মিডিয়া
যেমন আয়নায় তাকালে অক্ষরগুলো
উল্টা দেখা যায়—
এ-ও এমন সমকালের আয়না
যার দিকে তাকালে সবকিছু ধাঁধা মনে হয়।
মনে হয়, তুমি হেঁটে যাচ্ছ সমুদ্রের ঢেউয়ের
ওপর দিয়ে আর আমি মাছ হয়ে
শুয়ে আছি তোমার পরিত্যক্ত বিছানায়।
ভীষণ শ্বাসকষ্টে ছটফট করছি।
কারণ, আমাদের জানালায় ছিল না কোনো
সত্যিকারের হাওয়া। বাগানে চিরসবুজ পাতা
ছিল আসলে প্লাস্টিকের গাছে। গান গাওয়া
পাখিটাও ব্যাটারিচালিত।
আমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিরীহ লোকগুলোর
ঠাঁই মিলেছিল জেলখানার গরাদে
আর হিংস্র লোভী যারা, তারা ঘুরে বেড়াচ্ছিল
সিংহাসন কাঁধে করে অবাধে।
মুরগি ঘরে গেছে, মোরগ বসে আছেমুরগি ঘরে গেছে, মোরগ বসে আছে—
রাত্রি থমথম, ঘুরে বেড়ায় এ সময় কেবল
পাগল ও সাহসী। সমুদ্রের রুপালি মাছ
ঈগলের প্রতিবেশী। ঝড়ের পিঠে সওয়ার হয়ে
সমুদ্র যায় আকাশের ঠিকানায়। এদিকে মোরগ
বসে আছে ঠায়। যদি বিক্রি হয়
আরও দু–একটা ঘাস–লতাপাতা। এই গ্রীষ্মের
দাপটে সে কিনতে পারবে দুইটা ছাতা।
মুরগি ঘরে গেছে, মোরগ বসে আছে—
চোখে তার টক টক কচি আমের মতো ঝুলে আছে
খুচরাখাচরা স্বপ্ন। মাঝে মাঝে আধোঘুমে
নর্দমার তলা থেকে ঝলকানি দেয় ধনরত্ন।
গ্রামের মনু গ্রামেই ভালো, শহরের লোক শহরে
চাঁদাবাজ ধরতে এলে লুকিয়ে যেয়ো কবরে।
মুরগি বসে আছে ভাত বেড়ে, মোরগ হয়ে গেছে
অন্য কারও খাবার। জাদুর শহরে গুম হওয়ার
কালোজাদুই তাকে করে দিল সাবাড়।
যে গাছ ব্যথার স্বাদ ভুলে গেছেমানুষ তো সাপের মতো—বারবার খোলস বদলায়।
গাছের মতো—বারবার নিজেকে সাজায় নতুন পাতায়।
প্রকৃতির সবার মধ্যেই হয়তো এই ব্যাপারটা আছে।
এক জীবনে বহুবার জন্ম নেওয়া আর মরে যাওয়া—
মরে যাওয়া কঠিন হলেও সে আছে বলেই
আবারও জন্মানোর তৃষ্ণা নিয়ে মানুষ জেগে ওঠে
চরের উর্বর মাটিতে কোনো জংলি বীজের অঙ্কুরের মতো।
প্রতিবার তোমাদের প্রেমে মৃত্যুদণ্ড পেয়ে আমিও সেই
অসহায় আসামির মতো খুঁজেছি বেঁচে যাওয়ার
অকুণ্ঠ কৌশল। আর না পেয়ে মরে গেছি ফুলহীন মর্গে।
তারপর আবারও চরের উর্বর মাটিতে জংলি বীজের
অঙ্কুরের মতো জেগে ওঠা। নিজেকে ভালোবাসা, ভালোবাসা
সূর্যের সোনালি আলো, রংধনু রঙের ধুলো, পাতার
ডগায় বৃষ্টির কণা। ভালোবাসা সবাইকে, সবকিছুকে।
কারণ, এসবের মধ্যে আমি আছি, আমি ছড়িয়ে থাকি
পৃথিবীর কোণে কোণে। শুধু থাকি না তোমার আঁধার গুহার
মতো হৃৎপিণ্ডে। সেখানে থাকে কিছু পরিযায়ী পাখি।
একটা বড় কচুপাতায় নিজের দীর্ঘশ্বাস ঢাকি।
পিছু ফিরে দেখি, আমার বেদনারা আনন্দনৃত্য জুড়ে দিয়েছে
সারা রাস্তাজুড়ে। আমি তাদের দুঃখিত হতে বললে
তারা আরও জোরে চিৎকার করে গান গাইতে থাকে আর
নাচতে থাকে। তারপর আমি আমার প্রাচীন বেদনার গায়ে
হাত বোলাতে গিয়ে দেখি, সে একটা মরিচা পড়া বুলেট হয়ে
গেঁথে আছে লেবুর খোসার মতো কচি সবুজ পাতায় পল্লবিত
গাছটার বাকলে। যে গাছ ব্যথার স্বাদ ভুলে গেছে।
লোকটা বাংলাদেশেরই একটা লোক ছিলপকেটভর্তি ট্যালেন্ট নিয়ে সে হাঁটছিল
পথে পথে। কিন্তু তার পকেটে কোনো
ট্যাকা ছিল না। তাই ট্যাকা হারানোর
ভয়ও তার ছিল না। যাবতীয় সম্পদ সে
লুকিয়ে রেখেছিল মগজের নির্জন ভল্টে
আর পথে পথে হাঁটত নিশ্চিন্তে
যেন সে নিঃস্ব, এমন ভান করে।
সারা জীবন সে পান করেছিল শিশিরের জুস
আর খেয়েছিল বাতাসের ফ্রি ঝাপটা।
না খেতে পেয়ে তার পাকস্থলী পিঁপড়ার পাকস্থলীর
মতো সরু হয়ে গিয়েছিল আর অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণে
তার মগজ মোটাসোটা একটা ভেড়ার মতো
বড় হয়ে উঠেছিল। এমন ভারসাম্যহীন একটা
শরীর নিয়ে সে অগস্ত্যযাত্রা করেছিল।
লোকটা বাংলাদেশেরই একটা লোক ছিল।
আমি এখনো জন্মাইনিযা কিছু ঘটে যায় রৌদ্রসীমানায়
তা যেন অন্য কারও জীবন,
অন্য কেউ দিনলিপি লিখছে কষ্টের পৃষ্ঠায়।
পদ্মপাতায় আকাশ গলে জল
পড়ছে, পড়ছে—ভাবলেশহীন।
পিছিয়ে কিংবা এগিয়ে যাই প্রতিদিন, ভ্রুক্ষেপহীন.
তোমার আমার পার্থক্য ঠিক কতটুকু? তুমি কি সব সময় সঠিক?
আমার একাকিত্ব তোমার ভুবনসেরা উপহার।
প্রকারান্তরে তুমিও পেঁচিয়ে যাও সিসিফাসের ফাঁদে।
নাগরিক জ্বালার জানালায় দৃশ্য কাঁদে,
পার হয় ফাঁকিবাজ মহাকাল
আমাকে স্থির সেতু করে তার পায়ের তলে।
এখানে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা: নিজেকে হত্যা!
কিন্তু তা নয় আত্মহত্যার মতো রঙিন মিথ্যা।
অন্যের চোখের দুরবিনে আমি নেই
আমার চোখে নেই অন্য
শুধু পণ্য মাতলামি করে আর আমি
সে পণ্য গড়ার নগণ্য হাতিয়ার।
যা কিছু ঘটে যায় নির্বাক নির্মমতায়
তা হলো রূপহীন এক রূপকথা,
অন্য কারও ডানার শেকল আমাকে ছুঁয়ে দেয়।
এখানে শিশুরা খেলে ভয়াবহ অস্ত্র নিয়ে,
আগুন শিশুদের প্রিয় রং।
সবুজ দ্বীপপুঞ্জ পুড়ে গেছে মরুভূমির লেহনে,
শুধু কিছুটা ফিকে সবুজ আছে পেছনে
স্মৃতির দেয়ালে শেওলা হয়ে।
যা কিছু ঘটে যায় ঘটনাপরম্পরায়
তা ভীষণ অচেনা লাগে,
অন্য কারও জীবনের বোঝা চাপানো আমার মাথায়।
পৃথিবী এখনো একটা চারাগাছের ভবিষ্যৎ ফল;
আর আমি হই সেই ফলের পরিণতি সন্ধানী
দুরারোগ্য, প্রেমিক পোকা।
আমি এখনো জন্মাইনি।
আমি এখনো জন্মাইনি।
নিস্তব্ধতার সমুদ্র পাড়ি দিতে দিতে
জন্মান্ধ গাঙচিল কর্কশ প্রতিধ্বনি কণ্ঠে
ডাকছে তোমাকে আর আমাকে—
অন্য কোনো ফাগুনের আহ্বানে
ওপেন এয়ার কনসার্টে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সিট ধরতে গিয়ে ট্রেনের নিচে চবি ছাত্রী
তাড়াহুড়ো করে সিট ধরতে গিয়ে চলন্ত শাটল ট্রেনের নিচে পড়ে যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক নারী শিক্ষার্থী। তবে একটুর জন্য ট্রেনের কাটা পড়া থেকে রক্ষা পেয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শহরগামী দুপুর ৩টা ৩৫ মিনিটের শাটলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণে বেঁচে যাওয়া ওই ছাত্রীর নাম নাজিফা আক্তার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন:
শিবচরে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু
আড়াই ঘণ্টার ব্যবধানে একই স্থানে ২ মৃত্যু
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ৩টা ৩৫ মিনিটের শাটলটি শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসছিল। চলন্ত অবস্থায় স্টেশনে থামার আগেই সিটে ব্যাগ রাখছিলেন ওই ছাত্রী। পরে সিটে উঠতে গিয়ে প্রচণ্ড ধাক্কাধাক্কিতে আচমকা চলন্ত ট্রেনের নিচে পড়ে যান তিনি। এরপর অতিদ্রুত তিনি ট্রেনের নিচ থেকে সরে যেতে সক্ষম হন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী জাকির হোসেন খন্দকার বলেন, “তাড়াহুড়ো করে সিট ধরতে গিয়ে তিনি আমার সামনে চলন্ত ট্রেনের নিচে দুই বগির মাঝখানে পড়ে গিয়েছেন। পরে তিনি খুব দ্রুতই সেখান থেকে সরে যেতে সক্ষম হন। এক-দুই সেকেন্ডের ব্যবধান ছিল। একটু এদিক-সেদিক হলেই তার জীবন চলে যেত। আল্লাহ নিজ মহিমায় তাকে বাঁচিয়েছেন। এখনো আমার চোখে ঘটনাটি ভাসছে।”
পরে আহতাবস্থায় ওই ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
জাকির হোসেন বলেন, “ওই ছাত্রী গুরুতর আহত হননি। শরীরের কয়েক জায়গায় ছিড়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে হলে পাঠানো হয়েছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত।”
তবে আহত ছাত্রী নাজিফা আক্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/মিজান/মেহেদী