সাবেক তিন সিইসির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ, হাবিবুল আউয়ালের ১০ দিন রিমান্ড চায় পুলিশ
Published: 26th, June 2025 GMT
দিনের ভোট রাতে করাসহ প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের ধারা যুক্ত করা হয়েছে।
মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের ধারা যুক্ত করার বিষয়ে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ আবেদন করলে গতকাল বুধবার তা মঞ্জুর করেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানা যায়।
প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে সাবেক তিন সিইসিসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে গত রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান। মামলায় ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি কে এম নূরুল হুদা ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে আসামি করা হয়।
মামলায় গত রোববার নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন সোমবার তাঁর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। অন্যদিকে কাজী হাবিবুল আউয়ালকে গতকাল সকালে রাজধানীর মগবাজার থেকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
মামলায় হাবিবুল আউয়ালকে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করেছে পুলিশ। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আজ সকালে এই আবেদন করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ ব ব ল আউয় ল
এছাড়াও পড়ুন:
এবার ৩ দিনের রিমান্ডে সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার পর এবার রাষ্ট্রদ্রোহ, অন্যায় প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন দেওয়ার মামলায় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান শুনানি শেষে এ রিমান্ডের আদেশ দেন।
এদিন বেলা ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়। এ সময় তাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। পরে বেলা ১টা ২৫ মিনিটে তাকে আদালতে তোলা হয়।
আরো পড়ুন:
শাবিপ্রবি ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ৪ দিনের রিমান্ডে ২ যুবক
বগুড়ার যুবলীগ নেতা মতিন ৬ দিনের রিমান্ডে
মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার এ আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।
শুনানিতে তিনি বলেন, “এই আসামি ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার আমলে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি এ দেশে কলঙ্কজনক নির্বাচন হয়। সেই ডামি নির্বাচনে আ.লীগ ও ২-১ টি দল ছাড়া আর কেউ অংশ নেয়নি। সেই নির্বাচন ছিল ডামি নির্বাচন, একতরফা, লোক দেখানো ও প্রহসনের নির্বাচন।”
তিনি বলেন, “তিনি (আউয়াল) সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিতে পারেননি। তখন তিনি বলেছিলেন, কেউ নির্বাচনে না আসলে আমি কি বসে থাকবো? তিনি ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে চলে যান। অন্যায় করেছেন বলেই তিনি গা ঢাকা দেন।”
শুনানিতে তিনি আরো বলেন, “৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি গণমাধ্যমে বলেছেন, সারাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে। এত বড় মিথ্যা বলে তিনি কিভাবে তার পরিবারের সামনে মুখ দেখান। ওইদিন সকাল ৮টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত ২৭.১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান। তার ১ ঘণ্টা পর ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান। অথচ আমরা দেখেছি কেন্দ্রগুলোতে কোনো মানুষ ছিল না, কুকুর-বিড়াল কেন্দ্রে শুয়ে ছিল। ওই ১ ঘন্টা তিনি কোথায় ছিলেন জানতে চাইলে গণমাধ্যমকে বলেন, ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। কতটা হাস্যকর কথাবার্তা।”
শুনানিতে সরকারি এই আইনজীবী বলেন, “আসামির বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে আঁতাত করার অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনের থোক বরাদ্দ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। সংবিধান বহির্ভূত বক্তব্য দিয়ে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহ করেছেন। আমরা তার সর্বোচ্চ রিমান্ড প্রার্থনা করছি।”
আসামি পক্ষের আইনজীবী এমিল হাসান রুমেল তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে বলেন, “তার বয়স ৭০। তিনি অনেক দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন। আমরা যেন ফ্যাসিস্ট দমাতে গিয়ে নিজেরা ফ্যাসিস্ট না হয়ে যাই।”
এরপর আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, “প্রসিকিউশনের বক্তব্যের সঙ্গে আমিও একমত। নির্বাচনটি ডামি ও প্রহসনের নির্বাচন ছিল।”
এ সময় তাকে থামিয়ে বিচারক বলেন, “প্রত্যেক জেলায় নির্বাচনী ইনকোয়ারি কমিটি করা হয়। যেখানে একজন যুগ্ম-জেলা জজ পদমর্যাদার একজন দায়িত্বে থাকেন। আগে যার ভাতা ছিল ২২ হাজার টাকা, সেটা আপনি ৫ লাখে উন্নীত করেছেন। এতে কি জনগণের টাকা অপচয় হয়নি?”
এ বিষয়ে তার জানা নেই উল্লেখ করে আউয়াল জানান, ৫ বছরের মুদ্রাস্ফীতি হিসেব করে হয়তো ভাতা বাড়ানো হয়েছিল।
এরপর বিচারক আবারো বলেন, “এই যে ইনকোয়ারি কমিটি করা হয়েছিল নির্বাচনের সময়, কোথাও কি তারা সরেজমিনে গিয়েছিলেন?”
তখন আওয়াল বলেন, “একজন রিটার্নিং অফিসারের অধীনে ৪-৫টা সংসদীয় আসনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাকে সহযোগিতা করতে আরও ৪-৫ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার থাকেন। একটা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার জন্য ২ ভাগ দায়িত্ব কমিশনের, বাকি ৯৮ ভাগ দায়িত্ব মাঠ পর্যায়ে কাজ করা অফিসারদের।”
বিচারক জিজ্ঞেস করেন, “নির্বাচনের আগে এমন অবস্থা জেনে আপনি পদত্যাগ করলেন না কেন?”
এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ওই অবস্থায় পদত্যাগ করা সম্ভব ছিল না। আমার এক বন্ধুও আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল পদত্যাগের কথা। আমি বলেছি তুমি যদি আগে বলতে এমন ভয়ংকর নির্বাচন হবে, তাহলে আমি দায়িত্বই নিতাম না।”
আউয়াল পূর্বের নির্বাচনের কথা তুলে ধরে বলেন, “৭২ এর সংবিধান প্রণয়নের তিন মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত ৭৩ এর নির্বাচনে আ.লীগ ২৯৩টি আসন পায়। সেই নির্বাচনও সুষ্ঠু ছিল না। ক্ষমতার লোভ এমন যে, শেখ মুজিবও তা সামলাতে পারেননি। ৯৬ সালে আ.লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করে। পরবর্তীতে তারাই আবার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সংবিধান সংশোধন করে।”
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী উত্তেজিত হয়ে আদালতকে বলেন, “তিনি (আউয়াল) নিজেকে জাস্টিফাই করছেন। তার এসব বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই।”
জবাবে আউয়াল বলেন, “জাস্টিফাই না করতে দিলে রিভলবার দিয়ে গুলি করে মেরে ফেলেন।”
এ সময় উপস্থিত আইনজীবীরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে এজলাসে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়।
নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্ব তুলে ধরে আউয়াল আরো বলেন, “মৌলিক সংস্কার ছাড়া আগামী ১ হাজার বছরেও এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।”
আধ ঘণ্টার দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
এর আগে, বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর মগবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলায় গত ২৩ জুন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
আওয়ামী লীগ আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আসামি করে মামলা করে বিএনপি। মামলায় মোট ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গত রোববার (২২ জুন) বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহউদ্দিন খান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এছাড়া সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজির আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামি করা হয়।
ঢাকা/এম/মেহেদী