টানা ১২ দিনের বোমা বর্ষণের পর ইরানে কী অর্জন করেছে ইসরায়েল? প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়ার সময় যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। কিন্তু এমন দাবি নিঃসন্দেহে প্রশ্নবিদ্ধ, এটি অন্তত বলা যায়।

এই স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধের শুরুতেই নেতানিয়াহু দুটি লক্ষ্যের কথা ঘোষণা করেছিলেন, ‘পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করা’ এবং ‘শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানো’। তাহলে প্রশ্ন হলো, পারমাণবিক কর্মসূচি কি ধ্বংস হয়েছে? উত্তর সম্ভবত না। 

ধারণা করা হচ্ছে, ইরান ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা থেকে বিভাজনযোগ্য পদার্থ সরিয়ে ফেলেছিল। এই ফোরদোতে যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণ করেছে। ফোরদোর মজুতই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মূল উপাদান। ফলে ‘ধ্বংস’ করার লক্ষ্যটি ব্যর্থ হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হয়। 

আরো পড়ুন:

আলজাজিরার বিশ্লেষণ
যুদ্ধবিরতিকে বিশ্ব স্বাগত জানালেও যে কারণে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে

আলজাজিরার বিশ্লেষণ
২২ বছর আগের শোনা কথার প্রতিধ্বনি হচ্ছে ২০২৫ সালে ইরানেও

তাহলে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে আদৌ কোনো ক্ষতি করতে পেরেছে কি? এটাও অস্পষ্ট। নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করাতে পেরেছিলেন যেন তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর শক্তিশালী ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা ফেলে। কিন্তু এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলি অভিযানকে খুব একটা সহায়তা করেনি। ঠিক কতটা ধ্বংস হয়েছে তা নির্ধারণ করাও কঠিন, কারণ ইরান বাইরের পর্যবেক্ষণকারীদের প্রবেশাধিকার দেবে না বলেই ধরে নেওয়া যায়।

আর ইসরায়েল কি ইরানে ‘শাসন দর্শনের পরিবর্তন’ ঘটাতে পেরেছে? এর সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো, বরং উল্টোটা ঘটেছে। ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করে একটি গণ-অভ্যুত্থান উস্কেকে দিতে চেয়েছিল। 

এই কৌশলটি ইসরায়েলের একটি দৃঢ় বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়ানো। তাদের মতে, শত্রুপক্ষকে অস্থির করতে হলে তার শীর্ষ নেতাদের হত্যা করাই সবচেয়ে কার্যকর। কিন্তু ইতিহাস বলছে, এই কৌশল কখনোই সফল হয়নি। একমাত্র সম্ভাব্য ব্যতিক্রম ছিল হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যু এবং তার প্রভাব পড়ে হিজবুল্লাহর ওপর। তবে সেটির পেছনে ছিল লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাস্তবতা। বাকি সবক্ষেত্রেই ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ড কোনো বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

ইরানের ক্ষেত্রে তাদের শীর্ষ সামরিক ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ড জনগণকে সরকারের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করে তোলে। ইসলামি বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর (আইআরজিসি) শীর্ষ কমান্ডারদের হত্যা করে ইসরায়েল। যারা ছিলেন ইরানি রাজনীতিতে সম্ভবত সবচেয়ে ক্ষমতাধর, একই সঙ্গে জনগণের মধ্যে ঘৃণিত ছিলেন। তবু অনেক ইরানি, যারা নিজেদের ইসলামি প্রজাতন্ত্র এবং বিশেষ করে আইআরজিসির ঘোরতর বিরোধী বলে মনে করেন, তারাও শেষ পর্যন্ত এই বাহিনীর পক্ষেই দাঁড়ান। কারণ, ইরানিরা বুঝতে পারেন, এই হামলা শুধু ‘আদর্শগত শাসনের’ ওপর নয়, বরং গোটা ইরান রাষ্ট্রের ওপর।

ইসরায়েল তথাকথিত ‘শাসনের প্রতীকগুলো’ বোমাবর্ষণের মাধ্যমে ধ্বংস করতে চেয়েছিল এবং এতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। ইভিন কারাগার, ডুমসডে ক্লক, আইআরআইবিকে লক্ষ্য বানায় ইসরায়েল। ইভিন কারাগারে বিমান হামলা চালিয়ে ইসরায়েল বোঝাতে চেয়েছিল, তারা রাজনৈতিক বন্দিদের ওপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে ইরানি জনগণের সংগ্রামে সাহায্য করছে। বাস্তবে এসব হামলার ফলে বন্দিদের অবস্থা আরো সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। কারণ কর্তৃপক্ষ তাদের অনেককে অজানা স্থানে স্থানান্তর করে।

তেহরানে প্যালেস্টাইন স্কয়ারে রয়েছে ‘ইসরায়েল ডুমসডে ক্লক’ বা ‘ইসরায়েল ধ্বংসের ঘড়ি’। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ইরান ২০৪০ সালের পর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। ইসরায়েল তার জনগণকে বোঝায়, ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে অঙ্গীকারবদ্ধ ইরান। তাই ডুমসডে ক্লকেও হামলা চালিয়েছে নেতানিয়াহুর দেশ, যা হাস্যকর।

ইরানি রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা আইআরআইবির ওপর বোমাবর্ষণও ছিল অযৌক্তিক। ইসরায়েল দাবি করে, তারা সরকারের প্রচারযন্ত্রকে স্তব্ধ করতে চেয়েছে। কিন্তু বহু ইসরায়েলির মতে, এই হামলাই ইসরায়েলি টিভি চ্যানেলগুলো ধ্বংস করার যুক্তি তুলে দিয়েছে ইরানের হাতে। 

তাহলে ইসরায়েল যদি তাদের ঘোষিত লক্ষ্য অর্জন না-ই করে থাকে, তারা কি অন্তত বিশ্বকে নিজেদের পক্ষে একত্রিত করতে পেরেছে? গাজা প্রসঙ্গকে পেছনে ঠেলে দিয়ে আবার নিজেদের ‘ন্যায়ের যুদ্ধে লিপ্ত রাষ্ট্র’ হিসেবে উপস্থাপন করতে পেরেছে? উত্তর হলো, সম্ভবত না।

সত্য হলো, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক আইনের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নীতি লঙ্ঘন করেছে। যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে। তবে ট্রাম্প সরাসরি ইসরায়েলের পাশে থেকে যুদ্ধে অংশ নেননি। হামলার পরই যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত বোমারু বিমানগুলো ফিরে গেছে।

এই হামলার আগে এবং পরে ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে একটি চুক্তি চান; যেটিতে ইসরায়েলও থাকতে পারে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ইসরায়েলকে সহায়তা করেছেন মূলত নিজের স্বার্থ ও উপসাগরীয় মিত্রদের স্বার্থ রক্ষার জন্য।

বিশ্বের কিছু নেতা, বিশেষ করে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস যদিও দ্রুত মার্কিন হামলা এবং ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার’-এর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তবু কেউই ইসরায়েলের কঠোর শর্তাবলি গ্রহণ করেননি; যার মধ্যে ছিল ইরান একেবারেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না।

বিশ্ব সম্প্রদায় আবারও সেই পুরোনো অবস্থানে ফিরে গেছে, ‘পারমাণবিক অস্ত্র নয়’। এই বিষয়ের সঙ্গে ইরান আগেই একমত হয়েছিল।

মধ্যপ্রাচ্যে কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি এখন এমন যে, ইরানকে একটি বৈধ ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এটি ইসরায়েলের জন্য এক পরাজয়, আর ইরানের জন্য এক বিজয়।

ইসরায়েলের মূল ভূখণ্ডে যে বাস্তব ক্ষতি হয়েছে, সেটিও উপেক্ষা করা যাবে না। ইসরায়েল খুব দ্রুত ইরানের আকাশসীমায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় এবং ইচ্ছেমতো হামলা চালায়। কিন্তু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র বারবার ইসরায়েলের সুপরিচিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ ভেদ করে দেশজুড়ে আঘাত হানে, তাদের কেন্দ্রীয় অঞ্চলেও এবং তাতে পুরো দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এতে উল্লেখযোগ্য হতাহতের পাশাপাশি ব্যাপক ধ্বংস সাধিত হয়। 

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ব্যবহৃত ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং তাৎক্ষণিকভাবে পুনরায় মজুত করার কোনো উপায় ছিল না। ইসরায়েলের অর্থনীতি দ্রুত স্থবির হয়ে পড়ে। এটিও ইরানের আরেকটি সাফল্য।

যদিও ইরান ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় বেরিয়ে এসেছে, শত শত প্রাণহানি ঘটেছে এবং দেশজুড়ে স্থাপনাগুলোর ক্ষতি হয়েছে, তবু ইসলামি প্রজাতন্ত্র ভেঙে পড়েনি; এমন কি এক বিশাল ইসরায়েলি হামলার মুখেও নয়।

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র সঠিকভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে, ইরানের ভাবমূর্তি কলুষিত হয়নি (বরং বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ ইরানকে ইসরায়েলের আগ্রাসনের শিকার হিসেবে দেখেছে) এবং প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে ইরানের ওপর বড় কোনো সীমাবদ্ধতা চাপানো সম্ভব হয়নি। কাতারে অবস্থিত মার্কিন বিমানঘাঁটিতে ইরান হামলা চালায়। এর ‘প্রত্যাঘাত’ আসা ঠেকাতে আগেই ইরান তাদের হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় এবং এর মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনে সফল হয়।

ইরান এতটাই শক্তিশালী প্রমাণিত হয়েছে যে, ট্রাম্পকে ইসরায়েলকে সতর্ক করতে হয়েছে যেন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন না করে। ইরান শেষ পর্যন্ত ঠিক যেমন চায়, তেমনভাবেই এই যুদ্ধ থেকে বের হয়ে গেছে; নিজেকে টিকিয়ে রেখেছে এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে সামনে এগোচ্ছে।

[লেখক পরিচিতি: ওরি গোল্ডবার্গ মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রিধারী, ইরান নিয়ে তার মুন্সিয়ানা রয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন, পাশাপাশি ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক। বর্তমানে তিনি একজন স্বতন্ত্র বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার হিসেবে কাজ করছেন। ‘হাউ ইসরায়েল ফেইল্ড ইন ইসরায়েল’ অর্থাৎ ‘ইরানে যেভাবে ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েল’ শিরোনামে গোল্ডবার্গে লেখাটি ২৪ জুন প্রকাশ করেছে আলজাজিরা।]

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র ধ ব স কর র জন ত ক দ র হত য লক ষ য র ওপর ব যবস অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিলটন হোটেল, সেরা তালিকায় আছে মেটলাইফ

আধুনিক মানুষের দিনের বড় একটা সময় যায় কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।

সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের অর্থবহতা আছে—মানুষ সাধারণত এমন কর্মস্থলই চায়। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। সেই তালিকায় সবার ওপরে আছে হিলটন হোটেল। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই জরিপ ও তালিকা করা হয়েছে।

এবারের তালিকায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো বিভিন্ন দেশের, মূলত ইউরোপের। কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে—২৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮টি এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোও তালিকায় আছে।

সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীবনবিমা কোম্পানি মেটলাইফ। ২০২৫ সালে দশম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ধরে রাখল কোম্পানিটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে।

৯০ লাখের বেশি উত্তরের ওপর ভিত্তি করে ফরচুনের সেরা ২৫টি কর্মক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে মেটলাইফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিশেল খালাফ বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় স্থান পাওয়া কর্মীদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রমাণ।’

কারা আছে তালিকায়

দেখে নেওয়া যাক এবারের তালিকায় কোন কোন দেশের কোম্পানি আছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কুরিয়ার ও যাতায়াত খাতের কোম্পানি ডিএইচএল। তৃতীয় স্থানে আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সিসকো। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। চতুর্থ স্থানে আছে পেশাদার সেবা দেওয়া আইরিশ কোম্পানি অ্যাক্সেনচিউর, পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিশ্বখ্যাত হোটেল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল। ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি অ্যাব ভিয়ে, সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানি টিপি। অষ্টম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি স্ট্রাইকার, নবম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সেলস ফোর্স।

দশম স্থানে আছে মার্কিন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, ১১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সার্ভিস নাউ। ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি স্পেকসেভার্স। ১৩তম স্থানে আছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি সিমেন্স হেলদিনেস; ১৪তম স্থানে আছে আইরিশ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এক্সপেরিয়েন। ১৫তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ১৬তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কেডেন্স। ১৭তম স্থানে আছে জার্মানির বিমা ও আর্থিক কোম্পানি আলিয়াঞ্জ এবং ১৮তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কোম্পানি ডাও।

১৯ থেকে ২১তম স্থানে আছে তিনটি মার্কিন কোম্পানি। ১৯তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি ভিয়াট্রিস, ২০তম স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডোবি, ২১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক।

২২ ও ২৩তম স্থানেও আছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি—উৎপাদন খাতের এসসি জনসন ও খুচরা বিক্রয় খাতের ট্রেক বাইসাইকেল। ২৪তম স্থানে আছে লিচেনস্টাইনের নির্মাণ কোম্পানি হিলতি ও ২৫তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের বিমা ও আর্থিক খাতের কোম্পানি অ্যাডমিরাল গ্রুপ।

কীভাবে এই মূল্যায়ন

৩০ বছর ধরে এই জরিপ পরিচালনা করছে ফরচুন ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছ থেকে তারা জানতে চায়, কর্মস্থলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কিছু মানদণ্ড তৈরি করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে বোঝা যায়, কোনো কর্মস্থল প্রকৃত অর্থেই ‘দারুণ’ কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা সে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান কি না, প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও তার সামগ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য কতটা মিলবে—এসব বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায় জরিপে।

ফরচুন ম্যাগাজিন নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ও কোম্পানির প্রতি কর্মীদের আনুগত্য কতটা—এসব আস্থাসূচকের মাধ্যমে এসব বিষয় পরিমাপ করা হয়।

এ জরিপে কর্মীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। ৬০টি বিষয়ের ওপর ৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে উত্তর দিতে হয়, সঙ্গে থাকে ২টি উন্মুক্ত প্রশ্ন।

কর্মীদের কাছ থেকে যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়, সেগুলো হলো নেতৃত্বের কাছে কি সহজে যাওয়া যায়, নেতৃত্ব সততা ও স্বচ্চতার সঙ্গে কথা বলেন ও কাজ করেন কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কতটা। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানান কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না। এ ছাড়া কর্মীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে কি না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়।

জরিপে কর্মীদের কাছে আরও যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো:

বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়সংগত;

কর্মীরা নিজেদের কাজ, কর্মদল ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ব বোধ করেন;

কাজ অর্থবহ এবং তা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে;

সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে;

কর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিন্নতা কতটা, তা–ও জরিপে পরিমাপ করা হয়। কর্মীদের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানও মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে প্রতিটি ধাপে কঠোর মানদণ্ড মেনে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছে ফরচুন ম্যাগাজিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ