আবু হুরায়রা (রা.)–এর মূল নাম আবদুর রহমান ইবনে সাখর আদ-দাউসি। কিন্তু তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেন আবু হুরায়রা নামে। তিনি নবীজি (সা.)-এর একজন মহান সাহাবি। হাদিসের জগতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।

তাঁর সূত্রে ৫ হাজার ৩৭৪টি হাদিস বর্ণিত। ইসলাম গ্রহণের পর চার বছর মসজিদে নববিসংলগ্ন সুফফায় অতিবাহিত করেছেন। এ দীর্ঘ সময় তিনি নবীজি (সা.

) থেকে হাদিসের জ্ঞান অর্জন করেছেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, ইমাম জাহাবি, ২/৫৭৮)

নাম পরিবর্তন

আবু হুরায়রা (রা.) সপ্তম হিজরিতে তুফায়েল ইবনে আমের (রা.)-এর হাতে ইয়ামান শহরে ইসলাম গ্রহণ করেন। তখনও তাঁর নাম ছিল আবদু শামস বা সূর্যের দাস। এটি ছিল জাহিলি যুগের তাঁর পারিবারিক নাম। ইসলাম গ্রহণ করার পর যখন তিনি নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলেন, নবীজি (সা.) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার নাম কী?’

তিনি জবাব দিলেন, আবদু শামস।

নবীজি (সা.) বললেন, ‘না, আজ থেকে তোমার নাম আবদুর রহমান, অর্থাৎ রহমানের দাস।’

আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমার পিতামাতা আপনার নামে কোরবান হোক। আজ থেকে আমার নাম আবদুর রহমান।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬১৯০)

অন্য এক মতে, তাঁর নাম ছিল আবদুল্লাহ। (ইবনে হাজার আল-আসকালানি, ফাতহুল বারি ,১০/৫৬২)

নবীজি (সা.) মাঝেমধ্যে স্নেহ করে তাঁকে এ নামে ডাকতেন। তাই তিনি আবু হুরায়রার পরিবর্তে আবু হিররিনকে প্রাধান্য দিতেন। তিনি বলতেন, ‘আমার হাবিব আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে এ নামে ডেকেছেন।’আরও পড়ুনতিরন্দাজ এক সাহাবি০৯ নভেম্বর ২০২৪উপাধির কারণ

আবদুর রহমানের উপনাম হলো আবু হুরায়রা। এ নামেই তিনি জগৎবাসীর নিকট পরিচিত। অভিধানে ‘আবু’ শব্দের কয়েকটা অর্থ পাওয়া যায়। তার মধ্যে ‘পিতা’ ও ‘ওয়ালা’ উল্লেখযোগ্য। ‘হুরায়রা’ অর্থ বিড়ালছানা। তাই ‘আবু হুরায়রা’র অর্থ ‘বিড়ালছানাওয়ালা’।

তাঁর উপাধি ‘আবু হুরায়রা’ হওয়ার পেছনে ইতিহাসে কয়েকটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।

ছোটবেলায় আবু হুরায়রা (রা.) সব সময় বিড়ালছানার সঙ্গে খেলা করতেন। এটা দেখে বন্ধুরা তাঁর নাম দেন আবু হুরায়রা বা বিড়ালছানাওয়ালা। ধীরে ধীরে এই নামই সবার মধ্যে ছড়িয়ে গিয়ে মূল নাম আড়ালে চলে যায়।

অন্য বর্ণনামতে, জাহিলি যুগে তিনি ছাগল চড়াতেন। একবার একটি বন্য বিড়ালছানা খুঁজে পেয়ে তিনি সেটিকে নিয়ে আসেন। রাতে বিড়ালছানাটিকে তিনি গাছে রাখতেন আর সকালে সঙ্গে করে নিয়ে বের হতেন, যেন সেটি কোনো বন্যজন্তুর আক্রমণের শিকার না হন। এই থেকে তিনি ‘আবু হুরায়রা’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ইবনে হিশাম, আস-সিরাহ আন-নববিয়্যাহ, ১/২৩৮; আল-ইসাবাহ ফি তামিয়িজিস সাহাবা, ইবনে হাজার, ১/১২৪)

আরেকটি মত অনুযায়ী, নবীজি (সা.) একদিন তাঁকে জামার আস্তিনের ভেতর একটি ছোট বিড়ালছানা বহন করতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, আবদুর রহমান, ওটা কী?

তিনি জবাব দিলেন, হিররাহ।

নবীজি (সা.) তখন তাঁকে বললেন, তুমি আবু হিররিন বা বিড়ালওয়ালা। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬২০৮)

নবীজি (সা.) মাঝেমধ্যে স্নেহ করে তাঁকে এ নামে ডাকতেন। তাই তিনি আবু হুরায়রার পরিবর্তে আবু হিররিনকে প্রাধান্য দিতেন। তিনি বলতেন, ‘আমার হাবিব আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে এ নামে ডেকেছেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৮৪০)

উল্লেখ্য হিররিন বিড়ালের পুংলিঙ্গ আর হুরায়রা স্ত্রীলিঙ্গ।

আরও পড়ুনআবু তালিবকে নবী (সা.)–এর দাওয়াত২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আমি সে বস্ত্রটা আমার বুকের সঙ্গে মিলিয়ে নিলাম। তখন থেকে আমি তার কাছ থেকে যা কিছু শুনেছি, তার কিছুই ভুলে যাইনি।সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৯হাদিসের জ্ঞান

হাদিস সংরক্ষণের প্রতি আবু হুরায়রা (রা.)–এর ছিল প্রবল আগ্রহ। তিনি চার বছর নবীজি (সা.)-এর সাহচর্যে থেকে হাদিস শিক্ষা করছেন। তাঁর আবাসস্থল ছিল মসজিদে নববিসংলগ্ন সুফফায়। হাদিস অর্জনের জন্য তিনি অনেক দিন ক্ষুধার্ত থাকতেন। অন্যান্য সাহাবিগণ যখন ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকতেন, তিনি তখন কোনো একটি হাদিসের আশায় মসজিদে নববিতে বসে থাকতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৮)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘তোমরা বলছ যে আবু হুরায়রা নবীজি থেকে অধিক হাদিস রেওয়াত করেছেন। আল্লাহ হিসাব গ্রহণকারী। আমি ছিলাম একজন নিরীহ লোক। আমি সর্বদা নবীজি (সা.)-এর সেবায় থাকতাম। তখন মুহাজিরগণ বাজারে ব্যবসায়-বাণিজ্যে মনোনিবেশ করতেন এবং আনসারগণ তাদের ধনসম্পদের সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যতিব্যস্ত থাকতেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৯২)

আবু হুরায়রা (রা.) আরও বলেন, ‘একবার নবীজি (সা.) বললেন, যে লোক তাঁর বস্ত্রের আঁচল বিছিয়ে দেবে, সে আমার কাছ থেকে যা কিছু শুনবে, তা ভুলবে না। আমি আমার কাপড়ের আঁচল বিছিয়ে দিলাম এবং তিনি হাদিস রিওয়ায়াত করলেন। তারপর আমি সে বস্ত্রটা আমার বুকের সঙ্গে মিলিয়ে নিলাম। তখন থেকে আমি তার কাছ থেকে যা কিছু শুনেছি, তার কিছুই ভুলে যাইনি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৯)

আরও পড়ুনআবু জাহেলের মা আসমা বিনতে মুখাররাবা (রা.) সাহাবি ছিলেন ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কখনো কোনো হাদিস ভুলে গেলে তাঁর খুব দুঃখ লাগত। আবু হুরায়ারা (রা.) বলেন, ‘আমি নবীজি (সা.)-কে বললাম, আল্লাহর রাসুল, আমি আপনার কাছ থেকে বহু হাদিস শুনি কিন্তু ভুলে যাই।’ তিনি বললেন, ‘তোমার চাঁদর খুলে ধর। আমি খুলে ধরলাম। তিনি দুই হাত অঞ্জলি করে তাতে কিছু ঢেলে দেওয়ার মতো করে বললেন, এটা তোমার বুকের সঙ্গে লাগিয়ে ধর। আমি তা বুকের সঙ্গে লাগালাম। এরপর আমি আর কিছুই ভুলিনি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০৩৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৪৯)

মহান এই সাহাবি কেবল নবীজি (সা.)-এর হাদিস শিক্ষা গ্রহণ করেননি, বরং যথাযথভাবে সংরক্ষণ করেছিলেন এবং পরবর্তীদের নিকট পৌঁছে দিয়েছিলেন। ইমাম বুখারি বলেন, আট শতাধিক সাহাবি ও তাবেয়ি তাঁর নিকট থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। (মিযযি, তাহজিবুল কামাল, ৩০/২৪০-২৫০)

মুহাদ্দিস ফকিহ আলেম এই সাহাবি হাদিসের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন।

আরও পড়ুনআবু মুসা (রা.) ছিলেন জ্ঞানী সাহাবি২২ মে ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ র রহম ন সহ হ ব খ র আল ল হ কর ছ ন থ কত ন গ রহণ বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

আমাদেরকে স্বার্থক হতে হবে, আর স্বার্থক হতে গেলে কৃতজ্ঞ হতে হয় : অতি. জেলা প্রশাসক

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাশফাকুর রহমান বলেছেন, আজকে তোমাদের কে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে কি জন্য, তোমরা সফল হয়েছ, সফল হয়েছ কিসে, সেটা হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষায়।

কিন্তুু এই সফলতা কি আসলে আমাদের জীবনে স্বার্থকতা কিনা সেটা আমাদের ভাবতে হবে। আমরা অনেক ক্ষেত্রে সফল হই কিন্তুু স্বার্থক হইনা।

সোমবার (১১ আগষ্ট) সকালে ফতুল্লার দেলপাড়াস্থ মীরকুঞ্জ পার্টি সেন্টারে গিয়াসউদ্দিন শিক্ষা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ফতুল্লা থানার অন্তর্গত বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসা থেকে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের সবার জীবনে কিন্তুু সাফল্য থাকে, কিন্তু‘ আমরা সবাই কিন্তুু স্বার্থক হইনা, আমরা সবাই শেষ পর্যন্ত গিয়ে আমরা আমাদের নিজেদের জন্য স্বার্থক হইনা, আমরা আমাদের পরিবারের জন্য স্বার্থক হয়ে উঠতে পারি না, এর কারন হলো আমরা আসলে আমাদের দায়িত্বটা বুঝিনা।

আমাদের কি করা উচিৎ, আমাদের কে কেন, সৃষ্টি করা হয়েছে, আমরা পৃথিবীতে কেন এসেছি, আমার ধারন যে আমরা কখনো এটা ভেবে দেখিনা, আমার ধারনা আমরা ভেবে দেখিনা যে আমি যেটা করছি আসলে এটা আমার কথা কিনা, বা এটা আমার দায়িত্ব কিনা। 

আমরা যখন এটা বুঝবো যে আমরা কেন পৃথিবীতে এসেছি, আমার কাজটা কি, দায়িত্বটা কি। আমাদের দায় কোথায়, দায় এবং দায়িত্বের মধ্যে পার্থক্য আছে।

আমরা পৃথিবীতে প্রত্যাকটা মানুষ এবং প্রত্যাকটা জীব, প্রত্যাকটা প্রানী পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছে, আল্লাহতালা সৃষ্টি করেছেন, কোন না কোন রোল প্লে করার জন্য, কোন কিছু বিচ্ছিন্ন ভাবে সৃষ্টি হয় নাই, প্রত্যাকটা অনু,পরমানুর ভ’মিকা আছে, কোন না কোন ভ’মিকায় পৃথিবীতে রাখছে, সুতরাং তোমাকে খুঁেজ বের করতে হবে আসলে তোমার রোলটা কি, আল্লাহতালা তোমাকে সৃষ্টি করেছেন তোমাকে কি দায়িত্ব দিয়েছেন।  

মাশফাকুর রহমান আরো বলেন, আমরা অনেকেই ভালো ছাত্র, আমরা অনেক ভালো ফলাফল করেছি, অনেক ভালো ব্যবসায়ী হয়েছি, অনেক ভালো রাজনীতিবিদ হয়েছি, কিন্তুু ভালো মানুষ হয়েছি কয় জন।

মানুষের মধ্য আলো ছড়ানোর মানসিকতা কতো জনের মধ্যে আছে, আমাদেরকে এটা অর্জন করা শিখতে হবে। 

আল্লাহ তায়ালা এটা চান, আমরা যেন আলো ছড়াতে পারি, আল্লাহর নূর যে আমাদের মধ্যে দিয়েছে সেটাকে যেন আমরা কাজে লাগাতে পারি। মানুষকে ভালোবাসা দিয়ে আলোকিত করতে পারি, ঘৃণা দিয়ে নয়, কাউকে ছোট করে নয়, আমাদেরকে যেটা মাথায় রাখতে হবে সেটা হচ্ছে যে, আমাদেরকে স্বার্থক হতে হবে, আর স্বার্থক হতে গেলে কৃতজ্ঞ হতে হয়।

গিয়াসউদ্দিন শিক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজের উপাধ্যক্ষ মীর মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেনের পরিচালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ডা. রুমন রেজা, সানারপাড় রওশন আরা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ, নারায়ণগঞ্জ আদর্শ বালিকা স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান ও নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান ভূইয়া প্রমূখ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ