বহু বছর ধরে ইসরায়েলি গুপ্তচরেরা ইরানের ভেতর যে বিস্তৃত তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেটিরই ফলাফল ‘শত্রু দেশের’ ওপর এতটা নিখুঁতভাবে হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে ইসরায়েল। ১৩ জুন ইরানে আকস্মিক হামলার পর ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো এভাবেই নিজেদের গুপ্তচরদের প্রশংসা করে খবর প্রচার করে।

ওই খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি গোয়েন্দারা ইরানের নিরাপত্তা কাঠামোর বড় একটি অংশে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছেন।

সেদিন ইসরায়েলের হামলায় ইরানের শীর্ষ কয়েকজন সামরিক কমান্ডার ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হন।

ইসরায়েলের হয়ে ইরানে শুধু ইসরায়েলি গোয়েন্দারাই গুপ্তচরের কাজ করছেন না; বরং অনেক ইরানি তাঁদের দোসর হিসেবে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছেন। এমনটাই বলেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক হামজা আত্তার।

হামজা আত্তার লুক্সেমবার্গ থেকে আল–জাজিরাকে বলেন, সম্ভবত ইরানের ভেতর ইসরায়েলের ৩০ থেকে ৪০টি গুপ্তচর সেল সক্রিয় রয়েছে।

এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘তাঁদের অধিকাংশই সরাসরি ইসরায়েলের গোয়েন্দা নন; বরং তাঁদের স্থানীয় সহযোগী। তাঁরাও ইসরায়েলকে দুর্বল করছেন। এসব দলের মধ্যে কেউ ইসরায়েল থেকে অস্ত্র পাচারের দায়িত্বে থাকেন, কেউ হামলার কাজে নিয়োজিত এবং অন্যরা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেন।’

ইসরায়েলের সঙ্গে সর্বশেষ সংঘাত শুরু হওয়ার পর ইরান এখন পর্যন্ত তেল আবিবের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছে। তাঁদের মধ্যে ইদ্রিস আলী, আজাদ শোজাই ও রসুল আহমদ নামের তিন ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সকালে।

ইরানের বিচার বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়, হত্যাকাণ্ড চালানোর উদ্দেশ্যে তাঁরা দেশটির ভেতর সরঞ্জাম প্রবেশ করানোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। জায়নবাদী শাসকদের (ইসরায়েল) সহযোগিতা করার অভিযোগে তাঁদের গ্রেপ্তার করে বিচার করা হয়। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর উরমিয়ায় ওই তিন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তুরস্কের সীমান্তের কাছে উরমিয়ার অবস্থান।

ইসরায়েলের গুপ্তচর নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সন্দেহে গত ১২ দিনে ৭ শতাধিক লোককে গ্রেপ্তার করেছে ইরানের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনী।

এ ছাড়া ইসরায়েলের গুপ্তচর নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সন্দেহে গত ১২ দিনে ৭ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ইরানের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনী। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ করা হয়েছে।

এই সন্দেহভাজনদের মধ্যে ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ইরানের খুজেস্তান প্রদেশ থেকে। ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে।

ইরানে ইসরায়েলি গোয়েন্দা তৎপরতার ধরন

১৩ জুন ইরানে হামলার পরপরই, ‘নজিরবিহীন’ এ হামলার পেছনে থাকা ইসরায়েলি গোয়েন্দা অভিযানের নানা বিবরণ দেশটির সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ইসরায়েলের গোয়েন্দা মহলের শীর্ষ সদস্যরা একাধিক সাক্ষাৎকারে কীভাবে এ হামলা পরিচালনায় একসঙ্গে মানব গোয়েন্দা (হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স) ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)  ব্যবহার করা হয়েছে, তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁদের দাবি অনুযায়ী, এর মাধ্যমে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার বড় অংশ অকার্যকর করে দেওয়া সম্ভব হয়।

১৭ জুন, হামলার কয়েক দিন পর, সংবাদ সংস্থা এপি ইসরায়েলের গোয়েন্দা ও সামরিক বাহিনীর অন্তত ১০ জন কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে, যাঁরা ওই হামলার বিষয়ে জানতেন।

মোসাদের সাবেক গবেষণা পরিচালক সিমা শাইন এপিকে বলেন, ‘এ হামলা মোসাদের বহু বছরের পরিকল্পনা ও পরিশ্রমের ফল।’

ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনে অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদের উদ্ধার তৎপরতা। তেহরান, ইরান, ১৩ জুন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ইসর য় ল র গ ন ইসর য় ল গ প তচর ক র যকর

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে চোরাকারবারিদের নৌকার ধাক্কায় টহল নৌকা ডুবে বিজিবি সদস্য নিখোঁজ

সিলেটের গোয়াইনঘাটে ভারতীয় চোরাকারবারিদের নৌকার ধাক্কায় বিজিবির টহল নৌকা ডুবে এক বিজিবি সদস্য নিখোঁজ হয়েছেন।

আজ শনিবার বিকেল ৫টার দিকে গোয়াইনঘাট সদর ইউনিয়নের আহারকান্দি আমবাড়ী এলাকায় ইছাম‌তী নদীতে এ ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ বি‌জি‌বি সদস‌্য মাসুম বিল্লাহ সিপাহি হিসেবে কর্মরত।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ শনিবার বিকেলে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদর ও পশ্চিম জাফলং দিয়ে বয়ে যাওয়া পিয়াইন নদের অংশ ইছাম‌তী নদীতে নৌকায় টহল দিচ্ছিলেন বি‌জি‌বি সদস‌্যরা। বিকেল ৫টার দিকে পন্নগ্রাম ও আমবাড়ীর মধ্যবর্তী স্থানে নৌকাযোগে দুই বিজিবি সদস্য ভারতীয় চোরাচালানের পণ‌্য প‌রিবহন করা নৌকাকে ধাওয়া দেন। একপর্যায়ে চোরাচালানের পণ‌্য বোঝাই নৌকার ধাক্কা লেগে দু‌টি নৌকাই পানিতে ডুবে যায়। এ সময় বি‌জি‌বির টহল নৌকায় থাকা এক সদস্য ও মাঝি তীরে উঠতে পারলেও সিপাহি মাসুম বিল্লাহ উঠতে পারেননি। নিখোঁজের পর থেকে স্থানীয় লোকজন নদীতে নেমে প্রথমে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। পরে খবর পেয়ে বি‌জি‌বি, পু‌লিশ ও ফায়ার সা‌র্ভিসের সদস‌্যরাও নদীতে উদ্ধার তৎপরতা শু‌রু করেন।

৪৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হক জানান, ভারতীয় চোরাই পণ্যবাহী নৌকার ধাক্কায় টহল নৌকা ডুবে গিয়ে এক সিপাহি নিখোঁজ রয়েছেন।

সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার মো. তোফায়েল আহমদ রাত সোয়া আটটার দিকে বলেন, নিখোঁজ বি‌জি‌বি সদস্যকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিলেটে চোরাকারবারিদের নৌকার ধাক্কায় টহল নৌকা ডুবে বিজিবি সদস্য নিখোঁজ