উজিরপুরে অন্তত ২৫ যাত্রী নিয়ে ট্রাক উল্টে পড়ল পুকুরে, নিহত ২
Published: 26th, June 2025 GMT
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল এলাকায় একটি যাত্রীবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে উল্টে পড়ে দুই নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় শিশুসহ অন্তত পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন গৌরনদী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রহমান। দুর্ঘটনার ফলে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘণ্টাখানেক পর এই মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এ দুর্ঘটনায় নিহত দুই নারী হলেন মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার খরিয়া গ্রামের সবুজ মিয়ার স্ত্রী তুফানী বেগম (৩৫) এবং শরীয়তপুর সদর উপজেলার পালং ইউনিয়নের চরদংশা গ্রামের তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী রাজিয়া বেগম (৩০)। এ ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা হলেন আনিরুল (২), আনিশা (৫), নাসিমা (৮), শারমিন (৩০) ও রাহিমা বেগম (৪৫)। তাঁরা সবাই মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার খরিয়া এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ জানায়, মুন্সিগঞ্জ থেকে বেদে সম্প্রদায়ের অন্তত ২৫ জন নারী-পুরুষ ও শিশুদের নিয়ে একটি ট্রাক পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার উদ্দেশে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে উজিরপুরের বামরাইল এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। এতে ট্রাকটি সড়কের পাশে খাদে পড়ে গিয়ে উল্টে পুকুরে পড়ে যায়। এতে ট্রাকে থাকা সব যাত্রীই কমবেশি আহত হয়েছেন। তবে গুরুতর আহত সাতজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে দুজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। দুর্ঘটনায় ট্রাকের প্রায় সব যাত্রী কমবেশি আহত হন।
এদিকে দুর্ঘটনার পরপরই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। উজিরপুর থানার পুলিশ, গৌরনদী ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধারকাজে অংশ নেন। বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উভয় পাশে অন্তত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। ফলে সাধারণ যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ওসি আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল র দ র ঘটন ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
জ্বালানি নিরাপত্তায় গ্যাস অনুসন্ধানের বিকল্প নেই
কারখানায় গ্যাসের চাপ কত জেনে দিন শুরু করেন তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল কারখানার মালিকরা। এ তথ্যেই নির্ভর করে কারখানা কতটুকু সক্ষমতা নিয়ে চলবে বা আদৌ চালু রাখা যাবে কিনা। জ্বালানি সংকট এমন পর্যায়ে যে, বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন খরচ বাড়ছে, হারাচ্ছে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত’ শীর্ষক সিপিডি আয়োজিত সংলাপে বক্তারা এমন মত দেন। উদ্যোক্তারা বলেন, স্বল্পমেয়াদি সংকট সমাধানের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে সাশ্রয়ী জ্বালানি ও বিদ্যুতের নিশ্চয়তা চান তারা। কারখানার ছাদে ‘ছাদ আমার, বিনিয়োগ আপনার’ নীতিতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প আনলে বিদ্যুৎ সংকট কমানো সম্ভব। সংলাপে অংশ নেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, গবেষক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও শিক্ষাবিদরা। সঞ্চালনা করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম।
ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার খাত জ্বালানি। তবে গত সরকারের সময় লুটপাট, অপচয় ও দুর্নীতি বেশি হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময় নীতি নির্ধারণেও দুর্বলতা দেখা গেছে। স্বল্প মেয়াদে সংকট মোকাবিলায় সরকার এলএনজির দিকে ঝুঁকেছে। অথচ থ্রি-ডি সিসমিক সার্ভে না করায় ভবিষ্যতের জন্য জ্বালানি নিশ্চয়তা হুমকির মুখে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল আলম বলেন, সরকার বদলালেও লুটপাট ও আমদানিনির্ভরতার ধারা থেমে নেই। এখন সময় এসেছে, উদ্যোক্তারা সরাসরি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কাছে বলুক– ‘আপনারা থামেন, এখন বিইআরসির মাধ্যমে সমাধান খুঁজব।’
বিকেএমইএ পরিচালক আকতার হোসেন অপূর্ব বলেন, দৈনিক ছয় থেকে সাত ঘণ্টা গ্যাস ও বিদ্যুৎ না পেলে ডাইং এবং বস্ত্র খাতের কারখানার কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েন তারা। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহে নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মনোয়ার মোস্তফা বলেন, সোলার প্যানেল ও ইনভার্টার আমদানিতে নীতিগত অসামঞ্জস্য রয়েছে। একত্রে আনলে ১ শতাংশ শুল্ক, আলাদাভাবে আনলে বেশি। সৌর খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ থাকলেও অর্থায়ন জটিলতা ও সরকারি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা আগ্রহ নষ্ট করছে।
বিটিএমইএর পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রাজিব হায়দার বলেন, গ্যাস সংকটে উৎপাদন না হওয়ায় ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন অনেকেই। অথচ দাম বাড়ানো হয়েছে ১৬ থেকে ৪২ টাকায়। গ্যাস সংকটের কথা বললে সরকারের কর্মকর্তারা বলেন, ‘কার্যক্ষমতা বাড়ান’। আমি তো বাড়িয়েছি। চতুর্থ প্রজন্মের মেশিন দিয়ে কারখানা করেছি। আপনি কী কার্যক্ষমতা বাড়ালেন? আপনার সিস্টেমলস এত বেশি কেন? আবার এ লসের দায় কেন শিল্পের ঘাড়ে? তিনি বলেন, কয়লা ব্যবহার না করে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি আর্থিকভাবে টেকসই নয়।
সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হেলেন প্রিয়তি তাঁর উপস্থাপনায় বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত আটটি প্রধান সংকটে ভুগছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর আর্থিক দুর্দশা, ভর্তুকিনির্ভর বাজেট, গ্যাস ঘাটতি, ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানি, অকার্যকর বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, অস্বচ্ছ মূল্য নির্ধারণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ স্থবিরতা, এবং জ্বালানি রূপান্তর নীতিতে ধীরগতি ও সমন্বয়ের অভাব।
সিপিডি বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরে। এর অন্যতম হলো– জ্বালানি খাতের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি আর্থিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা প্রণয়ন, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের শর্ত পুনর্বিন্যাস, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার করে দেশীয় অনুসন্ধান জোরদার, সৌর ও নবায়নযোগ্য প্রযুক্তিপণ্য আমদানিতে শুল্ক-কর কমানো, স্মার্ট গ্রিডে বরাদ্দ বাড়ানো এবং এলএনজি ও কয়লা আমদানিতে কর ছাড় তুলে নিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা কমানোর বাস্তবমুখী পদক্ষেপ।
বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, আলোচনা হয়, সমাধান হয় না। গ্যাস দিতে না পারলে সরকার যেন অন্তত বলে দেয়, ‘পারব না, বিলও নেব না’।