ছোটপর্দায় শুদ্ধ অভিনয়ের জন্য তাসনিয়া ফারিণ অনেক আগেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। কখনও গল্পের আবেগঘন কেন্দ্রবিন্দু, কখনও বা কাঁধে চেপে থাকা সম্পর্কের ভার–সবই তিনি বহন করেছেন সুনিপুণ দক্ষতায়। সিনেমার পর্দা তো ভিন্ন মেজাজের। আবার যদি হয় বাণিজ্যিক সিনেমা? সেটি যেন এক অন্য মহাকাব্য; যেখানে আবেগের পাশাপাশি লাগে অ্যাকশন, গ্ল্যামার আর সঠিক ‘স্ক্রিন প্রেজেন্স’। ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইনসাফ’ যেন সেই পরীক্ষাতেই ফারিণের সাহসী অংশগ্রহণ। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন অনিন্দ্য মামুন।
মুনীর চৌধুরীর বিখ্যাত উক্তি ‘মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে-অকারণে বদলায়’। মানুষের এই বদলে যাওয়াটা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় হয়। কখনও তা নান্দনিক, কখনও তা জরাজীর্ণ। তবে মানুষ সময়ের সঙ্গে বদলে যেতে থাকে। সেটি নানাভাবে নানামাত্রায়। এই বদলে যাওয়া কখনও প্রশংসিত, কখনও বা তিরস্কৃত।
নাটক ও ওটিটি কনটেন্টের অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণও বদলে গেলেন। তাঁর এই বদলে যাওয়া প্রশংসিত হলেও ঢের অবাক হয়েছেন দর্শকরা। যে ফারিণকে এতকাল যারা দেখেছেন কলেজ-ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া প্রেমিকার চরিত্রে, পাশের বাসার মিষ্টি মেয়ের চরিত্রে কিংবা ঝগড়াটে প্রেমিকা হিসেবে। সেই ফারিণ সিনেমায় এসে হয়ে উঠলেন অ্যাকশন গার্ল! শাড়ি পরে ভারতের দক্ষিণী নায়িকাদের মতো তুমুল মারপিট করলেন। পুলিশের পোশাকে তাঁর ক্যারিশমা দেখলেন সবাই। শুধুই কী তাই, ফারিণ আইটেম গানেও নাচলেন। নাচালেন দর্শকদেরও। কীভাবে ফারিণ এতটা বদলালেন? প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ, কয়েক বছর আগেও নাটকের অভিনেত্রীরা সিনেমায় এসে এমন চরিত্র করবেন তা যেন কল্পনারও বাইরে ছিল। যারাও এসেছেন তারাও আর্টফিল্ম টাইপের সিনেমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছেন। নাচগান আর অ্যাকশনে ভরপুর সিনেমায় তাদের ভাবাও যায়নি। অথচ ফারিণ সেটি করে দেখালেন। কোমল ফারিণ হয়ে উঠলেন মারকাটারি জাহান খান। জাহান থেকে ফারিণ ইনসাফ ফারিণের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক সিনেমা। নাটক-ওটিটি কিংবা ভিন্ন ধারার গল্পের সিনেমার পর ‘ইনসাফ’-এ ফারিণ নিজেকে যে রূপে উপস্থাপন করেছেন, তা সাহসী, শারীরিক ও মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং–একজন ‘অ্যাকশন হিরোইন’। এই রূপান্তরের পেছনে লুকিয়ে আছে তাঁর পরিশ্রম, প্রস্তুতি এবং আত্মনিবেদন। ফারিণের মতে, পুরো প্রজেক্টে তাঁর আত্মবিশ্বাস এসেছিল মূলত স্ক্রিপ্ট পড়ে, নির্মাতা ও সহ-অভিনেতাদের প্রতি বিশ্বাস থেকে। জাহান চরিত্রটি শুধু মানসিক গভীরতা নয়, চাইছিল শারীরিক প্রস্তুতিও। এখানেই ফারিণের রূপান্তর সবচেয়ে দৃশ্যমান। ট্রেনিং, স্টান্ট রিহার্সাল, দিনের পর দিন কঠিন শুটিং–সব কিছু মিলিয়ে ফারিণ যেন নিজেকেই নতুন করে চিনেছেন। যারা ছবিটি দেখেছেন, তারা জানেন–এই অভিনেত্রী শুধু সংলাপে নয়, শরীরী অভিব্যক্তি, লড়াইয়ের দৃশ্য–এমনকি গানেও দারুণ স্বাচ্ছন্দ্য দেখিয়েছেন। বিশেষ করে ‘আকাশেতে লক্ষ তারা’ গানে তাঁর পারফরম্যান্স, যা এখন সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত। ফারিণ বলেন, ‘চরিত্রটা যখন পড়ি, মনে হচ্ছিল, ভিন্ন কিছু হবে। আমি এতদিন যে চরিত্রগুলো করে এসেছি, সিনেমায় যেন এমন চরিত্র না হয় সেটিরই অপেক্ষায় ছিলাম। পরিচালক সঞ্জয় সমাদ্দার দাদা গল্প বলার পর যেন সে চরিত্রই খুঁজে পেলাম। বুঝেছিলাম চরিত্রটি পর্দায় ফুটিয়ে তোলা চ্যালেঞ্জের, পরিশ্রমের। আমি সে চ্যালেঞ্জটা নিতে চেয়েছি। নিয়েছিও। জাহান খান হয়ে উঠতে আমাকে দফায় দফায় টিমের সঙ্গে বসতে হয়েছে। ফাইট শিখতে হয়েছে, নাচও শিখতে হয়েছে মাসখানেক। এই পুরো প্রক্রিয়াটি অনেক পরিশ্রমের ছিল। পরিচালকের মনে হয়েছে আমি জাহান খান হয়ে উঠতে প্রস্তুত। এরপরই ক্যামেরা ওপেন করা হয়েছে।’
প্রস্তুতি নিয়ে শুটিংয়ে যাওয়ার পরও বারবার হোঁচট খেতে হয়েছে ফারিণকে। পেতে হয়েছে আঘাতের পর আঘাত। সেই অভিজ্ঞতার গল্প শুনুন ফারিণের মুখেই, ‘শুটিংয়ে আমি যখন অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করতে যাই, তখন ফিজিক্যাল ও মেন্টাল ট্রেনিং নিয়েছি। ফাইট ডিরেক্টরদের কাছ থেকে ধারণা নিয়ে এরপর প্রতিটি শট দিয়েছি। ক্যামেরার সামনে অ্যাকশন পারফর্ম করা একেবারেই আলাদা অভিজ্ঞতা। সত্যি বলতে, এই দৃশ্যগুলো করতে গিয়ে আমি একাধিকবার আঘাত পেয়েছি। আমি সিনেমায় কাজ করে একটি বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম।’
পরিচালক যেভাবে ফারিণকে দেখলেন
জাহান চরিত্রটির জন্য নাটকের অনেক অভিনেত্রীই মাথায় ছিল পরিচালক সঞ্জয় সমাদ্দারের। এরমধ্যে ফারিণ অন্যতম। তবে ফারিণ চরিত্রটি হয়ে উঠতে পারবেন, কী পারবেন না এ বিষয়ে সংশয় ছিল ইনসাফ টিমের অনেকের। পরিচালকের থেকে গল্প শোনার পরেই অভিনেত্রী বিনাবাক্যে বলে দিয়েছিলেন তিনি চরিত্রটি করবেন। সে সময় ফারিণের কণ্ঠে ছিল দৃঢ়তা; যেটি পরিচালককে আত্মবিশ্বাসী করেছিল বহুগুণ। সঞ্জয় সমাদ্দারের ভাষ্যে, ‘ফারিণ চরিত্রটি পারবে সেটিতে বিশ্বাস ছিল। এতটা ভালো করবে সেটি ভাবিনি। ইনসাফের শুটিং শুরুর আগে ফারিণ প্রায় মাসখানেক সময় নিয়ে নিজেকে তৈরি করেছে। নিয়মিত মারাপিটের রিহার্সাল, নাচের প্র্যাক্টিস সব নিজ উদ্যোগেই করেছে সে। এমনকি অ্যাকশন দৃশ্যে বারবার চোটও পেয়েছে। তবুও সে দমে যায়নি। ফারিণ তার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমার মনে হয়ে পেরেছেও। ফলাফল সিনেমা মুক্তির পর যখন আমরা সিনেমা হল ভিজিটে গিয়েছি সবাই একবাক্যে ফারিণের প্রশংসা করেছেন। সবাই বলেছেন, এতদিন বাংলা সিনেমায় নায়িকাদের যেভাবে দেখেছেন ফারিণ একেবারে ভিন্নভাবে হাজির হয়েছেন। বিশেষ করে নারী দর্শকরা দারুণভাবে গ্রহণ করেছেন ফারিণকে।’
ফারিণ কি নিয়মিত থাকবেন
নাটকের অভিনেত্রীরা সিনেমায় এলেও এখানে খুব কমসংখ্যকই নিয়মিত হন। হুট করে দেখা যায় ফের নাটক আর ওটিটিতেই নিয়মিত হয়ে পড়ছেন। ফারিণের বেলাতেও কি এমনটি ঘটবে? নাকি বাণিজ্যিক সিনেমার নায়িকা হিসেবে জয়া আহসান ও মিমদের উত্তরসূরি হবেন তিনি। উত্তর ফারিণ নিজেই দিয়েছেন। যদিও সে উত্তরে খোলাসা করে বলেননি কিছুই। অভিনেত্রীর ভাষ্য, ‘‘একটা সময় আমি নাটকে নিয়মিত কাজ করতাম। সেখান থেকে কিছুটা বিরতি নিয়ে ওটিটিতে গিয়েছি। তখন অনেকে বলেছেন, নাটকেই তো ভালো ছিলাম। ওটিটিতে যাওয়ার কী দরকার ছিল। ওটিটিতে সাফল্য পাওয়ার পর আবার সিনেমায় পথচলা শুরু করলাম। তখনও অনেকেই একই কথা বলেছেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, একটি জায়গায় আমি খুব বেশি দিন ভালো থাকি না। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে খুব ভালো লাগে। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই ‘ইনসাফ’ সিনেমাটি করেছি। বাণিজ্যিক সিনেমায় যেহেতু কাজ শুরু করেছি, থামার জন্য করিনি। অবশ্যই আমাকে নিয়মিত থাকতে হবে। তবে ব্যতিক্রমী চরিত্র তো লাগবে।’’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত সন য় ফ র ণ ন চর ত র প রস ত ত অ য কশন কর ছ ন ইনস ফ
এছাড়াও পড়ুন:
খাওয়ার পরপরই পানি খেলে কি ওজন বাড়ে?
অনেকেই খাওয়ার পর পর পানি খেতে চান না ওজন বাড়ার ভয়ে। যারা ওজন কমাতে চান তারা এই অভ্যাসটি উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। কিন্তু খাওয়ার পরপরই পানি পান করলে আসলেই কি স্থূলতা বৃদ্ধি পায় নাকি এটিও কেবল একটি মিথ? আয়ুর্বেদ এবং আধুনিক বিজ্ঞানে এ নিয়ে আছে আলাদা ব্যাখ্যা।
ভারতীয় গণমাধ্যম ‘হিন্দুস্তান টাইমসে’র এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাওয়ার পরপরই পানি পান করলে ওজন বাড়ে না। বৈজ্ঞানিকভাবে দেখলে, পানির নিজস্ব কোনও ক্যালোরি থাকে না, যার ফলে এটি সরাসরি ওজন বৃদ্ধি করে না। তবে, খাওয়ার পরপরই যদি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা হয় তাহলে এটি হজম রসকে পাতলা করে দেয়, যার কারণে খাবার সঠিকভাবে হজম হয় না। এর ফলে, কখনও কখনও পেটে ভারী ভাব এবং ফোলাভাব দেখা দেয়, যা ওজন বাড়ার সাথে যুক্ত। আয়ুর্বেদ চিকিৎসা অনুযায়ী,খাওয়ার পরপরই পানি পান করা এড়িয়ে চলা উচিত। এক বা দুই চুমুকের বেশি পানি পান করলে পেটের স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে খাবার ঠিকমতো হজম হয় না। পাশাপাশি শরীরে বিষাক্ত পদার্থও তৈরি হতে শুরু করে। এ কারণে আয়ুর্বেদে খাওয়ার পরপরই এক বা দুই চুমুকের বেশি পানি পান না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বরং খাওয়ার পর পর হালকা গরম পানি বা জিরা পানি পান করা ভালো, কারণ এগুলো হজমে সাহায্য করে।
সব মিলিয়ে খাওয়ার পরপরই পানি পান করলে সরাসরি ওজন বাড়ে না বরং আরও অনেক সমস্যা হতে পারে। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা খাওয়ার অন্তত আধা ঘন্টা পর সঠিক পরিমাণে পানি পান করার পরাশর্শ দেন। ওজন নিয়ন্ত্রণের কথা বলতে গেলে, বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে খাওয়ার প্রায় আধা ঘন্টা আগে এক গ্লাস পানি পান করা উচিত। এটি আপনাকে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত রাখে। সেই সঙ্গে আপনার হজমশক্তিও উন্নত করে।