অনেকটা আকস্মিকভাবে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত সোমবার রাতে কাতার ও ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি এ ঘোষণা দেন। তবে ঘোষণার পরপরই ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তোলে। ইসরায়েল হামলা চালিয়ে ইরানের একজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে সপরিবারে হত্যা করে। জবাবে ইরান ইসরায়েলের টেক সিটি বিরশেবাতে হামলা চালায়। এতে নিহত হন চারজন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে জানান, ‘যুদ্ধবিরতি এখন কার্যকর হয়েছে। দয়া করে কেউ এটি লঙ্ঘন করবেন না।’ বিবিসির খবরে বলা হয়, এর আগে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ইসরায়েল ও ইরান পুরোপুরি ও সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানান, সামরিক অভিযান বন্ধে কোনো চুক্তি হয়নি। তবে ইসরায়েল ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে তাদের অবৈধ হামলা বন্ধ রাখলে পাল্টা হামলা চালানোর কোনো ইচ্ছা নেই। পরে একই কথা বলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। 

পরে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে আবারও পোস্ট করেন। সেখানে তিনি বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সম্মানের। সমস্ত পারমাণবিক স্থাপনা ও সক্ষমতা ধ্বংস করা আমার জন্য বিরাট সম্মানের ছিল। তারপরও যুদ্ধ বন্ধ করুন। গতকাল হেগে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে যাওয়ার পথে তিনি ওই পোস্ট করেন। তাতে তিনি আবারও বলেন, ইসরায়েল-ইরান উভয়েই সমানভাবে যুদ্ধ বন্ধ করতে চেয়েছিল।
যুদ্ধবিরতির ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে স্বস্তি নিয়ে এলেও এক ধরনের সন্দেহ-উদ্বেগ রয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সংঘাতে যুদ্ধবিরতি ভেঙে হামলা চালানোর নজির আছে তেল আবিবের।

বিরশেবায় ইরানের হামলায় হতাহতের ঘটনার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ কঠোর হামলার হুঁশিয়ারি দেন। তবে ট্রাম্প তাঁকে হামলা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। যুদ্ধবিরতি মানার পক্ষে কথা বলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। ইইউর পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান কাজা কালাস দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। আলজাজিরা জানায়, গতকাল মঙ্গলবার ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় ব্যাবোলসার শহরে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। ইরানের প্রেস টিভি জানায়, যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। একই তথ্য দিয়েছে ইসরায়েলের চ্যানেল টুয়েলভ ও ওয়াইনেট।

ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির তাঁর বাহিনীকে সতর্ক করেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে অভিযান এখনও শেষ হয়নি। তিনি বলেন, আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ করেছি, কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে অভিযান এখনও শেষ হয়নি। 

ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব কি আদৌ ইসরায়েল মেনে নেবে– এমন প্রশ্ন এখন অনেকের মনে। কাতারের হামাদ বিন খলিফা ইউনিভার্সিটির গণনীতিবিষয়ক অধ্যাপক সুলতান বারাকাত বলেন, তিনি মনে করেন, ট্রাম্পকে তাঁর হিসাবনিকাশ আবার ঠিক করতে হবে। ট্রাম্প হয়তো মনে করছেন, দু’পক্ষকেই তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। পরিস্থিতিকে নিজ স্বার্থে অন্যদিকে নেওয়ার সামর্থ্য আছে নেতানিয়াহুর। বারাকাত বলেন, ইরানের শাসন ক্ষমতার পরিবর্তনে বড় চেষ্টা ছাড়াই শত্রুতার সমাপ্তি ঘটাবে ইসরায়েল– এমন সম্ভাবনা তিনি কম দেখছেন।

এদিকে, ইরানে ট্রাম্পের হামলার বিপক্ষে অধিকাংশ মার্কিনি। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত সিএনএনের এক জরিপ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৪৪ থেকে ৫৬ শতাংশ মার্কিনি এ হামলার বিরুদ্ধে বলেছেন। যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়ে রাশিয়া বলেছে, তাদের প্রত্যাশা, এটি ‘টেকসই’ হবে।

এদিকে কাতার ও ইরাকের ঘাঁটিতে হামলার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ট্রাম্প। সিএনএন জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ইরানের সরকারি প্রেস টিভি জানিয়েছে, ইরানিরা গণসমাবেশের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি উদযাপন করেছে। রাজধানী তেহরানে গতকাল হাজার হাজার মানুষ বিজয় সমাবেশে জড়ো হয়। দেশজুড়ে সর্বস্তরের মানুষ উদযাপনে যোগ দেয়। 

ইরানের হামলা

নতুন করে গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলের টেক সিটি বা প্রযুক্তির শহর বিরশেবাতে হামলা চালায় ইরান। এতে একটি আবাসিক ভবন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, হামলায় এক সেনাসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এর আগে ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে ২৪ জন নিহত হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। এতে নিহত বেড়ে ২৮-এ পৌঁছেছে। আহত হয়েছে আট শতাধিক নাগরিক। 

ইসরায়েলের হামলা

ইরানে গতকাল মঙ্গলবারও হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে এক পরমাণু বিজ্ঞানী ও তাঁর পরিবারের সাত সদস্য নিহত হয়েছেন। ইরানের রাজধানী তেহরানে সড়কের পাশে হামলায় পরমাণু বিজ্ঞানী সেদিঘ সাবের নিহত হন। আলজাজিরা জানায়, আগের দিন সোমবার ইসরায়েলের হামলায় ইরানের এক পুলিশ কর্মকর্তা ও আইআরজিসির গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে মোট নিহতের সংখ্যা ৬১০ বলে জানানো হয়েছে। আহত হয়েছে ৪ হাজার ৭৪৬ জন। 

ইসরায়েল আগে হামলা না করলে ইরানও করবে না: পেজেশকিয়ান

ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি মানলে ইরানও তা মেনে চলবে বলে জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। ইরানের সংবাদমাধ্যম নুর নিউজকে তিনি বলেন, ইরান যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে, যতক্ষণ ইসরায়েল তা মেনে চলে। ইরান সংলাপের জন্য প্রস্তুত। তেহরান আলোচনার টেবিলে বসেই জনগণের স্বার্থ রক্ষা করবে।

সব লক্ষ্য পূরণের পরই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ইসরায়েল: সরকারের বিবৃতি 

ইসরায়েলের সরকার বলেছে, ইরানে হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে নিজেদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জন হওয়ার পরই দেশটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে এমন দাবি করেছে ইসরায়েল সরকার। বিবিসি জানায়, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ‘দ্বিমুখী হুমকি’ দূর করেছে বলে ওই বিবৃতিতে দাবি করা হয়। ইসরায়েল ইরানের সামরিক নেতৃত্বকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং দেশটির সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু স্থাপনা ধ্বংস করেছে। প্রতিরক্ষায় সহযোগিতা ও ইরানের পারমাণবিক হুমকি থামাতে সহযোগিতার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানায় ইসরায়েল। 

বিবৃতির বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানায়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও মোসাদের প্রধানের সঙ্গে সোমবার রাতে আলোচনা করেন। মন্ত্রিসভার সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে তাঁর। সেখানে বলা হয়, ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এ সব লক্ষ্য পূরণ হয়েছে ইসরায়েলের। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি কিছু অর্জন হয়েছে। বিবৃতিতে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী তেহরানের আকাশসীমার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দাবি করে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনে উপযুক্ত জবাবের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

ইসরায়েল, ওই বোমাগুলো ফেলো না: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে বোমা ফেলতে ইসরায়েলকে নিষেধ করেছেন। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। এএফপি জানায়, এ উত্তেজনা নিরসনে ইসরায়েলকে ইরানে বোমা হামলা থেকে বিরত থাকতে বলেন ট্রাম্প। ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘ইসরায়েল, ওই বোমাগুলো ফেলো না। তুমি যদি এটা করো, তা হবে (যুদ্ধবিরতি) বড় ধরনের লঙ্ঘন। পাইলটদের এখনই ঘরে ফেরাও!’

পরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর ফোনালাপ হয়েছে। এর পরই তিনি ‘নতুন করে কোনো হামলা চালানো থেকে বিরত আছেন’।

এর আগে আলজাজিরার যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি ফিল লাভেল জানান, ইরানে হামলা চালিয়ে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর ‘অত্যন্ত বিরক্ত’ হন। সম্ভবত তিনি মনে করছেন, নেতানিয়াহু ‘বিশ্বাস ভঙ্গ’ করছেন। ইউরোপে ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প জানান, যুদ্ধবিরতির শর্ত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা লঙ্ঘন করায় তিনি ইসরায়েল ও ইরান– উভয় পক্ষের প্রতিই ক্ষুব্ধ। লাভেল বলেন, ট্রাম্প ইসরায়েল ও ইরান– উভয়ের ওপরেই ক্ষুব্ধ ছিলেন। তবে তাঁর অতিরিক্ত রাগটা যে ইসরায়েলের দিকে ছিল, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল।

মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আটক ৬

ইসরায়েলের মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি সন্দেহে ইরানে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। দেশটির পশ্চিমাঞ্চল হামেদান প্রদেশে তাদের আটক করা হয়। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) স্থানীয় কর্মকর্তা আলী আকবর করিমপোর বলেন, হামেদান, রেজান ও নাহাভান্দ থেকে ‘বিশ্বাসঘাতকদের’ আটক করা হয়েছে। তারা অনলাইনে বিভিন্নজনকে লক্ষ্যবস্তু করে কাজ করতেন। জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, ইরানের শাসন ব্যবস্থার ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। 
 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইসর য় ল য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র র সরক র আলজ জ র সরক র র মন ত র লক ষ য র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: ২১ জুলাইকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘শোক দিবস’ পালনের দাবি

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই দিনটিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘শোক দিবস’ হিসেবে পালন করার দাবি জানিয়েছে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবার। এ ছাড়া তারা বলেছে, নিহত সবাইকে শহীদের মর্যাদাসহ প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।

দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায়।

হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আছে—ঘটনার সঠিক তদন্ত করতে হবে। দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হেলথ কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। নিহত ব্যক্তিদের কবর সংরক্ষণ করতে হবে। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে উত্তরায় একটি মসজিদ নির্মাণ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো তুলে ধরেন দুর্ঘটনায় নিহত নাজিয়া ও নাফির বাবা আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর যখন বাচ্চাদের পেয়েছেন, তখন তাঁরা তাদের চিনতে পারেননি। অনেক দিন হলো তাঁরা ঘরে রান্না করতে পারেন না। তাঁর স্ত্রী বিছানা থেকে উঠতে পারেন না, কারও সঙ্গে দেখা করেন না।

নিহত সবাইকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার দাবির প্রসঙ্গে আশরাফুল ইসলাম বলেন, শুধু পাইলট আর শিক্ষক শহীদ হতে পারেন না। সবাই শহীদ। সবাই ইউনিফর্ম পরা ছিল। শিক্ষার্থীরা কেন বৈষম্যের শিকার হবে?

নিহত তাসমিয়া হকের বাবা নাজমুল হক লিখিত বক্তব্যে বলেন, সন্তানদের মধ্যে যারা আহত, তাদের অনেকের অবস্থা এতটাই খারাপ যে তারা আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে কি না তা তাঁরা জানেন না। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা খুবই উদ্বিগ্ন। আবার অনেকে আছে, যাদের দীর্ঘ সময় চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হবে। কয়েকজন আহত শিক্ষক আছেন, যাঁরা আর কখনো কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারবেন না, অথচ তাঁদের ছিল উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।

আরও পড়ুনমাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: দগ্ধ দুই শিশু চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছে২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলে, তারা অবর্ণনীয় ট্রমার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। অনেকের জীবন-জীবিকা থমকে গেছে। বর্তমানে স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাড়া আর কেউ তাদের খোঁজখবর নিচ্ছে না। প্রধান উপদেষ্টা তিনজন শিক্ষকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।

রেজাউল করিমের ছেলে সামিউল এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়। এই বাবা বলেন, তাঁরা ভালো নেই। দুই মাস ধরে তাঁরা ঘুমাতে পারেন না। এ দেশে এত মানুষ, তবু পাশে কি কাউকে তাঁরা পাবেন না? এই মুহূর্তে তাঁদের স্কুলের বারান্দায় থাকার কথা ছিল। কিন্তু এখন এখানে। সরকার তাঁদের পাশে আসেনি। চোখের সামনে ছেলেকে লুটিয়ে পড়তে দেখেছেন তিনি, যা ভুলতে পারেন না।

সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রেজাউল করিম। তিনি বলেন, লাশের সঙ্গে একটা কপি পেয়েছেন। এরপর আর কারও কোনো যোগাযোগ নেই।

আরও পড়ুনমাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত: নিহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে১১ আগস্ট ২০২৫

সানজিদা বেলায়েতের মেয়ে জায়ানা মাহবুব এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। এই মা বলেন, ‘আমার মেয়েটা পরিপাটি ছিল। হাতে মেহেদি দিত, ব্রেসলেট পরত। ওর হাত পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সে বলে, হাত জম্বির মতো হয়ে গেছে। ওর প্রশ্নের উত্তর আমি কী দেব? এই বাচ্চাগুলোকে সমাজ কোন চোখে দেখবে? কারও হাতে কলম উঠবে না।’

সানজিদা বেলায়েত আরও বলেন, আরেক বাচ্চা বসতে পারে না। তার ফিজিওথেরাপি দরকার। সেই বাচ্চার বাবা নেই। সে কার কাছে যাবে? আবিদুর রহিম নামের এক বাচ্চা কী যে কষ্ট পাচ্ছে। তার শরীরে আর কোনো জায়গা নেই যে চামড়া নেবে। একটা বাচ্চা মানসিক সমস্যা নিয়ে আবার ভর্তি হয়েছে। শব্দ শুনলে সে চিৎকার দেয়। অনেকে কানেও শোনে না। কয়েকজন শিক্ষকও আহত। তাঁরা কি কর্মজীবনে ফিরতে পারবেন?

আরও পড়ুনবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় যা যা জানা গেল২১ জুলাই ২০২৫

আহত শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান সানজিদা বেলায়েত। তিনি আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর দাবি জানান।

আহত রায়ান তৌফিকের বাবা সুমন বলেন, তাঁদের কান্না শুকিয়ে গেছে। সরকারের কাউকে তাঁরা পাশে পাননি। তাই বাধ্য হয়ে এখানে এসেছেন।

গত ২১ জুলাই উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের হায়দার আলী ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় যুদ্ধবিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামসহ অন্তত ৩৪ জন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৭ জনই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ছিল। আহত হয় অনেকে।

আরও পড়ুনউত্তরায় মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা তদন্তে সরকারের কমিশন গঠন২৭ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ