টেস্টে বাংলাদেশ দলের ধসে যাওয়া নতুন ঘটনা নয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও ব্যাটিংয়ে ধস নামে বাংলাদেশের। কারো কারো সামনে সেই ধস থেকে দলকে উদ্ধারের সুযোগ আসে। উইকেটে সেট হন, রান আসতে থাকে। পরেই আত্মঘাতী কোন শট খেলে মাথা নিচু করে নিজেকে দোষারোপ করতে করতে মাঠ ছাড়েন। কলম্বোয় সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টেও ঘটেছে একই ঘটনা। উইকেট বিসর্জন দিয়ে বৃষ্টি বৃঘ্নিত দিন ৭১ ওভারে ৮ উইকেটে ২২০ রান তুলে শেষ করেছে বাংলাদেশ।

অথচ ওপেনার সাদমান ইসলাম, দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম, রানে থাকা লিটন দাস কিংবা অসুস্থতা কাটিয়ে ফেরা মেহেদী মিরাজ ক্রিজে দারুণভাবে সেট হয়েছিলেন। তারা উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসায় টস জয়ের সুবিধা ঘরে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং কলম্বো টেস্টের প্রথমদিন লঙ্কানদের হাতে তুলে দিয়েছে।

গলের নিঁখাদ  ব্যাটিং উইকেটে দুই ইনিংসে ব্যর্থ হয়েছিলেন টেস্ট দলে ফেরা এনামুল হক বিজয়। আউটের বাজে ধরনের পরও ‘আরেকটা সুযোগ পাওয়া উচিত’ সুর তুলে কলম্বো টেস্টেও তাকে একাদশে রাখা হয়। দলে বিকল্প কোন ওপেনারও ছিল না বিজয়কে নির্ভার রাখতে। ওই বিজয় ১০ বল খেলে দু’বার জীবন পেয়েও শূন্য রানে ‘প্লেড অন’ হয়েছেন। গলেও প্রথম ইনিংসে শূন্য করেছিলেন তিনি।

এরপর ওপেনার সাদমান ইসলাম ও মুমিনুল হক ওই ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। তারা ৩৮ রান যোগ করেন। সহজে ব্যাটে বল পাওয়া মুমিনুল শট খেলতে গিয়ে পার্ট টাইম স্পিনার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে উইকেট দেন। তিনি ৩৯ বলে ২১ রান করেন। লাঞ্চের পর নতুন শুরুর সম্ভাবনা জাগিয়ে দুই রানের ব্যবধানে সাজঘরে ফেরেন নাজমুল শান্ত ও সাদমান ইসলাম। এর মধ্যে শান্ত ৮ রান করে ফেরেন। সাদমান ৪৬ রান করে আউট হন।

বাংলাদেশ ৭৬ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর ধাক্কা সামলে ওঠার সেরা আশা দেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। তারা ৬৭ রান যোগ করেন। কিন্তু দু’জনই উইকেট বিলিয়ে দেন। লিটন ৫৬ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ৩৪ রান করে আউট হওয়ার সময় নিজের ওপরই ক্ষোভ ঝাড়েন। অথচ শটটা না খেললেও পারতেন তিনি। মুশফিক ৩৫ রানে তার ইনিংসের মৃত্যু খেলেন সুইপ শট খেলতে গিয়ে।

মেহেদী মিরাজ দলের শেষ ভরসা হলেও তিনি ওয়ানডের মতো করে ব্যাট চালাতে শুরু করেন। ৪২ বলে ৩১ রান করে আউট হয়ে ব্যাটে ছুঁড়ে রাগ ঝাড়েন। যার অর্থ নিজেকেই ক্ষমা করতে পারছেন না তিনি। মিরাজের সঙ্গে ক্রিজে দাঁড়ানো নাঈম হাসান অবশ্য দিন শেষে দলকে দুইশ’ ছাড়ানো রান পেতে সহায়তা করেছেন। তিনি ২৫ রান যোগ করেন। তাইজুল ৯ ও এবাদত ৫ রান নিয়ে দিন শেষ করেছেন।

লঙ্কানদের হয়ে কলম্বো টেস্টের প্রথমদিন সেরা কাজটা করেছেন অভিষিক্ত অলরাউন্ডার সুনীল দিনুশা। তিনি মুশফিক ও লিটনকে আউট করেন। পেস জুটি আসিথা ফার্নান্দো ও বিশ্ব ফার্নান্দো দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। ধনাঞ্জয়া ও থারিন্ডু নিয়েছেন একটি করে উইকেট। বৃষ্টির ক্ষতি পুষিয়ে দিতে দ্বিতীয় দিন ১৫ মিনিট আগে ম্যাচ শুরু হবে।  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স দম ন র ন কর উইক ট কলম ব

এছাড়াও পড়ুন:

‘বিদায় দেওয়ার সময় গাড়ির ভেতর ঘুমানোর কথা বলেছিল’ 

রাজধানীর মৌচাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পার্কিংয়ে থাকা একটি প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে উদ্ধার হওয়া দুই মরদেহের পরিচয় মিলেছে। তারা নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার বাসিন্দা। তারা হাসপাতালটিতে গিয়েছিলেন এক রোগীকে আনতে। প্রাইভেটকারটির মালিক জোবায়ের আল মাহমুদ সৌরভ এ তথ্য জনান।

মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- উপজেলার রামনারায়ণপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ গোমাতলি দৌলতার বাড়ির মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে মো. মিজান এবং খিলপাড়া ইউনিয়নের লটপটিয়া গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে মো. জাকির। তিনি প্রাইভেটকারটির চালক  ছিলেন।

আরো পড়ুন: মৌচাকে হাসপাতালের পার্কিংয়ে প্রাইভেটকারে ২ মরদেহ 

আরো পড়ুন:

পিয়াইন নদীতে নিখোঁজ বিজিবি সদস্যের মরদেহ উদ্ধার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টিনশেড ঘর থেকে নারীর মরদেহ উদ্ধার 

জাকির ও মিজান বন্ধু বলে জানান প্রাইভেটকারের মালিক জোবায়ের আল মাহমুদ সৌরভ। মোবাইলে জোবায়ের জানান, তিনি তার স্ত্রীর বড় ভাইকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে গত শনিবার রাতে ঢাকায় যান। এ সময় গাড়িতে জাকিরের সঙ্গে তার বন্ধু মিজানও ওঠেন। স্ত্রীর বড় ভাইকে বিমানবন্দরে নামিয়ে দেওয়ার পর গত রবিবার ভোরে বিমানবন্দর থেকে তারা গাড়ি নিয়ে মালিবাগ এলাকায় পৌঁছান।

এরপর জাকির তাকে মালিবাগ থেকে নোয়াখালীগামী একটি বাসে তুলে দেন। তারা হাসপাতালে যান রোগী আনতে। রোগী নিয়ে তাদের নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় যাওয়ার কথা ছিল।

জোবায়ের আল মাহমুদ বলেন, “বিদায় দেওয়ার সময় জাকির বলেছিলেন, বেলা ১১টার দিকে রোগীকে ছাড়পত্র দেবে, ততক্ষণ তারা দুইজন গাড়িতেই ঘুমাবেন। আমি পৌনে ১১টার দিকে জাকিরকে ফোন দিয়েও পাইনি। পরে রাত ৮টা পর্যন্ত আরো কয়েকবার ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেছি, তিনি কল ধরেননি।”

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রামনারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মোবারক উল্লাহ বলেন, “মিজান আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তার কোনো শত্রু নেই। প্রায় ১০ বছর আগে তিনি মাটি ও বালুর ব্যবসা করতেন। অবিবাহিত ছিলেন। দুলাভাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ায় ৩০টি ডাব নিয়ে মিজান প্রাইভেটকারে করে তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। কীভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা আমরা বুঝতে পারছি না।” 

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রবিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে গাড়িটি পার্কিংয়ে প্রবেশ করে। গেটে নিরাপত্তাকর্মীদের জিজ্ঞাসায় বলা হয়, গাড়িতে রোগী আছে। গাড়িটি বের না হওয়ায় গতকাল সোমবার নিরাপত্তাকর্মীরা গাড়ির কাছে গিয়ে ভেতরে দুইজনকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।

রমনা জোনের ডিসি মাসুদ আলম জানান, নিহতদের একজন জাকির, যিনি গাড়ির চালক ছিলেন। তিনি ড্রাইভারের সিটে মৃত অবস্থায় ছিলেন, আরেকজন মিজান তার পাশে ছিলেন। তারা একই এলাকার বাসিন্দা এবং এক স্বজনকে দেখতে হাসপাতালে এসেছিলেন।

তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে হত্যার আশঙ্কা খুব কম, তবে কোনো কিছু উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। সঠিক কারণ জানতে বিশেষজ্ঞ মতামতের অপেক্ষা করা হচ্ছে।

ডিসি মাসুদ আলম জানান, বেজমেন্টে সাফোকেশন ও প্রচণ্ড গরমের কারণে মরদেহে পচন ধরে। গাড়িটি টয়োটা ফিল্ডার-এক্স মডেলের, মালিক জোবায়ের আহমেদ সৌরভ। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

চাটখিল থানার ওসি মোহাম্মদ ফিরোজ আহমেদ চৌধুরী জানান, নিহত দুইজনের বাড়ি চাটখিল উপজেলায়। গাড়ির মালিক সৌরভের বাড়িও চাটখিল। আমরা তথ্যসহ সব বিবরণ রমনা থানায় পাঠানো হয়েছে, তারা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে।

ঢাকা/সুজন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ