নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সংখ্যা ও বরাদ্দ—দুটিই কমেছে। অথচ বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, দেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ আগামী এক বছরে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে। সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ কমায় দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আরও বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন আয়োজিত ‘বৈষম্য নিরসনে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক এস এম জুলফিকার আলী। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সংখ্যা ১৪০টি থেকে কমিয়ে ৯৫টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। বরাদ্দ কমে হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

প্রবন্ধে বলা হয়, পেনশন, কৃষি ভর্তুকি ও অন্যান্য খাতে যুক্ত কর্মসূচিগুলো বাদ দিলে প্রকৃত সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ দাঁড়ায় ৫৭ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির মাত্র ০.

৯২ শতাংশ। অথচ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ হওয়া উচিত জিডিপির ৫ শতাংশ।

প্রবন্ধে আরও বলা হয়, চলতি বাজেটে কিছু ভাতা ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এবং উপকারভোগীর সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই বরাদ্দ দারিদ্র্যসীমার আয়ের তুলনায় এখনো অনেক কম।

মতবিনিময় সভায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান বলেন, সরকার বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, বেদে জনগোষ্ঠীসহ অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য একটি তথ্যভান্ডার তৈরি করেছে। প্রায় ৩৬ লাখ প্রতিবন্ধী ইতিমধ্যে এই তালিকায় রয়েছেন। ভাতা বিতরণে আগে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। কিন্তু এখন নগদ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনিয়ম রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, দ্বৈত সুবিধা গ্রহণ রোধে এবং সঠিক উপকারভোগী নির্বাচনে সরকার কাজ করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা কী, কাকে দেব এবং কীভাবে দেব, সেগুলো নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।

প্রয়োজনে সামাজিক উদ্যোগকে কাজে লাগাতে হবে, রাষ্ট্রের ওপর চাপ কমাতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোর মাধ্যমে নতুন করে দরিদ্র হওয়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ কোনো বরাদ্দ নেই। দারিদ্র্য দূরীকরণের টেকসই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারিনি আমরা। দুর্বৃত্তায়নের ধারাকে বাধাগ্রস্ত করার উল্লেখযোগ্য দিকনির্দেশনাও নেই এই বাজেটে।’

মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী। সভাটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের উপপরিচালক কানিজ ফাতেমা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রবন ধ বর দ দ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রত্যেক জেলায় হাসপাতালের মত সিনেমা হলও দরকার: জাহিদ হাসান

‘প্রত্যেকটা জেলায় শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য যেমন হাসপাতাল আছে তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সিনেমা হল থাকা দরকার। সুস্থ বিনোদন থাকলে মানুষ নেশা, হানাহানি ও মব জাস্টিস থেকে দূরে থাকবে। আমাদের যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান দরকার তেমনি বিনোদনের জন্য সিনেমা হল দরকার।’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানী বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘উৎসব’ সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী শেষে কথাগুলো বলছিলেন নন্দিত অভিনেতা জাহিদ হাসান।

‘উৎসব’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান। চরিত্রের নাম জাহাঙ্গীর। শুটিংয়ের বহুদিন পেরিয়ে গেলেও জাহাঙ্গীর চরিত্রের মধ্যে থেকে এখনো বের হতে পারেননি বলেন জানালেন এই অভিনেতা।

জাহিদ হাসান বলেন, ‘এখনো আমি এই চরিত্রটার মধ্যে ডুবে আছি। সিনেমার আমার চরিত্রের নাম জাহাঙ্গীর। আসলে আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের মাঝে জাহাঙ্গীর লুকিয়ে আছে। কারণ, আমাদের প্রত্যেকটি মানুষের মাঝে হিরোইজম আছে, ভিলেন আছে। আছে উপলব্ধি করার ক্ষমতা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের সেই রিয়েলাইজেশনের সময়টা আছে। কখন মৃত্যু হয় আমরা জানি না। এই রিয়েলাইজ যদি আমাদের মধ্যে থাকে তাহলে আজ আমরা যারা জাহাঙ্গীরের মত আছি, কাল আমরা ভালো হয়ে যাবো।’

ঈদের সিনেমা মানেই এখন যেন অ্যাকশন অথবা থ্রিলার। গত কয়েক বছরে ঈদে বাজিমাত করা সিনেমাগুলোর দিকে তাকালে এমনটাই মনে হতে পারে। সেসব থেকে বেরিয়ে হাস্যরস পরিবার এবং সম্পর্কের গল্পে এবার ঈদে বাজিমাত করেছে ‘উৎসব’। এই সফলতার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করলেন প্রত্যেক শিল্পীর সততাকে।

জাহিদ হাসানের কথায়, ‘প্রডাক্টশন বয় থেকে শুরু করে এই সিনেমার সঙ্গে আমরা যারা যুক্ত ছিলাম তারা প্রত্যেকেই অনেক সৎ ছিলাম। অভিনয় নিয়ে কোনো অসৎ অবস্থার মধ্যে আমরা যাইনি। এটাই মনে হয় আমাদের সফলতার বড় বিষয়। এই সিনেমার প্রত্যেকটি দৃশ্যের সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িয়ে আছে।’

করোনা মহামারির পর অভিনয়ে খুব একটা দেখা যায়নি জাহিদ হাসানকে। নির্মাতাদের সঙ্গে অভিনয় নিয়ে খুব একটা কথা হয়নি তার। কারোনার পর ‘উৎসব’-ই তার প্রথম সিনেমা।

তার ভাষ্য, ‘করোনার পর খুব একটা অভিনয় করা হয়নি। আমাকে অভিনয়ে নেওয়া বা না নেওয়াটা নির্মাতাদের দায়িত্ব। বলতে গেলে গত কয়েকবছর সেভাবে সুযোগও আসেনি। ‘উৎসব’ সিনেমার মধ্যে সেই সুযোগটা এলো। অভিনয় করলাম। দর্শক প্রতিক্রিয়া দেখে বুঝেছি অনন্ত ফেল করিনি।’

সিনেমার হলের সংখ্যা কম হওয়ায় দেশের সিনেমা সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছচ্ছে না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন জাহিদ হাসান। সেইসঙ্গে জেলা প্রশাসকদের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।

জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জ। আমার বোন ফোন করে বললেন এখানে তো সিনেমা হলে নেই। তাই আমরা সিনেমা দেখতে পারছি না। এই কথা শুনে কষ্ট পেয়েছি। এটা সত্য সিরাজগঞ্জের মত দেশের অনেক বড় শহরে সিনেমা হল নেই। জেলা প্রশাসকসহ দায়িত্বশীল পর্যায়ে যারা আছে তাদের সবাইকে অনুরোধ করবো তারা যেন প্রত্যেকটি জেলায় সিনেমা হলের ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়ে তার বাস্তবায়ন করেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ