ইসরায়েলি গুপ্তচরদের সঙ্গে আরও যাঁরা ইরানকে দুর্বল করছেন
Published: 26th, June 2025 GMT
বহু বছর ধরে ইসরায়েলি গুপ্তচরেরা ইরানের ভেতর যে বিস্তৃত তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেটিরই ফলাফল ‘শত্রু দেশের’ ওপর এতটা নিখুঁতভাবে হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে ইসরায়েল। ১৩ জুন ইরানে আকস্মিক হামলার পর ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো এভাবেই নিজেদের গুপ্তচরদের প্রশংসা করে খবর প্রচার করে।
ওই খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি গোয়েন্দারা ইরানের নিরাপত্তা কাঠামোর বড় একটি অংশে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছেন।
সেদিন ইসরায়েলের হামলায় ইরানের শীর্ষ কয়েকজন সামরিক কমান্ডার ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হন।
ইসরায়েলের হয়ে ইরানে শুধু ইসরায়েলি গোয়েন্দারাই গুপ্তচরের কাজ করছেন না; বরং অনেক ইরানি তাঁদের দোসর হিসেবে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছেন। এমনটাই বলেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক হামজা আত্তার।
হামজা আত্তার লুক্সেমবার্গ থেকে আল–জাজিরাকে বলেন, সম্ভবত ইরানের ভেতর ইসরায়েলের ৩০ থেকে ৪০টি গুপ্তচর সেল সক্রিয় রয়েছে।
এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘তাঁদের অধিকাংশই সরাসরি ইসরায়েলের গোয়েন্দা নন; বরং তাঁদের স্থানীয় সহযোগী। তাঁরাও ইসরায়েলকে দুর্বল করছেন। এসব দলের মধ্যে কেউ ইসরায়েল থেকে অস্ত্র পাচারের দায়িত্বে থাকেন, কেউ হামলার কাজে নিয়োজিত এবং অন্যরা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেন।’
ইসরায়েলের সঙ্গে সর্বশেষ সংঘাত শুরু হওয়ার পর ইরান এখন পর্যন্ত তেল আবিবের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছে। তাঁদের মধ্যে ইদ্রিস আলী, আজাদ শোজাই ও রসুল আহমদ নামের তিন ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সকালে।
ইরানের বিচার বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়, হত্যাকাণ্ড চালানোর উদ্দেশ্যে তাঁরা দেশটির ভেতর সরঞ্জাম প্রবেশ করানোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। জায়নবাদী শাসকদের (ইসরায়েল) সহযোগিতা করার অভিযোগে তাঁদের গ্রেপ্তার করে বিচার করা হয়। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর উরমিয়ায় ওই তিন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তুরস্কের সীমান্তের কাছে উরমিয়ার অবস্থান।
ইসরায়েলের গুপ্তচর নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সন্দেহে গত ১২ দিনে ৭ শতাধিক লোককে গ্রেপ্তার করেছে ইরানের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনী।এ ছাড়া ইসরায়েলের গুপ্তচর নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সন্দেহে গত ১২ দিনে ৭ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ইরানের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনী। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
এই সন্দেহভাজনদের মধ্যে ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ইরানের খুজেস্তান প্রদেশ থেকে। ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে।
ইরানে ইসরায়েলি গোয়েন্দা তৎপরতার ধরন
১৩ জুন ইরানে হামলার পরপরই, ‘নজিরবিহীন’ এ হামলার পেছনে থাকা ইসরায়েলি গোয়েন্দা অভিযানের নানা বিবরণ দেশটির সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা মহলের শীর্ষ সদস্যরা একাধিক সাক্ষাৎকারে কীভাবে এ হামলা পরিচালনায় একসঙ্গে মানব গোয়েন্দা (হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স) ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করা হয়েছে, তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁদের দাবি অনুযায়ী, এর মাধ্যমে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার বড় অংশ অকার্যকর করে দেওয়া সম্ভব হয়।
১৭ জুন, হামলার কয়েক দিন পর, সংবাদ সংস্থা এপি ইসরায়েলের গোয়েন্দা ও সামরিক বাহিনীর অন্তত ১০ জন কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে, যাঁরা ওই হামলার বিষয়ে জানতেন।
মোসাদের সাবেক গবেষণা পরিচালক সিমা শাইন এপিকে বলেন, ‘এ হামলা মোসাদের বহু বছরের পরিকল্পনা ও পরিশ্রমের ফল।’
ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনে অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদের উদ্ধার তৎপরতা। তেহরান, ইরান, ১৩ জুন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ইসর য় ল র গ ন ইসর য় ল গ প তচর ক র যকর
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আরও তিনজনকে ফাঁসি দিল ইরান
ইসরায়েলের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তিন ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করেছে ইরান। আজ বুধবার ইরানের বিচার বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার এক দিনের মাথায় এ ঘটনা ঘটল।
ইরানের বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইদ্রিস আলী, আজাদ শোজাই ও রাসুল আহমদ রাসুল নামের তিন ব্যক্তি হত্যাকাণ্ড চালানোর উদ্দেশ্যে দেশটির ভেতরে সরঞ্জাম ঢোকানোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। জায়নবাদী শাসককে (ইসরায়েল) সহযোগিতা করার অভিযোগে তাঁদের গ্রেপ্তার করে বিচার করা হয়।
আরও পড়ুন১২ দিনের সংঘাতে ১৪ ইরানি বিজ্ঞানীকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের, ইরানের ক্ষতি কতটা১ ঘণ্টা আগেবিবৃতিতে আরও বলা হয়, আজ সকালে রায় কার্যকর করা হয়েছে এবং তাঁদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে।
ইরানের বিচার বিভাগের তথ্য অনুসারে, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর উরমিয়ায় ওই তিন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তুরস্কের সীমান্তের কাছে উরমিয়ার অবস্থান।
তেহরান প্রায়ই বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা, বিশেষ করে চিরশত্রু ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও মৃত্যুদণ্ড দিয়ে থাকে।তিনজনের ফাঁসি কার্যকর করার আগের ছবিও প্রকাশ করেছে বিচার বিভাগ। ছবিতে তাঁদের নীল রঙের কয়েদি-পোশাকে দেখা গেছে।
তেহরান প্রায়ই বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা, বিশেষ করে চিরশত্রু ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও মৃত্যুদণ্ড দিয়ে থাকে।
১৩ জুন ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তেহরান ঘোষণা দিয়েছিল, গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচারকাজ শেষ করা হবে।
আরও পড়ুনইরানের ভেতর ইসরায়েলের গোয়েন্দা তৎপরতার জাল কতটা বিস্তৃত১৫ ঘণ্টা আগেএর আগে গত রোববার ও সোমবার ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে কাজ করার অভিযোগে কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে ইরান।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য বলছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে ইরান এখন চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ।