৫২ বছর পর পেট থেকে বের করা হলো টুথব্রাশ
Published: 25th, June 2025 GMT
চীনের একজন ব্যক্তির পেট থেকে ৫২ বছর পর আস্ত একটি টুথব্রাশ বের করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির বয়স ৬৪ বছর। ১২ বছর বয়সে দাঁত মাজার সময় ব্রাশটি তাঁর পেটে ঢুকে গিয়েছিল। দীর্ঘদিন পেটের ভেতর সেটি নিয়েই দিব্যি চলাফেরা করছিলেন। তবে সম্প্রতি পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয় তাঁকে। শেষমেশ প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট ধরে অস্ত্রোপচার করে পেট থেকে ব্রাশটি বের করেন চিকিৎসকেরা।
ওই ব্যক্তির নাম ইয়াং। বাড়ি চীনের পূর্বাঞ্চলের আহুনি প্রদেশে। তিনি বলেন, কিশোর বয়সে টুথব্রাশটি গিলে ফেলার পর ভয়ে সে কথা আর মা–বাবাকে বলতে সাহস পাননি। ভেবেছিলেন টুথব্রাশটি এমনিতেই গলে যাবে। তবে সম্প্রতি পেটের ভেতর অস্বাভাবিক কিছু টের পান। পরে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁর পাচনতন্ত্র পরীক্ষা করে দেখেন টুথব্রাশটি তাঁর ক্ষুদ্রান্ত্রে আটকে আছে।
এরপর চিকিৎসকেরা এন্ডোস্কপির মাধ্যমে ৮০ মিনিট সময় নিয়ে পেটের ভেতর থেকে ১৭ সেন্টিমিটার দীর্ঘ ব্রাশটি বের করে আনেন। গত তিন বছরে রোগীর পাচনতন্ত্র থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অপসারণ করা দীর্ঘতম বস্তুগুলোর একটি ছিল এটি।
ঝোউ নামের একজন চিকিৎসক বলেন, স্বাভাবিক অবস্থায় অন্ত্রে টুথব্রাশ থাকলে এটি নড়াচড়া করতে পারে, চাপ দিতে পারে এমনকি অন্ত্রের ভেতরের টিস্যু ফুটো করে দিতে পারে। এতে অন্ত্র ছিদ্র হতে পারে। কখনো কখনো তা প্রাণঘাতী হতে পারে। ইয়াং সৌভাগ্যবান ছিলেন, কারণ ব্রাশটি অন্ত্রের একটি বাঁকে আটকে ছিল। দীর্ঘদিন ব্রাশটি নড়াচড়া করেনি।
এ খবর অনলাইনে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন। একজন ব্যবহারকারী প্রশ্ন করেন, ‘তিনি কীভাবে এতটা সৌভাগ্যবান হলেন যে শরীরে টুথব্রাশ নিয়ে পাঁচ দশক বেঁচে থাকলেন? তিনি কীভাবে ভাবলেন টুথব্রাশ নিজে থেকেই গলে যাবে? তা ছাড়া তিনি কীভাবে ওই টুথব্রাশটি গিলে ফেললেন?’
৫০ বছরে পেটের ভেতরে টুথব্রাশটি টের না পাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন আরেকজন। তিনি লিখেছেন, ‘পাঁচ দশকে ব্রাশটি মোটেও টের পাননি। এটি অলৌকিক ঘটনা।’
গত বছর চীনের সিচুয়ান প্রদেশে একজন নারীর পেট থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা ও আড়াই সেন্টিমিটার চওড়া সুপার গ্লুর টিউব বের করা হয়। তিনি জানান, তাঁর মনে হয়েছিল এটি গিলে ফেলার পর হজমপ্রক্রিয়ার সাহায্যে ঠিক হয়ে যাবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ট র ভ তর চ ক ৎসক র অন ত র ব র শট ব র কর
এছাড়াও পড়ুন:
কামাল ও তাঁর তিন সন্তান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, প্রতিদিন ‘যুদ্ধ করেও’ কূল খুঁজে পান না
ছয়জনের পরিবারে চারজনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তাঁর মধ্যে পরিবারের প্রধান মো. কামাল হোসেন মাঝি নিজেও একজন। জন্ম থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষটির জীবনের শুরু হয়েছিল বড় একটি স্বপ্ন নিয়ে—ধর্মীয় বক্তা হবেন, মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে তিলাওয়াত করবেন, হামদ-নাথ গাইবেন, মানুষকে আলো দেখাবেন। মুখস্থ করেছিলেন ১৫ পারা কোরআন। কিছুদিন মাদ্রাসায়ও পড়েছেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়নি। অভাব আর দারিদ্র্য তাঁকে নামিয়ে এনেছে এমন এক বাস্তবতায়, যেখানে এখন তাঁর একমাত্র চাওয়া—দুবেলা খেতে পারা আর মাথার ওপর ছাউনি।
ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের কন্দর্পপুর গ্রামে থাকেন কামাল। জনতাবাজার থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে তাঁর ঘর। বর্ষায় কর্দমাক্ত রাস্তা পেরিয়ে কোনো রিকশা যায় না, হাঁটতে হয়। গত শনিবার সন্ধ্যায় প্রতিবেশীর আধা মণ বীজধানের বস্তা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কামাল পড়ে যান। পথচারীরা তুলে দিয়ে আবার বস্তা কাঁধে তুলে দেন। হয়তো এর বিনিময়ে কিছু টাকা পেয়েছেন। কিন্তু এত কষ্টের কাজ করেও পরিবারে তেমন কিছু যোগ হয় না।
কামালের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্ত্রী মোসাম্মৎ তানজিলা বেগম (৩৯) ও ছোট মেয়ে উম্মে হাবিবা (৭) ছাড়া পরিবারের সবাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তাঁর বড় মেয়ে কামরুন নাহার (২৫), ছেলে আবুল বাশার (১৩), মেজ মেয়ে শশী আক্তার (১০)—তিনজনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। এ ছাড়া দুই মেয়ের স্বামীও প্রতিবন্ধী। বড় জামাই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, মেজ জামাই শারীরিকভাবে অক্ষম। কারও তেমন উপার্জন নেই।
কামালের জন্ম উত্তর রাজাপুরের রামদাসপুর গ্রামে। বাবা চাষাবাদ করতেন। মেঘনার বারবার ভাঙনে সব হারিয়ে দক্ষিণ রাজাপুরে এসে সরকারি পতিত জমিতে ঘর তোলে পরিবার। কামাল ছোটবেলায় ওস্তাদের মুখে শুনে কোরআন মুখস্থ করেন। কিছুদিন দাখিল মাদ্রাসায় পড়লেও অর্থাভাবে পড়া থেমে যায়। সেই সময়েই বক্তা হওয়ার স্বপ্ন জাগে মনে। কিন্তু পরিবারের অভাব তাঁকে স্বপ্ন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
বিয়ের পর থেকে কামালের স্ত্রী তানজিলা ছোট ছোট কাজ করেন, শাকপাতা বিক্রি করে, হাঁস-মুরগি পুষে সংসার চালানোর চেষ্টা করেন। একসময় চারটি গরুর মালিকও হন। কিন্তু ২০২৪ সালে এক রাতে চারটি গরুই চুরি হয়ে যায়। এ খবর প্রকাশ হয় প্রথম আলোতেও। তানজিলা বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেছেন, গরুগুলো পাননি। মানুষের সহায়তায় একটি বাছুর কেনেন, আর মৎস্য বিভাগ আরও একটি দেয়। এখন সেগুলো বড় হচ্ছে। গরু দুটি এখন তাদের সম্বল।
কামাল বলেন, ‘এই বছর বিষ্টির শেষ নাই। আসমান দিয়াও পরে, বাড়িতদারের ইলশা নদীর জোয়ার ওডে ডোয়াদ্দারে। গরবিডি ডুবি যায়। বিষ্টিরসুম্ গরে-বাইরে একাকার। গরেও পানি, বাইরেও পানি। এই অবস্থা দেইকখা জনতাবাজারের জামাল ডাকতোর ৫১ হাজার টিয়ার (টাকা) টিন দিছে বাকিত্। কইছে টিয়া ছিরি ছিরি (অল্প অল্প) নিবো। কিন্তুক এহোন টিয়ারলাই চাপ দেয়।’
এমন করেই জীবন পার করছে কামাল মাঝির পরিবার। কামালের চাওয়া দিনে দুবেলা খেতে পাওয়া, একটু নিরাপদে থাকা। ছোট যে তিনটি ছেলে-মেয়ে আছে, তাদের স্বাবলম্বী করা। কিন্তু কোনো কূল খুঁজে পাচ্ছে না। স্ত্রী তানজিলা বলেন, ‘পুতেরে (পুত্র) একজন এট্টা ছাগল ছদকা (দান) দিছিল। হেইডা বেইচ্চা চালে টিন লাগাইছি। এহোনো ব্যারা ভাঙা।’
ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, খোঁজ নিয়ে তিনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মো. কামাল হোসেন মাঝির পরিবারকে যথাসাধ্য সাহায্য করবেন।