নাটোরের বড়াইগ্রামে এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালে কক্ষে ঢুকে ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছেন ছাত্রদলের এক নেতা। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। এ ছাড়া কেন্দ্রসচিবকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) ও চার কক্ষ পরিদর্শককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার বনপাড়া কলেজ পরীক্ষাকেন্দ্রে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার সময় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতার নাম রাকিব সরদার। তিনি বনপাড়া পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সরদার রফিকুল ইসলামের ছেলে।

পরীক্ষাকেন্দ্রের অন্তত পাঁচ পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরুর পরপরই ছাত্রদল নেতা রাকিব সরদার ২০৫ নম্বর কক্ষে ঢোকেন। তিনি কক্ষের ভেতরে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। পরে তিনি অন্যান্য স্থানেও ঘুরে বেড়ান। কিছুক্ষণ পর তিনি তাঁর নিজের ফেসবুক পেজে ওই ছবি পোস্ট করেন। এরপর বিষয়টি সবার নজরে আসে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক তৌহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষা আইন অনুসারে কেন্দ্রের ১৪৪ গজের মধ্যে যেখানে সর্বসাধারণকে ঢুকতে নিষেধ করে মাইকিং করা হয়, সেখানে একটি ছাত্রসংগঠনের নেতা কীভাবে পরীক্ষাকক্ষে ঢুকে ছবি তুলে ফেসবুকে দেন, বোধগম্য নয়। বিষয়টি তাঁরা প্রশাসনকে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে আইনানুগ পদক্ষেপ আশা করছেন।

অভিযুক্ত রাকিব সরদার ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও বন্ধ পাওয়া যায়। কেন্দ্রসচিব কোহিনুর খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। আমাদের দৃষ্টির বাইরে ঘটনাটি ঘটেছে। আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে এ ব্যাপারে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। আমি ২০৫ নম্বর কক্ষের কক্ষ পরিদর্শক নার্গিস আলম, মতিউর রহমান, মোছাব্বের হোসেন ও তছলিম উদ্দিনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছি।’

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারওয়ার হোসেন বলেন, ইউএনও এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রাকিব সরদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি কেন্দ্রসচিবের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। অভিযোগ পেলে অভিযুক্তকে আইনের আওতায় নেওয়া হবে।

বড়াইগ্রামের ইউএনও লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমি ৯টা ৪০ মিনিট থেকে ১০টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত বনপাড়া কলেজকেন্দ্রে ছিলাম। ওই সময় ঘটনাটি চোখে পড়েনি। তবে ছবি ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি জেনেছি। পরে রাকিব সরদার আমার কাছে এসে ক্ষমা চেয়েছেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওসিকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এ ছাড়া কেন্দ্রসচিবকে শোকজ করা হয়েছে। চার কক্ষ পরিদর্শককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ন দ রসচ ব র ক ব সরদ র পর ক ষ ক ছ ত রদল ব যবস থ ফ সব ক ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

ইউএনও অফিস ঘেরাও করে টাকা ফেরত দাবি

কয়েকটি সমবায় সমিতিতে জমা টাকা ফেরতের দাবিতে জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে গ্রাহকরা মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদের মূল ফটকে অবস্থান নেন। এ সময় সেখান থেকে সরে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদির শাহ। বিক্ষোভকারীরা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সেখানে অবরোধ করেন।
ক্ষতিগ্রস্তদের ভাষ্য, উপজেলার ২৩টি সমিতিতে বিপুল অঙ্কের টাকা জমা রেখেছেন তারা। এর মধ্যে আল-আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধনুতেই গ্রাহকের জমার পরিমাণ ৭০০ কোটি টাকার বেশি। তিন-চার বছর ধরে তারা টাকা ফেরতের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু প্রশাসন এসব সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি। 
মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানত রাখা ‘অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’র ব্যানারে সোমবার সকাল ১০টার দিকে শহীদ মিনার এলাকায় জড়ো হন কয়েকশ গ্রাহক। তারা মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে উপজেলা পরিষদের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। 
সেখানে আসা চরনগরের বিধবা রহিমা বেগমের ভাষ্য, ক্ষেতের ফসল ও হাঁস-মুরগি বিক্রি করে তিনি আল-আকাবা সমিতিতে ৫ লাখ টাকা রেখেছিলেন। কিন্তু সেই টাকার জন্য বছরের পর বছর ঘুরছেন। রহিমা বলেন, ‘ভেবেছিলাম বিপদে (টাকা) কাজে লাগবে। এখন আমার সব শেষ। টাকা না পেলে মরে যাব।’ গ্রাহকের টাকা প্রশাসনকে উদ্ধার করে দেওয়ার আকুতি জানান তিনি। 
শতদল সমিতিতে ২০ লাখ টাকা জমা রেখেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুর রহিম। তাঁর গল্পও রহিমার মতো। বালিজুরি পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা আবদুর রহিমের ভাষ্য, ‘আমার পেনশনের সব টাকার সঙ্গে আরও টাকা যুক্ত করে ২০ লাখ টাকা জমা করি মেয়ের বিয়ের জন্য। শতদলের সবাই এখন উধাও। আমি এখন কোথায় যাব? এই টাকা ফেরত না পেলে বেঁচে থাকার কোনো অর্থ নেই।’ বলে কাঁদতে থাকেন তিনি। 
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, তারা দফায় দফায় আন্দোলন করলে সম্প্রতি আল-আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতির পরিচালক মাহবুবুর রহমান, শতদল সমিতির পরিচালক আব্দুল বাছেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু স্বদেশের পরিচালক আনিছুর রহমান ও নবদীপ সমিতির পরিচালক ইব্রাহিম খলিল ও আল-আকাবা সমিতির পরিচালক মির্জা মাজেদ দীর্ঘদিন ধরেই আত্মগোপনে।
বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের টাকা উদ্ধারে প্রশাসনের ভূমিকাকে সন্দেহ করছেন ‘অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’ সভাপতি শিবলুল বারী রাজু। তিনি বলেন, গ্রাহকের টাকা উদ্ধারে তাদের কর্মসূচি চলবে। প্রয়োজন আত্মাহুতির ঘোষণাও দেন।
সংবাদ পেয়ে সেখানে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন মাদারগঞ্জ থানার ওসি সাইফুল্লাহ সাইফ। তিনি সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানান। পাশাপাশি টাকা উদ্ধারের জন্য জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের আশ্বাস দেন। 
তবে পুলিশের এ কর্মকর্তার আশ্বাসে সন্তুষ্ট হননি গ্রাহকরা। তারা সাফ জানিয়ে দেন, আগে একাধিকবার প্রশাসন এমন আশ্বাস দিলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান চালিয়ে যাবেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে অবশ্য তারা আবার কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে সেখান থেকে সরে যান। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইউএনও নাদির শাহর মোবাইল ফোনে কল দিলেও ধরেননি।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে। যারা সমিতিগুলো অডিটে গাফিলতি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি চলছে। সমিতিসংশ্লিষ্টরা সবাই পলাতক। 
ওসি সাইফুল্লাহ সাইফ বলেন, দেড়-দুই মাসের মধ্যে এসব সমিতির তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা এখনও কারাবন্দি। সমিতিতে জড়িত পলাতক ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা করছেন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আদালতের রায়ে জটিলতা, সীতাকুণ্ডের ৭ ইউনিয়নের প্রশাসনিক ক্ষমতা কার
  • রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশের পর হিলির চাল গুদামে অভিযান
  • জাফলংয়ে আবার অভিযান, এবার পাথর ভাঙার ৭৭টি যন্ত্রের বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন
  • রূপগঞ্জ সাংবাদিক ফোরামের উদ্যোগে মৌসুমী ফল উৎসব অনুষ্ঠিত
  • দ্বিতীয় দিনের মতো মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ঘেরাও, হাতিয়ে নেওয়া টাকা ফেরতের দাবি
  • ইউএনও অফিস ঘেরাও করে টাকা ফেরত দাবি