অন্তর্বর্তী সরকারের ১০ মাস পেরিয়ে গেছে। কেউ কেউ ঠাট্টা করে বলেন, ইতিমধ্যে তারা তিনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাড়ে তিন মেয়াদ পার করেছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর সরকার রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু সংস্কার কমিশনও করেছে। এর মধ্যে সংবিধান ও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন, এটা কেউ অস্বীকার করবে না। কিন্তু যেসব বিষয়ের সঙ্গে নির্বাচন ও সংবিধান জড়িত নয়, সেসব ক্ষেত্রেও সংস্কার তেমন দৃশ্যমান নয়।

এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগের সংক্ষিপ্ত রূপরেখাসংবলিত পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছে বলে সরকারি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রতিবেদনে বলা হয়। সংস্কারের আওতায় আনা উল্লেখযোগ্য খাত হলো নির্বাচনব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনা, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও শিশু সুরক্ষা। এ ছাড়া শিক্ষা (প্রযুক্তিগত ও কর্মমুখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণসহ), সামাজিক সুরক্ষা, শ্রম অধিকার, অভিবাসন, মানবাধিকার, যুব উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও রেলপথ, প্রশাসন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সরকারের অগ্রাধিকারে শিক্ষা নেই। এ নিয়ে কোনো কমিশনও হয়নি।

আইন ও বিচার বিষয়ে কিছু অগ্রগতি আছে। বিচার খাতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’ গঠন করা হয়েছে, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে আইন হওয়াটাই যথেষ্ট নয়, কীভাবে তার বাস্তবায়ন হয়, সেটাই দেখার বিষয়। সরকার সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় গঠনের লক্ষ্যে প্রণীত অধ্যাদেশের খসড়া করলেও চূড়ান্ত করেনি। এটা অবিলম্বে চূড়ান্ত হওয়া প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হলে নিম্ন আদালতের প্রশাসনে বিদ্যমান নির্বাহী ও বিচার বিভাগের দ্বৈত নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটবে।

নির্বাচনী সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকার জাতীয় সংসদের আসন পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে যে খসড়া অধ্যাদেশ প্রণয়ন করেছে, তার গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। ২০০৮ সালে এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন যে গ্রামাঞ্চলের আসন কমিয়ে শহরাঞ্চলে আসন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা অযৌক্তিক। এর মাধ্যমে শহুরে লোকদের বেশি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অবহেলিত গ্রামকে আরও অবহেলা করা হয়েছে। ওই নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের নামে যেসব শর্ত আরোপ করেছে, তা–ও শিথিল করা প্রয়োজন। দল নিবন্ধনের আগে কোনো দলের পক্ষেই এসব শর্ত পূরণ করা সম্ভব নয়।

আবার অন্তর্বর্তী সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংস্কারের নামে নতুন সমস্যা তৈরি করেছে। তারা ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ সংশোধনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা নতুন করে বিতর্কই সৃষ্টি করেনি, অংশীজনদের ক্ষুব্ধ করেছে। যেখানে স্বল্প সময়ে সরকারি কর্মীদের কাছ থেকে বেশি কাজ আদায় করে নেওয়ার কথা, সেখানে এই সংশোধনী তাঁদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

বর্তমানে সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী যেখানে সরকারি চাকরিজীবীদের চাকরির অবসায়নের বিধান আছে, সেখানে নতুন আইনের প্রয়োজন হলো কেন? এই যে কয়েক সপ্তাহ ধরে সচিবালয়ে নজিরবিহীনভাবে আন্দোলন হচ্ছে, তার কৈফিয়ত কী? সরকারের নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে, তাঁরা যত ভালো সিদ্ধান্ত নিন না কেন, অংশীজনদের আস্থায় না নিতে পারলে ‘সকলই গরল ভেল’ হতে বাধ্য। সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান অচলাবস্থা তারই জ্বলন্ত উদাহরণ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম উদ্বোধন করতে কানাডা যাচ্ছেন সিইসি

কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসী নাগরিকদের ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করতে ২৮ আগস্ট কানাডা যাচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রবাসী ভোটারদের সঙ্গে একটি সভায়ও অংশ নেবেন তিনি।

সরকারি এক আদেশে এ সফরের সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। লালমনিরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. লুৎফুল কবির সরকার তাঁর সফরসঙ্গী হবেন। সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো টরন্টো ও অটোয়ায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানগুলোতে যোগদান এবং কানাডায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমের সূচনা করা।

সিইসি ২৬ আগস্ট অথবা তার কাছাকাছি সুবিধাজনক কোনো তারিখে ঢাকা থেকে কানাডার উদ্দেশে যাত্রা করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সেখানে ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া, সুবিধা এবং বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর সেশন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে।

সফর শেষে সিইসি ৪ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে ব্যক্তিগত ছুটিতে থাকবেন। এই ছুটির অতিরিক্ত সময়ের সব খরচ তিনি নিজে বহন করবেন। ৮ সেপ্টেম্বর তাঁর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন কানাডায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমের এই উদ্যোগকে প্রবাসীদের ভোটাধিকারে অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। পাশাপাশি এটি ভোট প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা প্রকাশ করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ