভি আর মুঠোফোনে ভিডিও দেখে সময় পার করছি।

চক্রবর্তী এলাকার বাড়ির মালিক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, তাঁর কলোনিতে ৪৫টি কক্ষ আছে। আগে সব কক্ষেই ভাড়াটিয়া ছিলেন; কিন্তু এখন মাত্র সাতটি কক্ষে ভাড়াটিয়া আছে, বাকিগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। এই অবস্থা এলাকার সব বাসায়। অনেকেই ব্যাংকঋণ নিয়ে বহুতল ভবন করেছেন। তাঁরা এখন ব্যাংকের ঋণও দিতে পারছেন না।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার মাহমুদ জিনস লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। কারখানার শ্রমিক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নতুন চাকরি পাচ্ছেন না। পরে বাধ্য হয়ে এখন চন্দ্রা থেকে বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে অটোরিকশা চালাচ্ছেন। মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় হলেও পেশা মনমতো হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে এ কাজ করতে হচ্ছে তাঁকে।

জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক জোট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গত এক বছরে যাদের চাকরি চলে গেছে, তাঁদের বেশির ভাগই বেকার, অধিকাংশই গ্রামে ফিরে গেছে। অনেকেই ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন। এখনো যাঁরা কাজ করছেন, সেই সব শ্রমিকের মধ্যে ছাঁটাই আতঙ্ক আছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার আল মামুন শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিক অসন্তোষ অনেকটাই কমেছে। তবে এখন কিছু কারখানায় নানা ধরনের জটিলতা আছে। যে কারণে শ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন। আগে থেকেই টের পেয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা হচ্ছে। ফলে সেভাবে অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে না।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে,  বন্ধ কারখানাগুলোর বেশির ভাগই কাজ না থাকা, কার্যাদেশ বাতিল ও আর্থিক সংকটের কারণে বন্ধ হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ