সারা দেশে একযোগে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মোবাইলসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.
আরো পড়ুন:
এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে পরীক্ষার্থীদের অবস্থান
এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে থাকবে মেডিকেল টিম
সভায় প্রশ্নপত্র ফাঁস বা ফাঁস সংক্রান্ত গুজব এবং পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থীদের কাছে নকল সরবরাহে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ সময় সাইবার সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাইবার পুলিশ সেন্টার, সিআইডি, বাংলাদেশের হটলাইনে (নম্বর-০১৩২০০১০১৪৮) যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, পরীক্ষা চলাকালে বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিরসনের জন্য কেন্দ্রগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে।
পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে এবং এ সময়ের পর কোনো পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থী এরপরে প্রবেশ করলে রেজিস্টারে তাদের নাম, রোল, প্রবেশের সময় ও বিলম্বের কারণ উল্লেখ করে পরীক্ষার্থীদের তালিকা প্রতিদিন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কোনও কক্ষে পরীক্ষা বিলম্বে শুরু হলে-যত মিনিট পরে পরীক্ষা শুরু হবে, পরীক্ষার্থীদের ততটুকু সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন। এর মধ্যে নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষার্থী ১০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি। গতবারের তুলনায় যা প্রায় ৭৩ হাজার কম। আলিমে এবার পরীক্ষার্থী ৮৬ হাজারের বেশি। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন মোট পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৯ হাজারের বেশি। দুই হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে নেওয়া হবে পরীক্ষা।
ঢাকা/হাসান/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এইচএসস পর ক ষ র থ দ র প রব শ র পর ক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে
দেশে সব সময় ব্যবসা-বাণিজ্যে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে চাঁদাবাজি নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি ঘুরেফিরে উচ্চারিত হয়ে থাকে ব্যবসায়ী মহলে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের প্রত্যাশা তৈরি হলেও সে আশার গুড়ে বালিই ঘটেছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা না আসায় ব্যবসা-বাণিজ্য একধরনের অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্য বিষফোড়া হিসেবে চাঁদাবাজি ব্যবসায়ীদের চরমভাবে ভুক্তভোগী করছে। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারকে কঠোর হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য পরিস্থিতি ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের মতবিনিময় সভায় চাঁদাবাজি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সভায় ব্যবসায়ী নেতারা যে সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন, তার সারসংক্ষেপ হলো বাজারের অস্থিরতার মূল কারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নয়, বরং কিছু করপোরেট গ্রুপের সিন্ডিকেট এবং পণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে খালাস পর্যন্ত চলমান ভয়াবহ চাঁদাবাজি।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মওলার বক্তব্য বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, ‘বাজার তদারকিতে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ওপর থেকে দৃষ্টি না সরাবেন, ততক্ষণ সমস্যার সমাধান হবে না। কারওয়ান বাজারের চুনোপুঁটি ব্যবসায়ীর কাছে না গিয়ে রাঘববোয়ালের কাছে যান।’ চিনি ও ভোজ্যতেলের মতো অপরিহার্য পণ্য সরবরাহের জন্য মুষ্টিমেয় সাতটি গ্রুপের ওপর গোটা দেশের নির্ভরতা এই সিন্ডিকেট-নির্ভরতার বিপদকে প্রকট করে তোলে।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিনের অভিযোগ আরও গুরুতর। তিনি সরাসরি করপোরেট ব্যবসায়ীদের ‘শকুনের মতো শোষণকারী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং ৩ টাকার মোড়ক দিয়ে ৪০ টাকা দাম বাড়ানোর মতো কারসাজির কথা তুলে ধরেছেন। সংকটের সময় মিলগুলো নিয়মিত পাইকারদের তেল না দিয়ে বিশেষ শ্রেণির পরিবেশকদের সুবিধা দেওয়ায় বাজার আরও অস্থির হয় বলে অভিযোগ। এসব করপোরেট কারসাজির ওপর সরকারের কার্যকর নজরদারি না থাকলে রমজানের সময় মূল্য সহনীয় রাখা অসম্ভব।
ব্যবসায়ী নেতারা একবাক্যে স্বীকার করেছেন, নিত্যপণ্য পরিবহন ও সরবরাহের পথে গুরুতরভাবে চাঁদাবাজি চলছে। পণ্য ট্রাকে ওঠানো-নামানো—সর্বত্রই চাঁদা দিতে হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গেও চাঁদাবাজদের ‘দহরম-মহরম’ থাকার অভিযোগ তো নতুন নয়। চাঁদাবাজমুক্ত পরিবেশ তৈরি না হলে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে না এবং বাজার স্থিতিশীল হবে না—এই কঠোর সত্যটি সরকারকে অনুধাবন করতে হবে। এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক কেবল ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অন্যান্য সংস্থাকে অনুরোধ করা হবে’ বলে দায় সারলে এই সমস্যার সমাধান হবে না, দরকার কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা।
পেঁয়াজ বা খেজুরের মতো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সরকারের ভুল শুল্কনীতি এবং আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা বড় ভূমিকা রাখে। পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার কাছাকাছি এসেও সামান্য ১০ শতাংশ ঘাটতির জন্য দামের ‘সেঞ্চুরি’ হওয়ার পর সরকারের আমদানির প্রয়োজন বোধ করা সময়োচিত নয়। অন্যদিকে খেজুরের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করে এটিকে বিলাসবহুল পণ্যে পরিণত করা হয়েছে। ফল আমদানিকারকেরা অবিলম্বে শুল্ক যৌক্তিক করার দাবি জানিয়েছেন। রমজানে চাহিদা মেটাতে সরকার যদি নিজেই নির্দিষ্ট পরিমাণ চিনি ও ভোজ্যতেল আমদানি করে মজুত রাখে, তবে বেসরকারি ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ কমবে এবং সংস্থার হয়রানিও বন্ধ হবে—এমন প্রস্তাব সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।
গত বছরের রমজানে সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক সিদ্ধান্তের ফলে বাজারের পরিস্থিতি ছিল তুলনামূলক সন্তোষজনক। আমরা আশা করব, সরকার আসন্ন রমজানের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আগাম প্রস্তুতি নেবে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগী হবে, সেটিই কাম্য।