কলম্বো টেস্টের প্রথম দিন বল হাতে কর্তৃত্ব করেছে শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশকে শাসন করেছে ব্যাট হাতে। পাথুম নিশাঙ্কা দুর্দান্ত এক অপরাজিত সেঞ্চুরি করেছেন। দিনেশ চান্ডিমাল সেঞ্চুরি বঞ্চিত হলেও দিন শেষে স্বাগতিকরা ৭৮ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ২৯০ রান তুলেছে। ৪৩ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় দিনই টেস্ট হাতের মুঠোয় নিয়েছে। 

নিশাঙ্কা-চান্ডিমালের দাপট: দ্বিতীয় দিন সকালেই হাতে থাকা দুই উইকেট হারিয়ে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ইনিংস শুরু করে ৮৮ রানের ওপেনিং জুটি পায় লঙ্কানরা। লাহিরু উদারা ৪০ রান করে ফেরেন। এরপর পাথুম নিশাঙ্কা ও দিনেশ চান্ডিমাল ১৯২ রানের জুটি গড়ে ম্যাচই একপ্রকার বাংলাদেশের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। নিশাঙ্কা ২৩৮ বলে ১৪৬ রান করেছেন। ১৮টি চার মেরেছেন তিনি। চান্ডিমাল ৯৩ রান করে আউট হন। ১০টি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা তোলেন তিনি। উইকেট দুটি নেন তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান।  

আড়াইশ’ ছোঁয়া পুঁজি: কলম্বো টেস্টের দ্বিতীয় দিন সকালেই সাজঘরে ফেরেন এবাদত হোসেন। উপায় নেই দেখে ব্যাট চালিয়ে খেলেছেন তাইজুল ইসলাম। ২২০ রানে প্রথম দিন শেষ হওয়া ইনিংস ২৪৭ রানে নিয়েছেন তিনি। তাইজুল খেলেছেন ৩৩ রানের ইনিংস। সকালে বাংলাদেশের ইনিংসে ৭.

৩ ওভার স্থায়ী ছিল।   

মুশফিক-লিটনের আত্মহনন: কলম্বোয় ৭৬ রানে বাংলাদেশ ৪ উইকেট হারানোর পর মিডল অর্ডারের দুই ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস দলকে সেরা ভরসাটা দিচ্ছিলেন। ততক্ষণে বল পুরনো হয়েছে, উইকেট সহজ হয়েছে। নির্ভার ব্যাটিংও করছিলেন তারা। কিন্তু ৬৭ রানের জুটি দিয়ে আত্মঘাতী শট খেলে আউট হন লিটন। পরেই সুইপ খেলে সাজঘরে ফেরেন মুশফিক তারা। তারা যথাক্রমে ৩৪ ও ৩৫ রান করেন। 

লাঞ্চ করে সাদমান-শান্তর ভাত ঘুম: শুরুতে এনামুল বিজয় ও মুমিনুল হক ফিরলেও ওপেনার সাদমান ইসলাম ভালো ব্যাটিং করছিলেন। গল টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি পাওয়া নাজমুল শান্ত ক্রিজে এসে তাকে নিয়ে লাঞ্চে যান। দল তখন দুই উইকেট হারিয়েছে। কিন্তু লাঞ্চের পরই তিন রান করে যোগ করে সাদমান ও শান্ত আউট হন। সাদমান ৪৬ রান করেন। শান্ত করেন ৮। 

অভিষিক্ত সোনালের বাজিমাত: শ্রীলঙ্কার হয়ে প্রথম ইনিংসে আসিথা ফার্নান্দো ৩ উইকেট নিয়েছেন। দলে ফেরা বাঁ হাতি পেসার বিশ্ব ফার্নান্দো নিয়েছেন ২ উইকেট। তবে অভিষিক্ত সোনাল দিনুশা বাজিমাত করেছেন। তিনি ৩ উইকেট নেন যার প্রথম দুটি ছিল লিটন ও মুশফিকের। শেষ ব্যাটার তাইজুলকেও ফিরিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ দিনের সেরা তিন উইকেটই গেছে তার দখলে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উইক ট হ র স দম ন ত ইজ ল র ন কর কলম ব প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েল-ভারত যেভাবে পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে চেয়েছিল

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সাবেক প্রধান জর্জ টেনেট তাঁকে ‘ওসামা বিন লাদেনের মতোই বিপজ্জনক’ বলে মনে করতেন এবং মোসাদের সাবেক প্রধান শাবতাই শ্যাভিট তাঁকে হত্যা না করার জন্য আফসোস করেছিলেন। তিনি হচ্ছে আব্দুল কাদির খান, পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির জনক। পাকিস্তানের প্রায় ২৫০ মিলিয়ন পাকিস্তানি নাগরিকদের কাছে একজন কিংবদন্তি, একজন জাতীয় বীর। এই পরমাণুবিজ্ঞানী ১৯৩৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৮৫ বছর বয়সে ২০২১ সালে মারা যান।

আব্দুল কাদির খান ইরান, লিবিয়া এবং উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক কর্মসূচিতে সহায়তার জন্য একটি গোপন অত্যাধুনিক নেটওয়ার্কও পরিচালনা করেছিলেন। এ দেশগুলোর মধ্যে উত্তর কোরিয়াই শুধু পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে সক্ষম হয়েছে।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তারা পাকিস্তানকে পারমাণবিক শক্তি হওয়া থেকে বিরত রাখতে নানা গুপ্তহত্যার চেষ্টা করেছিল এবং হুমকি দিয়েছিল। ইসরায়েল নিজেও পারমাণবিক শক্তির অধিকারী দেশ, যদিও তারা তা কখনো স্বীকার করে না।

১৯৮০-এর দশকে ইসরায়েল ভারতের সহায়তায় পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা ফেলার একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছিল। যদিও ভারত সরকার সেই পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত বাতিল করে দেয়।

আব্দুল কাদির খান বিশ্বাস করতেন যে একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করে তিনি তাঁর দেশকে বিদেশি হুমকি থেকে বিশেষ করে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী ভারত থেকে রক্ষা করেছেন। আজ পাকিস্তানি নাগরিকেরা তেমনটিই মনে করে।

‘কেন একটি ইসলামিক বোমা নয়?’

প্রতিবেশী দেশ ভারত যখন প্রথম পারমাণবিক বোমা তৈরি করে পাকিস্তানও তখন এমন বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭৪ সালের ১৮ মে ভারত তার প্রথম পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা করে, যার সাংকেতিক নাম ছিল ‘স্মাইলিং বুদ্ধ’। এরপর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো অবিলম্বে তাঁর নিজের দেশের জন্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির শপথ নেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা ঘাস বা লতাপাতা খাব, এমনকি ক্ষুধার্ত থাকব, কিন্তু আমরা নিজেদের জন্য একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করব।’

তিনি ঘোষণা করেন, ‘একটি খ্রিষ্টান বোমা আছে, একটি ইহুদি বোমা আছে এবং এখন একটি হিন্দু বোমাও আছে। কেন একটি ইসলামিক বোমা থাকবে না?’

ব্রিটিশ ভারতে জন্মগ্রহণ করা আব্দুল কাদির ১৯৬০ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান নিয়ে ডিগ্রি নেন। এরপর বার্লিনে মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ধাতু প্রকৌশল বিদ্যা) নিয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামেও পড়াশোনা করেন।

১৯৭৪ সালে আব্দুল কাদির আমস্টারডামের অন্যতম পারমাণবিক জ্বালানি সংস্থা ইউরেনকোর একজন সাবকন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করছিলেন। কোম্পানিটি ইউরোপের পারমাণবিক চুল্লির জন্য পারমাণবিক জ্বালানি হিসেবে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরবরাহ করত।

আব্দুল কাদির ইউরেনকোর গোপন এলাকায় প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিলেন, যেখান ছিল বিশ্বের সবচেয়ে সেরা সেন্ট্রিফিউজের ব্লুপ্রিন্ট। সেখানে প্রাকৃতিক ইউরেনিয়ামকে পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য সমৃদ্ধ করা হতো এবং তা পারমাণবিক বোমার জ্বালানিতে রূপান্তরিত করা হতো।

১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি নেদারল্যান্ডস থেকে হঠাৎ করে পাকিস্তানে চলে যান। বিষয়টি ছিল অনেকটা রহস্যময়। যাওয়ার সময় তিনি বলে যান, ‘পাকিস্তানে এমন একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যা আমি প্রত্যাখ্যান করতে পারি না।’

পরে আব্দুল কাদিরের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডস থেকে ইউরেনিয়াম সেন্ট্রিফিউজের একটি ব্লুপ্রিন্ট চুরি করার অভিযোগ ওঠে, যা ইউরেনিয়ামকে অস্ত্র-গ্রেডের জ্বালানিতে পরিণত করতে পারে।

সেই বছরই জুলাই মাসে তিনি পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে একটি গবেষণা পরীক্ষাগার স্থাপন করেন, যেখানে পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরি করা শুরু হয়।

জুলফিকার আলী, ইন্দিরা গান্ধী ও মুয়াম্মার গাদ্দাফি

সম্পর্কিত নিবন্ধ