চমক সৃষ্টি করে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদপ্রার্থী হওয়া জোহরান মামদানি তার শহর নিয়ে সাহসী পরিকল্পনা সামনে এনেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো, তিনি সরকারি মুদি দোকান চালু করতে চান, আরো বাড়ি নির্মাণ করতে চান, বাস ভাড়া সম্পূর্ণ ফ্রি করতে চান এবং ভর্তুকি পাওয়া ভাড়াটিয়াদের জন্য ভাড়া স্থির করে রাখতে চান। 

তবে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেটিক প্রাইমারির আগে তার প্রতিপক্ষ ও কিছু সংবাদমাধ্যম বরং তার ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে মতামতের দিকেই বেশি নজর দিয়েছে। মামদানি ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে তার দৃঢ় সমর্থন বজায় রেখেছেন। তিনি ইসরায়েলি নিপীড়নের নিন্দা করেছেন এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতো করে গাজায় ইসরায়েলি হামলাকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। মামদানি তার অবস্থান থেকে পিছু হটেননি এবং শেষ পর্যন্ত তিনিই জয়লাভ করেন। 

মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বিী নিউ ইয়র্কের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো বিত্ত-বৈভব ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাবের দিক থেকে তার চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু নিউ ইয়র্কের ডেমোক্র্যাটদের মন করে নিয়েছেন তরুণ রাজনীতিক মামদানি, যার বয়স মাত্র ৩৩ বছর। মামদানির চমকপ্রদ রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ২০২১ সালেই, যেবছর তিনি নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেমব্লির প্রতিনিধি নির্বাচিত হন।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাখ্যার তীব্র নিন্দা জানালো ইরান

নেতানিয়াহুর দুর্নীতির বিচার বাতিল করার আহ্বান ট্রাম্পের

মামদানির সমর্থকেরা বলছেন, মেয়র প্রার্থীর দৌড়ে তার বিজয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি নতুন বাঁকবদলের ইঙ্গিত হতে পারে, যা বামপন্থ এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে নির্বাচনি গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করে।

“এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা,” বলেছেন প্রগতিশীল সংগঠন জাস্টিস ডেমোক্র্যাটস-এর মুখপাত্র উসামাহ আন্দরাবি।

তিনি বলেন, “সত্যিকারের প্রগতিশীলরা, যারা ধনী ব্যবসায়ী এবং করপোরেট সুপার প্যাকগুলোর বিরুদ্ধে শ্রমজীবী শ্রেণিকে ঐক্যবদ্ধ করতে চান এবং একই সঙ্গে গণহত্যার মতো গুরুতর ইস্যুতে আপস না করে দৃঢ় থাকেন, তাদের জন্য এখন আর কোনো সীমা নেই।”

যদিও আনুষ্ঠানিক ফলাফল এখনো চূড়ান্ত হয়নি, মামদানি কুয়োমোর চেয়ে সাত শতাংশেরও বেশি ব্যবধানে এগিয়ে আছেন এবং প্রায় সব ভোটই গণনা শেষ। এর ফলে তার মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত।

নিউ ইয়র্ক শহরের র‍্যাঙ্কড-চয়েস ভোটিং পদ্ধতিতে পরবর্তী রাউন্ডের গণনার পর তার ব্যবধান আরো বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

কুয়োমো এরইমধ্যে পরাজয় মেনে নিয়েছেন এবং মামদানি বিজয়ের ঘোষণা দিয়েছেন, যা তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহরের পরবর্তী মেয়র হওয়ার পথে এগিয়ে নিয়েছে।

নিউ ইয়র্কে ডেমোক্রেটিক দল অত্যন্ত প্রভাবশালী, তাই দলীয় প্রার্থী হিসেবে জোহরান মামদানি নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে সহজেই জয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে; যদিও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার জনসমর্থন ছিল মাত্র ১ শতাংশ, তখন এই ফলাফল একেবারেই অসম্ভব মনে হয়েছিল।

‘তিনি পিছু হটেননি’
ডিজিটাল মিডিয়ায় দক্ষ, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ও সহজপ্রাপ্য ৩৩ বছর বয়সি এই রাজ্য প্রতিনিধি মামদানির বহু ভিডিও ভাইরাল হয়। নিউ ইয়র্কের রাস্তায় সরাসরি প্রচারে নেমে ধীরে ধীরে নিজের সমর্থক-ভিত্তি তৈরি করতে থাকেন।

গত বছরের নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক ও যারা ভোট দেননি, যারা প্রচলিত রাজনীতির প্রতি অখুশি; তাদের সঙ্গে কথা বলেন মামদানি। তাদের সামনে তিনি তার নিজের রাজনৈতিক পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি একটি ভিডিও তৈরি করেন, যাতে দেখা যায়, তাদের অনেকে তাকে মেয়র হিসেবে সমর্থন করতে আগ্রহী।

মামদানির সমর্থকরা বলছেন, মামদানি হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবকের একটি বিশাল বাহিনী গড়ে তুলতে সক্ষম হন, যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তার প্রচারের বার্তা ছড়িয়ে দেয়।

নিউ ইয়র্ক সিটির সিটি ইউনিভার্সিটির (সিইউএনওয়াই) সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক হেবা গাওয়ায়েদ বলেন, মামদানির ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান অনেক তরুণকে তার দিকে আকৃষ্ট করে এবং তারা সক্রিয়ভাবে তার প্রচারে যুক্ত হয়।

“ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান থেকে পিছু না হটা, তার জন্য বিশাল এক ঘটনা হয়ে ওঠে,” গাওয়ায়েদ আলজাজিরাকে বলেন। 

“আমরা বারবার শুনে এসেছি, এমন অবস্থান রাজনৈতিকভাবে আত্মঘাতী অথচ এই আন্দোলন কেবল সেই অবস্থানই নেয়নি, বরং বলা যায় এই অবস্থানই ছিল এর (মামদানির জনপ্রিয়তার) ভিত্তি।”

হেবা গাওয়ায়েদ আরো বলেন, যদি মামদানি তার সমালোচকদের খুশি করতে অবস্থান পরিবর্তন করতেন, তাহলে তার প্রতি মানুষের আগ্রহ ও সমর্থন হারিয়ে যেত। বরং ফিলিস্তিনি অধিকারের পক্ষে তার অবস্থানই তার প্রচারকে আরো শক্তিশালী করেছে।

ডেমোক্রেটিক মনোনয়নপ্রাপ্ত হওয়ার পথে থাকা মামদানিকে একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে তার প্রচারাভিযানে অর্থের ঘাটতি ছিল, এমনকি মানুষজন তার নামও খুব একটা জানত না। তার প্রতিপক্ষ ছিলেন অ্যান্ড্রু কুয়োমো; নিউইয়র্কের এক রাজনৈতিক রাজবংশের সদস্য ও সাবেক গভর্নর।

কুয়োমোর পিতা নিজেও নিউ ইয়র্কের গভর্নর ছিলেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে কুয়োমো জাতীয় ডেমোক্রেটিক পার্টির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের, যেমন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও আইনপ্রণেতা জিম ক্লাইবার্নের সমর্থন অর্জন করেন।

অন্যদিকে মামদানির পক্ষে সমর্থন আসে ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকার (ডিএসএ) স্থানীয় শাখা থেকে।

এই কারণেই মামদানির বিজয় তার সমর্থকদের কাছে অভাবনীয় মনে হয়েছে। এটি যেন এক ‘দাবিদ বনাম গোলিয়াথ’-এর যুদ্ধ ছিল, যাকে বলে পুরনো ধারা বনাম নতুন প্রজন্মের সংঘাত।

“পুরোনো ধারা প্রতীকীভাবে হার মানল একজন ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট, তরুণ, ফিলিস্তিনপন্থি, বাদামী মুসলিম ছেলের কাছে; যার ফেব্রুয়ারিতে পরিচিতি ছিল মাত্র ১ শতাংশ,” বলেন গাওয়ায়েদ। 
তিনি বলেন, “এটা একেবারে বিস্ময়কর এবং ব্যতিক্রমধর্মী একটি ঘটনা।”

উগান্ডায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া জোহরান মামদানি ২০২১ সাল থেকে নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

অনেকেই কুয়োমো বনাম মামদানির মুখোমুখি লড়াইকে ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা প্রগতিশীল ও মধ্যপন্থিদের শক্তি পরীক্ষার প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন। এই সংঘাতের কেন্দ্রে রয়েছে ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রশ্নহীন সমর্থন নিয়ে বিতর্ক।

ইসরায়েল ইস্যুতে কুয়োমোর মনোযোগ
একজন রাজ্য-আইনপ্রণেতা হিসেবে মামদানি গাজার ওপর ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে স্পষ্ট ও সরব অবস্থান নিয়েছেন, যে অভিযানে অন্তত ৫৬ হাজার ৭৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এমনকি তিনি ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে হোয়াইট হাউসের সামনে যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে অনশনেও অংশ নেন।

তবে মেয়র পদে প্রচার শুরু করার সময় মামদানি স্থানীয় ইস্যুগুলোকেই অগ্রাধিকার দেন।

২০২১ সালে যৌন হয়রানির অভিযোগে গভর্নরের পদ থেকে পদত্যাগ করা ‍কুয়োমো তার প্রচারণায় মামদানির ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সম্পর্কিত অবস্থানকে কেন্দ্রীয় ইস্যুতে পরিণত করার চেষ্টা করেন।

এই মাসের শুরুতে কুয়োমো বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ উত্থাপন করা আমেরিকান ইহুদিদের বিরুদ্ধে হামলাকে উস্কে দেয়। তার এই বক্তব্যের লক্ষ্য ছিল মামদানি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে কুয়োমো লিখেছিলেন, “ঘৃণা ঘৃণাকে উসকে দেয়। ‘গণহত্যা’, ‘যুদ্ধাপরাধী’, ‘হত্যাকারী’-এই ধরনের ইসরায়েলবিরোধী বক্তব্য বন্ধ করতে হবে। এটি রাজনীতির শরীরজুড়ে ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়ছে।” 

কুয়োমো বর্তমানে সেই আইনজীবী দলের সদস্য, যারা গাজায় যুদ্ধাপরাধসহ ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাওয়া ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পক্ষে সাফাই গাইছেন।

যখন মামদানি ও তার কয়েকজন সহ-প্রার্থীর মধ্যে সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার কুয়োমোর বিরুদ্ধে একসঙ্গে প্রচারে নামেন, তখন কুয়োমো আবার ইসরায়েল প্রসঙ্গ তোলেন।

তিনি বলেন, “কীভাবে.

.. একজন ব্র্যাড ল্যান্ডার জোহরান মামদানিকে সমর্থন করেন? তার ইসরায়েল নিয়ে অবস্থানকে সমর্থন করেন? তার বক্তব্যগুলোকে সমর্থন করেন?”

ব্র্যাড ল্যান্ডার, যিনি নিজে একজন ইহুদি, মামদানিকে সমর্থন করেন এবং দুজনই একে অপরকে প্রার্থিতায় সমর্থন দেন। এমনকি তাদের সমর্থকদের উৎসাহ দেন ব্যালটে একে অপরকে উচ্চ র‌্যাংকে রাখতে।

কুয়োমোপন্থি একটি নির্বাচনি সুপার প্যাক, যেটির নাম ফিক্স দ্য সিটি, মামদানির ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ে অবস্থানকে আক্রমণের কেন্দ্রে তুলে আনে।

এই সুপার প্যাকটি (সামাজিক সংগঠন) প্রো-ইসরায়েলপন্থি ধনকুবের ও ট্রাম্প-সমর্থক বিল অ্যাকম্যানের কাছ থেকে ৫ লাখ ডলার পায়। সাবেক নিউ ইয়র্ক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ, যিনি ইসরায়েলের দৃঢ় সমর্থক, এই গ্রুপে দিয়েছেন ৮ মিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলোও মামদানির ইসরায়েলবিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গিকে ঘিরে বারবার প্রশ্ন তোলে। তাকে বারবার জিজ্ঞাসা করা হয় পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে, যেমন: তিনি কি ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দেন? অথবা তিনি মেয়র হিসেবে ইসরায়েল সফরে যাবেন কি না।

‘একটি বাঁক বদলের মুহূর্ত’
অ্যাডভোকেসি গ্রুপ জিউস ভয়েস ফর পিস (জেভিপি) অ্যাকশন-এর রাজনৈতিক পরিচালক বেথ মিলার বলেন, মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত নিয়ে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গিকে ইস্যু বানিয়ে কুয়োমো ভুল করেছেন।

গাজায় নৃশংসতার পর ডেমোক্র্যাটিক সমর্থকেরা ক্রমেই ইসরায়েলের প্রতি শর্তহীন সমর্থন থেকে সরে আসছেন। এপ্রিল মাসে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার-এর এক জরিপে দেখা গেছে, ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের ৬৯ শতাংশই ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন।

মিলার আলজাজিরাকে বলেন, “কুয়োমো এখনো রাজনীতি নিয়ে এক পুরনো যুগের ডাইনোসরের মতো চিন্তা করেন।”

জেভিপি অ্যাকশন শুরু থেকেই মামদানির প্রচারকে সমর্থন জানায়। 

মিলার বলেন, মামদানি নিউ ইয়র্ককে আরো সাশ্রয়ী করে তোলার লক্ষ্য নিয়ে প্রচার চালালেও তার প্রগতিশীল রাজনীতির মূলভিত্তি হলো, সব মানুষের মানবিক মর্যাদা রক্ষা করা, যার মধ্যে ফিলিস্তিনিরাও অন্তর্ভুক্ত।

“কুয়োমো ধরে নিয়েছিলেন, ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে মামদানির অবস্থান তার জন্য একটি দুর্বলতা হবে। কিন্তু গত রাত দেখিয়ে দিল, এটা সত্য নয়,” বলেন মিলার।

“বরং আমি যা দেখেছি, তা হলো, ফিলিস্তিনি অধিকারের প্রতি মামদানির সমর্থনই ছিল তার প্রচারের একটি শক্তি। এটা তরুণ ভোটারদের সক্রিয় করেছে। এটা বহু প্রগতিশীল ইহুদি, মুসলিম এবং আরো অনেককে উদ্দীপ্ত করেছে।”

গত কয়েক বছরে আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটিসহ (এআইপিএসি) বিভিন্ন প্রো-ইসরায়েল গ্রুপ ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে প্রগতিশীল প্রার্থীদের হারানোর লক্ষ্যে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ ঢেলেছে। গত নির্বাচনি পর্বে তারা ইসরায়েল সমালোচক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য জামাল বোম্যান ও কোরি বুশকে পরাজিত করতে সাহায্য করেছে।

প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতারা বলছেন, মামদানির বিজয় এবার তাদের পক্ষে রাজনৈতিক গতিপথ পাল্টে দিতে পারে।

জাস্টিস ডেমোক্র্যাটস গ্রুপের উসামাহ আন্দরাবি বলেন, “আমরা অবশেষে একটি বাঁক বদলের সময় দেখতে পাচ্ছি। এআইপিএসি প্রায়ই বলে থাকে, ইসরায়েলকে সমর্থন করা ভালো নীতি এবং ভালো রাজনীতি। কিন্তু এখন যেটা খুব পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হচ্ছে, তা হলো, বর্ণবৈষম্যমূলক ইসরায়েলকে সমর্থন করা যেমন নীতির দিক থেকে খারাপ, তেমনি সেই রাজনীতিও খারাপ।”

ঢাকা/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ইসর য় ল য ক তর ষ ট র র র ন ম মদ ন র অবস থ ন প রগত শ ল র জন ত র র জন ত ক ন র সমর র জন য ত র জন

এছাড়াও পড়ুন:

আট উপদেষ্টার সমালোচনায় সাবেক সচিব

অন্তর্বর্তী সরকারের আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন দুর্নীতি’র প্রমাণ নিজের কাছে রয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার। অবসরপ্রাপ্ত এই সচিব বলেছেন, এই উপদেষ্টাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ হয় না, বদলিও হয় না।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে এক সেমিনারে এ অভিযোগ করেন আব্দুস সাত্তার। তবে তিনি উপদেষ্টাদের নাম বলেননি।

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৮২ ব্যাচের এই কর্মকর্তা বর্তমানে অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি।

‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও আগামী দিনের জনপ্রশাসন’ শীর্ষক সেমিনারটি আয়োজন করে প্রশাসন ক্যাডারদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। বিকেল চারটায় সেমিনার শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। সেমিনারে প্রশাসন ক্যাডারের শীর্ষ পদের প্রায় সব কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

আব্দুস সাত্তার তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমি খুবই হতাশ। আমলাদের চরিত্র না হয় খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু জুলাই আন্দোলনের রক্তের ওপর দিয়ে চেয়ারে বসা অন্তত আটজন উপদেষ্টার সীমাহীন দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ দিতে পারব। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আট উপদেষ্টার দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না’। এ সময় উপস্থিত কর্মকর্তারা ‘ঠিক ঠিক’ বলে হাততালি দেন।

সাবেক এই সচিব বলেন, কষ্ট লাগে একজন উপদেষ্টার এপিএসের অ্যাকাউন্টে ২০০ কোটি টাকা পাওয়া গেলেও তাঁর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তিনি প্রশ্ন করেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতো একটি মন্ত্রণালয় নূরজাহান বেগম চালাতে পারেন? স্থানীয়

সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় একজন অনভিজ্ঞ উপদেষ্টা দিয়ে চালানো ঠিক হচ্ছে?

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত এক বছরে দুর্নীতি না কমে বরং অতীতের চেয়ে বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন আব্দুস সাত্তার। তিনি বলেন, এক সহকারী কমিশনার (ভূমি) একটি স্কুলের জমির নামজারিতে ৩০ লাখ টাকা চেয়েছেন। ঢাকার আশপাশের একজন ইউএনও একটি কারখানার লে আউট পাশ করতে ২০ লাখ টাকা চেয়েছেন।

আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমি একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে বসি। গত বছর ৫ আগস্টের পর ওই অফিসে হাজার হাজার কর্মকর্তা–কর্মচারী ভিড় করছেন। আমার বস তারেক রহমান ডেকে বললেন, “কী হচ্ছে? এরা কারা। তাঁরা এখানে কী জন্য আসে।” আমি বলেছি, এরা সবাই বঞ্চিত। এরা গত ১৫ বছর হাসিনার আমলে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। হাসিনার পতনের পর উচ্ছ্বাসে ছুটে এসেছেন ন্যায়বিচার পেতে। উনি বলেছেন, “দলীয় অফিসে ইন–সার্ভিস কর্মকর্তারা আসা ভালো লক্ষণ নয়। আপনি তাদের অফিসে আসতে নিষেধ করে দেন।” আমি অফিসের গেটে নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছি। ইন–সার্ভিস কোনো কর্মকর্তা অফিসে আসতে পারবেন না। যদি কোনো সমস্যা থাকে অফিসার্স ক্লাবে আসবেন।’

আব্দুস সাত্তারের এ বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) রেক্টর এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি একজন দায়িত্বশীল মানুষ। তথ্যউপাত্ত ছাড়া কথা বলা লোক নন তিনি। নিশ্চয়ই তাঁর কাছে প্রমাণ রয়েছে। তাঁর এই বক্তব্যকে বিবেচনায় নিয়ে সরকারের চিহ্নিত করা উচিত, ওই আট উপদেষ্টা কারা। উপদেষ্টারা এসব করলে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দোষ দিয়ে লাভ কী।

সেমিনারে সাড়ে তিন ঘণ্টার আলোচনায় বিগত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নানা অনিয়ম–দুর্নীতির বিষয় উঠে আসে। কর্মকর্তারা কীভাবে বিগত সরকারের হাতিয়ার হয়ে কাজ করেছেন, সে প্রশ্ন তোলেন কেউ কেউ। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা আগামীতে যাতে কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ না করেন, সে আহ্বান করা হয়েছে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। মুখ্য আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব কানিজ মওলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক শাফিউল ইসলাম।

আরও বক্তব্য দেন জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, শহীদ আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী, শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী এবং শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের মা সানজিদা খান দ্বীপ্তি।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সরকারি কর্মকমিশনের সচিব সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম।

সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর মানুষের যে প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা পূরণ হয়নি। বাতাসে কান পাতলে অনেক কথা শোনা যায়। গত ১৫ বছরে কর্মকর্তাদের অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল। এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা। অবিশ্বাসের দেয়াল ভেঙে দেওয়া।

সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী বলেন, অতীতে কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগ সরকারের হয়ে কাজ করেছেন। শেখ হাসিনাকে খুনি, ফ্যাসিস্ট করার পেছনে কর্মকর্তাদেরও ভূমিকা ছিল। ভবিষ্যতে কর্মকর্তারা যেন রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ না করেন সে অনুরোধ থাকবে।

সানজিদা খান বলেন, তাঁর ছেলে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে যে চিঠি লিখে গেছে,সেটি যেন আগামী বছর থেকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কারণ, এই চিঠির মধ্যে দায়িত্ববোধ, দেশপ্রেম ও ধর্মীয় অনুভূতি স্পষ্ট। আগামী প্রজন্মের মানুষ জানুক স্বৈরাচার হটাতে কীভাবে মানুষ রাস্তায় নেমেছে।

মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, মুগ্ধ মারা যায় ১৮ আগস্ট। এরপর সরকারের কাছ থেকে সহায়তার জন্য গণভবনে যেতে তাঁদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। এমনকি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নেতা–কর্মী নিয়ে তাঁদের বাসায় গিয়ে গণভবনে যেতে চাপ দেন। তবু তাঁরা গণভবনে যাননি।

সেমিনারে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, কর্মকর্তাদের যতই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, তাতে কাজ হচ্ছে না। কারণ, সাহসের ঘাটতি। দেশে এখন যত আইন আছে তা যথেষ্ট। আইনের আর দরকার নেই। এখন দরকার আইনের প্রয়োগ।

শহীদ শাহরিয়ার খানের চিঠি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানান মোখলেস উর রহমান। আগামী বছর থেকে এটি কার্যকর করা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, বিগত সরকারের সময় রাজনীতিবিদেরা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাড়ে ১২টা বাজিয়েছে। ভালো কর্মকর্তাদের কোনঠাসা করে ফেলা হয়েছে। ৫ আগস্টের পর মানুষ প্রশ্ন করতে শিখে গেছে। এখন কেউ কিছু করতে চাইলেও পারবে না। প্রশাসনকে কীভাবে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা যায় সে পথ বের করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব বলেন, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের চূড়ান্ত প্রতিফলন ঘটে জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে। গত ১৬ বছরে রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভঙ্গুর করে দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে তাঁরা কোন পথে যাবেন। এত বছর যে পথে হেঁটেছেন সেদিকে? নাকি নতুন যে পথ তৈরি হয়েছে, সে পথে যাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সবুজবাগে ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলিতে পথচারী আহত
  • দেব আনন্দর স্বপ্ন সেদিন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল
  • ই–মেইলের জমানায় কদর নেই ডাকবাক্সের 
  • সিটি করপোরেশন ও পুলিশ কী করছে
  • সেই ‘সুপারম্যান’ এখন ট্রাম্পপন্থী অভিবাসন এজেন্ট
  • শুল্ক আরোপ: ট্রাম্প আসলে ভারতকে ততটা গুরুত্বই দেয়নি
  • দুই কমিশনের সভাপতি-সদস্যদের মর্যাদা ও বেতন-ভাতা নির্ধারণ
  • কাদের চাপে পড়ে কোন দিকে হাঁটছে সরকার: রাশেদা কে চৌধূরী
  • গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন, আন্তর্জাতিক মহলের তীব্র নিন্দা
  • আট উপদেষ্টার সমালোচনায় সাবেক সচিব