বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর অবদান অসামান্য। তাঁর লেখা নাটকগুলো বাংলা নাটকে অন্য ধরনের পরীক্ষালব্ধ নাটক হিসেবে উদাহরণ হয়ে আছে। বাস্তব-অবাস্তব চরিত্রায়ন ও সংলাপের মিশ্রণের কারণে তাঁর নাটকগুলো অনেকটাই স্বকীয় একটা ঘরানার মধ্যে পড়ে। ‘সুড়ঙ্গ’ নাটকে মূলত কিছুটা অ্যাবসার্ড আবহের আভাস থাকলেও এটিকে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে শিশুকিশোর সাহিত্যের জন্য লিখিত হাস্যরসাত্মক ঘরানায়। কিন্তু রূপক ও অসামঞ্জস্য বিষয়াবলি থেকে সরে গিয়ে অনেকটা সহজ কাহিনির আনন্দদায়ক ও মজার মুহূর্ত তৈরির প্রচেষ্টা নাটকের বেশির ভাগ অংশে থাকলেও কাহিনির কিছু জায়গাতে স্বভাবসুলভভাবে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর লেখনীর স্বকীয়তা ও শৈলীর প্রভাব লক্ষ্যণীয় হয়। সে ক্ষেত্রে নাটকটি উপরিউপর হাস্যরসাত্মক হলেও অন্তরালে কিঞ্চিত নিগূঢ় ভাবগাম্ভীর্যের ইঙ্গিত প্রদান করে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর এই নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন তরুণ নির্দেশক মিন্টু সরদার।
এথিকের এ প্রযোজনা বেশ আকর্ষণীয় হয়েছে। বাংলা ভাষার মৌলিক নাটকে বিশেষ করে আধুনিক যুগে এসে নির্মল হাস্যরসের যথেষ্ট সংকট আছে বলা চলে। সে ক্ষেত্রে মঞ্চে এ ধরনের নাটক পরিবেশন করা বেশ ভালো উদ্যোগ বাংলা নাটকের স্বার্থে।
নাটকটির সবচেয়ে আকর্ষণের বিষয় ঘটনা প্রবাহ। একের পর এক দৃশ্যের গাঁথুনি নাটকের প্রবহমানতায় বেগবান ভাব ও মনোসংযোগ ধরে রাখার কাজটা করেছে। এ নাটকের ঘটনাপ্রবাহ আকর্ষণের বিশেষ হওয়ার আরেকটা কারণ, একক স্থানের নাটক হওয়া সত্ত্বেও দৃশ্য পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নাটক ক্লান্তিকর না হয়ে যাওয়া এবং নাটকের কাহিনির আগে পরে কী হয়েছে বা হবে এর চেয়েও চলমান ঘটনাতে সব থেকে বেশি গুরুত্ব থাকাতে। এ ক্ষেত্রে এ নাটকের পরিকল্পনা বেশ প্রশংসার দাবি রাখে; মঞ্চসজ্জা ও অভিনেতাদের ব্লকিং এই দুই দিক এক সঙ্গে দারুণ একটা ভূমিকা রেখেছে। মঞ্চের সুষ্ঠু ব্যবহারের ফলে একই স্থানকে আধিক্য কিংবা একঘেয়েমির কারণ লাগেনি; বরং মঞ্চের কিছু কিছু স্থান উপরিউপর স্বল্প সময় বা স্বল্প গুরুত্বের মতো উপস্থাপিত হলেও সেগুলোর বিশেষ গুরুত্ব ছিল, যেমন প্রথমেই ঘরের সিঁদ কাটার জায়গা, এরপর ঘরের ভেতর থেকে সুড়ঙ্গে প্রবেশের স্থান, ঘর থেকে বের হওয়ার দরজা, ঘরের দেয়ালে ফটোফ্রেম, নাটকের শেষের দিকে গিয়ে তো বিছানার অবস্থানও অনেকটা বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পেরেছে।
এই নাটকের ভালো লাগার অন্যতম বিষয় অভিনয়। বিশেষ করে সিঁদ কাটা যুবকের অভিনয় অসাধারণ ছিল। সুকর্ণ হাসান তাঁর অভিনয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা এনে বেশ ভালোভাবে নিজেকে প্রকাশ করেছে। বেশভূষা বাদ দিলেও তাঁর উপস্থিতি, ভাবভঙ্গিতেই চরিত্র হিসেবে তাঁকে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম। অনেক সূক্ষ্মতম জায়গা অভিনয়ের পারদর্শিতার মাধ্যমে মনে দাগ কাটার মতো একটা চরিত্র উপস্থাপন করতে সুকর্ণ হাসান সক্ষম হয়েছেন। পাশাপাশি নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র রাবেয়া চরিত্রে অপ্সরা বেশ সাবলীল ছিল। সেই সঙ্গে মেয়ের বাবা হিসেবে প্রদীপ কুমার ও কলিম চরিত্রে মনি কাঞ্চন বেশ দক্ষতার সঙ্গেই নাটকটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং ডাক্তার হিসেবে আজিম উদ্দিন নাটকের শেষ অংশ দারুণ উপভোগ্য করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। কমেডি অব কেওস এর কারণে অন্যান্য অভিনেতাদের আকার ইঙ্গিত ও অঙ্গভঙ্গিময় অভিনয় নাটকের সঙ্গে মানানসই ছিল ও বেশির ভাগ জায়গার হাস্যরসের উদ্রেক তৈরি করতে সক্ষম হয়। নাটকের পোশাক ও অঙ্গসজ্জা অনেকটা থিয়েটারে ব্যবহৃত গতানুগতিক ধারার, তবে গল্প ও পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই ও সহায়ক ছিল। নাটকে হাস্যরস কয়েক ধরনের ছিল–সিচ্যুয়েশনাল কমেডি, কমেডি অব কেওস, ডার্ক কমেডি আর উপস্থাপনের কারণে স্ল্যাপস্টিক। এগুলোর মধ্যে স্ল্যাপস্টিক কমেডিই এই নাটকে বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পেরেছে। যাতে উচ্চকিত মুহূর্তে হাসির উদ্রেকও উচ্চমাত্রায় তৈরি হয়।
এই নাটকে আলো ও সংগীত তেমনভাবে আলাদা কোনো মাত্রা যোগ করতে পারেনি। নাটকের শুরুর দিকে রহস্যের আবহ তৈরি করতে আলোক পরিকল্পনা দিয়ে দারুণ ভূমিকা রাখা যেত বলে আমার মনে হয়েছে; বরং সাধারণ আবেগের দৃশ্যে আলোর বিশেষ ব্যবহারের প্রবণতা কিছু কিছু দৃশ্যের মানকে ক্ষুণ্ন করেছে। নাটকের ঘরানা ও পরিবেশনা অনুযায়ী সংগীতের কাজ ছিল দৃশ্যের ভাব ও আবেগ অনুযায়ী কাজ করা। কিন্তু এই নাটকে সংগীত অনেকটা লক্ষ্যহীনভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। সাধারণ বিবেচনায় রাখলে আলো ও সংগীত ব্যতীত এই নাটকের অন্যান্য দিকগুলো বেশ ভালোভাবেই নাটকের পরিবেশনায় ভালো ও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পেরেছে বলে আমার মনে হয়েছে। নাটকে হাস্যরসের বাইরে যে ভাবগাম্ভীর্যের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ছিল, সেটাকে যদি নির্দেশক কিছুটা হলেও গুরুত্ব দিতেন তবে নাটকটাতে ম্যাজিক রিয়েলিজম তৈরি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকত। নাটকে আরও অভিনয় করেছেন রেজিনা রুনি, নাহিদ মুন্না, উর্মি আহমেদ, দিপান্বীতা রায়, রুবেল খান, মিথিলা, রুসানা, মবিয়া, দিপেন, নয়ন, লাবিব, সৃজন প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন টক র প হ স যরস চর ত র ই ন টক উপস থ ব যবহ ন টকট
এছাড়াও পড়ুন:
পর্যটকে পরিপূর্ণ কুয়াকাটা
দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটির তৃতীয় দিন শুক্রবার (৩ অক্টোবর) পর্যটকে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে পটুয়াখালীর পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা। ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতের তিন নদীর মোহনা, লেম্বুর বন, শুটকি পল্লী, ঝাউবাগান, গঙ্গামতি, চর গঙ্গামতি ও লাল কাঁকড়ার চড়ে এখন পর্যটকদের সরব উপস্থিতি। তাদের নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, আগত পর্যটকরা সৈকতের বালিয়াড়িতে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন। তাদের অনেকে সমুদ্রের ঢেউয়ে গা ভিজিয়ে এবং ওয়াটর বাইকে চড়ে আনন্দ করছেন। অনেকে আবার সৈকতের বেঞ্চিতে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। পর্যটকদের কেউ কেউ মোটরসাইকেল কিংবা ঘোড়ায় চরে বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে দেখছিলেন। সব মিলিয়ে সৈকতের উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
আরো পড়ুন:
চার দিনের ছুটিতে কক্সবাজার রুটে চলবে ‘ট্যুরিস্ট স্পেশাল’ ট্রেন
১ অক্টোবর থেকেই কেওক্রাডং যেতে পারবেন পর্যটকরা, মানতে হবে ৬ নির্দেশনা
পাবনা থেকে আসা হোসেন শহীদ ও সোনিয়া দম্পতি জানান, পূজা ও সরকারি ছুটি থাকায় তারা কুয়াকাটায় এসেছেন। সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করেছেন তারা। এই দম্পতির অভিযোগ, হোটেল ভাড়া কিছুটা বেশি রাখা হয়েছে।
বরিশালের কাউনিয়া থেকে আসা সম্রাট বলেন, “কয়েকটি পর্যটন স্পট ঘুরে দেখেছি। বৃহস্পিতবার বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে লাল কাকড়ার চড়, গঙ্গামতি ও লেম্বুর বন ঘুরেছি। দারুন এক অনুভূতি হয়েছে।”
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, “পর্যটকদের নিরপত্তা নিশ্চিতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্য মোতায়েন রয়েছে।”
ঢাকা/ইমরান/মাসুদ