বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) যে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের প্রচারযন্ত্রে পরিণত হয়েছিল, সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই।

এরশাদ সরকারের আমলে বিটিভির নাম হয়েছিল ‘সাহেব বিবি গোলামের বাক্স’। কারণ, তখন বিটিভির প্রধান বিষয়বস্তু ছিল এরশাদ, তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদ ও মন্ত্রীদের সংবাদ। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ আমলে বিটিভি পরিচিতি পেয়েছিল ‘বাতাবিলেবু’ টিভি নামে। কারণ সরকারের উন্নয়ন প্রচারই ছিল বিটিভির প্রধান কাজ।

নতুন খবর হলো, বিটিভি ও বেতারের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিতে সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে। এটি কিছুটা আশা জাগানো খবর।

আশা জাগছে এ কারণে যে বিটিভি ও বেতার স্বায়ত্তশাসিত হলে জনগণকে নিজেদের করের টাকা দিয়ে শুধু সরকারের গুণগান শুনতে হবে না। বিটিভি ও বেতার মানুষের কথাও বলবে। মানুষ মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান দেখতে পারবেন।

তবে বিটিভি ও বেতারের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিতে সরকার যে কমিটি গঠন করেছে, তা নিয়ে কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ১৯ জুন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে উপদেষ্টা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। কমিটির সদস্য সংখ্যা ৫। এ কমিটির নেতৃত্ব দেবেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার। অন্য সদস্যরা হলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ কমিটি গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের পথরেখা তৈরিতে কাজ করবে এবং এর পাশাপাশি টেলিভিশন ও অন্যান্য গণমাধ্যমের গত ১৫ বছরের নীতিমালা পর্যালোচনা ও ভবিষ্যতের নীতি প্রণয়নে কাজ করবে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন খাতে সংস্কারের যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, তা পূরণের লক্ষ্যেই ১১টি সংস্কার কমিশন গঠিত হয়। তার একটি গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে দেশের বেশির ভাগ সংবাদমাধ্যম আজ্ঞাবহ মাধ্যমে পরিণত হয়েছিল। যে কটি সংবাদমাধ্যম স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করার চেষ্টা করেছিল, সেগুলোর গলা টিপে ধরার সব চেষ্টাই বিগত সরকার করেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গত ২২ মার্চ তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। তারা ২১ ধরনের সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে ছিল বিটিভি, বেতার ও বাসসবিষয়ক সুপারিশ। আমরা দেখলাম, সরকার শুধু কমিশনের বিটিভি ও বেতারবিষয়ক সুপারিশ বাস্তবায়নে পাঁচ উপদেষ্টাকে নিয়ে কমিটি গঠন করেছে। প্রথম প্রশ্ন হলো এ কমিটিতে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম কেন নেই।

বিটিভি ও বেতার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন দুটি প্রতিষ্ঠান। বিটিভি ও বেতারের স্বায়ত্তশাসন–সংক্রান্ত গণমাধ্যম কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। সেই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে কমিটির বাইরে রাখাকে যুক্তিযুক্ত মনে করার কারণ নেই। পাঁচ উপদেষ্টার কমিটির সিদ্ধান্ত ‘চাপিয়ে দেওয়া’ ও ‘বাস্তবানুগ নয়’ বলে অভিহিত করে যদি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়নে অনাগ্রহ দেখায়, তাহলে কী হবে?

সংস্কার প্রচেষ্টা আটকে যাওয়ার উদাহরণ অতীতে অনেক আছে। ১৯৯০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মুজিবুল হকের নেতৃত্বে সম্প্রচার কমিশন গঠন করেছিলেন। কমিশন ১৯৯১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন জমা দেয়। তত দিনে অবশ্য এরশাদের পতন হয়েছে। গঠিত হয়েছে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেই কমিশনের সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি।

১৯৯৫–৯৬ সালের দিকে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী যখন নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছিল, তখনো বিটিভি ও বেতারের স্বায়ত্তশাসনের দাবি ওঠে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সাবেক সচিব আসাফউদ্দৌলাহর নেতৃত্বে বিটিভি ও বেতারের স্বায়ত্তশাসন নীতি প্রণয়নের জন্য কমিশন গঠন করে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, আসাফউদ্দৌলাহ কমিশন ১৯৯৭ সালের ৩০ জুন তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়, যার পরিণতি হয় মুজিবুল হক কমিশনের মতোই।

২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার মেয়াদ শেষের কিছু আগে ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ আইন’ সংসদে পাস করেছিল; কিন্তু আওয়ামী লীগ পরে সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকলেও সেই আইনের প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। ফলে আইনটি বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বেতার কর্তৃপক্ষ আইনও করেছিল। বিটিভির মতো বেতারের সেই আইনেরও প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।

যাহোক, উপদেষ্টা কমিটিতে মাহফুজ আলমকে না রাখার বিষয়টি বিস্ময়কর। কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কী কী বাধা তৈরি হতে পারে, সেসব বাধা দূর করতে বাস্তবসম্মত কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা তথ্য মন্ত্রণালয় ছাড়া কোন মন্ত্রণালয় ভালো জানবে? আবার কমিটিতে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকেও রাখা যেত। কারণ বিটিভি ও বেতারের সঙ্গে সংস্কৃতির সম্পর্ক রয়েছে। সড়ক, পরিবেশ ও শিল্পের সম্পর্ক বরং কম।

দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, শুধু বিটিভি ও বেতারের স্বায়ত্তশাসন বিষয়ে কমিটি গঠিত হলো, বাসস কেন বাদ পড়ল? গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বিটিভি, বেতার ও বাসসের সমন্বয়ে বাংলাদেশ সম্প্রচার সংস্থা বা জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা গঠনের কথা বলেছে। নতুন এ প্রতিষ্ঠানের তিনটি বিভাগ থাকবে—টেলিভিশন, বেতার ও বার্তা বিভাগ। বাসস হতে পারে এই সংস্থার বার্তা বিভাগ।

কমিশন তার প্রতিবেদনে বিটিভি, বেতার ও বাসস একীভূত করার পেছনে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেছে। পাশাপাশি বাসস নিয়ে একটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন কমিশনের সদস্য সৈয়দ আবদাল আহমেদ। তিনি প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) আদলে বাসসকে পুনর্গঠনের কথা বলেছেন। সুপারিশ কোনটি গ্রহণ করা হবে, সেটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। কিন্তু দেখা গেল, উপদেষ্টা কমিটি বাসস নিয়ে কাজ করবে না। কাজ করবে শুধু বিটিভি ও বেতার নিয়ে। এটা ঠিক হলো না।

বিটিভি, বেতার ও বাসসের পরিচালনায় বছরে ব্যয় প্রায় ৬০০ কোটি টাকা, যার বড় অংশই জনগণের করের টাকা থেকে দিতে হয় (বিটিভি ৩৭৭ কোটি, বেতার ২০৯ কোটি ও বাসস ৩৮ কোটি টাকা)। সরকারের গুণগান ও মন্ত্রীদের খবর এবং মানহীন অনুষ্ঠান প্রচারে এই বিপুল ব্যয় গ্রহণযোগ্য নয়। তিনটি প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করে সীমিত সম্পদের দক্ষ ব্যবহার এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিযোগিতাসক্ষম করাই সংস্কারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

তৃতীয় প্রশ্ন হলো, গণমাধ্যম কমিশন ২১ ধরনের সুপারিশ করেছে। তার মধ্যে একটি সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের উদ্যোগ দেখছি। বাকিগুলোর কী হবে? সার্বিকভাবে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। পাঁচটি কমিশনের সুপারিশ নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা হচ্ছে। বাকি কমিশনের সুপারিশ নিয়ে বড় ধরনের উদ্যোগ ও আলোচনা নেই। গণমাধ্যম কমিশনের বাকি সুপারিশগুলো কি কাগজেই থাকবে?

চতুর্থ প্রশ্নটি তৈরি হয়েছে উপদেষ্টা কমিটি গঠন–সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তির দুটি লাইন থেকে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কমিটি টেলিভিশন ও অন্যান্য গণমাধ্যমের গত ১৫ বছরের নীতিমালা পর্যালোচনা ও ভবিষ্যতের নীতি প্রণয়নে কাজ করবে। সরকারের কাছে এটা স্পষ্ট থাকা উচিত যে গণমাধ্যমের নীতি প্রণয়ন কখনোই সরকারের কাজ হতে পারে না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যদি গণমাধ্যমের নীতিমালা করতে যায়, তবে তা ভবিষ্যতের জন্য খারাপ নজির তৈরি করতে পারে। আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক সরকারগুলো নিজেদের মতো নীতিমালা তৈরি করতে এখনকার উদ্যোগকে উদাহরণ হিসেবে সামনে আনতে পারে।

গণমাধ্যমের নিজস্ব নীতিমালা গণমাধ্যম নিজে তৈরি করবে। সবার জন্য অনুসরণীয় নীতিমালা গণমাধ্যম–সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো তৈরি করতে পারে। তাদেরই এ কাজ করা দরকার। সরকার কেন এই কাজের দায়িত্ব পাঁচজন উপদেষ্টাকে দিচ্ছে, তা বোধগম্য নয়।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান সাংবাদিক কামাল আহমেদ এই লেখককে বলেন, গণমাধ্যমের নীতিমালা তৈরি করবেন সম্পাদকেরা অথবা বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয় সরকারের কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া কাম্য নয়। তিনি বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গণমাধ্যমের এথিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড (নৈতিকতাবিষয়ক নীতিমালা) করার দায়িত্ব সম্পাদক পরিষদের মতো সংগঠনগুলোকে দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

কামাল আহমেদ আরও বলেন, কমিশনের অন্যান্য সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকার এখনো কেন গণমাধ্যম শিল্পের অংশীজনদের সহায়তা চায়নি, তা–ও বোধগম্য নয়।

বিটিভি, বেতার ও বাসস নিয়ে অতীতে অনেক কথা হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি; কিন্তু এ ক্ষেত্রে যে স্বায়ত্তশাসন দরকার, সেই রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছিল সাড়ে তিন দশক আগে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় সব কটি রাজনৈতিক দল যে তিন জোটের রূপরেখা তৈরি করেছিল, সেখানে বিটিভি ও বেতারের স্বায়ত্তশাসনের অঙ্গীকার ছিল। পরে ক্ষমতায় আসা ও ক্ষমতার অংশীদার হওয়া রাজনৈতিক দল অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর এবার সংস্কারের বড় সুযোগ এসেছে। এ সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। সরকার যদি গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে সংস্কারের যথেষ্ট উদ্যোগ না নেয়, উদ্যোগ যদি কয়েকটি ক্ষেত্রে সীমিত থাকে, তাহলে সেটা সরকারের ব্যর্থতা হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন উপদ ষ ট গঠন কর ছ র জন ত ক ক জ করব সরক র র প রণয়ন ১৫ বছর কর ছ ল কম ট র হয় ছ ল ক জ কর মন ত র আওয় ম এরশ দ ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই: বাম গণতান্ত্রিক জোট

চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে না আসায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তারা বলেছে, জনগণের মতামত ছাড়া বন্দর পরিচালনার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাচিত বা অনির্বাচিত কোনো সরকারই নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। সরকার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে দেশের সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সারা দেশে আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে।

আজ সোমবার বিকেলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। জোটের অস্থায়ী কার্যালয় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ২৭ ও ২৮ জুন দেশপ্রেমিক জনগণের ব্যানারে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চে চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশবাসী অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছে। দেশের সচেতন মানুষ সরকারের যেকোনো গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এখনো পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। আমরা আশা করেছিলাম, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সরকার বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার বন্দর ইজারা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা থেকে সরে আসবে। কিন্তু সরকার জনগণের মতামত উপেক্ষা করে বন্দর বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। যা নৌপরিবহন উপদেষ্টার বক্তব্যে ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে।’

দেশের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে দাবি করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই। দেশের স্বার্থবিরোধী এ ধরনের সরকারের সিদ্ধান্ত জনগণ প্রত্যাখ্যান করে। ইতিমধ্যে নির্বাচনের সময় ঘোষিত হয়েছে। জনগণের মতামত ছাড়া বন্দর পরিচালনার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নির্বাচিত বা অনির্বাচিত কোনো সরকারই নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না।’

জাতীয় স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি বাতিলের আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি বাতিল করার দাবি জানানো যাচ্ছে। একই সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের কাছে নতজানু সরকার ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণ–আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সব বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো যাচ্ছে।’

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতিত্বে সভায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবদুস সাত্তার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শামীম ইমাম, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহীদুল ইসলাম সবুজ বক্তব্য দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ