সুবিধা কম, তাই তালিকাভুক্তিতে আগ্রহ নেই বহুজাতিক কোম্পানির
Published: 25th, June 2025 GMT
পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, এ দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করা জরুরি। শুধু মূলধন জোগানের জন্য নয়, এ দেশের মানুষের স্বার্থেই তাদের শেয়ারবাজারে আনা উচিত। আর কোম্পানিগুলোরও উচিত দায়বদ্ধতা থেকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া। তবে বহুজাতিক কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলছেন, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে তাঁরা বাড়তি কোনো সুবিধা পান না। বিদ্যমান করহার বেশি, তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াও জটিল। ফলে অর্থায়নের বিকল্প উৎস থাকতে তাঁরা শেয়ারবাজারে আসতে চান না।
রাজধানীর নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনে ‘মিট অ্যান্ড গ্রিট: ডিসকাশন অন দ্য কারেন্ট স্টেট অব বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট’ শীর্ষক এক সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন বা ডিবিএ আজ বুধবার দুপুরে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। সভায় আরও বক্তব্য দেন রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ, ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) চেয়ারম্যান তপন চৌধুরী, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি জাভেদ আখতার। সভাপতিত্ব করেন ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম। এতে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ফরেন চেম্বারের সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মূলধন সংগ্রহের বিকল্প অনেক উপায় রয়েছে। দেশের পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের বাস্তবতা নেই। তাহলে তারা কেন পুঁজিবাজারে আসবে। বর্তমানে যে করহার, সেটি বহুজাতিক কোম্পানিকে শেয়ারবাজারের প্রতি আকর্ষণ করার জন্য পর্যাপ্ত নয়। নির্ধারিত করের চেয়ে কার্যকর করহার অনেক বেশি। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে আরও অনেক নীতিগত অসংগতি রয়েছে। এসব দূর করে আস্থা বাড়ানো গেলে বহুজাতিক কোম্পানি বাজারে আনা সম্ভব হবে।
সিডিবিএলের চেয়ারম্যান তপন চৌধুরী বলেন, বলা হচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানি কেন শেয়ারবাজারে আসছে না। আসলে টাকা যদি না লাগে তাহলে শেয়ারবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করার তো কোনো যুক্তি নেই।
তবে এই দুই ব্যবসায়ীর কথার সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করেন আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো টাকার প্রয়োজন হলেই কেবল পুঁজিবাজারে আসবে, এটি সত্য নয়। অন্য অনেক দেশে তারা জনস্বার্থে বাজারে আসতে বাধ্য হয়েছে। দেশে বহুজাতিক একটা ব্যাংক মাত্র কয়েকটা শাখা নিয়ে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। সেখানে দেশের শীর্ষ চারটি ব্যাংক মিলে ৩ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। তা সত্ত্বেও বহুজাতিক ব্যাংকটি শেয়ারবাজারে নেই। তাহলে এখানে কি জনস্বার্থ নেই, মানুষ কি শুধু গ্রাহক হয়েই থাকবে? অন্যান্য দেশে তো তারা তালিকাভুক্ত রয়েছে।
অনুষ্ঠানের শেষের দিকে বহুজাতিক কোম্পানির তালিকাভুক্তি নিয়ে কথা বলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তিনি বলেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শুধু টাকার প্রয়োজনে নয়; বরং মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে পুঁজিবাজারে আসা উচিত। কর আরোপ বা অন্য কোনো প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় আমরা তাদের আনতে চাই না। আশা করব তারা তাদের দায়িত্বের জায়গা থেকে আসবে।’
দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন শেয়ারবাজারমুখী করতে হবে
অনুষ্ঠানে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে সুদহার বেশি হওয়ায় শেয়ারবাজার থেকে সবাই টাকা সরিয়ে ব্যাংকিং বা ট্রেজারি উপকরণে বিনিয়োগ করছে। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে যারা আইপিও বা বন্ডের জন্য আবেদন করছে, তাদের দশটির মধ্যে নয়টিরই আর্থিক প্রতিবেদনে বড় ধরনের অসংগতি রয়েছে। আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা যত দিন না আসবে, তত দিন পর্যন্ত বাজার ভালো হবে না।
এ প্রসঙ্গে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নকে কীভাবে ব্যাংক থেকে শেয়ারবাজারমুখী করা যায়, সেটি নিয়ে কাজ চলছে। এ বিষয়ে কাজ করতে চলতি বা পরবর্তী সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির একটা জয়েন্ট টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। একই সঙ্গে বন্ড-সংশ্লিষ্ট নীতিমালা ও ঋণাত্মক ঋণের (নেগেটিভ ইকুইটি) বিষয়েও সংস্কার করা হবে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, শেয়ারবাজারের ঋণাত্মক ঋণের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। এ ক্ষেত্রে ঋণাত্মক ঋণকে বন্ডে রূপান্তর করার একটা পরামর্শ এসেছে। সেটি যাচাই করে দেখা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র অন ষ ঠ ন ব এসইস
এছাড়াও পড়ুন:
পুঁজিবাজারে মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকা
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (৩ থেকে ৭ আগস্ট) সূচকের পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেনে শেষ হয়েছে। এ সময়ে ডিএসই ও সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন কমেছে। তবে উভয় পুঁজিবাজারে বিদায়ী সপ্তাহে বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ৮৪ কোটি ১ লাখ টাকা।
শনিবার (৯ আগস্ট) ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য মতে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স (৩৫.৩৫) পয়েন্ট বা ০.৬৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪০৮ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক (১৬.৬৫) পয়েন্ট বা ০.৭৯ শতাংশ কমে ২ হাজার ৯৭ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক (০.১৮) পয়েন্ট বা ০.০২ শতাংশ কমে ১ হাজার ১৭০ পয়েন্টে এবং ডিএসএমইএক্স সূচক (এসএমই ইনডেক্স) (৪১.২৫) পয়েন্ট বা ৪.২২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯৩৫ পয়েন্টে।
আরো পড়ুন:
পুঁজিবাজার আধুনিকায়নে কাজ করবে এডিবি ও বিএসইসি
লভ্যাংশ দেবে না আইসিবির ৮ মিউচ্যুয়াল ফান্ড
বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৫ হাজার ৭৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ১২ হাজার ২২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৮৫৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৬৪৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ১৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৫৪৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৮টির, দর কমেছে ২২৭টির ও দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির। তবে লেনদেন হয়নি ১৮টির।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই (৯.৩৬) পয়েন্ট বা ০.০৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১৯৩ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক (০.৩২) শতাংশ কমে ১৩ হাজার ৪৩৭ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক (০.০৯) শতাংশ কমে ৯ হাজার ৩১৭ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ০.৮৫ শতাংশ বেড়ে ৯৫৬ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স (এসএমই ইনডেক্স) ০.৩১ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২৭ হাজার ২৫১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ২৬ হাজার ২৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ২২৮ কোটি ২০ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ১১১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৮১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ২৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ৩১৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৬০টির, দর কমেছে ১৩৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টির শেয়ার ও ইউনিট দর।
ঢাকা/এনটি/ইভা