খুলনায় এসআইকে মারধর করে পুলিশে দিলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা
Published: 24th, June 2025 GMT
খুলনায় সুকান্ত দাস নামের পুলিশের এক উপপরিদর্শককে (এসআই) মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। আজ মঙ্গলবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে নগরের ইস্টার্ন গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে তিনি খানজাহান আলী থানা-পুলিশের হেফাজতে আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, নগরের তেলিগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপক কুমার সরকারের ওপর গুলিবর্ষণকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ বেলা আড়াইটার দিকে ফুলবাড়ি গেট বাসস্ট্যান্ডে মানববন্ধনের আয়োজন করে খানজাহান আলী থানা বিএনপি। কর্মসূচি শেষে দলটির কর্মীরা ইস্টার্ন গেট এলাকার একটি হোটেলে দুপুরের খাবার খেতে যান। ঘটনার সময় ওই এলাকা দিয়ে সাদা পোশাকে সিএনজিচালিত তিন চাকার যানে করে যাচ্ছিলেন এসআই সুকান্ত দাস। গাড়িটি যাত্রী ওঠানামা করানোর জন্য ইস্টার্ন গেটের সামনে দাঁড়ালে বিএনপির কয়েকজন কর্মী তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করেন। পরে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা এগিয়ে গিয়ে উত্তেজিত কর্মীদের শান্ত করেন এবং সুকান্ত দাসকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
খুলনা মহানগর পুলিশের খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জনতা এসআই সুকান্তকে মারধর করছে, এমন খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। তখন পরিস্থিতি খুব উত্তপ্ত ছিল। তাঁরা বুঝিয়ে তাঁকে (সুকান্ত) পুলিশের হেফাজতে নিয়ে নেন। পরে চিকিৎসার জন্য তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
খুলনা মহানগর বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আজ ফুলবাড়ী গেট এলাকায় বিএনপির একটা মানববন্ধন কর্মসূচি ছিল। কর্মসূচি শেষের দিকে নেতা–কর্মীরা জানতে পারেন যে ইস্টার্ন গেটে স্থানীয় জনগণ এসআই সুকান্তকে মারধর করছে। ওখানকার মানুষজনও তার নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। সুকান্ত যেহেতু আলোচিত মানুষ, তাই খবর পেয়ে নেতা–কর্মীরা সেখানে যান ও সুকান্তকে উদ্ধার করে পুলিশের কাছে দেন। বিএনপি বিশ্বাস করে, কেউ অপরাধী হলে প্রচলিত আইনের মাধ্যমে তার বিচার হবে। বিএনপির কেউ তার মারধরের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন।
সুকান্তের বিষয়ে মিজানুর রহমান আরও বলেন, বিগত সরকারের সময় পুলিশ লীগ নামের একটা শব্দ ছিল, বলা যায় খুলনায় পুলিশ লীগের আহ্বায়ক ছিলেন এই সুকান্ত। সুকান্তের অত্যাচার থেকে বিএনপির কোনো নেতা–কর্মী বাদ যাননি। মহানগর বিএনপির সভাপতির বাড়ি ড্রিল মেশিন দিয়ে ভাঙচুর করেছেন। তাঁর ওপর খুলনার মানুষের একটা ক্ষোভ আছেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র কর ম র র একট
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে বিএনপির নারী কর্মীকে মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন
রাজশাহীর পবায় ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে ভোট চাইতে গিয়ে হেনস্তা ও মারধরের অভিযোগ ওঠা জামায়াতের কর্মীর বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে ‘সচেতন নারী সমাজের’ ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করে রাজশাহী নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম।
১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের আশরাফের মোড় এলাকায় বিএনপির দুই নারী কর্মীকে মারধর ও হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগকারী দুজন হলেন উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের নিলুফার ইয়াসমিন ও তাঁর বোন নূরভানু। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম নুরুল ইসলাম। তিনিও একই এলাকার বাসিন্দা ও জামায়াতের কর্মী। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ও গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক ও রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে দলীয় প্রার্থী শফিকুল হক (মিলন), বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবিবা, মহিলা দলের রাজশাহী মহানগরের সভাপতি শামসাদ মিতালী, রাজশাহী বিভাগীয় মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রোকসানা বেগম (টুকটুকি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল আলিম, ইউট্যাবের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি অধ্যাপক অধ্যাপক মামুনুর রশীদ প্রমুখ।
বিএনপি নেতা শফিকুল হক বলেন, নির্বাচনের ট্রেন চালু হয়েছে। কিন্তু এ সময়ে রাজশাহীর এ ঘটনা কিছুটা হলেও সেই ট্রেনকে বাধাগ্রস্ত করেছে। নারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। রাজশাহীতে যাঁরা নারীদের হেনস্তা করছেন, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের কাজ না করতে পারেন।
শামসাদ মিতালী বলেন, ‘আমাদের দেশে ৫২ শতাংশ ভোটার নারী। নারীদের অধিকার নিয়ে অনেক কথা বলা হয়, কিন্তু আমাদের নেত্রী নিলুফার ও তাঁর বোনের ওপর যেভাবে নির্মমভাবে অত্যাচার করা হলো, তাতে প্রমাণ হয়, তাদের কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল নেই।’ এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হলে নারীরা দেশজুড়ে কঠোর আন্দোলনে নামবেন।
ইউট্যাব নেতা মামুনুর রশীদ ঘটনাটিকে অকল্পনীয় উল্লেখ করে বলেন, আজ যখন নারীরা শিক্ষা, গবেষণা, অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন তাঁদের ওপর নির্যাতন করে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। যাঁরা এই জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছেন, প্রশাসনকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাঁদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবিবা বলেন, ‘আমরা শুধু একজন কর্মীর ওপর হামলার বিরুদ্ধে দাঁড়াইনি, আমরা দাঁড়িয়েছি সেই সংস্কৃতির বিরুদ্ধে, যা একজন পুরুষকে রাজনৈতিক পরিচয়ে নারীর গায়ে হাত তোলার সাহস জোগায়।’ তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আইনগত ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। যেই পা আমার বোনের দিকে উঠেছে, সেই পা আইনের মাধ্যমে ভেঙে দেওয়া হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে জামায়াতের কর্মী নুরুল ইসলাম দাবি করেন, তাঁকে উদ্দেশ্য করে ‘আমার বউ নৌকাত ভোট দিছি’ বলে কটূক্তি করায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওই নারীকে শুধু ধাক্কা দিয়েছিলেন। এর বেশি কিছু ঘটেনি।
কাটাখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মতিন বলেন, এ ব্যাপারে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। জিডিটি আদালতে পাঠানো হয়েছে, বিষয়টি তদন্তাধীন।