অগ্রগতি কতটা দৃশ্যমান, কতটা অদৃশ্য
Published: 27th, June 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০ মাস পেরিয়ে গেছে। কেউ কেউ ঠাট্টা করে বলেন, ইতিমধ্যে তারা তিনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাড়ে তিন মেয়াদ পার করেছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর সরকার রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু সংস্কার কমিশনও করেছে। এর মধ্যে সংবিধান ও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন, এটা কেউ অস্বীকার করবে না। কিন্তু যেসব বিষয়ের সঙ্গে নির্বাচন ও সংবিধান জড়িত নয়, সেসব ক্ষেত্রেও সংস্কার তেমন দৃশ্যমান নয়।
এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগের সংক্ষিপ্ত রূপরেখাসংবলিত পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছে বলে সরকারি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রতিবেদনে বলা হয়। সংস্কারের আওতায় আনা উল্লেখযোগ্য খাত হলো নির্বাচনব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনা, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও শিশু সুরক্ষা। এ ছাড়া শিক্ষা (প্রযুক্তিগত ও কর্মমুখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণসহ), সামাজিক সুরক্ষা, শ্রম অধিকার, অভিবাসন, মানবাধিকার, যুব উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও রেলপথ, প্রশাসন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সরকারের অগ্রাধিকারে শিক্ষা নেই। এ নিয়ে কোনো কমিশনও হয়নি।
আইন ও বিচার বিষয়ে কিছু অগ্রগতি আছে। বিচার খাতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’ গঠন করা হয়েছে, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে আইন হওয়াটাই যথেষ্ট নয়, কীভাবে তার বাস্তবায়ন হয়, সেটাই দেখার বিষয়। সরকার সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় গঠনের লক্ষ্যে প্রণীত অধ্যাদেশের খসড়া করলেও চূড়ান্ত করেনি। এটা অবিলম্বে চূড়ান্ত হওয়া প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হলে নিম্ন আদালতের প্রশাসনে বিদ্যমান নির্বাহী ও বিচার বিভাগের দ্বৈত নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটবে।
নির্বাচনী সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকার জাতীয় সংসদের আসন পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে যে খসড়া অধ্যাদেশ প্রণয়ন করেছে, তার গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। ২০০৮ সালে এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন যে গ্রামাঞ্চলের আসন কমিয়ে শহরাঞ্চলে আসন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা অযৌক্তিক। এর মাধ্যমে শহুরে লোকদের বেশি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অবহেলিত গ্রামকে আরও অবহেলা করা হয়েছে। ওই নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের নামে যেসব শর্ত আরোপ করেছে, তা–ও শিথিল করা প্রয়োজন। দল নিবন্ধনের আগে কোনো দলের পক্ষেই এসব শর্ত পূরণ করা সম্ভব নয়।
আবার অন্তর্বর্তী সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংস্কারের নামে নতুন সমস্যা তৈরি করেছে। তারা ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ সংশোধনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা নতুন করে বিতর্কই সৃষ্টি করেনি, অংশীজনদের ক্ষুব্ধ করেছে। যেখানে স্বল্প সময়ে সরকারি কর্মীদের কাছ থেকে বেশি কাজ আদায় করে নেওয়ার কথা, সেখানে এই সংশোধনী তাঁদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।
বর্তমানে সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী যেখানে সরকারি চাকরিজীবীদের চাকরির অবসায়নের বিধান আছে, সেখানে নতুন আইনের প্রয়োজন হলো কেন? এই যে কয়েক সপ্তাহ ধরে সচিবালয়ে নজিরবিহীনভাবে আন্দোলন হচ্ছে, তার কৈফিয়ত কী? সরকারের নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে, তাঁরা যত ভালো সিদ্ধান্ত নিন না কেন, অংশীজনদের আস্থায় না নিতে পারলে ‘সকলই গরল ভেল’ হতে বাধ্য। সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান অচলাবস্থা তারই জ্বলন্ত উদাহরণ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
পর্যটকে পরিপূর্ণ কুয়াকাটা
দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটির তৃতীয় দিন শুক্রবার (৩ অক্টোবর) পর্যটকে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে পটুয়াখালীর পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা। ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতের তিন নদীর মোহনা, লেম্বুর বন, শুটকি পল্লী, ঝাউবাগান, গঙ্গামতি, চর গঙ্গামতি ও লাল কাঁকড়ার চড়ে এখন পর্যটকদের সরব উপস্থিতি। তাদের নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, আগত পর্যটকরা সৈকতের বালিয়াড়িতে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন। তাদের অনেকে সমুদ্রের ঢেউয়ে গা ভিজিয়ে এবং ওয়াটর বাইকে চড়ে আনন্দ করছেন। অনেকে আবার সৈকতের বেঞ্চিতে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। পর্যটকদের কেউ কেউ মোটরসাইকেল কিংবা ঘোড়ায় চরে বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে দেখছিলেন। সব মিলিয়ে সৈকতের উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
আরো পড়ুন:
চার দিনের ছুটিতে কক্সবাজার রুটে চলবে ‘ট্যুরিস্ট স্পেশাল’ ট্রেন
১ অক্টোবর থেকেই কেওক্রাডং যেতে পারবেন পর্যটকরা, মানতে হবে ৬ নির্দেশনা
পাবনা থেকে আসা হোসেন শহীদ ও সোনিয়া দম্পতি জানান, পূজা ও সরকারি ছুটি থাকায় তারা কুয়াকাটায় এসেছেন। সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করেছেন তারা। এই দম্পতির অভিযোগ, হোটেল ভাড়া কিছুটা বেশি রাখা হয়েছে।
বরিশালের কাউনিয়া থেকে আসা সম্রাট বলেন, “কয়েকটি পর্যটন স্পট ঘুরে দেখেছি। বৃহস্পিতবার বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে লাল কাকড়ার চড়, গঙ্গামতি ও লেম্বুর বন ঘুরেছি। দারুন এক অনুভূতি হয়েছে।”
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, “পর্যটকদের নিরপত্তা নিশ্চিতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্য মোতায়েন রয়েছে।”
ঢাকা/ইমরান/মাসুদ