যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর যুদ্ধ তীব্র না হয়ে থেমে গেল কেন
Published: 26th, June 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত শনিবার রাতে যখন ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার যুদ্ধে সরাসরি যোগ দিলেন, তখন মনে হচ্ছিল পরিস্থিতি আরও ভয়ানক রূপ নেবে।
১৩ জুন ভোরে ইসরায়েল ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। পরে শনিবার যুক্তরাষ্ট্র ইরানের নাতাঞ্জ, ফর্দো ও ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ১৭টি বাংকার–বিধ্বংসী বোমা ও দুই ডজন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা করার জন্যই এ হামলা চালানো হয়।
মার্কিন হামলার পর ইরানের পাল্টা জবাব আসে। গত সোমবার সন্ধ্যায় তারা কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সেন্ট্রাল কমান্ড ঘাঁটি আল-উদেইদে ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। এ হামলায় ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কাতারের রাজধানী দোহার ওপর দিয়ে উড়ে যায়। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ইরানে মার্কিন হামলার পর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করেন, এ হামলায় ভয়ানক প্রতিশোধের চক্র তৈরি হতে পারে, কিন্তু এমন কিছু ঘটেনি। উল্টো হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এ যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছিল কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে।
কিন্তু মার্কিন ঘাঁটিতে এমন একটি হামলার পরও কীভাবে যুদ্ধবিরতি সম্ভব হলো? উঠেছে সেই প্রশ্ন।
ইরানের সামনে কী কী বিকল্প ছিল
ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা ছিল একেবারেই প্রত্যাশিত। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোর কয়েকটি ইরানের আশপাশেই অবস্থিত।
আল-উদেইদ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর বাহরাইনে অবস্থিত। এ দুটির অবস্থান ইরান থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটারের কিছু বেশি দূরত্বে। এ ছাড়া সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি, ইরাকে তিনটি এবং কুয়েত ও জর্ডানে একটি করে মার্কিন বিমানঘাঁটি আছে। ওমানে চারটি লজিস্টিকস–সংক্রান্ত মার্কিন বিমানঘাঁটি আছে।
আল–জাজিরার সাংবাদিক দোরসা জাব্বারি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১৯টি ঘাঁটিতে ৪০ হাজার সেনা রয়েছেন। ঘাঁটিগুলোর আটটি স্থায়ী। ইরান আগে থেকেই বলে এসেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানে হামলা চালায়, তবে এসব ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু করা হবে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) এক বিশ্লেষণে বলেছে, আগে যখন কেউ ইরানকে আঘাত করেছে, তখন তেহরান নিজেদের সেনা না পাঠিয়ে সমর্থক মিলিশিয়া গোষ্ঠী দিয়ে (যেমন ইয়েমেনের হুতি, লেবাননের হিজবুল্লাহ) প্রতিশোধ নিয়েছে। এটাই ছিল তাদের প্রধান কৌশল।
সেই হিসেবে হুতি মিলিশিয়ারা লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা চালাতে পারত কিংবা ইরান নিজেই হরমুজ প্রণালিতে জাহাজে হামলা করতে পারত। আর এমনটি ঘটলে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বাণিজ্যিক নৌপথ হুমকির মুখে পড়ত।
কিন্তু এবার সে ধরনের কোনো হামলা হয়নি। এটা ইঙ্গিত করে যে ইরানের ‘প্রতিরোধ অক্ষ’ বা এক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স দুর্বল হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে চলা যুদ্ধের কারণে তারা ক্লান্ত। আইএসডব্লিউ তাদের ওয়েবসাইটে এমনটাই বলেছে।
তবু পুরো বিশ্ব যখন ইরানের পক্ষ থেকে বড় প্রতিশোধের অপেক্ষায় ছিল, তখন সোমবার ব্রিটেনের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরানবিষয়ক বিশেষজ্ঞ আনসারি আল–জাজিরাকে বলেছিলেন, তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর একটা পথ খোলা থাকতে পারে।
আনসারি আরও বলেন, ‘বাহ্যিকভাবে অনেক হুমকি আসবে। কিন্তু পর্দার আড়ালে আলোচনা চলবে।’ এ কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পরই ইরান মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরায়েলের তেল আবিবে ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনে উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
সবুজবাগে ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলিতে পথচারী আহত
রাজধানীর সবুজবাগের বাইগদিয়া নুনের টেক এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে মনির হোসেন (৪৬) নামে এক নিরাপত্তাকর্মী আহত হয়েছেন। রোববার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আহত মনির হোসেন খিলগাঁওয়ের দক্ষিণ গোড়ান এলাকায় থাকেন। পেশায় তিনি একজন নিরাপত্তাকর্মী।
মনিরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন একই এলাকার বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম। তিনি জানান, বিকেলে কয়েকজন মিলে গোসল করার জন্য বাইগদিয়া এলাকায় যান মনির। সেখান থেকে হেঁটে ফেরার পথে মোটরসাইকেলে করে আসা অজ্ঞাতনামা কয়েকজন গুলি ছোড়ে। এতে তাঁর কোমরে গুলি লাগে।
সাইদুল আরও জানান, ঘটনাস্থলের পাশেই তখন গন্ডগোল চলছিল। গুরুতর আহত অবস্থায় মনিরকে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে এবং পরে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীর নামের একজন ড্রেজার ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। প্রাণ বাঁচাতে তিনি পানিতে লাফ দেন। তখন গুলি এসে নিরাপত্তারক্ষী মনিরের গায়ে লাগে। ওসি বলেন, এ ঘটনায় ছয়জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।