চলে গেলেন হলিউডের প্রিয় মুখ জো মারিনেল্লি
Published: 25th, June 2025 GMT
ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন জনপ্রিয় টেলিভিশন অভিনেতা জো মারিনেল্লি। ২২ জুন, রোববার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই শিল্পী। বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সহ-অভিনেতা লি জে. ম্যাকক্লসকি।
স্মৃতিচারণ করে ম্যাকক্লসকি সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “আমি জানতাম জো কঠিন এক অসুস্থতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁর মনোবল আর প্রাণশক্তি আমাকে সবসময় অবাক করেছে। অসাধ্য এক যুদ্ধ তিনি লড়ে গেছেনএবং সত্যিকার অর্থেই তিনি ছিলেন এক যোদ্ধা, এক চ্যাম্পিয়ন।”
তিনি আরও বলেন, “জো ছিলেন শুধু একজন অভিনয়শিল্পী নন, তিনি ছিলেন এক গভীর ও হৃদয়বান মানুষ। শিক্ষক, দার্শনিক বন্ধু এবং গল্প বলার এক অনন্য প্রতিভা। তাঁর মধ্যে হাস্যরস আর বোধের দারুণ এক মিশেল ছিল। তাঁর পরিবারেও রয়েছে শিল্প-সংস্কৃতির ঐতিহ্য-সেই ছোঁয়া তাঁর প্রতিটি কাজে পাওয়া যেত। প্রিয় এই বন্ধুকে হারিয়ে আমি শোকাহত।”
১৯৫৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কনেকটিকাটে জন্ম নেওয়া জো মারিনেল্লির শৈশব থেকেই অভিনয়ের প্রতি ছিল গভীর ভালোবাসা। উচ্চশিক্ষা নেন লস অ্যাঞ্জেলেসের লয়োলা মেরিমাউন্ট ইউনিভার্সিটিতে। প্রথমে থিয়েটারে কাজ শুরু করলেও, খুব অল্প সময়েই তিনি টেলিভিশনের পর্দায় জায়গা করে নেন।
‘এল.
মারিনেল্লির ক্যারিয়ারে বৈচিত্র্য ছিল চোখে পড়ার মতো। ‘দ্য ওয়েস্ট উইং’, ‘হাউস’, ‘ডেসপারেট হাউসওয়াইভস’, ‘ভিক্টোরিয়াস’ এবং ‘দ্য অফার’-এর মতো নানা ধারার সিরিজে অভিনয় করে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, তিনি একইসঙ্গে সিরিয়াস ড্রামার সংবেদনশীল মুখ এবং কমেডির প্রাণশক্তি।
সহ-অভিনেতারা সবসময়ই তাঁকে বলতেন অনুপ্রেরণাদায়ী এক শিল্পী। যে চরিত্রই তিনি করতেন, তাতে থাকত আত্মনিবেদন, মেধা আর হৃদয়ের ছাপ। পর্দার বাইরেও তিনি ছিলেন সহানুভূতিপূর্ণ, গভীর ও হাস্যরসিক একজন মানুষ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন, আন্তর্জাতিক মহলের তীব্র নিন্দা
ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা পুরো গাজা সিটি ‘দখলে’ নেওয়ার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। গতকাল শুক্রবার ভোরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। আগামী কয়েক মাসে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এতে যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটির প্রায় ১০ লাখ মানুষ নতুন করে বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কা রয়েছেন। প্রাণ হারাতে পারেন আরও কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি।
গাজা সিটি দখলে নেওয়ার ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলের এ পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
দ্য টাইমস অব ইসরায়েল-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টায় ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠক শুরু হয়। কয়েক ঘণ্টার বৈঠকে গাজা উপত্যকার বৃহত্তম নগরী গাজা সিটি দখলে নেওয়ার পরিকল্পনাটি পাস হয়।
পরে গতকাল ভোরে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, আইডিএফ (ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী) গাজা সিটি দখলে নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করবে। একই সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে থাকা বেসামরিক মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করবে।
এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নতুন করে সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন শুরু করেছে। গাজা সিটিতে অভিযান শুরু করতেই এ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা সিটি দখলে নেওয়ার অভিযান কবে শুরু হবে, তা জানানো হয়নি। তবে ইসরায়েলের দুটি সূত্র জানিয়েছে, কয়েক ধাপে গাজা সিটি দখলে নেওয়া হবে। প্রথম ধাপ চলবে দুই মাস, যা আগামী ৭ অক্টোবর শেষ হবে। এদিনই ইসরায়েলের হামলার দুই বছর পূর্ণ হবে।
এই দুই মাসে গাজা সিটির বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যেতে নানাভাবে বাধ্য করা হবে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণের উদ্বাস্তু শিবিরগুলোয় ত্রাণ বিতরণ বৃদ্ধি করা হবে, যাতে গাজা সিটির বাসিন্দারা সেদিকে চলে যান।
তবে গাজা সিটি সম্পূর্ণ দখলে নিতে পাঁচ মাস লাগতে পারে বলে সিএনএনকে জানিয়েছেন ইসরায়েলের একজন কর্মকর্তা। এরই মধ্যে প্রায় ৪১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গাজা উপত্যকার আনুমানিক ৭৫ শতাংশ দখল করেছে ইসরায়েল। গাজা সিটি দখলের মধ্য দিয়ে তা প্রায় ৮৫ শতাংশ হবে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ইসরায়েলের এ পরিকল্পনা পুরো গাজা দখলের পরিকল্পনার অংশ। বৃহস্পতিবারের বৈঠকের আগে নেতানিয়াহু এমনটিই জানিয়েছিলেন।
ইসরায়েলের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ইংরেজি ‘অকুপাই’ (দখল) শব্দের পরিবর্তে ইংরেজি টেকওভার (নিয়ন্ত্রণ বা দখল) সচেতনভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক আইনের অধীন আনুষ্ঠানিক ‘দখলদারি’বিষয়ক আইনি বাধ্যবাধকতা এড়ানো যায়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গাজায় সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। প্রায় দুই বছর পূর্ণ হতে চলা এ যুদ্ধে গাজায় অন্তত ৬১ হাজার ২৫৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উপত্যকাটির আনুমানিক ২১ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই কয়েকবার করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ইসরায়েল সরকারের পুরো গাজা উপত্যকা দখলের পরিকল্পনা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এ পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায়ের পরিপন্থী।
নেতানিয়াহুর গাজা উপত্যকার সম্পূর্ণ দখল নেওয়ার ঘোষণাকে ‘নির্জলা অপরাধ’ উল্লেখ করে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছেন, এটি গণহত্যা, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, অনাহারে রাখা ও অবরোধের ধারাবাহিকতা। গাজা দখলের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ইসরায়েলকে বড় মূল্য চুকাতে হবে এবং বাকি সব জিম্মিকে হারাতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ ইসরায়েলের পরিকল্পনাকে ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। নেতানিয়াহুর এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় গাজায় ব্যবহার হতে পারে, এমন অস্ত্র ইসরায়েলে রপ্তানি স্থগিত করেছে জার্মানি। ইসরায়েলের সিদ্ধান্তে নিজেরা বড় রকমের উদ্বিগ্ন বলে মন্তব্য করেছে চীন।
এর বাইরে সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ নেতানিয়াহুর গাজা সিটি দখলে নেওয়ার পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের গাজা সিটি দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানেন কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের কাছে। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ইসরায়েলের গাজা দখলের পরিকল্পনা ঘোষণার পর আজ শনিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও পানামা ছাড়া ১৫ সদস্যের পরিষদটির বাকি সদস্যরা এ বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে। আজ নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বেলা তিনটা (বাংলাদেশ সময় শনিবার দিবাগত রাত একটা) বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। ইসরায়েলের এ সিদ্ধান্তে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে মন্তব্য করেছেন তাঁর একজন মুখপাত্র।