আমি নির্দোষ, কোনো অপরাধ করিনি, বললেন পলক
Published: 25th, June 2025 GMT
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেছেন, ‘আমি নির্দোষ, আমি কোনো অপরাধ করিনি।’
আজ বুধবার ঢাকার আদালতে হাতিরঝিল থানার এক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য পলককে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে এসে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নউত্তরে পলক বলেন, ‘আদালতে বই পড়ে সময় কাটাচ্ছি।’
এদিন সকালে সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। তার বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট ও হাতে হ্যান্ডকাফ পরানো ছিলো। কাঠগড়ায় নেওয়ার পর তার হেলমেট ও হ্যান্ডকাফ খুলে দেন পুলিশ সদস্যরা। এসময় তার পরনে বেগুনি রঙের টিশার্ট ও টিশার্টের ওপর ব্যাকপেইন নিরাময়ের জন্য বেল্ট পরা ছিলো।
এসময় পলক তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। ১০টা ৪০ মিনিটে এজলাসে বিচারক আসলে নিশ্চুপ হয়ে যা তিনিন। তারপর ১০টা ৪৫ মিনিটে বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন।
তারপর পলক তার আইনজীবী রাখির সঙ্গে আবারও কথা বলতে থাকেন। তার আইনজীবীকে বলতে শোনা যায়, তিনি কোমরে প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভব করছেন। ফলে তিনি কোমরে ব্যাকপেইন নিরাময়ের জন্য বেল্ট ব্যবহার করছেন। এসময় আইনজীবী রাখি পলককে কোমরের বেল্টের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে পলক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই কোমরে ব্যথা। ব্যাকপেইন বেড়েছে।’
পলক তার আইনজীবীকে আরও বলেন, ‘আপাতত কিছু এক্সারসাইজ করছি। সঙ্গে ব্যাকপেইনের ঔষধ খাচ্ছি। কিন্তু এর জন্য নির্দিষ্ট থেরাপি প্রয়োজন। থেরাপির সুযোগ পাচ্ছি না।’
পলকের আইনজীবী রাখি সমকালকে বলেন, ‘উনি (পলক) ব্যাকপেইনে ভুগছেন। যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। উনি জানিয়েছেন ব্যাকপেইনের জন্য থেরাপি প্রয়োজন।’ আদালতে পলকের বই পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আদালতে উনি বই পড়েন বেশিরভাগ সময়। আমাদের কাছে বেশকিছু বই চেয়েছিলেন। কিন্তু ৩টা বই আমরা দিতে পারিনি। ওই বইগুলো পাওয়া যায়নি।’
আদালতে দুয়োধ্বনি শুনেও হাসলেন ইনু
বুধবা আদালতে হাসিমুখে দেখা যায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে। তবে এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নে কোনো জবাব দেননি তিনি।
এদিন সকালে মাথায় হেলমেট ও বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে কড়া নিরাপত্তায় ইনুকে আদালতের এজলাস থেকে হাজতখানার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় দেখা যায় তাকে। তখন পাশ থেকে কিছু লোক চিৎকার করে বলে ওঠেন- ‘হাসে। শরম নাই? দেশের সম্পদ লুটপাট করেছে, এরপরও হাসে। লজ্জা-শরম নাই। এদের বাঁচাই রাখা উচিত না।’ এসব কথা শুনেও মুচকি হাসতে থাকেন হাসানুল হক ইনু। পরে ধীরে ধীরে তাকে হাজতখানার দিকে নিয়ে যায় পুলিশ।
নতুন মামলায় গ্রেপ্তার ইনু-কামাল-পলকসহ চারজন
জুলাই অভ্যুত্থান কেন্দ্রিক বিভিন্ন মামলায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারসহ চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এদিন সকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথি তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। গ্রেপ্তার দেখানো অপর আসামিরা হলেন- সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং ডিএমপির সাবেক উপ-পুলিশ কমিশনার মো.
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির দিন বুধবার ধার্য করেন। আজ শুনানি শেষে আদালত তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী এসব তথ্য জানান।
রমজান মিয়া হত্যা মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই পশ্চিম রামপুরা ওয়াপদা রোড এলাকায় আন্দোলনে অংশ নেন রমজান মিয়া। এদিন সকাল ১০টায় আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে আহত হলে হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় গত ২৬ মে হাতিরঝিল থানায় মামলা করা হয়। আলভী হত্যা মামলার বিবরণী থেকে জানা গেছে, জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট মিরপুর ১০ এ আন্দোলন অংশ নেয় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান আলভী। বিকেল ৪টায় গুলি এসে আলভীর বুকে লাগে। রক্তাক্ত অবস্থায় হসপিটালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর মারা যায় আলভী।
শামিম মিয়া হত্যাচেষ্টা মামলার বিবরণী থেকে জানা গেছে, জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই ভুক্তভোগী মো. শামিম মিয়া রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। তার শরীরে চারটি গুলি লাগে। পরে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন তিনি। এ ঘটনায় গত ২২ জানুয়ারি ভুক্তভোগী নিজেই বাদী হয়ে রাজধানীর ভাটারা থানায় মামলা করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত র আইনজ ব র জন য জ র কর
এছাড়াও পড়ুন:
মামুন হত্যা মামলায় চার আসামি পাঁচ দিনের রিমান্ডে, অস্ত্র মামলায় ইউসুফের দায় স্বীকার
রাজধানীর পুরান ঢাকায় আদালত এলাকায় ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তারিক সাঈদ মামুন হত্যার ঘটনায় অস্ত্র আইনে গ্রেপ্তার পাঁচ আসামির মধ্যে চারজনকে আজ রোববার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পরে এ মামলায় তাঁদের আদালতের মাধ্যমে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়।
আজ রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুজ্জামান এ আদেশ দেন।
অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন মো. ফারুক হোসেন ফয়সাল (৩৮), রবিন আহম্মেদ ওরফে পিয়াস (২৫), মো. রুবেল (৩৪), শামীম আহম্মেদ (২২) ও মো. ইউসুফ জীবন (৪২)। তাঁদের মধ্যে ইউসুফ আজ দায় স্বীকার করে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।
এ হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজারে আসামি ইউসুফ জীবনের বাসার ওয়ার্ডরোবের নিচ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রের গুলির উদ্ধার করা হয়। ১২ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করেন পুলিশ। পরে সেদিনই এই মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচজনের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ফটকের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে ১০ নভেম্বর সকালে গুলি করে হত্যা করা হয় তারিক সাইফ মামুনকে। তিনি মামলার হাজিরা দিয়ে বের হচ্ছিলেন তখন। নিকটস্থ সিসিটিভি ক্যামেরার এক ফুটেজে দেখা যায়, মামুন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। তখন দুই ব্যক্তি খুব কাছ থেকে তাঁকে গুলি করছেন।
এ ঘটনায় আজ গতকাল শনিবার ১৫ নভেম্বর সূত্রাপুর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত মামুনের স্ত্রী বিলকিস আক্তার। তবে মামলায় তিনি কারও নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক আবু বকর জানান, আজ মামুন হত্যা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মো. সাজ্জাদ হোসেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, আগের অস্ত্র মামলার চার দিনের রিমান্ডে সব তথ্য বেরিয়েছে। পুলিশও মিডিয়াকে সব জানিয়েছে। হত্যার ঘটনা কেন হয়েছে? কে কী করেছে। সে ক্ষেত্রে আর রিমান্ডে যৌক্তিকতা নেই। বিচারক বলেন, ওটা তো অন্য মামলায়। আসামিপক্ষের আইনজীবীর প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের সঙ্গে আর কে কে আছেন, সেটা জানা দরকার। শুধু ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নয়, এখানে আরও বেশি টাকার লেনদেন হয়েছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, মিডিয়াতে এসেছে, রনি জড়িত। এ ছাড়া হত্যা মামলায় আসামি সব অজ্ঞাতনামা। বিচারক তখন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এ মামলায় এজাহারনামীয় আসামি কে কে, তা জানতে চান। জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এজাহারে অজ্ঞাতনামা আসামি। বাদী চেয়েছেন, তদন্তের মাধ্যমে আসামি বের হোক। সে জন্য অজ্ঞাতনামা দিয়েছেন। বাদী ন্যায়বিচার চান।
তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, এ আসামিদের প্রতি বাদীর (হত্যা মামলা) কোনো সন্দেহ নেই। তাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচ দিন আগে। তিনি মামলা করেছেন গতকাল শনিবার। কাউকে তিনি সন্দেহ করেননি। তখন তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এঁরাই গুলি করছেন। মামলাটি তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত হলে সব বেরিয়ে আসবে। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারক ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।